মহিউদ্দিন খান মোহন
দেশের চলমান অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারল না যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর একটি চিঠি। আমাদের তিন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে লেখা ওই চিঠি ইতিমধ্যেই দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চিঠিটি ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস স্বয়ং দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিএনপির চিঠি কীভাবে দলটির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে তারা ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। অপরদিকে ১৫ নভেম্বর সকালে পিটার হাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করে সেই চিঠি হস্তান্তর করেছেন।
চিঠিতে ডোনাল্ড লু তিন রাজনৈতিক দলকেই নির্বাচন ইস্যুতে শর্তহীন সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদও দিয়েছেন তিনি। চিঠি পেয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংলাপ প্রশ্নে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ১৫ নভেম্বর এক ফিরতি চিঠিতে সংলাপে রাজি বলে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি হস্তান্তর করে সেখান থেকে বেরিয়ে পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষ নেবে না। আর চিঠি পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, সংলাপের সময় পেরিয়ে গেছে, এখন আর সেই সুযোগ নেই। দলের পক্ষ থেকে এই চিঠির লিখিত জবাবও দেওয়া হয়েছে।
ডোনাল্ড লুর চিঠি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়, যখন দেশবাসী একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে। একদিকে এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আন্দোলনের সহিংস কর্মসূচি, অপরদিকে ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন’ করার সরকারি প্রত্যয় দেশবাসীকে পাটাপুতার মাঝখানে মরিচের দশায় উপনীত করেছে। দুই পক্ষের এই জেদাজেদির শেষ পরিণাম কী, তা ভেবে সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যদিও এরই মধ্যে বিএনপির ডাকা ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ বায়বীয় আস্ফালনে পরিণত হয়েছে, তবে শিগগিরই এর অবসানের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র দূরপাল্লার বাস ছাড়া আর সব যানবাহন যথারীতি চলাচল করছে। রাজপথে দলটির নেতা-কর্মীদের দেখা নেই। মাঝেমধ্যে গুপ্তস্থান থেকে কর্মীরা ঝট করে এসে বাস-ট্রাকে আগুন দিয়ে পট করে সরে পড়ছে। এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি বলা যায় না। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির নেতারা লাগাতার আত্মগোপনে চলে গেছেন। শীর্ষ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকার ফলে দলটি এখন নেতৃত্বহীন। অথচ বলা হয়েছিল, অন্তত তিন সারির নেতৃত্ব ঠিক করা আছে, যাঁরা একের পর এক এসে নেতৃত্বের হাল ধরবেন। কিন্তু সেই সব নেতার কেশাগ্রও দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
এদিকে ডোনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চললেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই পরামর্শ রাজনৈতিক দলগুলো কতটা গ্রহণ করবে তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি প্রত্যাখ্যান করা না হলেও যা বলা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট তারা এটাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিএনপি তো সংলাপে রাজি হয়েছে। জাতীয় পার্টির কথায় বোঝা যায় তারা এতে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জি এম কাদের যা বলেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায় ডোনাল্ড লুর কথামতো সংলাপ না করলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় ধরনের স্যাংশন দেবে। ১৫ নভেম্বর আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংলাপ চেয়েছে, তার সম্ভাবনা কম।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এহেন চিঠি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দেশটির হস্তক্ষেপ কি না, এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। রাজনীতি-অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ধরনের আহ্বান যদি জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হতো, তাহলে বলার কিছু ছিল না। কেননা, ইতিপূর্বে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘ এবং কমনওয়েলথ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার স্টিফেন নিনিয়ান এবং ২০১৪ সালে জাতিসংঘের দূত তারানকো দুই দলের মধ্যে দূতিয়ালি করেছিলেন, যদিও তা সফল হয়নি। কিন্তু এবার সালিসের ভূমিকায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে ভিন্ন একটি দেশ এভাবে নাক গলাতে পারে কি না, এটা একটি বড় প্রশ্ন। এটা যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন এবং ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা যে ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী, বিজ্ঞজনেরা সে কথা আগে থেকেই বলছেন। তাঁদের মতে, শিষ্টাচার অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিতে পারে না। রাষ্ট্রদূতের কর্মপরিধি ‘সরকার টু সরকারেই’ সীমাবদ্ধ থাকার কথা; যা পিটার হাস অনেক আগেই অতিক্রম করে গেছেন। একই সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে ভারত, রাশিয়া এবং চীনও তৎপর রয়েছে। বলা বোধকরি
অপ্রাসঙ্গিক হবে না—নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর ‘রেসলিং রিংয়ে’ পরিণত হয়েছে। আর এর কারণ যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণতা এবং দলীয় স্বার্থপরতা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১৫ নভেম্বর রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেই তফসিলকে স্বাগত জানালেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে দলটি ও তাদের অনুগামীরা ১৯ ও ২০ নভেম্বর হরতালের ডাক দিয়েছে এবং বলেছে, এই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে জনগণকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য কয়েকটি দলও ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।
তফসিল ঘোষণার ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন, ‘পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।’ সিইসির এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে সদিচ্ছার; যা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়েরই থাকতে হবে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের কাছ থেকে তা আশা করা একরকম দুরাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডোনাল্ড লু যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের প্রশ্ন একসময় বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়েছিল। সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংলাপ হতে পারে, তবে তা হতে হবে শর্তহীন।
কিন্তু সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো ধরনের সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল বিএনপি। ফলে বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি। এখন এ পর্যায়ে এসে বিএনপির ভরসাস্থল মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান শেষ পর্যন্ত হয়তো অর্থহীন বাক্যালাপেই পরিণত হবে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দেশের চলমান অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারল না যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর একটি চিঠি। আমাদের তিন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে লেখা ওই চিঠি ইতিমধ্যেই দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চিঠিটি ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস স্বয়ং দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিএনপির চিঠি কীভাবে দলটির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে তারা ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। অপরদিকে ১৫ নভেম্বর সকালে পিটার হাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করে সেই চিঠি হস্তান্তর করেছেন।
চিঠিতে ডোনাল্ড লু তিন রাজনৈতিক দলকেই নির্বাচন ইস্যুতে শর্তহীন সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদও দিয়েছেন তিনি। চিঠি পেয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংলাপ প্রশ্নে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ১৫ নভেম্বর এক ফিরতি চিঠিতে সংলাপে রাজি বলে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি হস্তান্তর করে সেখান থেকে বেরিয়ে পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষ নেবে না। আর চিঠি পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, সংলাপের সময় পেরিয়ে গেছে, এখন আর সেই সুযোগ নেই। দলের পক্ষ থেকে এই চিঠির লিখিত জবাবও দেওয়া হয়েছে।
ডোনাল্ড লুর চিঠি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়, যখন দেশবাসী একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে। একদিকে এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আন্দোলনের সহিংস কর্মসূচি, অপরদিকে ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন’ করার সরকারি প্রত্যয় দেশবাসীকে পাটাপুতার মাঝখানে মরিচের দশায় উপনীত করেছে। দুই পক্ষের এই জেদাজেদির শেষ পরিণাম কী, তা ভেবে সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যদিও এরই মধ্যে বিএনপির ডাকা ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ বায়বীয় আস্ফালনে পরিণত হয়েছে, তবে শিগগিরই এর অবসানের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র দূরপাল্লার বাস ছাড়া আর সব যানবাহন যথারীতি চলাচল করছে। রাজপথে দলটির নেতা-কর্মীদের দেখা নেই। মাঝেমধ্যে গুপ্তস্থান থেকে কর্মীরা ঝট করে এসে বাস-ট্রাকে আগুন দিয়ে পট করে সরে পড়ছে। এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি বলা যায় না। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির নেতারা লাগাতার আত্মগোপনে চলে গেছেন। শীর্ষ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকার ফলে দলটি এখন নেতৃত্বহীন। অথচ বলা হয়েছিল, অন্তত তিন সারির নেতৃত্ব ঠিক করা আছে, যাঁরা একের পর এক এসে নেতৃত্বের হাল ধরবেন। কিন্তু সেই সব নেতার কেশাগ্রও দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
এদিকে ডোনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চললেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই পরামর্শ রাজনৈতিক দলগুলো কতটা গ্রহণ করবে তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি প্রত্যাখ্যান করা না হলেও যা বলা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট তারা এটাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিএনপি তো সংলাপে রাজি হয়েছে। জাতীয় পার্টির কথায় বোঝা যায় তারা এতে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জি এম কাদের যা বলেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায় ডোনাল্ড লুর কথামতো সংলাপ না করলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় ধরনের স্যাংশন দেবে। ১৫ নভেম্বর আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংলাপ চেয়েছে, তার সম্ভাবনা কম।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এহেন চিঠি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দেশটির হস্তক্ষেপ কি না, এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। রাজনীতি-অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ধরনের আহ্বান যদি জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হতো, তাহলে বলার কিছু ছিল না। কেননা, ইতিপূর্বে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘ এবং কমনওয়েলথ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার স্টিফেন নিনিয়ান এবং ২০১৪ সালে জাতিসংঘের দূত তারানকো দুই দলের মধ্যে দূতিয়ালি করেছিলেন, যদিও তা সফল হয়নি। কিন্তু এবার সালিসের ভূমিকায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে ভিন্ন একটি দেশ এভাবে নাক গলাতে পারে কি না, এটা একটি বড় প্রশ্ন। এটা যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন এবং ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা যে ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী, বিজ্ঞজনেরা সে কথা আগে থেকেই বলছেন। তাঁদের মতে, শিষ্টাচার অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিতে পারে না। রাষ্ট্রদূতের কর্মপরিধি ‘সরকার টু সরকারেই’ সীমাবদ্ধ থাকার কথা; যা পিটার হাস অনেক আগেই অতিক্রম করে গেছেন। একই সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে ভারত, রাশিয়া এবং চীনও তৎপর রয়েছে। বলা বোধকরি
অপ্রাসঙ্গিক হবে না—নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর ‘রেসলিং রিংয়ে’ পরিণত হয়েছে। আর এর কারণ যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণতা এবং দলীয় স্বার্থপরতা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১৫ নভেম্বর রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেই তফসিলকে স্বাগত জানালেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে দলটি ও তাদের অনুগামীরা ১৯ ও ২০ নভেম্বর হরতালের ডাক দিয়েছে এবং বলেছে, এই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে জনগণকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য কয়েকটি দলও ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।
তফসিল ঘোষণার ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন, ‘পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।’ সিইসির এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে সদিচ্ছার; যা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়েরই থাকতে হবে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের কাছ থেকে তা আশা করা একরকম দুরাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডোনাল্ড লু যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের প্রশ্ন একসময় বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়েছিল। সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংলাপ হতে পারে, তবে তা হতে হবে শর্তহীন।
কিন্তু সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো ধরনের সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল বিএনপি। ফলে বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি। এখন এ পর্যায়ে এসে বিএনপির ভরসাস্থল মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান শেষ পর্যন্ত হয়তো অর্থহীন বাক্যালাপেই পরিণত হবে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৮ ঘণ্টা আগে