নাজিম আল শমষের, ঢাকা
কয়েক বছর আগের কথা। পরিচিত ফুটবলার বড় ভাইদের কারও সঙ্গে দেখা হলে একটাই আবদার তুলতেন নারী দলের এক ফুটবলার। অর্থকড়ি চাওয়া নয়, সেই ফুটবলারের আবদার ছিল এক জোড়া ভালো বুট। দিনের পর দিন ব্যবহার করতে করতে পায়ের বুট জোড়ায় ছিদ্র দেখা দিয়েছে। বাফুফে ভবনের সামনে বসা মুচির দোকান থেকে ছেঁড়া জুতা সেলাই করে কাজ চালানো গেলেও আর কত দিন! ঘষতে ঘষতে পাথরেও ক্ষয় দেখা দেয়, আর সে তো সামান্য বুট!
লেখাটি যখন পাঠকেরা পড়ছেন, তখন হয়তো কারও চোখে ভেসে উঠবে নারী সাফের ফাইনালের আগে সানজিদা খাতুনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি। এক স্ট্যাটাসে পুরো নারী দলের গল্প সারা দেশের মানুষের গোচরে এনে সাধুবাদ জানানোর মতোই একটা কাজ করেছেন সানজিদা। তাঁর এ স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নারীদের সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারছেন তাঁদের ত্যাগের গল্পও। পাঠক আজ জানুন, সাফ জয়ী এই নারী দলকে একসময় ব্যঙ্গ করে বলা হতো ‘পান্তা খাওয়া’ ফুটবল দল!
পেছনের গল্প কেউ জেনে, কেউবা না জেনেই নারী দলকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে গেছেন দিনের পর দিন। শর্টস পরে মাঠে খেলতে নামায় নিজ গ্রামে এই ফুটবলারদের শুনতে হয়েছে মানুষের টিপ্পনী। গত সোমবার যখন ফাইনাল জিতে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন সাবিনা-সানজিদারা, তখনো টিপ্পনী করতে ছাড়েননি দু-একজন।
নিজেদের করুণ ছবি কখনো লুকাননি সানজিদারা। গর্বের সঙ্গে দেশকে জানিয়েছেন তাঁদের সংগ্রামের গল্প। এই ফুটবলারদের কেউ বাবা-হারা পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন, পরিবারের সবার ছোট হয়ে কেউ কাঁধে তুলে নিয়েছেন বড় ভাই-বোনদের দায়িত্ব। বাফুফে ক্যাম্পে থাকায় মাসে কিছু ভাতা জোটে। মাঠে সাফল্য এলে হয়তো পাওয়া যায় কিছু বোনাস। সেই বোনাসের টাকা দিয়ে কুঁড়েঘরটা আধা পাকা বানাতে গিয়ে দেখা যায় আটকে আছে কাজ, টিনের চালা দিয়ে ঘরের মেঝেতে নেমে আসে বৃষ্টির জল। তবু কারও মনে কোনো দুঃখ নেই। নেই না পাওয়ার আক্ষেপ। দিনের পর দিন সাফল্যহীন থেকেও পুরুষ ফুটবলারেরা যখন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ান দামি গাড়ি, সেখানে শিরোপা এনেও রিকশাই নারী ফুটবলারদের প্রধান বাহন। সারা শহর যখন ঘুমিয়ে, তখন ভোরের আলো ফোটার আগেই কমলাপুর স্টেডিয়ামে মেয়াদ উত্তীর্ণ টার্ফে কঠিন অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলার মেয়েরা। সেই টার্ফ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই মেয়েদের। বাফুফে ভবনের চারতলার ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থেকে তাঁরা এখন এক পরিবার!
কালজয়ী বার্সেলোনার যুব ক্যাম্প লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছিলেন লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজের মতো একঝাঁক কিংবদন্তি, মহাতারকা ফুটবলার।
কৈশোর থেকে একসঙ্গে বড় হওয়ায় তাঁরা পড়তে পারতেন একে অপরের চোখের ভাষা। বল পায়ে ইনিয়েস্তা অথবা জাভি বুঝতে পারতেন কোথায় থাকবেন মেসি, মেসিও জানতেন তাঁকে কোথায় বাড়িয়ে দেওয়া হবে বল। নেপালের তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে যেভাবে কৃষ্ণার দিকে বল বাড়ালেন সাবিনা, সেটা দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। সেই পরিশ্রমে একটা দলকে এক সুতোয় গাঁথায় ধন্যবাদ প্রাপ্য কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের।
ছোটনকে ধন্যবাদ দিলেও যেন কম হয়ে যায়। সাফের ফাইনাল জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে শোনাচ্ছিলেন ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় কষ্টের গল্প। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী দলের দায়িত্বে। ফুটবলার বন্ধুরা যখন কোচিং পেশায় নাম কামাচ্ছেন, ছোটন তখন ব্যস্ত একদল কিশোরীকে ফুটবল শেখাতে। বন্ধুরা তাই ঠাট্টা করে তাঁকে বলতেন
‘মহিলা কোচ’!
বন্ধুদের উপহাসকেই শক্তি বানিয়ে ছোটন গড়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এক দল। গড়েছেন ইতিহাস। কোচ-শিষ্যদের ত্যাগ আর শত প্রতিকূলতা সামলেই না এসেছে এই সাফল্য। নিজেদের নিষ্ঠা আর একাগ্রতা যখন এক বিন্দুতে মিলে যায়, তখনই আসে সাফল্য। আর সেই সাফল্য দিয়ে আজ বহুদিন পর ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে জাগানোর জন্য ছোটন-সাবিনাকে হৃদয় উপচানো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ ভুলে যাওয়া যাক কষ্টের কথা। ভুলে যাওয়া যাক দারিদ্র্যের গল্প, না পাওয়ার অভিমানের কাব্য। আজ বরং উদ্যাপন হোক। ফুটবলে উজ্জীবনের কারিগরেরা, তোমাদের সঙ্গে পুরো দেশ আছে। অমসৃণ পথের এ দুঃসাহসী যাত্রায় তোমাদের অভিবাদন।
কয়েক বছর আগের কথা। পরিচিত ফুটবলার বড় ভাইদের কারও সঙ্গে দেখা হলে একটাই আবদার তুলতেন নারী দলের এক ফুটবলার। অর্থকড়ি চাওয়া নয়, সেই ফুটবলারের আবদার ছিল এক জোড়া ভালো বুট। দিনের পর দিন ব্যবহার করতে করতে পায়ের বুট জোড়ায় ছিদ্র দেখা দিয়েছে। বাফুফে ভবনের সামনে বসা মুচির দোকান থেকে ছেঁড়া জুতা সেলাই করে কাজ চালানো গেলেও আর কত দিন! ঘষতে ঘষতে পাথরেও ক্ষয় দেখা দেয়, আর সে তো সামান্য বুট!
লেখাটি যখন পাঠকেরা পড়ছেন, তখন হয়তো কারও চোখে ভেসে উঠবে নারী সাফের ফাইনালের আগে সানজিদা খাতুনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি। এক স্ট্যাটাসে পুরো নারী দলের গল্প সারা দেশের মানুষের গোচরে এনে সাধুবাদ জানানোর মতোই একটা কাজ করেছেন সানজিদা। তাঁর এ স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নারীদের সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারছেন তাঁদের ত্যাগের গল্পও। পাঠক আজ জানুন, সাফ জয়ী এই নারী দলকে একসময় ব্যঙ্গ করে বলা হতো ‘পান্তা খাওয়া’ ফুটবল দল!
পেছনের গল্প কেউ জেনে, কেউবা না জেনেই নারী দলকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে গেছেন দিনের পর দিন। শর্টস পরে মাঠে খেলতে নামায় নিজ গ্রামে এই ফুটবলারদের শুনতে হয়েছে মানুষের টিপ্পনী। গত সোমবার যখন ফাইনাল জিতে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন সাবিনা-সানজিদারা, তখনো টিপ্পনী করতে ছাড়েননি দু-একজন।
নিজেদের করুণ ছবি কখনো লুকাননি সানজিদারা। গর্বের সঙ্গে দেশকে জানিয়েছেন তাঁদের সংগ্রামের গল্প। এই ফুটবলারদের কেউ বাবা-হারা পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন, পরিবারের সবার ছোট হয়ে কেউ কাঁধে তুলে নিয়েছেন বড় ভাই-বোনদের দায়িত্ব। বাফুফে ক্যাম্পে থাকায় মাসে কিছু ভাতা জোটে। মাঠে সাফল্য এলে হয়তো পাওয়া যায় কিছু বোনাস। সেই বোনাসের টাকা দিয়ে কুঁড়েঘরটা আধা পাকা বানাতে গিয়ে দেখা যায় আটকে আছে কাজ, টিনের চালা দিয়ে ঘরের মেঝেতে নেমে আসে বৃষ্টির জল। তবু কারও মনে কোনো দুঃখ নেই। নেই না পাওয়ার আক্ষেপ। দিনের পর দিন সাফল্যহীন থেকেও পুরুষ ফুটবলারেরা যখন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ান দামি গাড়ি, সেখানে শিরোপা এনেও রিকশাই নারী ফুটবলারদের প্রধান বাহন। সারা শহর যখন ঘুমিয়ে, তখন ভোরের আলো ফোটার আগেই কমলাপুর স্টেডিয়ামে মেয়াদ উত্তীর্ণ টার্ফে কঠিন অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলার মেয়েরা। সেই টার্ফ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই মেয়েদের। বাফুফে ভবনের চারতলার ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থেকে তাঁরা এখন এক পরিবার!
কালজয়ী বার্সেলোনার যুব ক্যাম্প লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছিলেন লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজের মতো একঝাঁক কিংবদন্তি, মহাতারকা ফুটবলার।
কৈশোর থেকে একসঙ্গে বড় হওয়ায় তাঁরা পড়তে পারতেন একে অপরের চোখের ভাষা। বল পায়ে ইনিয়েস্তা অথবা জাভি বুঝতে পারতেন কোথায় থাকবেন মেসি, মেসিও জানতেন তাঁকে কোথায় বাড়িয়ে দেওয়া হবে বল। নেপালের তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে যেভাবে কৃষ্ণার দিকে বল বাড়ালেন সাবিনা, সেটা দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। সেই পরিশ্রমে একটা দলকে এক সুতোয় গাঁথায় ধন্যবাদ প্রাপ্য কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের।
ছোটনকে ধন্যবাদ দিলেও যেন কম হয়ে যায়। সাফের ফাইনাল জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে শোনাচ্ছিলেন ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় কষ্টের গল্প। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী দলের দায়িত্বে। ফুটবলার বন্ধুরা যখন কোচিং পেশায় নাম কামাচ্ছেন, ছোটন তখন ব্যস্ত একদল কিশোরীকে ফুটবল শেখাতে। বন্ধুরা তাই ঠাট্টা করে তাঁকে বলতেন
‘মহিলা কোচ’!
বন্ধুদের উপহাসকেই শক্তি বানিয়ে ছোটন গড়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এক দল। গড়েছেন ইতিহাস। কোচ-শিষ্যদের ত্যাগ আর শত প্রতিকূলতা সামলেই না এসেছে এই সাফল্য। নিজেদের নিষ্ঠা আর একাগ্রতা যখন এক বিন্দুতে মিলে যায়, তখনই আসে সাফল্য। আর সেই সাফল্য দিয়ে আজ বহুদিন পর ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে জাগানোর জন্য ছোটন-সাবিনাকে হৃদয় উপচানো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ ভুলে যাওয়া যাক কষ্টের কথা। ভুলে যাওয়া যাক দারিদ্র্যের গল্প, না পাওয়ার অভিমানের কাব্য। আজ বরং উদ্যাপন হোক। ফুটবলে উজ্জীবনের কারিগরেরা, তোমাদের সঙ্গে পুরো দেশ আছে। অমসৃণ পথের এ দুঃসাহসী যাত্রায় তোমাদের অভিবাদন।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে