ড. মইনুল ইসলাম
পত্রপত্রিকার খবর মোতাবেক ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মাত্র ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে। অথচ বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ তাদের ঘোষিত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপে ৩০ হাজার মেগাওয়াটের সোলার এনার্জির টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ ঘোষণার পর কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও এই টার্গেট পূরণের উপযুক্ত কর্মসূচি আজও গৃহীত হলো না কেন? দেশের বড় বড় নগর এবং মফস্বল শহরের প্রাইভেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে না, প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়ে চলেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৪৭ হাজার রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে ওই যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক ৪৭ হাজার রুপির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ হাজার রুপি ভর্তুকি দেওয়া হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯ হাজার রুপি। ১ কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার পূর্ণ বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, এ মডেলটি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য। আমার মতে, ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’র মতো একটি কর্মসূচি অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করা প্রয়োজন, যেখানে সরকার রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি ভর্তুকি দেবে। এই ভর্তুকি কর্মসূচি বাড়ির মালিকদের তাঁদের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
গণচীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইন এবং জার্মানি ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। সোলার প্যানেল ও ‘ব্যাটারি’র দামে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি প্রদান এবং ভর্তুকি-দামে ‘নেট মিটারিং’ স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান—এসব দেশের সাফল্য অর্জনের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ‘নেট-মিটারিং’ প্রযুক্তি গণচীন থেকে এখন সুলভে আমদানি করা যাচ্ছে। অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি একেবারেই নগণ্য রয়ে গেল কেন? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য আমরা ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণসহ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছি, যেখান থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ আমরা নাকি ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণে নির্মীয়মাণ রূপপুর প্রকল্প আমার বিবেচনায় একটি ‘সাদা হাতি প্রকল্প’, কারণ ভারতের তামিলনাড়ুর কুদান কুলামে রাশিয়া মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলারে ২ হাজার মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে দিয়েছে কয়েক বছর আগে। আমাদের ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণ নিতে হলো কেন? এই প্রকল্পে ক্ষমতাসীন মহল ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের মার্জিন কত? এই মহাবিপজ্জনক পারমাণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মাঝখানে স্থাপনকে আমি সমর্থন করিনি। এখন আবার দ্বিতীয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ান পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আলোচনা সেরে ফেলেছেন। অথচ ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যয় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। সৌরবিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতিমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২৩ একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ব্লুমবার্গের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ২০২৫ সালের পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্য সব বিকল্পের তুলনায় বাংলাদেশেও কমে আসবে। ২০৩০ সালে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৪২ ডলার, যেখানে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে তা পড়বে ৯৪ ডলার এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৮ ডলার।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খালি জায়গা লাগে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তা স্থাপন সম্ভব নয় বলে যে ধারণা রয়েছে, তা-ও ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চল, দেশের সমুদ্র-উপকূল এবং নদ-নদী ও খালগুলোর দুই পাড়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা হোক। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় যে কয়েক শ চরাঞ্চল গড়ে উঠছে, জনবসতি গড়ে ওঠার আগেই সেখানে যদি বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ-কাম-বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকারসহকারে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে অত্যন্ত সাশ্রয়ী পন্থায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে। সম্প্রতি জার্মানি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশকে বিপুলভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজ-ক্লিপ জানিয়েছে; যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জমির তুলনামূলক স্বল্পতার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যাবে যদি দেশের বিশাল সমুদ্র-উপকূলে একই সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। সমুদ্র-উপকূলের কথা জার্মানি বলেছে, আমি এর চেয়েও সম্ভাবনাময় মনে করি বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরাঞ্চলকে। এগুলোতে মানববসতি নেই, তাই ভূমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা হবে না। উপরন্তু উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডের বিদ্যুৎ-গ্রিডে নিয়ে আসাও খুব বেশি ব্যয়সাধ্য হওয়ার কথা নয়। সম্প্রতি ডেনমার্ক বাংলাদেশের সমুদ্র-উপকূলে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি বিনিয়োগ-প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে বলে পত্রপত্রিকার খবর। অবিলম্বে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৭ মে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেছেন। দেশে বিদ্যুতের ‘ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি’ ২৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেলেও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের লোডশেডিং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে প্রতিদিন। কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় উৎস রয়ে গেছে দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস, আমদানি করা এলএনজি এবং প্রধানত আমদানি করা কয়লা। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে ইন্সটল্ড উৎপাদন-ক্যাপাসিটি কাগজে-কলমে ২৩০ মেগাওয়াট হলেও বর্ষা মৌসুমের তিন মাসের বেশি প্রকৃত উৎপাদন ক্যাপাসিটির কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। শীত মৌসুমে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত উৎপাদন ৩০-৪০ মেগাওয়াটে সীমাবদ্ধ থাকে। এত দিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প একটি পরিবেশ-ধ্বংসকারী প্রকল্প, যেটা বর্তমান পরিবেশ-জ্ঞান অনুযায়ী গ্রহণের যৌক্তিকতাই নেই। জানা গেছে, এলএনজি ও কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ সবচেয়ে কম পড়ে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ওগুলোর প্রদত্ত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ এখন সরকারের বিশাল বোঝায় পরিণত হয়েছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পরিচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প সাংঘাতিক ব্যয়বহুল হওয়ায় সেগুলো চালানো যাচ্ছে না, কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিল না করায় ওগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে।
পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পিডিবিকে সরকারের প্রদত্ত ভর্তুকির ৮১ শতাংশই ক্যাপাসিটি চার্জের খরচ। অতএব, ক্যাপাসিটি চার্জ কমাতে পারলে ভোক্তাদের ওপর কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয়তো অনেকখানি কমে যেত। আমদানি করা এলএনজির ওপর সরকারের নির্ভরতার জন্য ওয়াকিবহাল মহল কয়েকজন প্রভাবশালী আমদানিকারকের ব্যবসায়ী-স্বার্থকে দায়ী করে থাকে। এই আলোচনা থেকে পরিষ্কার হওয়া উচিত যে বিপুল জ্বালানি আমদানি খরচ ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ থেকে দেশের অর্থনীতিকে পরিত্রাণ দিতে চাইলে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্য অর্জনকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
পত্রপত্রিকার খবর মোতাবেক ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মাত্র ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে। অথচ বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ তাদের ঘোষিত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপে ৩০ হাজার মেগাওয়াটের সোলার এনার্জির টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ ঘোষণার পর কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও এই টার্গেট পূরণের উপযুক্ত কর্মসূচি আজও গৃহীত হলো না কেন? দেশের বড় বড় নগর এবং মফস্বল শহরের প্রাইভেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে না, প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়ে চলেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৪৭ হাজার রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে ওই যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক ৪৭ হাজার রুপির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ হাজার রুপি ভর্তুকি দেওয়া হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯ হাজার রুপি। ১ কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার পূর্ণ বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, এ মডেলটি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য। আমার মতে, ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’র মতো একটি কর্মসূচি অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করা প্রয়োজন, যেখানে সরকার রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি ভর্তুকি দেবে। এই ভর্তুকি কর্মসূচি বাড়ির মালিকদের তাঁদের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
গণচীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইন এবং জার্মানি ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। সোলার প্যানেল ও ‘ব্যাটারি’র দামে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি প্রদান এবং ভর্তুকি-দামে ‘নেট মিটারিং’ স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান—এসব দেশের সাফল্য অর্জনের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ‘নেট-মিটারিং’ প্রযুক্তি গণচীন থেকে এখন সুলভে আমদানি করা যাচ্ছে। অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি একেবারেই নগণ্য রয়ে গেল কেন? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য আমরা ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণসহ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছি, যেখান থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ আমরা নাকি ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণে নির্মীয়মাণ রূপপুর প্রকল্প আমার বিবেচনায় একটি ‘সাদা হাতি প্রকল্প’, কারণ ভারতের তামিলনাড়ুর কুদান কুলামে রাশিয়া মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলারে ২ হাজার মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে দিয়েছে কয়েক বছর আগে। আমাদের ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণ নিতে হলো কেন? এই প্রকল্পে ক্ষমতাসীন মহল ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের মার্জিন কত? এই মহাবিপজ্জনক পারমাণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মাঝখানে স্থাপনকে আমি সমর্থন করিনি। এখন আবার দ্বিতীয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ান পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আলোচনা সেরে ফেলেছেন। অথচ ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যয় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। সৌরবিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতিমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২৩ একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ব্লুমবার্গের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ২০২৫ সালের পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্য সব বিকল্পের তুলনায় বাংলাদেশেও কমে আসবে। ২০৩০ সালে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৪২ ডলার, যেখানে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে তা পড়বে ৯৪ ডলার এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৮ ডলার।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খালি জায়গা লাগে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তা স্থাপন সম্ভব নয় বলে যে ধারণা রয়েছে, তা-ও ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চল, দেশের সমুদ্র-উপকূল এবং নদ-নদী ও খালগুলোর দুই পাড়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা হোক। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় যে কয়েক শ চরাঞ্চল গড়ে উঠছে, জনবসতি গড়ে ওঠার আগেই সেখানে যদি বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ-কাম-বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকারসহকারে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে অত্যন্ত সাশ্রয়ী পন্থায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে। সম্প্রতি জার্মানি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশকে বিপুলভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজ-ক্লিপ জানিয়েছে; যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জমির তুলনামূলক স্বল্পতার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যাবে যদি দেশের বিশাল সমুদ্র-উপকূলে একই সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। সমুদ্র-উপকূলের কথা জার্মানি বলেছে, আমি এর চেয়েও সম্ভাবনাময় মনে করি বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরাঞ্চলকে। এগুলোতে মানববসতি নেই, তাই ভূমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা হবে না। উপরন্তু উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডের বিদ্যুৎ-গ্রিডে নিয়ে আসাও খুব বেশি ব্যয়সাধ্য হওয়ার কথা নয়। সম্প্রতি ডেনমার্ক বাংলাদেশের সমুদ্র-উপকূলে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি বিনিয়োগ-প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে বলে পত্রপত্রিকার খবর। অবিলম্বে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৭ মে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেছেন। দেশে বিদ্যুতের ‘ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি’ ২৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেলেও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের লোডশেডিং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে প্রতিদিন। কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় উৎস রয়ে গেছে দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস, আমদানি করা এলএনজি এবং প্রধানত আমদানি করা কয়লা। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে ইন্সটল্ড উৎপাদন-ক্যাপাসিটি কাগজে-কলমে ২৩০ মেগাওয়াট হলেও বর্ষা মৌসুমের তিন মাসের বেশি প্রকৃত উৎপাদন ক্যাপাসিটির কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। শীত মৌসুমে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত উৎপাদন ৩০-৪০ মেগাওয়াটে সীমাবদ্ধ থাকে। এত দিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প একটি পরিবেশ-ধ্বংসকারী প্রকল্প, যেটা বর্তমান পরিবেশ-জ্ঞান অনুযায়ী গ্রহণের যৌক্তিকতাই নেই। জানা গেছে, এলএনজি ও কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ সবচেয়ে কম পড়ে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ওগুলোর প্রদত্ত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ এখন সরকারের বিশাল বোঝায় পরিণত হয়েছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পরিচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প সাংঘাতিক ব্যয়বহুল হওয়ায় সেগুলো চালানো যাচ্ছে না, কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিল না করায় ওগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে।
পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পিডিবিকে সরকারের প্রদত্ত ভর্তুকির ৮১ শতাংশই ক্যাপাসিটি চার্জের খরচ। অতএব, ক্যাপাসিটি চার্জ কমাতে পারলে ভোক্তাদের ওপর কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয়তো অনেকখানি কমে যেত। আমদানি করা এলএনজির ওপর সরকারের নির্ভরতার জন্য ওয়াকিবহাল মহল কয়েকজন প্রভাবশালী আমদানিকারকের ব্যবসায়ী-স্বার্থকে দায়ী করে থাকে। এই আলোচনা থেকে পরিষ্কার হওয়া উচিত যে বিপুল জ্বালানি আমদানি খরচ ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ থেকে দেশের অর্থনীতিকে পরিত্রাণ দিতে চাইলে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্য অর্জনকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে