নরসিংদী জেলা সবজির জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু এই জেলায়ও ভরা মৌসুমে দাম চড়া। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এবার বাজার চড়া বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ক্রেতারা বলছেন, এভাবে চড়া দামে সবজি বিক্রি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। দাম কবে কমবে তাও কেউ জানেন না। এদিকে প্রশাসনের তদারকির অভাবে একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ফায়দা লুটছেন বলেও অভিযোগ অনেকের।

নরসিংদীর রায়পুরা ও বেলাব উপজেলার সমতল ও উঁচু জমিতে সারা বছর সবজির চাষ হয়ে থাকে। এখানে উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে। এ ছাড়া বিদেশেও যায় এ জেলার সবজি।

দাম বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে পাইকারি হাট রাধাগঞ্জ ও জঙ্গি শিবপুর, বারৈচা, নারায়ণপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনতে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। তাঁরা সবজি কিনে ফিরছেন। তবে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ধরনের সবজি পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫০, পেঁয়াজ ১০০, বেগুন ৬০-৭০, কাঁচা মরিচ ১৪০-১৭০, পাকা টমেটো ১৩০-১৫০, ঝিঙে ৩৫, ঢ্যাঁড়স ৪০-৪৫, চিচিঙ্গা ৩০, করলা ৯০, কাঁকরোল ৪৫-৫০, প্রতিটি লেবু মাঝারি ৩-৫, মিষ্টি লাউ ৩০-৪৫ ও ফুলকপি ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ক্রেতা মজনু মিয়া বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে শত শত ট্রাকে সবজি সরবরাহ করে থাকি। এখানকার উৎপাদিত সবজি বিশ্ববাজারে রপ্তানি এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। বাজারে বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’

কামাল নামের এক কৃষক বলেন, ‘কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টির কারণে সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। উৎপাদন কম থাকায় খরচ উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছি।’

আব্দুর রহিম নামের এক কৃষক বলেন, প্রতি হাটবার বাজার থেকে সারা দেশে ট্রাকে করে সবজি সরবরাহ হয়। পাইকারি সবজি বাজারেও এখন ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি। বাধ্য হয়েই ক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

কৃষক আব্দুল মালেক, শ্যামল, কাওছারের মতো অনেকের দাবি, ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেছে। কৃষি যন্ত্রপাতি, ডিজেল, সার, কীটনাশকের দাম কমাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।

উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ৪৬ শতক জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। হঠাৎ বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছি।’

খুচরা বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, সবজি বেশি দামে কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কিছুদিন আগে বৃষ্টির কারণে সবজিখেতের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দাম চড়া।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজির আবাদ বেড়েছে। বর্তমানে সবজির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বিদেশে সবজি রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।