আলম শাইন
বিশ্বের রোমাঞ্চকর অরণ্যগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম একটি বন। অথচ এই বন দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে তছরুপের শিকার হচ্ছে যেমন, তেমনি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলেও পড়ছে বারবার। বিভিন্নভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। যেমন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বৃক্ষনিধন, অগ্নিকাণ্ড, চোরাকারবারির আধিপত্যসহ নানাভাবে বন তছরুপের শিকার হচ্ছে। হালে যোগ হয়েছে বনভূমি দখল এবং নদীভাঙন। দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের কারণে বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। উত্তাল পশুর ও ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ডিসিআরের নামে চর দখল করে নিচ্ছে। সেই সুবাদে ভূমিহীনেরা গড়ে তুলছে জনবসতি, এতে করে আয়তনে ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় জাতীয় বন ‘সুন্দরবন’।
অন্যদিকে দেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল রাজ্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। দ্বীপটির অবস্থান বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে। আয়তন খুব বেশি নয়, মাত্র সাড়ে ৮ বর্গকিলোমিটার। জোয়ারের সময় আয়তন খানিকটা হ্রাস পেয়ে ৫ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়ায়। এটি টেকনাফ উপজেলাধীন ইউনিয়ন। টেকনাফ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এই দ্বীপে রয়েছে প্রকৃতির অজস্র সম্পদ।
এখানে রয়েছে বিলাসবহুল হোটেল-মোটেলসহ বেশ কিছু পাকা-সেমিপাকা দরদালান; যা ছিল না এক যুগ আগেও। এসব গড়তে গিয়েই সেন্ট মার্টিনের মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে। ফলে ভরা বর্ষায় দ্বীপ ভাঙনের কবলে পড়ে সংকুচিত হয়ে এর আয়তন হ্রাস পাচ্ছে।
অন্যদিকে চলনবিলের অবস্থাও তদ্রূপ। এই বিল রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এটি দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জলাভূমি। ৩টি জেলা, ৮টি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে চলনবিলের বিস্তৃতি। বিলের বিশাল এই আয়তন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়ে গেছে আজও। ১৯১৯ সালে ‘ইম্পিরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’র হিসাব মতে, চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১ হাজার ৪২৪ বর্গকিলোমিটার। অপর দিকে ১৯৬৮ সালের জরিপ মোতাবেক চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা ২ হাজার ৭১ বর্গকিলোমিটার বলা হয়েছে। এক সমীক্ষায় জানা যায়, বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটারে।
যত দূর জানা যায়, চলনবিল সংকুচিত হওয়ার পেছনে রয়েছে তিনটি বড় কারণ। প্রথমত, চলনবিলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ২২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রবেশ করছে। এর মধ্যে বিলের আশপাশ বা সীমানা এলাকা থেকে ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বিলে ঢুকছে। আর বাকি ১৬৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদী দিয়ে বর্ষার মৌসুমে বিলে প্রবেশ করছে। এতে করে বিল দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিল এলাকায় অপরিকল্পিত বসতবাড়ি স্থাপনের কারণে ক্রমেই চলনবিল সংকুচিত হয়ে আসছে। তৃতীয়ত, চলনবিল এলাকার আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ হওয়ায় বিলের পরিধি হ্রাস পেয়েছে অনেকটাই। উল্লিখিত কারণ ছাড়াও দেখা গেছে, জাতীয় প্রয়োজনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটারের একটি মহাসড়ক নির্মিত হয়েছিল চলনবিলের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে।
এই দীর্ঘ রাস্তাটি নির্মিত হওয়ার ফলে এলাকাবাসী উপকৃত হলেও চলনবিলের আয়তন হ্রাস পেয়েছে বেশ খানিকটা। আরেকটি বিষয় লক্ষ করা গেছে, এ ধরনের রাস্তা নির্মাণের পেছনে প্রথমে ভূমিকা নিয়েছে স্থানীয় লোকজনই। তারা বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াত করতে প্রথমে মেঠোপথ তৈরি করে। তারপর স্থানীয় সরকারের কাছে সেসব স্থানে সড়ক নির্মাণের দাবি রাখে। একটা সময় এলাকাবাসীর দাবি পূরণ হয়ে জন্ম নেয় নতুন সড়কের। আর সেটি একসময় পরিণত হয় মহাসড়কে।
আগেই বলেছি, চলনবিল আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জলাভূমি। অবশ্যই বলা যায়, বাংলাদেশের নিম্ন জলময় ভূ-ভাগের মধ্যে একমাত্র চলনবিলই আয়তনের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ। এই অঞ্চলের মানুষের অভিমত, চলনবিল হচ্ছে তাদের জন্য শস্যখনি, বাস্তবেও তাই। কারণ এখানকার মাটি বেশ উর্বরা। বিল শুকিয়ে এলে উর্বরা মাটিতে কৃষকেরা ধানের চারা রোপণ করেই উল্লাস করেন। কারণ তাঁরা জানেন স্বল্প ব্যয়ে তাঁদের গোলা ভরে যাবে সোনালি ধানে। শুধু তা-ই নয়, বর্ষার শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলে এখানে মাছ ধরার মহোৎসব। সেই হিসেবে বলা যায় চলনবিলকে মৎস্যখনিও।
এখানে রয়েছে দেশীয় মাছের অফুরন্ত ভান্ডার। বিল এলাকার গৃহস্থদের এ সময় মাছ কেনার প্রয়োজন পড়ে না। জেলে সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তাঁরাও মাছ শিকার করে নিজেদের পারিবারিক চাহিদার জোগান দেন। চলনবিলে ইদানীং আরেকটি ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সেটি হচ্ছে ঝিনুক-মুক্তার বাণিজ্য। জানা গেছে, এই বিলে প্রাকৃতিক নিয়মে ঝিনুকের পেটে প্রচুর মুক্তার জন্ম হয়। এলাকার বেকার নারীরা ঝিনুক কুড়িয়ে পেট চিরে মুক্তা সংগ্রহ করে বড় বড় কারবারির হাতে তুলে দেন। অপর দিকে মৎস্যচাষিদের হাতে তুলে দেন ঝিনুকের মাংস। বিনিময়ে তাঁরা উপার্জন করেন নগদ অর্থকড়ি।
সমগ্র দেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন পানির সংকট দেখা দেয়, তখন চলনবিলের গড় গভীরতা থাকে তিন ফুট। অপর দিকে নদীগুলোতে সারা বছরের গড় গভীরতা থাকে ৮-১২ ফুট, যা আমাদের জন্য প্রকৃতির একটি বিশেষ উপহার বলা যায়।
সম্প্রতি জানা গেছে, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিল এলাকায় কেউ কেউ মোটেল নির্মাণের চিন্তাভাবনাও করছেন। সেটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এলাকার যুবসম্প্রদায়। তাদের ধারণা, হোটেল-মোটেল-জাতীয় কিছু হলে বিপর্যয় নেমে আসবে চলনবিল এলাকায়। আমরা জানতে পেরেছি বিষয়টি মাথায় এনে এলাকার যুবসম্প্রদায় কিছুটা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। চলনবিল রক্ষা কমিটি গঠনের তাগিদ বোধ করছে তারা। অনেকে আবার বিল রক্ষার্থে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার করছে।
আমাদের কামনা, চলনবিল রক্ষার্থে যেকোনো ধরনের বাধা মোকাবিলা করার শক্তি ও সাহস অর্জন হোক তাদের। বাস্তবায়িত হোক তাদের দৃঢ়প্রত্যয়। পাশাপাশি আমরা প্রশাসনেরও শুভদৃষ্টি কামনা করছি যেন ঐতিহ্যবাহী চলনবিলকে সংকুচিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষার। কারণ এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি শুধু রাজশাহী বিভাগবাসীরই অহংকার নয়, এটি সমগ্র দেশবাসীর অহংকার।
শুধু চলনবিলই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানের জলাশয়গুলোরও করুণ অবস্থা। গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করছে মানুষ। আবাসন, ফ্যাক্টরি ও দোকানপাট গড়ার মানসিকতায় নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করছে দ্রুত। এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফসলি জমিও। মানুষের অধিক লোভের কারণে জলাশয়ের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে জলাশয়গুলো। এসব সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের যুবসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে, জনমত গড়ে তুলতে হবে, প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। তবেই কিছুটা হলেও সুফল বয়ে আসবে। নচেৎ একদিন মানচিত্র থেকে জলাশয়গুলো হারিয়ে যাবে, আর সেগুলো উদ্ধার করাও কঠিনতর হবে।
বিশ্বের রোমাঞ্চকর অরণ্যগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম একটি বন। অথচ এই বন দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে তছরুপের শিকার হচ্ছে যেমন, তেমনি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলেও পড়ছে বারবার। বিভিন্নভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। যেমন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বৃক্ষনিধন, অগ্নিকাণ্ড, চোরাকারবারির আধিপত্যসহ নানাভাবে বন তছরুপের শিকার হচ্ছে। হালে যোগ হয়েছে বনভূমি দখল এবং নদীভাঙন। দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের কারণে বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। উত্তাল পশুর ও ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ডিসিআরের নামে চর দখল করে নিচ্ছে। সেই সুবাদে ভূমিহীনেরা গড়ে তুলছে জনবসতি, এতে করে আয়তনে ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় জাতীয় বন ‘সুন্দরবন’।
অন্যদিকে দেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল রাজ্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। দ্বীপটির অবস্থান বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে। আয়তন খুব বেশি নয়, মাত্র সাড়ে ৮ বর্গকিলোমিটার। জোয়ারের সময় আয়তন খানিকটা হ্রাস পেয়ে ৫ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়ায়। এটি টেকনাফ উপজেলাধীন ইউনিয়ন। টেকনাফ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এই দ্বীপে রয়েছে প্রকৃতির অজস্র সম্পদ।
এখানে রয়েছে বিলাসবহুল হোটেল-মোটেলসহ বেশ কিছু পাকা-সেমিপাকা দরদালান; যা ছিল না এক যুগ আগেও। এসব গড়তে গিয়েই সেন্ট মার্টিনের মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে। ফলে ভরা বর্ষায় দ্বীপ ভাঙনের কবলে পড়ে সংকুচিত হয়ে এর আয়তন হ্রাস পাচ্ছে।
অন্যদিকে চলনবিলের অবস্থাও তদ্রূপ। এই বিল রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এটি দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জলাভূমি। ৩টি জেলা, ৮টি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে চলনবিলের বিস্তৃতি। বিলের বিশাল এই আয়তন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়ে গেছে আজও। ১৯১৯ সালে ‘ইম্পিরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’র হিসাব মতে, চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১ হাজার ৪২৪ বর্গকিলোমিটার। অপর দিকে ১৯৬৮ সালের জরিপ মোতাবেক চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা ২ হাজার ৭১ বর্গকিলোমিটার বলা হয়েছে। এক সমীক্ষায় জানা যায়, বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটারে।
যত দূর জানা যায়, চলনবিল সংকুচিত হওয়ার পেছনে রয়েছে তিনটি বড় কারণ। প্রথমত, চলনবিলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ২২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রবেশ করছে। এর মধ্যে বিলের আশপাশ বা সীমানা এলাকা থেকে ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বিলে ঢুকছে। আর বাকি ১৬৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদী দিয়ে বর্ষার মৌসুমে বিলে প্রবেশ করছে। এতে করে বিল দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিল এলাকায় অপরিকল্পিত বসতবাড়ি স্থাপনের কারণে ক্রমেই চলনবিল সংকুচিত হয়ে আসছে। তৃতীয়ত, চলনবিল এলাকার আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ হওয়ায় বিলের পরিধি হ্রাস পেয়েছে অনেকটাই। উল্লিখিত কারণ ছাড়াও দেখা গেছে, জাতীয় প্রয়োজনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটারের একটি মহাসড়ক নির্মিত হয়েছিল চলনবিলের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে।
এই দীর্ঘ রাস্তাটি নির্মিত হওয়ার ফলে এলাকাবাসী উপকৃত হলেও চলনবিলের আয়তন হ্রাস পেয়েছে বেশ খানিকটা। আরেকটি বিষয় লক্ষ করা গেছে, এ ধরনের রাস্তা নির্মাণের পেছনে প্রথমে ভূমিকা নিয়েছে স্থানীয় লোকজনই। তারা বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াত করতে প্রথমে মেঠোপথ তৈরি করে। তারপর স্থানীয় সরকারের কাছে সেসব স্থানে সড়ক নির্মাণের দাবি রাখে। একটা সময় এলাকাবাসীর দাবি পূরণ হয়ে জন্ম নেয় নতুন সড়কের। আর সেটি একসময় পরিণত হয় মহাসড়কে।
আগেই বলেছি, চলনবিল আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জলাভূমি। অবশ্যই বলা যায়, বাংলাদেশের নিম্ন জলময় ভূ-ভাগের মধ্যে একমাত্র চলনবিলই আয়তনের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ। এই অঞ্চলের মানুষের অভিমত, চলনবিল হচ্ছে তাদের জন্য শস্যখনি, বাস্তবেও তাই। কারণ এখানকার মাটি বেশ উর্বরা। বিল শুকিয়ে এলে উর্বরা মাটিতে কৃষকেরা ধানের চারা রোপণ করেই উল্লাস করেন। কারণ তাঁরা জানেন স্বল্প ব্যয়ে তাঁদের গোলা ভরে যাবে সোনালি ধানে। শুধু তা-ই নয়, বর্ষার শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলে এখানে মাছ ধরার মহোৎসব। সেই হিসেবে বলা যায় চলনবিলকে মৎস্যখনিও।
এখানে রয়েছে দেশীয় মাছের অফুরন্ত ভান্ডার। বিল এলাকার গৃহস্থদের এ সময় মাছ কেনার প্রয়োজন পড়ে না। জেলে সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তাঁরাও মাছ শিকার করে নিজেদের পারিবারিক চাহিদার জোগান দেন। চলনবিলে ইদানীং আরেকটি ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সেটি হচ্ছে ঝিনুক-মুক্তার বাণিজ্য। জানা গেছে, এই বিলে প্রাকৃতিক নিয়মে ঝিনুকের পেটে প্রচুর মুক্তার জন্ম হয়। এলাকার বেকার নারীরা ঝিনুক কুড়িয়ে পেট চিরে মুক্তা সংগ্রহ করে বড় বড় কারবারির হাতে তুলে দেন। অপর দিকে মৎস্যচাষিদের হাতে তুলে দেন ঝিনুকের মাংস। বিনিময়ে তাঁরা উপার্জন করেন নগদ অর্থকড়ি।
সমগ্র দেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন পানির সংকট দেখা দেয়, তখন চলনবিলের গড় গভীরতা থাকে তিন ফুট। অপর দিকে নদীগুলোতে সারা বছরের গড় গভীরতা থাকে ৮-১২ ফুট, যা আমাদের জন্য প্রকৃতির একটি বিশেষ উপহার বলা যায়।
সম্প্রতি জানা গেছে, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিল এলাকায় কেউ কেউ মোটেল নির্মাণের চিন্তাভাবনাও করছেন। সেটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এলাকার যুবসম্প্রদায়। তাদের ধারণা, হোটেল-মোটেল-জাতীয় কিছু হলে বিপর্যয় নেমে আসবে চলনবিল এলাকায়। আমরা জানতে পেরেছি বিষয়টি মাথায় এনে এলাকার যুবসম্প্রদায় কিছুটা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। চলনবিল রক্ষা কমিটি গঠনের তাগিদ বোধ করছে তারা। অনেকে আবার বিল রক্ষার্থে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার করছে।
আমাদের কামনা, চলনবিল রক্ষার্থে যেকোনো ধরনের বাধা মোকাবিলা করার শক্তি ও সাহস অর্জন হোক তাদের। বাস্তবায়িত হোক তাদের দৃঢ়প্রত্যয়। পাশাপাশি আমরা প্রশাসনেরও শুভদৃষ্টি কামনা করছি যেন ঐতিহ্যবাহী চলনবিলকে সংকুচিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষার। কারণ এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি শুধু রাজশাহী বিভাগবাসীরই অহংকার নয়, এটি সমগ্র দেশবাসীর অহংকার।
শুধু চলনবিলই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানের জলাশয়গুলোরও করুণ অবস্থা। গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করছে মানুষ। আবাসন, ফ্যাক্টরি ও দোকানপাট গড়ার মানসিকতায় নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করছে দ্রুত। এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফসলি জমিও। মানুষের অধিক লোভের কারণে জলাশয়ের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে জলাশয়গুলো। এসব সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের যুবসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে, জনমত গড়ে তুলতে হবে, প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। তবেই কিছুটা হলেও সুফল বয়ে আসবে। নচেৎ একদিন মানচিত্র থেকে জলাশয়গুলো হারিয়ে যাবে, আর সেগুলো উদ্ধার করাও কঠিনতর হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে