বিদ্যুৎবিভ্রাটে অতিষ্ঠ জীবন

মামুনুর রহমান, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ১১

টাঙ্গাইলে তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রমজানের শুরু থেকে বিভ্রাটের মাত্রা আরও বেড়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েক জায়গায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎবিভ্রাটে আমনের সেচসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোলট্রিশিল্প; প্রভাব পড়েছে তাঁতেও।

টাঙ্গাইলের সব কটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের চিত্র প্রায় অভিন্ন। তবে শহরের তুলনায় গ্রামপর্যায়েলোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি। দিন-রাত কেবল বিদ্যুৎ যাচ্ছে আর আসছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেও কোনো সাড়া মিলছে না—অভিযোগ গ্রাহকদের। তবে বিদ্যুৎ অফিসের দাবি ঘাটতি পূরণে সমন্বয় করে সরবরাহ করতে হচ্ছে।

এদিকে রমজান মাসে ইফতার, তারাবি নামাজ ও সাহ্‌রির সময় বিদ্যুৎবিভ্রাট বেশি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও মুসল্লিরা। মুসল্লিরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় মসজিদের মাইকে যথাসময়ে আজান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া নামাজ আদায়ের সময় প্রচণ্ড গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। 
অন্যদিকে বোরো আবাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় পার হচ্ছে। ধানগাছে শিষ বের হচ্ছে। এমন সময় বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে সেচপাম্প চালানো যাচ্ছে না। ফলে নিয়মিত পানি দিতে না পারায় ধানের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পানির অভাব হলে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিতে পারে।

সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোতালেব নামের এক সেচপাম্পের মালিক বলেন, ‘বিদ্যুৎবিভ্রাটে কৃষিজমিতে সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে। একদিকে বৃষ্টি নেই, অন্যদিকে বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা বিপদে পড়েছি বোরো ধান নিয়ে।’

বোরো আবাদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোলট্রিশিল্প। বিশেষ করে ব্রয়লারের খামারগুলো অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। খামারে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে মুরগি স্ট্রোকে মারা যেতে থাকে। এ ছাড়া অতি গরমে মুরগির খাবার খাওয়া কমে যায়। তাই বিদ্যুৎবিভ্রাটের সঙ্গে খামারিদের লাভ-লোকসানও নির্ভর করে। 
মুরগির খাবারের ডিলার ও ওষুধ বিক্রেতা মোহাম্মদ রুবেল হাসান বলেন, লোডশেডিংয়ে পোলট্রিশিল্প ঝুঁকির মুখে। গরমে মুরগির স্ট্রোক হয়। এতে নিমেষেই খামার খালি হয়ে যেতে পারে।

এদিকে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে তাঁতশিল্পে। ঈদ সামনে রেখে বিদ্যুৎবিভ্রাটের প্রভাবে শাড়ি উৎপাদন কমে গেছে। একটি শাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাদল রাজবংশী ও শাড়ি বিক্রেতা পলাশ বসাক জানান, লোডশেডিংয়ে শাড়ির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কারখানায় প্রতিদিন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্রমেই লোকসানের মুখে পড়ছে তাঁতশিল্প।

লোডশেডিং নিয়ে কথা হয় টাঙ্গাইল পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গ্যাসসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে। টাঙ্গাইলে বিদ্যুতের চাহিদা ২৫০ মেগাওয়াট। গড় সরবরাহ রয়েছে ১৬০ মেগাওয়াট। এ ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। শিগগির বিদ্যুতের এই সমস্যা সমাধান হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত