জালে উঠছে শুধু জাটকা

পাথরঘাটা ও আমতলী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ৪১
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১০: ২১

দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর জেলেরা নদীতে যাচ্ছেন ইলিশ শিকার করতে। কিন্তু কিছু জাটকা ছাড়া আর কিছুই ধরা পড়ছে না তাঁদের জালে। বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন তাঁরা।

গভীর সাগরে বড় বড় জাহাজ ছোট–বড় সব ধরনের মাছ মেরে ফেলার কারণে আস্তে আস্তে মাছ কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভারতীয় জেলেরা দেশীয় সীমানায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে অনেক আশা নিয়ে জেলেদের সাগরে পাঠিয়েছি। ৭–১০ দিন পর ওই সব ট্রলার আসবে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সুখবর পাইনি।’ এমন পরিস্থিতিতে তাঁর প্রশ্ন, তবে ইলিশ গেল কোথায়?

ইলিশ প্রজননের জন্য ৪–২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে ২৫ অক্টোবর সোমবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা ট্রলার নিয়ে ইলিশ শিকারে সাগর ও নদীতে যাচ্ছে। তবে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ। এখন পর্যন্ত গভীর সাগরের কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও পাথরঘাটার পশ্চিমে বলেশ্বর ও পূর্বে বিষখালী দুই নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় জেলেদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।

এদিকে একেতো নদীতে ইলিশ নেই, তার ওপর পায়রা নদীর প্রবেশদ্বার সাগর মোহনায় ডুবোচর। ওই ডুবোচরের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ উল্টো পথে ফিরে যাচ্ছে। ফলে সাগর মোহনা দিয়ে পায়রা নদীতে তেমন ইলিশ প্রবেশ করতে পারছে না।

জানা গেছে, দু–একটা যা ইলিশ ধরা পড়ছে তা জাটকা। পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারি জেলে ছত্তার, লাল মিয়া, মোস্তফা সিকদার ও জাহিদ মোল্লা বলেন, অবরোধ শেষে তারা আশা করেছিলেন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে। কিন্তু নদী থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় পায়রা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না।’

স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মুহূর্তে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও মেটে না। বিষখালী নদীর জেলে মোহাম্মদ আব্বাস, আব্দুর রহিম, মজিদ খান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে আজ চার দিন। পুরো একটি রাত নদীতে জাল ফেলে অপেক্ষা করে কয়েকটি জাটকা পেয়েছি। লাভ তো দূরের কথা, তেলের খরচও ওঠে না।’ তাঁরা জানান, গত বছর এই সময়েও তেমন মাছ পাওয়া যায়নি।

পাথরঘাটা বিএফডিসির মৎস্য আড়তদার টিপু আলম বলেন, ‘জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না। এতে করে শুধু যে জেলেদের সমস্যা হচ্ছে এমন নয়, আমরা যারা আড়তদার বা পাইকার আছি, তাদেরও অনেক লোকসান হচ্ছে।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ার কথা। আমরা আশাবাদী, জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়বে।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে ও পুরো নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় নদীতে ইলিশ কমে যায়। এ ছাড়া নাব্য সংকটসহ নানাবিধ কারণে নদীতে ইলিশ কমে যেতে পারে। ইলিশ দলবদ্ধভাবে চলাচল করে। অবরোধের কারণে সাগর ও নদীতে ইলিশ অবাধে বিচরণ করেছে। তাই ইলিশের দল কোথাও না কোথাও ধরা পড়ছে। বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে ধরা না পড়লেও কোনো কোনো নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ট্রাইব্যুনালে কাঁদলেন ওসি মাজহার, নির্দোষ দাবি এনটিএমসির জিয়াউলের

বাংলাদেশকে কঠোর বার্তা দেবেন ট্রাম্প: ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মার্কিন নেতা

জুলাই–আগস্ট গণহত্যা: ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে সময় এক মাস

বগুড়ায় নিখোঁজের পর মুক্তিপণ দাবি করা শিশুর লাশ মিলল পুকুরে

মার্কিন উপকূলে আবারও ‘কেয়ামতের মাছ’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত