জাহীদ রেজা নূর
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামীকাল ১১ জুলাই বসবে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে কবে ন্যাটোভুক্ত করা হবে, সে প্রশ্নটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়েও একটা আভাস মিলবে শীর্ষ সম্মেলনে। নানা বিষয়ে কথাবার্তা হবে এখানে, কিন্তু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়েই থাকবে মূল আলোচনা আর সেই পথ ধরে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর যে কটিতে পারছেন, যাচ্ছেন, কথা বলছেন।ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার জন্য দেশগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পর নিজেদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে বটে, কিন্তু গোড়ায়ই গলদ আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ‘গোড়া’ বলতে আমরা মার্কিন দেশকেই বোঝাচ্ছি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার ব্যাপারে ‘ভেটো’ দেবেন। ১১ ও ১২ জুলাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রধানেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা জানার জন্য পৃথিবীর সর্বত্রই রাজনীতিসচেতন মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, এ কথা নতুন করে বলতে হয় না।
৭ জুলাই জেলেনস্কি গিয়েছিলেন তুরস্কে। তিনি ভেবেছিলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলবেন, ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া উচিত।’ কিন্তু সেই বার্তা সহজে ভেসে আসেনি এরদোয়ানের মুখ থেকে। কিন্তু সামিটে এরদোয়ান হয়তো ইউক্রেনীয় নেতার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার পক্ষে মত দিতেও পারেন। ইউক্রেন বুঝে গেছে, এখনই ন্যাটোভুক্ত হওয়া কঠিন হবে, তাই ন্যাটো সামিটের আগে ইউক্রেন চাইবে ন্যূনতম নিশ্চয়তা। কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা? নিশ্চয়তাটুকু হচ্ছে, কীভাবে ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হতে পারে, তার জন্য ওই শীর্ষ বৈঠকে যেন একটি পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্যই ইউক্রেনীয় নেতা ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোয় যাচ্ছেন আর নিজের দেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবে, কারা দেবে নাএখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হয় কানাডা, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, উত্তর মেসেডোনিয়া ও স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া আর ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পক্ষে মত দেবে। কিন্তু এই দেশগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, হেভিওয়েট দেশগুলো এই তালিকায় কম। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এবং একসময়ের বাম বলয়ভুক্ত দেশগুলোর আধিক্য দেখা যাচ্ছে এখানে এবং এখানে যুক্ত হতে পারে তুরস্কের নাম। তবে এই দেশগুলোর কোনো কোনোটি বলছে, ইউক্রেনকে এখনই ন্যাটোভুক্ত না করে ন্যাটোভুক্ত করার ‘প্রক্রিয়া’টি ত্বরান্বিত করা হোক। কিন্তু ‘ত্বরান্বিত’ করার ‘প্রক্রিয়া’ বলে এই জোটে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ কথা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
সরাসরি ইউক্রেনকে নিজেদের জোটে নেওয়ার ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন সম্মতি যারা দেয়নি, তাদের নামগুলো জানা থাকলে বোঝা যাবে, ১১ ও ১২ জুলাইয়ের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি ঝুলে পড়তে পারে। রাশিয়ার মতো একটি দেশের সঙ্গে লড়াই করা হবে কোন পথে, কীভাবে, তা নিয়ে ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী জোটটি যে সংশয়ের মধ্যে আছে, তা তাদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে, এখন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ এমন কিছু বাস্তব সমস্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো চাইলেই রাশিয়ানদের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং খাদ্যপণ্য অন্যতম।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন দেশগুলো এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করার ব্যাপারে সংশয়ে আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। কোনো সন্দেহ নেই, এই সব নামের অনেকগুলোই দারুণ ওজনদার!। যেমন জার্মানি আর ফ্রান্স। জার্মানি মনে করে, রাশিয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেনকে এখন সেই গ্যারান্টিই দেওয়া দরকার, যে গ্যারান্টি পেয়েছে ইসরায়েল। ন্যাটোর সদস্য করা হবে না দেশটিকে, কিন্তু সব ধরনের সমর্থন সে পাবে। এটা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভাবনা। ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জোর বিরোধিতা করছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি বলছে, এই যুদ্ধে আমরা অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি। ট্রান্স-কারপাথিয়ায় হাঙ্গেরীয়-বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী চরম মূল্য দিয়েছে।
এ জন্য ইউক্রেনীয়রাই দায়ী। বহুসংখ্যক হাঙ্গেরিয়ান সেখানে মারা গেছে। ইউক্রেনে হাঙ্গেরীয়দের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ন্যাটো-ইউক্রেনীয় কমিশনের বৈঠক ও কিইভকে আর্থিক সহায়তা দান বন্ধ করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ইউক্রেন এই সমস্যার সমাধান না করবে, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়ার ঘোর বিরোধী থাকবে দেশটি। গ্রিসও চায় না ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হোক। ইউক্রেন ‘যুদ্ধবাজ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক’দের যে কালো তালিকা তৈরি করেছে, তাতে গ্রিসের কোম্পানিগুলো রয়েছে। এর প্রতিবাদেই গ্রিস ইউক্রেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার কথা আরও যেসব দেশ বলছে, এর মধ্যে আছে ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি ঘোষণা করেছে, ‘ন্যাটোর নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রকাশ্যে ও জোরালোভাবে ঘোষণা করছি, আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোর বিরোধী। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে আমরা নিরাপত্তা-প্রশ্নে ঝুঁকির মধ্যে পড়ব।’
এবার আমেরিকার কথা
পৃথিবী বহুদিন ধরেই জানে, পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতা কোথায় কী কথা বললেন, তাতে আদতেই কিছু আসে-যায় না। পুঁজিবাদী বিশ্বের হয়ে এখনো সর্বশেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। জো বাইডেনের কথার ওপর যদি ভরসা রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে, সেদিক থেকে ইউক্রেনের জন্য কোনো আশাপ্রদ খবর আপাতত নেই। জেলেনস্কির মুখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, যখন তিনি শুনেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইউক্রেন এখনো ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারটি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা জানেন, জো বাইডেন মনে করেন, এখনো ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে নেওয়া যাবে না। যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মার্কিনিদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতাটুকুই পাবে, যেটা পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কী বলেছেন বাইডেন, তা পরিষ্কার করে শোনা যাক: ‘আমি মনে করি না, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সবাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ব্যাপারে একমত হবে। যদি আমরা একমত হতাম, তাহলে আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতাম, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম। তাহলে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকতাম।’
ইউক্রেনের ব্যাপারে ইসরায়েলি মডেল অনুসরণ করা হবে বলতে বাইডেন বুঝিয়েছেন, যুদ্ধ শেষেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা করে যাবে। ইসরায়েলকে যেমন তারা নিরাপত্তা দিয়েছে, ইউক্রেনকেও সে রকম নিরাপত্তা দেবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতিও দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকের পথ চেয়ে
সামরিক দুনিয়া আর সাধারণ দুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলও বটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে গরিব দেশের গরিব মানুষেরা রয়েছে উৎকণ্ঠায়। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ হয়ে উঠছে দরিদ্র মানুষের সংসার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ব্যাপার, কিন্তু তা তো শুধু ইউরোপের নয়। গোটা বিশ্ব এখন মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করছে। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপের কোনো কোনো দেশে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। তাই কষ্ট হলেও সামলে নেওয়ার একটা পথ খোলা আছে। যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তারা তো বুঝতেই পারছে, কত ধানে কত চাল। তাই নির্দিষ্ট বেতনে বা আয়ের ওপর নির্ভর করে ঊর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কত কঠিন, সে কথা যুদ্ধবাজ দেশগুলো বুঝবে না।
তাই ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলো কি না হলো, সেটা গরিব দেশগুলোর মানুষেরা আদৌ ভাবে না। তারা ভাবে, যুদ্ধ শেষ হোক, শান্তি নেমে আসুক পৃথিবীতে। বেঁচে থাকার উপকরণগুলো পাওয়া যাক সীমিত আয়ের সীমার মধ্যেই।
কিন্তু অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থ কি মানবিক অনুভূতিগুলোকে মূল্য দেয়, দিয়েছে কখনো? জো বাইডেন হোক, ভ্লাদিমির পুতিন হোক কিংবা জেলেনস্কি হোক, তাঁরা কথা বলতে শুরু করলেই মনে হয়, আমাদের কানে এসে লাগছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদ। তারপরও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের দিকে থাকে মানুষের চোখ। যদি কোনো ভালো সংবাদ আসে সেখান থেকে!
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে