সবজির বাজারে অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে। শীত এসে যাচ্ছে; এর আগেই বাজারে এসে গেছে শীতের সবজি। উৎপাদন ভালো বলেই মনে হয়। এর প্রভাবে দাম কমে আসারই কথা। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। চলমান ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচিতে সেটা কমবেশি ব্যাহত হচ্ছে বৈকি। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়ে দামে। মাঝে খবর মিলেছিল, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বগুড়ার একটি পাইকারি বাজারে সবজির দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। দামের আকস্মিক পতন আবার উৎপাদক ও এর ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ। অর্থনীতিতে তাঁদের স্বার্থ দেখাও জরুরি।
সবজির মধ্যে আলু নিয়ে রীতিমতো সংকট দেখা দিয়েছিল। এর কারণ উৎপাদন না বাজার ব্যবস্থাপনায় নিহিত, সেটা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে রয়েছে মতভেদ। তাতে আমদানি শুরু হতেও দেরি হয়। আলুও শেষতক আমদানি করতে হলো, এটা নিয়ে আক্ষেপ আছে অনেকের।
বিশেষ করে কৃষকদের। এর কারণ অবশ্য ভিন্ন। তাঁরা তো আলুর রেকর্ড দামের সুফল পাননি। দাম বাড়তে থাকার সময়টায় সাধারণ কৃষকের হাতে আলু ছিল না। এর সুফল পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিতে তাঁদের ভূমিকা অবশ্য অস্বীকার করা যাবে না। কোনো বিক্রেতাগোষ্ঠীর বেশি লাভবান হওয়াটাও ভালো নয়। এতে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
আলুর মতো পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়াটা খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকেও খারাপ। অনেকে আলুকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও আলুর ব্যবহার রয়েছে। আর ঘরে এটা আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করি। ভালো যে সরকার দেরিতে হলেও আলুর বাজার শান্ত করে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। সংকটময় রিজার্ভ পরিস্থিতিতেও পণ্যটি আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে এর প্রভাব সীমিত। দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ হয়েছে বড়জোর। এর দামের ওপর আরও প্রভাব ফেলতে ‘ট্রাক সেলে’ আলুও যুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ করা প্রতিটি পণ্যের দামই উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে কার্যক্রমটি এখনো রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ। বাণিজ্যসচিব বলেছেন, অন্যান্য বড় শহরেও এটা বিস্তৃত করা হবে। দেশে নির্বাচন ঘিরে একটা উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে এখন। এর মধ্যে সুস্থিরভাবে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়াটা কঠিনও বটে।
শীতের শুরুতে বাজারে ওঠে নতুন আলু। এর একাংশ প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। চোরাপথেও কি আসে না? যা-ই হোক, নতুন আলুর চাহিদা-সরবরাহে অসংগতি থাকায় দাম বেশি থাকে কিছুদিন। আলুর সংকট দেখে দেশের কৃষকেরা উৎসাহী হয়ে ‘আগাম আলু’ ফলিয়েছেন। সেটা বাজারে আসার আগমুহূর্তে আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না, এ প্রশ্নও উঠছে। মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট ও আলোচনা বেশি হওয়া ভালো। কারণ এত বেশি মানুষের দেশে যে পণ্য বছরজুড়ে বলতে গেলে রোজ ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে থেকে থেকেই সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংকট দেখা দিলেও তা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এটা মাথায় রাখা ভালো।
আলুসহ সবজি উৎপাদনে আমরা ভালো করছি। কিন্তু উৎপাদন নিশ্চিত হলেই দাম কমে আসবে, এমনটা চট করে বলা যায় না। উৎপাদন ব্যয়ও তো বাড়ছে। অনেক সময় পণ্য বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। কিংবা মুনাফা হলেও সামান্য হয়ে থাকে।
গেল আলু মৌসুমে অল্প লাভে কৃষক আলু বেচে দিয়েছিলেন। তাঁদের তো বেশি দামের আশায় পণ্য ধরে রাখার সুযোগ নেই। সেটা আছে যাঁদের, তাঁরাই হাতবদল করে মুনাফা লুটছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকার সময় আবার ‘সিন্ডিকেটবাজি’র অভিযোগ ওঠে। বহু বিক্রেতার বাজারে সিন্ডিকেট সম্ভব কি না, সে বিতর্কও আছে। সিন্ডিকেট থাকুক বা না থাকুক, ক্রেতাদের আলু নিয়ে ভুগতে হচ্ছে এখনো। আমদানির পরও এমনকি সবজির দাম কমে আসতে থাকার সময়ও আলুর দাম সেভাবে কমেনি। তবে এটা ঠিক, অন্যান্য সবজি সহজলভ্য হলে আলুর ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তাতে এর দামে কিছুটা প্রভাব পড়ার আশা।
ডিম নিয়ে মাঝে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাও থিতিয়ে এসেছে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে। কমে অবশ্য আগের জায়গায় আসেনি বলে অভিযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে, যখন দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ করাটাও সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। ডিমের বেলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এর দাম ডজনে কমপক্ষে ২০ টাকা কমে এসেছে কীভাবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যে পরিমাণ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা কিন্তু বেশি ছিল না। আমদানিতে বিলম্ব হয়েছে আর বেশি আমদানিও হয়নি। তবে আমদানির খবরে প্রতিযোগিতা করে ডিম ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা সম্ভবত দেখা দিয়েছে খামারিদের মধ্যে।
এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যয় উঠে এলেই তাঁরা খুশি। এমন পরিস্থিতি আবার বিশেষ করে ছোট খামারিদের জন্য হতাশাজনক। এ খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও। ডিম উৎপাদনে লোকসানের শিকার হয়ে অনেক খামারি নাকি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের খবর রাখা হয়নি। এতে সরবরাহ সংকটও যে দেখা দিতে পারে, তা ভাবা হয়নি। মাঝে কোনো কারণে ডিমের চাহিদাও হয়তো বেড়ে গিয়েছিল একসঙ্গে। মাংসের দাম বাড়লে মানুষ বেশি করে ডিম খাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মাছের দাম বাড়লেও। মাঝে কিন্তু এই সবকিছুর দাম একযোগে বেড়েছিল।
আমাদের একটা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, এটাও লক্ষ করার বিষয়। এতে উপকরণ হিসেবে লাগে ডিম, চিনি, আটা-ময়দা। ভালো যে দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়ে এত দিন শিল্পের চাহিদাও মেটানো গেছে। তবে খামারিরা ভালো দাম পাননি। তাঁদের উৎপাদন ব্যয় যদিও বাড়ছিল ক্রমে। ব্রয়লার মুরগির বেলায়ও এ কথা সত্য। এই খামারিদের উৎপাদন ব্যয় কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে আলোচনা কম। সংকট তীব্র হয়ে উঠলেই কেবল তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়। এটা তো নীতিনির্ধারকদের নজরে রাখার বিষয়।
এই মুহূর্তে অবশ্য বেশি করে সামনে আসছে চিনি ও আটা-ময়দার দাম। চিনির দাম বেড়েছে নতুন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও চিনিটা রয়ে গেল ব্যতিক্রমের তালিকায়। এর প্রভাব দেশীয় বাজারেও আছে। কর-শুল্ক কমালেও এর দাম কমছে না। ঘরে তেমন বেশি চিনি লাগে না বলে অবশ্য রক্ষা। তবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রচুর লাগে। সেখানে উৎপাদিত পণ্যের দাম তাতে বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতেও। তারা চায়ের সঙ্গে খায় বিস্কুট কিংবা বনরুটি। এতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় চিনি। আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়ার বিষয়টিও এর সঙ্গে আলোচিত হবে।
গমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির খবর রয়েছে এ মুহূর্তে। গমের আন্তর্জাতিক বাজার কিন্তু শান্ত হয়ে এসেছে। এটা হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে। ওই বেল্ট থেকে গমের সরবরাহ, তাতে বিঘ্নিত হয়ে পড়ে আর দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর প্রভাবে এখানেও আটা-ময়দার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। দাম কমে আসার একটা প্রবণতাও তৈরি হয় মাঝে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমে। আমরা তো চাহিদার ৮০-৮৫ শতাংশ গম আমদানি করে থাকি।
সমস্যা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যুদ্ধের পূর্বাবস্থায় চলে এলেও অভ্যন্তরীণ ডলার-সংকটে আমাদের আমদানি ব্যয় পড়ে যাচ্ছে বেশি। এলসি জটিলতা অনেক বেড়ে ওঠায় বেশি দামে আমদানিও নাকি কঠিন এখন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাঁরা কখনো হননি। এ ক্ষেত্রেও কথা থাকে, সংকটকালে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন কি না? এমন অভিযোগ দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বড় ব্যবসায়ীদের বিষয়েও রয়েছে। চিনি ও আটা-ময়দার মতো আমদানিনির্ভর পণ্যের ব্যবসায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগও রয়ে গেছে।
দেশে উৎপাদিত বা আমদানি করা যে পণ্যই হোক—এর বাজার স্বাভাবিক রাখার কাজটা সরকারকে করে যেতেই হবে; বিশেষ করে যেসব পণ্য সর্বসাধারণ নিত্যদিন ব্যবহার করে। বেশি আয় করা আর দ্রুত আয় বাড়াতে পারা মানুষ তো বেশি নেই। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপে অবশিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অবস্থা কমবেশি খারাপ। তাদের স্বস্তি দেওয়ার কাজে ব্যর্থতারও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজারে রাখতে হবে সবিশেষ দৃষ্টি। আমন ধান ওঠার এ সময়টায় চালের বাজারে কিন্তু পরিলক্ষিত হচ্ছে অস্থিরতা। বছরে তৃতীয়বারের মতো একটা ঘূর্ণিঝড় গেছে উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে। তাতে সবজি, রবিশস্য ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও রাখতে হবে। হিসাবের গোলমালেও কিন্তু বাজার হয়ে ওঠে অস্থির।
সবজির বাজারে অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে। শীত এসে যাচ্ছে; এর আগেই বাজারে এসে গেছে শীতের সবজি। উৎপাদন ভালো বলেই মনে হয়। এর প্রভাবে দাম কমে আসারই কথা। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। চলমান ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচিতে সেটা কমবেশি ব্যাহত হচ্ছে বৈকি। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়ে দামে। মাঝে খবর মিলেছিল, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বগুড়ার একটি পাইকারি বাজারে সবজির দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। দামের আকস্মিক পতন আবার উৎপাদক ও এর ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ। অর্থনীতিতে তাঁদের স্বার্থ দেখাও জরুরি।
সবজির মধ্যে আলু নিয়ে রীতিমতো সংকট দেখা দিয়েছিল। এর কারণ উৎপাদন না বাজার ব্যবস্থাপনায় নিহিত, সেটা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে রয়েছে মতভেদ। তাতে আমদানি শুরু হতেও দেরি হয়। আলুও শেষতক আমদানি করতে হলো, এটা নিয়ে আক্ষেপ আছে অনেকের।
বিশেষ করে কৃষকদের। এর কারণ অবশ্য ভিন্ন। তাঁরা তো আলুর রেকর্ড দামের সুফল পাননি। দাম বাড়তে থাকার সময়টায় সাধারণ কৃষকের হাতে আলু ছিল না। এর সুফল পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিতে তাঁদের ভূমিকা অবশ্য অস্বীকার করা যাবে না। কোনো বিক্রেতাগোষ্ঠীর বেশি লাভবান হওয়াটাও ভালো নয়। এতে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
আলুর মতো পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়াটা খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকেও খারাপ। অনেকে আলুকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও আলুর ব্যবহার রয়েছে। আর ঘরে এটা আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করি। ভালো যে সরকার দেরিতে হলেও আলুর বাজার শান্ত করে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। সংকটময় রিজার্ভ পরিস্থিতিতেও পণ্যটি আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে এর প্রভাব সীমিত। দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ হয়েছে বড়জোর। এর দামের ওপর আরও প্রভাব ফেলতে ‘ট্রাক সেলে’ আলুও যুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ করা প্রতিটি পণ্যের দামই উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে কার্যক্রমটি এখনো রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ। বাণিজ্যসচিব বলেছেন, অন্যান্য বড় শহরেও এটা বিস্তৃত করা হবে। দেশে নির্বাচন ঘিরে একটা উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে এখন। এর মধ্যে সুস্থিরভাবে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়াটা কঠিনও বটে।
শীতের শুরুতে বাজারে ওঠে নতুন আলু। এর একাংশ প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। চোরাপথেও কি আসে না? যা-ই হোক, নতুন আলুর চাহিদা-সরবরাহে অসংগতি থাকায় দাম বেশি থাকে কিছুদিন। আলুর সংকট দেখে দেশের কৃষকেরা উৎসাহী হয়ে ‘আগাম আলু’ ফলিয়েছেন। সেটা বাজারে আসার আগমুহূর্তে আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না, এ প্রশ্নও উঠছে। মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট ও আলোচনা বেশি হওয়া ভালো। কারণ এত বেশি মানুষের দেশে যে পণ্য বছরজুড়ে বলতে গেলে রোজ ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে থেকে থেকেই সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংকট দেখা দিলেও তা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এটা মাথায় রাখা ভালো।
আলুসহ সবজি উৎপাদনে আমরা ভালো করছি। কিন্তু উৎপাদন নিশ্চিত হলেই দাম কমে আসবে, এমনটা চট করে বলা যায় না। উৎপাদন ব্যয়ও তো বাড়ছে। অনেক সময় পণ্য বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। কিংবা মুনাফা হলেও সামান্য হয়ে থাকে।
গেল আলু মৌসুমে অল্প লাভে কৃষক আলু বেচে দিয়েছিলেন। তাঁদের তো বেশি দামের আশায় পণ্য ধরে রাখার সুযোগ নেই। সেটা আছে যাঁদের, তাঁরাই হাতবদল করে মুনাফা লুটছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকার সময় আবার ‘সিন্ডিকেটবাজি’র অভিযোগ ওঠে। বহু বিক্রেতার বাজারে সিন্ডিকেট সম্ভব কি না, সে বিতর্কও আছে। সিন্ডিকেট থাকুক বা না থাকুক, ক্রেতাদের আলু নিয়ে ভুগতে হচ্ছে এখনো। আমদানির পরও এমনকি সবজির দাম কমে আসতে থাকার সময়ও আলুর দাম সেভাবে কমেনি। তবে এটা ঠিক, অন্যান্য সবজি সহজলভ্য হলে আলুর ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তাতে এর দামে কিছুটা প্রভাব পড়ার আশা।
ডিম নিয়ে মাঝে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাও থিতিয়ে এসেছে দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে। কমে অবশ্য আগের জায়গায় আসেনি বলে অভিযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে, যখন দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ করাটাও সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। ডিমের বেলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এর দাম ডজনে কমপক্ষে ২০ টাকা কমে এসেছে কীভাবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যে পরিমাণ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা কিন্তু বেশি ছিল না। আমদানিতে বিলম্ব হয়েছে আর বেশি আমদানিও হয়নি। তবে আমদানির খবরে প্রতিযোগিতা করে ডিম ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা সম্ভবত দেখা দিয়েছে খামারিদের মধ্যে।
এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যয় উঠে এলেই তাঁরা খুশি। এমন পরিস্থিতি আবার বিশেষ করে ছোট খামারিদের জন্য হতাশাজনক। এ খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও। ডিম উৎপাদনে লোকসানের শিকার হয়ে অনেক খামারি নাকি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের খবর রাখা হয়নি। এতে সরবরাহ সংকটও যে দেখা দিতে পারে, তা ভাবা হয়নি। মাঝে কোনো কারণে ডিমের চাহিদাও হয়তো বেড়ে গিয়েছিল একসঙ্গে। মাংসের দাম বাড়লে মানুষ বেশি করে ডিম খাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মাছের দাম বাড়লেও। মাঝে কিন্তু এই সবকিছুর দাম একযোগে বেড়েছিল।
আমাদের একটা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, এটাও লক্ষ করার বিষয়। এতে উপকরণ হিসেবে লাগে ডিম, চিনি, আটা-ময়দা। ভালো যে দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়ে এত দিন শিল্পের চাহিদাও মেটানো গেছে। তবে খামারিরা ভালো দাম পাননি। তাঁদের উৎপাদন ব্যয় যদিও বাড়ছিল ক্রমে। ব্রয়লার মুরগির বেলায়ও এ কথা সত্য। এই খামারিদের উৎপাদন ব্যয় কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে আলোচনা কম। সংকট তীব্র হয়ে উঠলেই কেবল তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়। এটা তো নীতিনির্ধারকদের নজরে রাখার বিষয়।
এই মুহূর্তে অবশ্য বেশি করে সামনে আসছে চিনি ও আটা-ময়দার দাম। চিনির দাম বেড়েছে নতুন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও চিনিটা রয়ে গেল ব্যতিক্রমের তালিকায়। এর প্রভাব দেশীয় বাজারেও আছে। কর-শুল্ক কমালেও এর দাম কমছে না। ঘরে তেমন বেশি চিনি লাগে না বলে অবশ্য রক্ষা। তবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রচুর লাগে। সেখানে উৎপাদিত পণ্যের দাম তাতে বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতেও। তারা চায়ের সঙ্গে খায় বিস্কুট কিংবা বনরুটি। এতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় চিনি। আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়ার বিষয়টিও এর সঙ্গে আলোচিত হবে।
গমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির খবর রয়েছে এ মুহূর্তে। গমের আন্তর্জাতিক বাজার কিন্তু শান্ত হয়ে এসেছে। এটা হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে। ওই বেল্ট থেকে গমের সরবরাহ, তাতে বিঘ্নিত হয়ে পড়ে আর দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর প্রভাবে এখানেও আটা-ময়দার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। দাম কমে আসার একটা প্রবণতাও তৈরি হয় মাঝে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমে। আমরা তো চাহিদার ৮০-৮৫ শতাংশ গম আমদানি করে থাকি।
সমস্যা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যুদ্ধের পূর্বাবস্থায় চলে এলেও অভ্যন্তরীণ ডলার-সংকটে আমাদের আমদানি ব্যয় পড়ে যাচ্ছে বেশি। এলসি জটিলতা অনেক বেড়ে ওঠায় বেশি দামে আমদানিও নাকি কঠিন এখন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাঁরা কখনো হননি। এ ক্ষেত্রেও কথা থাকে, সংকটকালে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন কি না? এমন অভিযোগ দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বড় ব্যবসায়ীদের বিষয়েও রয়েছে। চিনি ও আটা-ময়দার মতো আমদানিনির্ভর পণ্যের ব্যবসায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগও রয়ে গেছে।
দেশে উৎপাদিত বা আমদানি করা যে পণ্যই হোক—এর বাজার স্বাভাবিক রাখার কাজটা সরকারকে করে যেতেই হবে; বিশেষ করে যেসব পণ্য সর্বসাধারণ নিত্যদিন ব্যবহার করে। বেশি আয় করা আর দ্রুত আয় বাড়াতে পারা মানুষ তো বেশি নেই। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপে অবশিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অবস্থা কমবেশি খারাপ। তাদের স্বস্তি দেওয়ার কাজে ব্যর্থতারও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজারে রাখতে হবে সবিশেষ দৃষ্টি। আমন ধান ওঠার এ সময়টায় চালের বাজারে কিন্তু পরিলক্ষিত হচ্ছে অস্থিরতা। বছরে তৃতীয়বারের মতো একটা ঘূর্ণিঝড় গেছে উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে। তাতে সবজি, রবিশস্য ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও রাখতে হবে। হিসাবের গোলমালেও কিন্তু বাজার হয়ে ওঠে অস্থির।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৮ ঘণ্টা আগে