মইনুল হাসান, ফ্রান্স
অক্টোবরের ৬ তারিখ, বৃহস্পতিবার। ফ্রান্সে স্থানীয় সময় বেলা ১টা। আনি এরনোকে টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত আজকাল কেউ তাঁর তেমন কোনো খোঁজখবর করে না। মাঝে মাঝেই ভোক্তা শিকারিরা টেলিফোনে তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে পণ্যের প্রচারে তাঁকে স্মরণ করে। তাই তিনি বিরক্তিকর টেলিফোন যন্ত্রটি অনেকটা এড়িয়ে চলেন। তবে এ দিনটি ছিল ব্যতিক্রম, বিরামহীন বেজে চলেছে তাঁর দূরালাপনী। প্যারিসের অদূরে সের্জি-পনতোয়াজের নির্জন বাড়িতে আনি তখন তাঁর টেবিলে একমনে কাজ করছিলেন।
তখনো তিনি কিছুই জানেন না! অথচ ততক্ষণে তাবৎ পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ জেনে গেছে, এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন আনি এরনো—ফরাসি কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক। বয়স ৮২। দুই পুত্রসন্তানের মা। খবরটি জানার পর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে উচ্ছ্বসিত বার্তায় লিখেছেন, ‘আনি এরনো পাঁচ দশক ধরে লিখে যাচ্ছেন। তাঁর উপন্যাসে আমাদের দেশের সমষ্টিগত এবং জীবনঘেঁষা স্মৃতি সংরক্ষিত হয়েছে। তাঁর কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে নারীর স্বাধীনতা এবং শতাব্দীর বিস্মৃত মানুষের কথা।’
আনি যখন জানলেন, ততক্ষণে তাঁকে নিয়ে সারা পৃথিবীর সাহিত্যজগতে সাড়া পড়ে গেছে। সুইডিশ সংবাদ সংস্থা টিটি থেকে যিনি ফোন করেছেন, আনি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি নিশ্চিত যে এ পুরস্কারটি আমাকে দেওয়া হয়েছে?’ তিনি বিস্মিত হয়েছেন, সে কথাও তাঁকে জানালেন।
অথচ বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি এ বছরের সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন। গতবারও তাঁর নাম এসেছিল। তিনি যে নোবেল পাবেন, এতটা আশা করেননি। কারণ তিনি জানেন যে সাহিত্যের জগতে তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি কিছু সাহিত্যবোদ্ধা তাঁর লেখাকে ‘আত্মজৈবনিক কাহিনি’ বলে কিছুটা নাক সিটকানো ভাব দেখান।
আনির জন্ম সাধারণ শ্রমজীবী পরিবারে, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪০, ফ্রান্সের লিলবোনে। তাঁর ছোটবেলা ও কৈশোর কাটে মা-বাবার সঙ্গে ফ্রান্সের উত্তরে নরম্যান্ডির একটি ছোট শহর ইভতোতে। এই শহরে তাঁর মা-বাবার একটি মুদিদোকান ও ক্যাফে ছিল।
প্রথম জীবনে লেখাপড়া করেছেন সেখানকার একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি স্কুলে। আনির মতো দরিদ্র এবং সাধারণ পরিবারের মেয়েরা সেখানে অনেকটাই বেমানান। মেধার জোরে উচ্চবিত্তদের ভিড়ে নিজেকে তুলে ধরতে তাঁর তেমন বেগ পেতে হয়নি। সামাজিক বৈষম্যের উৎকট চেহারা সেখানেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান আনি।
অর্ধশতক ধরে তিনি লিখেছেন। তাঁর প্রথম আত্মকাহিনি ‘শূন্য আলমারি’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে ফ্রান্সের নামকরা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান গালিমার থেকে। সেখানে তিনি নারীদের জীবনের একটি করুণ অধ্যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং গোপনে গর্ভপাতের কথা সাদাসিধে ও অনুভূতিপ্রবণ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। ১৯৬৪ সালে উচ্ছল তারুণ্যের উষাকালে নিজেই এমন বিষণ্ন এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, নিজের জীবনের কথা লিখেছেন। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে ফরাসি সমাজজীবনের কথা, অধিকারবঞ্চিত, বৈষম্যের অসহায় শিকার নারীদের কথা। সে সময়ে ফ্রান্সে গর্ভপাত ছিল গর্হিত অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ। অপমান ও লোকলজ্জায় নারীদের আত্মাহুতির ঘটনা ছিল সমাজের বিষফোড়া।
আনির এক বড় বোন ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। আনি তখনো পৃথিবীর আলো দেখেননি, তাই তিনি তাঁর বোনের কথা জানতেন না। মা-বাবা, কেউ তাঁকে সেই প্রয়াত বোনের কথা বলেননি। একদিন আড়াল থেকে মা এবং অন্য এক নারীর কথোপকথন শুনে ফেলেন আনি। তখন তিনি তাঁর বোনের কথা জানতে পারেন। একসময় তিনি একটি লেখা লেখেন তাঁর অচেনা, অদেখা আপন বোনের উদ্দেশ্যে। আবার একদিন তাঁর বাবা উদ্যত হন তাঁর অসুস্থ মাকে খুন করার জন্য। সে ঘটনাও তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। যৌবনে এক রাশিয়ান কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, প্রণয়ের কথা খোলামেলা লিখেছেন আত্মকথার আবরণে।
আনি লিখেছেন এক এক করে ‘বরফ শীতল নারী’ (১৯৮১), ‘একজন পুরুষের জগৎ’ (১৯৮৩), ‘একটি মেয়ের কাহিনি’ (১৯৮৭), ‘সহজ কামনা’ (১৯৯২), ‘লজ্জা’ (১৯৯৭), ‘আমার রাত কাটে না’ (১৯৯৯), ‘বছরগুলো’ (২০০৮) ইত্যাদি বই। যাঁরা তাঁর লেখা পছন্দ করেন, তাঁরা বলেন, সাহিত্যে তিনি ‘নতুনতর মাত্রা ও বিন্যাস’ ঘটাতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
আনি পাঁচ দশকে সাহিত্যের দ্যুতিময় জগৎকে উপহার দিয়েছেন প্রায় দুই ডজন অসাধারণ গ্রন্থ। সম্মানসূচক ডক্টরেটসহ এক ডজন পুরস্কার জমা
অক্টোবরের ৬ তারিখ, বৃহস্পতিবার। ফ্রান্সে স্থানীয় সময় বেলা ১টা। আনি এরনোকে টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত আজকাল কেউ তাঁর তেমন কোনো খোঁজখবর করে না। মাঝে মাঝেই ভোক্তা শিকারিরা টেলিফোনে তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে পণ্যের প্রচারে তাঁকে স্মরণ করে। তাই তিনি বিরক্তিকর টেলিফোন যন্ত্রটি অনেকটা এড়িয়ে চলেন। তবে এ দিনটি ছিল ব্যতিক্রম, বিরামহীন বেজে চলেছে তাঁর দূরালাপনী। প্যারিসের অদূরে সের্জি-পনতোয়াজের নির্জন বাড়িতে আনি তখন তাঁর টেবিলে একমনে কাজ করছিলেন।
তখনো তিনি কিছুই জানেন না! অথচ ততক্ষণে তাবৎ পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ জেনে গেছে, এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন আনি এরনো—ফরাসি কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক। বয়স ৮২। দুই পুত্রসন্তানের মা। খবরটি জানার পর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে উচ্ছ্বসিত বার্তায় লিখেছেন, ‘আনি এরনো পাঁচ দশক ধরে লিখে যাচ্ছেন। তাঁর উপন্যাসে আমাদের দেশের সমষ্টিগত এবং জীবনঘেঁষা স্মৃতি সংরক্ষিত হয়েছে। তাঁর কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে নারীর স্বাধীনতা এবং শতাব্দীর বিস্মৃত মানুষের কথা।’
আনি যখন জানলেন, ততক্ষণে তাঁকে নিয়ে সারা পৃথিবীর সাহিত্যজগতে সাড়া পড়ে গেছে। সুইডিশ সংবাদ সংস্থা টিটি থেকে যিনি ফোন করেছেন, আনি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি নিশ্চিত যে এ পুরস্কারটি আমাকে দেওয়া হয়েছে?’ তিনি বিস্মিত হয়েছেন, সে কথাও তাঁকে জানালেন।
অথচ বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি এ বছরের সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন। গতবারও তাঁর নাম এসেছিল। তিনি যে নোবেল পাবেন, এতটা আশা করেননি। কারণ তিনি জানেন যে সাহিত্যের জগতে তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি কিছু সাহিত্যবোদ্ধা তাঁর লেখাকে ‘আত্মজৈবনিক কাহিনি’ বলে কিছুটা নাক সিটকানো ভাব দেখান।
আনির জন্ম সাধারণ শ্রমজীবী পরিবারে, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪০, ফ্রান্সের লিলবোনে। তাঁর ছোটবেলা ও কৈশোর কাটে মা-বাবার সঙ্গে ফ্রান্সের উত্তরে নরম্যান্ডির একটি ছোট শহর ইভতোতে। এই শহরে তাঁর মা-বাবার একটি মুদিদোকান ও ক্যাফে ছিল।
প্রথম জীবনে লেখাপড়া করেছেন সেখানকার একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি স্কুলে। আনির মতো দরিদ্র এবং সাধারণ পরিবারের মেয়েরা সেখানে অনেকটাই বেমানান। মেধার জোরে উচ্চবিত্তদের ভিড়ে নিজেকে তুলে ধরতে তাঁর তেমন বেগ পেতে হয়নি। সামাজিক বৈষম্যের উৎকট চেহারা সেখানেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান আনি।
অর্ধশতক ধরে তিনি লিখেছেন। তাঁর প্রথম আত্মকাহিনি ‘শূন্য আলমারি’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে ফ্রান্সের নামকরা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান গালিমার থেকে। সেখানে তিনি নারীদের জীবনের একটি করুণ অধ্যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং গোপনে গর্ভপাতের কথা সাদাসিধে ও অনুভূতিপ্রবণ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। ১৯৬৪ সালে উচ্ছল তারুণ্যের উষাকালে নিজেই এমন বিষণ্ন এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, নিজের জীবনের কথা লিখেছেন। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে ফরাসি সমাজজীবনের কথা, অধিকারবঞ্চিত, বৈষম্যের অসহায় শিকার নারীদের কথা। সে সময়ে ফ্রান্সে গর্ভপাত ছিল গর্হিত অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ। অপমান ও লোকলজ্জায় নারীদের আত্মাহুতির ঘটনা ছিল সমাজের বিষফোড়া।
আনির এক বড় বোন ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। আনি তখনো পৃথিবীর আলো দেখেননি, তাই তিনি তাঁর বোনের কথা জানতেন না। মা-বাবা, কেউ তাঁকে সেই প্রয়াত বোনের কথা বলেননি। একদিন আড়াল থেকে মা এবং অন্য এক নারীর কথোপকথন শুনে ফেলেন আনি। তখন তিনি তাঁর বোনের কথা জানতে পারেন। একসময় তিনি একটি লেখা লেখেন তাঁর অচেনা, অদেখা আপন বোনের উদ্দেশ্যে। আবার একদিন তাঁর বাবা উদ্যত হন তাঁর অসুস্থ মাকে খুন করার জন্য। সে ঘটনাও তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। যৌবনে এক রাশিয়ান কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, প্রণয়ের কথা খোলামেলা লিখেছেন আত্মকথার আবরণে।
আনি লিখেছেন এক এক করে ‘বরফ শীতল নারী’ (১৯৮১), ‘একজন পুরুষের জগৎ’ (১৯৮৩), ‘একটি মেয়ের কাহিনি’ (১৯৮৭), ‘সহজ কামনা’ (১৯৯২), ‘লজ্জা’ (১৯৯৭), ‘আমার রাত কাটে না’ (১৯৯৯), ‘বছরগুলো’ (২০০৮) ইত্যাদি বই। যাঁরা তাঁর লেখা পছন্দ করেন, তাঁরা বলেন, সাহিত্যে তিনি ‘নতুনতর মাত্রা ও বিন্যাস’ ঘটাতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
আনি পাঁচ দশকে সাহিত্যের দ্যুতিময় জগৎকে উপহার দিয়েছেন প্রায় দুই ডজন অসাধারণ গ্রন্থ। সম্মানসূচক ডক্টরেটসহ এক ডজন পুরস্কার জমা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে