হাসান মামুন
ভোট শেষ না হতেই গোমাংসের দাম আবার বেড়ে গেছে বলে খবর রয়েছে ১৩ জানুয়ারির আজকের পত্রিকায়। অন্যান্য জাতীয় দৈনিকেও আলাদা করে কিংবা দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভেতর খবরটা রয়েছে। মাস দুয়েক আগে হঠাৎ করে গোমাংসের দাম কমানোর একটা প্রবণতা দেখা দেয় বিক্রেতাদের মধ্যে। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধও দেখা দেয়। দাম কমিয়ে গোমাংস যে প্রক্রিয়ায় বিক্রি হচ্ছিল, সেটা নিয়ে কিছু অভিযোগও ওঠে।
এ অবস্থায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গোমাংস বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক হয় আর তাতে গবাদিপশুর খামারিরাও যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গোমাংসের একটা দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সেখানে। ওই দামে, কোথাও কোথাও এর কমেও গোমাংস বিক্রি হচ্ছে দেখে ক্রেতারা ছিলেন কিছুটা স্বস্তিতে। এর অবসান ঘটল বলা যায় ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর!
ভোটের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে বলে অবশ্য মনে হয় না। গোমাংস ব্যবসায়ীদের ‘ম্যানেজ করে’ কিছুদিন একটু কম দামে মাংস খাইয়ে মানুষকে খুশি করা হয়েছে, এ যুক্তি হয়তো কিছুটা খাটত, ভোটটা সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে। তেমন ভোট তো হয়নি। সেটা হলেও গোমাংসের চেয়েও জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম যখন বেশি বা বাড়তির দিকে, তখন এর দাম কিছুটা কমালেই বা কী! ভোটের হিসাব এত সহজ নয়। তবে গোমাংসের বাজারে কী হচ্ছে, এর একটা তদন্ত হওয়া দরকার।
মুশকিল হলো, তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জন-আস্থা এখন সম্ভবত যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। এরপরও বলতে হয়, একটি নতুন মন্ত্রিসভা হয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছেন নতুন একজন। তিনি ইতিমধ্যে মিডিয়ায় যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তাতে পণ্যবাজারে ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন দেখলাম। এ অবস্থায় হাতের কাছে থাকা গোমাংসের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাটি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ তিনি নিতে পারেন।
কিছুসংখ্যক বিক্রেতা বলছেন, কম দামে গরু সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলেই কমে যাওয়া দামে মাংস বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাঁদের অনেকে নাকি লোকসানও দিচ্ছিলেন। গোমাংসের দাম কমার ফলে বিক্রি বেড়ে যাওয়ার সময়টায় আমরা কিন্তু তাদের মুখ থেকেই শুনেছিলাম, কম হারে লাভ হলেও বেশি বিক্রি হওয়ায় পুষিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখেও তাঁদের নাকি ভালো লাগছিল যে স্বল্প আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন পর গোমাংস কিনে খেতে পারছেন। তবে এটা তো ঠিক, লোকসান দিয়ে কেউ ব্যবসা করবেন না।
লোকসানের ধারা থেকে বের হতে না পারলে তাঁরা সাধারণত ব্যবসা ছেড়ে দেন। অত্যধিক দামের কারণে গোমাংসের বিক্রি কমে যাওয়ায় সারা দেশেই এর দোকান কমে আসার প্রবণতা আমরা দেখছিলাম। কিছু বিক্রেতা সারা দিনের বদলে এক বেলায় গোমাংস বেচতেন। অন্য বেলায় অন্য দোকানি হয়তো অন্য কিছু করতেন সেখানে। তাতে ভাড়াটা হয়তো পুষিয়ে যেত।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরে ক্রমবর্ধমান দোকান ভাড়া জুগিয়ে ব্যবসা করা কিন্তু সহজ নয়। যা-ই হোক, ভালো তদন্ত হলে আশা করা যায় গোমাংসের দামের বিষয়টি বোধগম্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এর দাম এক দশকে বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিয়েছে বলে দাবি করতে পারবে না। ভোক্তারাও গোমাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন কোনো অভিযোগ না করে। তাঁরা এটা পূরণ করেছেন অন্যান্য পণ্য দিয়ে।
তখন কখনো কখনো এমন হয়েছে, ব্রয়লার মুরগি বা ডিমের দাম বেড়ে গেলেই কেবল আলোচনায় এসেছে গোমাংসের দাম। বলা হয়েছে, লোকে গোমাংসের বদলে মুরগি বা ডিম খেত; এখন তো সেটাও পারছে না! এ সময়েও কিন্তু একই আলোচনা শুরু হয়েছে আবার। কেননা ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শীতে মাছের সরবরাহ বাড়ে।
এবার এর সরবরাহ কমেছে বলে খবর নেই। তারপরও খবর রয়েছে মাছের দাম বাড়ার। একটা-দুটা পণ্যের দাম বাড়লে তা হয়তো পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে একযোগে সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে। তখন একটির বদলে আরেকটি পণ্যের দিকে চলে যাওয়াটাও সহজ হয় না। আর শুধু দামের কারণে কোনো একটি পণ্য পরিভোগ থেকে সরে আসার যাতনার কথা এখানে নাই-বা তুললাম!
নিত্যপণ্যের দাম ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখাটা অবশ্য সহজ নয়। বাজার অর্থনীতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের ধারণাও এক অর্থে অনুপস্থিত। এখানে দাম ‘বেঁধে দেওয়ার সুযোগ’ বলতে গেলে নেই। দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেই করতে হয়; অর্থাৎ তাঁদের সম্মতিতে। গোমাংসের দামটা কিন্তু সেভাবেই ‘নির্ধারণ’ করা হয়েছিল। কিছুদিন সেটা কার্যকরও ছিল। এমন কিছু নিত্যপণ্যের উদাহরণ কিন্তু দেওয়া যাবে, যেগুলোর বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি। যেমন আলুর দাম। নতুন আলু উঠে যাওয়ার পরও এর দাম এখনো অস্বাভাবিক।
পুরোনো বা নতুন কোনো আলুর দামই সেভাবে কমে আসতে দেখা যাচ্ছে না। সরকার তো আলু আমদানির প্রায় নজিরবিহীন সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। এর আগপর্যন্ত বলা হচ্ছিল, আলুতে আমরা উদ্বৃত্ত এবং কিছু আলু বরং রপ্তানি করা যাবে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, উৎপাদন কম হয়েছে বলেই এ অবস্থা!
এখন দেখা যাচ্ছে, বাজারে নতুন আলু আসার পরও দাম সেভাবে কমছে না। তাহলে এই অনুসন্ধানও করতে হবে–নতুন আলুর উৎপাদন পরিস্থিতি কেমন। কৃষি মন্ত্রণালয়েও নতুন একজন দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি এখন এসব পণ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিতে পারেন।
পেঁয়াজের দামও গেল বছরের এ সময়ের তুলনায় অস্বাভাবিক রকম বেশি। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসে যাওয়ার পর দাম হ্রাসের একটা প্রবণতা থাকলেও এর গতি শ্লথ। ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নতুন করে নিরুৎসাহিত করা হলে, আমাদের বাজারে পড়েছিল এর রাতারাতি প্রভাব। তখন ‘সিন্ডিকেটে’র কথাটা ওঠে নতুন করে। সময়ে-সময়ে এই যে আমরা পণ্যবাজারে সিন্ডিকেটের কথা তুলে সমালোচনা করি—ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে এর যৌক্তিকতা আছে, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন।
সে জন্য সমালোচিতও কম হননি। নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী যত দূর জানি–আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। আশা করব, তিনি পণ্যবাজারের কোন ক্ষেত্রে কতটা সিন্ডিকেশনের সুযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে জাতিকে স্পষ্ট ধারণা দেবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কী করছেন, সেটাও জানাবেন।
নতুন বছরের শুরু থেকে শীতে দেশের অনেক স্থানে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। এ নিয়ে অভিযোগ করার অবশ্য কিছু নেই। মুশকিলটা ওখানে যে, কুয়াশায় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হয়ে থাকে। সময় বেশি লাগে, খরচও বাড়ে আর তাতে পণ্যবাজার চড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময়ে প্রায় সব সবজির দাম যেভাবে নতুন করে বেড়েছে, তাতে এর প্রভাব আছে বলেই মনে হয়।
ডিজেলের দাম অনেক বাড়ার পর সব রকম পণ্যসামগ্রীর দামে পরিবহন ব্যয়ের প্রভাব আলোচিত হচ্ছে বেশি করে। এর দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওঠানামার ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে পণ্যবাজারে কী প্রভাব পড়বে, সেটাও আলোচিত হওয়া দরকার। যেসব পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়, সেগুলোর বাজারে জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার একটা অতিসাম্প্রতিক শঙ্কা যুক্ত হয়েছে লোহিতসাগরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে। প্রধানমন্ত্রীও সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি তো সহজ নয়। দেশে শিল্পপণ্যের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে নানা কারণে।
এর মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল আমদানি সক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো কারণ। আছে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্পেও রেশনিং করে চলার মতো কারণ। এমনিতেই শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি কমে যাচ্ছে বহিস্থ কারণে। তার ওপর দেশে সৃষ্টি হয়েছে নানা কারণ। আমন উত্তোলনের সময়েও চালের দাম বাড়ার প্রবণতায় বোঝা যায়, এ ক্ষেত্রেও কিছু একটা জটিলতা রয়েছে।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি সেভাবে। চালে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ বহাল রাখা গেলেও গমের মতো শস্য উৎপাদন কিন্তু বাড়ানো দরকার। আরেক সমস্যা হলো, ডলারের চলমান সংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও দেশে তা কমানো যাচ্ছে না। কেননা, আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রয়েছে অতিমুনাফার প্রবণতাও। গম, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো কিছু পণ্যের আমদানি আবার গুটিকয় বড় প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। অগত্যা তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে
হবে সরকারকে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ভোট শেষ না হতেই গোমাংসের দাম আবার বেড়ে গেছে বলে খবর রয়েছে ১৩ জানুয়ারির আজকের পত্রিকায়। অন্যান্য জাতীয় দৈনিকেও আলাদা করে কিংবা দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভেতর খবরটা রয়েছে। মাস দুয়েক আগে হঠাৎ করে গোমাংসের দাম কমানোর একটা প্রবণতা দেখা দেয় বিক্রেতাদের মধ্যে। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধও দেখা দেয়। দাম কমিয়ে গোমাংস যে প্রক্রিয়ায় বিক্রি হচ্ছিল, সেটা নিয়ে কিছু অভিযোগও ওঠে।
এ অবস্থায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গোমাংস বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক হয় আর তাতে গবাদিপশুর খামারিরাও যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গোমাংসের একটা দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সেখানে। ওই দামে, কোথাও কোথাও এর কমেও গোমাংস বিক্রি হচ্ছে দেখে ক্রেতারা ছিলেন কিছুটা স্বস্তিতে। এর অবসান ঘটল বলা যায় ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর!
ভোটের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে বলে অবশ্য মনে হয় না। গোমাংস ব্যবসায়ীদের ‘ম্যানেজ করে’ কিছুদিন একটু কম দামে মাংস খাইয়ে মানুষকে খুশি করা হয়েছে, এ যুক্তি হয়তো কিছুটা খাটত, ভোটটা সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে। তেমন ভোট তো হয়নি। সেটা হলেও গোমাংসের চেয়েও জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম যখন বেশি বা বাড়তির দিকে, তখন এর দাম কিছুটা কমালেই বা কী! ভোটের হিসাব এত সহজ নয়। তবে গোমাংসের বাজারে কী হচ্ছে, এর একটা তদন্ত হওয়া দরকার।
মুশকিল হলো, তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জন-আস্থা এখন সম্ভবত যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। এরপরও বলতে হয়, একটি নতুন মন্ত্রিসভা হয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছেন নতুন একজন। তিনি ইতিমধ্যে মিডিয়ায় যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তাতে পণ্যবাজারে ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন দেখলাম। এ অবস্থায় হাতের কাছে থাকা গোমাংসের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাটি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ তিনি নিতে পারেন।
কিছুসংখ্যক বিক্রেতা বলছেন, কম দামে গরু সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলেই কমে যাওয়া দামে মাংস বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাঁদের অনেকে নাকি লোকসানও দিচ্ছিলেন। গোমাংসের দাম কমার ফলে বিক্রি বেড়ে যাওয়ার সময়টায় আমরা কিন্তু তাদের মুখ থেকেই শুনেছিলাম, কম হারে লাভ হলেও বেশি বিক্রি হওয়ায় পুষিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখেও তাঁদের নাকি ভালো লাগছিল যে স্বল্প আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন পর গোমাংস কিনে খেতে পারছেন। তবে এটা তো ঠিক, লোকসান দিয়ে কেউ ব্যবসা করবেন না।
লোকসানের ধারা থেকে বের হতে না পারলে তাঁরা সাধারণত ব্যবসা ছেড়ে দেন। অত্যধিক দামের কারণে গোমাংসের বিক্রি কমে যাওয়ায় সারা দেশেই এর দোকান কমে আসার প্রবণতা আমরা দেখছিলাম। কিছু বিক্রেতা সারা দিনের বদলে এক বেলায় গোমাংস বেচতেন। অন্য বেলায় অন্য দোকানি হয়তো অন্য কিছু করতেন সেখানে। তাতে ভাড়াটা হয়তো পুষিয়ে যেত।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরে ক্রমবর্ধমান দোকান ভাড়া জুগিয়ে ব্যবসা করা কিন্তু সহজ নয়। যা-ই হোক, ভালো তদন্ত হলে আশা করা যায় গোমাংসের দামের বিষয়টি বোধগম্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এর দাম এক দশকে বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিয়েছে বলে দাবি করতে পারবে না। ভোক্তারাও গোমাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন কোনো অভিযোগ না করে। তাঁরা এটা পূরণ করেছেন অন্যান্য পণ্য দিয়ে।
তখন কখনো কখনো এমন হয়েছে, ব্রয়লার মুরগি বা ডিমের দাম বেড়ে গেলেই কেবল আলোচনায় এসেছে গোমাংসের দাম। বলা হয়েছে, লোকে গোমাংসের বদলে মুরগি বা ডিম খেত; এখন তো সেটাও পারছে না! এ সময়েও কিন্তু একই আলোচনা শুরু হয়েছে আবার। কেননা ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শীতে মাছের সরবরাহ বাড়ে।
এবার এর সরবরাহ কমেছে বলে খবর নেই। তারপরও খবর রয়েছে মাছের দাম বাড়ার। একটা-দুটা পণ্যের দাম বাড়লে তা হয়তো পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে একযোগে সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে। তখন একটির বদলে আরেকটি পণ্যের দিকে চলে যাওয়াটাও সহজ হয় না। আর শুধু দামের কারণে কোনো একটি পণ্য পরিভোগ থেকে সরে আসার যাতনার কথা এখানে নাই-বা তুললাম!
নিত্যপণ্যের দাম ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখাটা অবশ্য সহজ নয়। বাজার অর্থনীতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের ধারণাও এক অর্থে অনুপস্থিত। এখানে দাম ‘বেঁধে দেওয়ার সুযোগ’ বলতে গেলে নেই। দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেই করতে হয়; অর্থাৎ তাঁদের সম্মতিতে। গোমাংসের দামটা কিন্তু সেভাবেই ‘নির্ধারণ’ করা হয়েছিল। কিছুদিন সেটা কার্যকরও ছিল। এমন কিছু নিত্যপণ্যের উদাহরণ কিন্তু দেওয়া যাবে, যেগুলোর বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি। যেমন আলুর দাম। নতুন আলু উঠে যাওয়ার পরও এর দাম এখনো অস্বাভাবিক।
পুরোনো বা নতুন কোনো আলুর দামই সেভাবে কমে আসতে দেখা যাচ্ছে না। সরকার তো আলু আমদানির প্রায় নজিরবিহীন সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। এর আগপর্যন্ত বলা হচ্ছিল, আলুতে আমরা উদ্বৃত্ত এবং কিছু আলু বরং রপ্তানি করা যাবে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, উৎপাদন কম হয়েছে বলেই এ অবস্থা!
এখন দেখা যাচ্ছে, বাজারে নতুন আলু আসার পরও দাম সেভাবে কমছে না। তাহলে এই অনুসন্ধানও করতে হবে–নতুন আলুর উৎপাদন পরিস্থিতি কেমন। কৃষি মন্ত্রণালয়েও নতুন একজন দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি এখন এসব পণ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিতে পারেন।
পেঁয়াজের দামও গেল বছরের এ সময়ের তুলনায় অস্বাভাবিক রকম বেশি। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসে যাওয়ার পর দাম হ্রাসের একটা প্রবণতা থাকলেও এর গতি শ্লথ। ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নতুন করে নিরুৎসাহিত করা হলে, আমাদের বাজারে পড়েছিল এর রাতারাতি প্রভাব। তখন ‘সিন্ডিকেটে’র কথাটা ওঠে নতুন করে। সময়ে-সময়ে এই যে আমরা পণ্যবাজারে সিন্ডিকেটের কথা তুলে সমালোচনা করি—ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে এর যৌক্তিকতা আছে, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন।
সে জন্য সমালোচিতও কম হননি। নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী যত দূর জানি–আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। আশা করব, তিনি পণ্যবাজারের কোন ক্ষেত্রে কতটা সিন্ডিকেশনের সুযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে জাতিকে স্পষ্ট ধারণা দেবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কী করছেন, সেটাও জানাবেন।
নতুন বছরের শুরু থেকে শীতে দেশের অনেক স্থানে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। এ নিয়ে অভিযোগ করার অবশ্য কিছু নেই। মুশকিলটা ওখানে যে, কুয়াশায় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হয়ে থাকে। সময় বেশি লাগে, খরচও বাড়ে আর তাতে পণ্যবাজার চড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময়ে প্রায় সব সবজির দাম যেভাবে নতুন করে বেড়েছে, তাতে এর প্রভাব আছে বলেই মনে হয়।
ডিজেলের দাম অনেক বাড়ার পর সব রকম পণ্যসামগ্রীর দামে পরিবহন ব্যয়ের প্রভাব আলোচিত হচ্ছে বেশি করে। এর দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওঠানামার ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে পণ্যবাজারে কী প্রভাব পড়বে, সেটাও আলোচিত হওয়া দরকার। যেসব পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়, সেগুলোর বাজারে জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার একটা অতিসাম্প্রতিক শঙ্কা যুক্ত হয়েছে লোহিতসাগরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে। প্রধানমন্ত্রীও সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি তো সহজ নয়। দেশে শিল্পপণ্যের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে নানা কারণে।
এর মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল আমদানি সক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো কারণ। আছে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্পেও রেশনিং করে চলার মতো কারণ। এমনিতেই শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি কমে যাচ্ছে বহিস্থ কারণে। তার ওপর দেশে সৃষ্টি হয়েছে নানা কারণ। আমন উত্তোলনের সময়েও চালের দাম বাড়ার প্রবণতায় বোঝা যায়, এ ক্ষেত্রেও কিছু একটা জটিলতা রয়েছে।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি সেভাবে। চালে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ বহাল রাখা গেলেও গমের মতো শস্য উৎপাদন কিন্তু বাড়ানো দরকার। আরেক সমস্যা হলো, ডলারের চলমান সংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও দেশে তা কমানো যাচ্ছে না। কেননা, আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রয়েছে অতিমুনাফার প্রবণতাও। গম, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো কিছু পণ্যের আমদানি আবার গুটিকয় বড় প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। অগত্যা তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে
হবে সরকারকে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে