দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও শেষ মুহূর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো। ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ছাড়া অন্য কোনো দল এত দিন ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান না নিলেও তফসিল ঘোষণার পর ধর্মভিত্তিক আরও চারটি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তবে ধর্মভিত্তিক কোনো কোনো দল আন্দোলনের পথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াও চালিয়ে যাচ্ছে।

তরিকত ফেডারেশন দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। দলের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে ৭০টির মতো ফরম বিক্রি হয়েছে। এখন আমাদের একটাই আসন আছে। তবে এবার বাড়বে।’

২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী জানান, প্রথম দিনে ৫০ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এক নারীনেত্রীও প্রার্থী হবেন।  

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে প্রস্তুতির জন্য তিনি তফসিল পুনর্বিন্যাসের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। গত সোমবার থেকে মনোনয়ন ফরমও বিক্রি করছে দলটি।  

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জাকের পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এজাজুর রসুল বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই-তিন দিনের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ তবে দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, জাকের পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে জমাও দেওয়া হয়েছে।

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে বলে জানিয়েছে। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি পূরণ না হলে তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না। দলের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘২৮ তারিখে আমরা সব দলকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করেছি। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি জানান, সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের চেষ্টাও চলছে।  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলো ভুগছে সিদ্ধান্তহীনতায়। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা এখনো দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে সমমনা দলগুলো মিলে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ সমমনা দলগুলোর মধ্যে খেলাফত মজলিস ছাড়াও আছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। 

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা নির্বাচনে যাব।’ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘আমরা এখনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেই আছি।’