আসাদ সরকার
লোকটিকে একঝলক দেখতেই ছোটবেলায় দেখা সংযাত্রার কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক এ রকম সাজেই যাত্রার সব পাত্র-পাত্রীকে দেখেছিলাম। যখন সবাই মঞ্চে উঠল, আহা, কী আনন্দ আমার! মানুষের সাজ যে এমন মজার হতে পারে, তা আমার জানা ছিল না। সারা দিন সেই যাত্রাদলের পেছনে পেছনে ঘুরেছিলাম। যাত্রার দলটি ছিল ময়েজ সরকার নামের কোনো এক ব্যক্তির। টাঙ্গাইল বাড়ি তাঁর। যাত্রার সূচনা-সংগীতটা এখনো মনে পড়ে।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির নাম বাবুল হোসেন বাবু। বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার ভীমপুরে। কাঁধে একটা হারমোনিয়াম, আর মুখে ঠিক সংযাত্রার পাত্র-পাত্রীর মতো মেকআপ। ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক, তিনিও সংযাত্রা করেন। কিন্তু কথা শুরু হলে পাল্টে গেল ধারণা। হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাবুল আমাদের একটা গান শোনালেন: ‘কোন-বা দেশোত আমাক দিছো বিয়া মা, ওই যে দ্যাখ মা, ক্যাংকায় কইরা মারছে মা।’ গানের সঙ্গে সঙ্গে হারমোনিয়াম বাজিয়ে নাচছেন তিনি।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে শুরু করেছেন এই নাচ-গান। মুখে সঙের মেকআপ আর কাঁধে হারমোনিয়াম নিয়ে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ফেরেন। যে গ্রামেই যান, বাবুলকে দেখেই ছুটে আসে শিশু-কিশোরেরা। তাদের পেছনে পেছনে আসেন নারীরাও। বাবুল হোসেন তাঁদের নেচে-গেয়ে শোনাতে থাকেন বিয়ের গীত। যেসব বিয়ের গীত গ্রামের ওই নারীদের জানা থাকে, সেগুলোয় তাঁরাও গলা মেলান। মুহূর্তেই বাড়ির উঠোনটা পরিণত হয় উৎসবস্থলে। গান শেষে সবাই বাবুলকে চাল উপহার দেন। মুষ্টি-মুষ্টি করে পাওয়া সে চাল কখনো কখনো পাঁচ কেজিও ছাড়িয়ে যায়।
সারা দিন গ্রামে-গ্রামে ঘুরে সন্ধ্যার পর বাবুল চলে যান গ্রামের হাটবাজারে। সেখানেও লোক জমায়েত করে শোনান বিয়ের গীত। হাটবাজারের লোকজন খুশি হয়ে দু-চার টাকা করে দেন। হাট শেষে তার যোগফল কোনো দিন দাঁড়ায় দেড় শ, কোনো দিন দুই শ টাকা। এভাবেই চলছে ২০ বছর। বাবুলের নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই, নেই থাকার ঘরও। মানুষের দয়ায় একটা জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। সেখানেই মেয়েদের নিয়ে তাঁর বসবাস। চার মেয়ের দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে।
৪৫ বছর বয়সী বাবুলের গুরু সাইদুল ইসলাম। তাঁর কাছে কেচ্ছাগান শিখতে গিয়ে বিয়ের গীতের ভক্ত হন বাবুল। সব ছেড়ে কেন এই পেশায়—জানতে চাইলে বাবুলের সাদামাটা উত্তর: ‘গান ছাড়া কিছু পারি না যে, সেই জন্য। তা ছাড়া, কেচ্ছা করার জন্য দল লাগে, বিয়ের গীত একলাই হয়। কারও ধার ধারা লাগে না।’
বাবুলের সাজ নিয়েও কথা হয়। প্রতিদিন ফজরের আজানের পর মুখে মেকআপ নেন তিনি, আর ওঠান রাত ১২টার দিকে। গত ২০ বছরে মেয়েরা ছাড়া মেকআপবিহীন তাঁকে কেউ দেখেনি। কিন্তু বিয়ের গীত গাওয়ার জন্য মেকআপ নিতে হবে কেন—জানতে চাইলে বাবুলের জবাব: ‘এই দেশোত স্বাভাবিক থাইকলে কেউ ঘুরেও দেখে না।’
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
লোকটিকে একঝলক দেখতেই ছোটবেলায় দেখা সংযাত্রার কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক এ রকম সাজেই যাত্রার সব পাত্র-পাত্রীকে দেখেছিলাম। যখন সবাই মঞ্চে উঠল, আহা, কী আনন্দ আমার! মানুষের সাজ যে এমন মজার হতে পারে, তা আমার জানা ছিল না। সারা দিন সেই যাত্রাদলের পেছনে পেছনে ঘুরেছিলাম। যাত্রার দলটি ছিল ময়েজ সরকার নামের কোনো এক ব্যক্তির। টাঙ্গাইল বাড়ি তাঁর। যাত্রার সূচনা-সংগীতটা এখনো মনে পড়ে।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির নাম বাবুল হোসেন বাবু। বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার ভীমপুরে। কাঁধে একটা হারমোনিয়াম, আর মুখে ঠিক সংযাত্রার পাত্র-পাত্রীর মতো মেকআপ। ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক, তিনিও সংযাত্রা করেন। কিন্তু কথা শুরু হলে পাল্টে গেল ধারণা। হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাবুল আমাদের একটা গান শোনালেন: ‘কোন-বা দেশোত আমাক দিছো বিয়া মা, ওই যে দ্যাখ মা, ক্যাংকায় কইরা মারছে মা।’ গানের সঙ্গে সঙ্গে হারমোনিয়াম বাজিয়ে নাচছেন তিনি।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে শুরু করেছেন এই নাচ-গান। মুখে সঙের মেকআপ আর কাঁধে হারমোনিয়াম নিয়ে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ফেরেন। যে গ্রামেই যান, বাবুলকে দেখেই ছুটে আসে শিশু-কিশোরেরা। তাদের পেছনে পেছনে আসেন নারীরাও। বাবুল হোসেন তাঁদের নেচে-গেয়ে শোনাতে থাকেন বিয়ের গীত। যেসব বিয়ের গীত গ্রামের ওই নারীদের জানা থাকে, সেগুলোয় তাঁরাও গলা মেলান। মুহূর্তেই বাড়ির উঠোনটা পরিণত হয় উৎসবস্থলে। গান শেষে সবাই বাবুলকে চাল উপহার দেন। মুষ্টি-মুষ্টি করে পাওয়া সে চাল কখনো কখনো পাঁচ কেজিও ছাড়িয়ে যায়।
সারা দিন গ্রামে-গ্রামে ঘুরে সন্ধ্যার পর বাবুল চলে যান গ্রামের হাটবাজারে। সেখানেও লোক জমায়েত করে শোনান বিয়ের গীত। হাটবাজারের লোকজন খুশি হয়ে দু-চার টাকা করে দেন। হাট শেষে তার যোগফল কোনো দিন দাঁড়ায় দেড় শ, কোনো দিন দুই শ টাকা। এভাবেই চলছে ২০ বছর। বাবুলের নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই, নেই থাকার ঘরও। মানুষের দয়ায় একটা জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। সেখানেই মেয়েদের নিয়ে তাঁর বসবাস। চার মেয়ের দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে।
৪৫ বছর বয়সী বাবুলের গুরু সাইদুল ইসলাম। তাঁর কাছে কেচ্ছাগান শিখতে গিয়ে বিয়ের গীতের ভক্ত হন বাবুল। সব ছেড়ে কেন এই পেশায়—জানতে চাইলে বাবুলের সাদামাটা উত্তর: ‘গান ছাড়া কিছু পারি না যে, সেই জন্য। তা ছাড়া, কেচ্ছা করার জন্য দল লাগে, বিয়ের গীত একলাই হয়। কারও ধার ধারা লাগে না।’
বাবুলের সাজ নিয়েও কথা হয়। প্রতিদিন ফজরের আজানের পর মুখে মেকআপ নেন তিনি, আর ওঠান রাত ১২টার দিকে। গত ২০ বছরে মেয়েরা ছাড়া মেকআপবিহীন তাঁকে কেউ দেখেনি। কিন্তু বিয়ের গীত গাওয়ার জন্য মেকআপ নিতে হবে কেন—জানতে চাইলে বাবুলের জবাব: ‘এই দেশোত স্বাভাবিক থাইকলে কেউ ঘুরেও দেখে না।’
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে