অরুণ কর্মকার
এমন একটি কথা প্রচলিত আছে যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না; অর্থাৎ ইতিহাস কখনো হুবহু একইভাবে ফিরে আসে না। তবে স্থান-কাল-পরিস্থিতিভেদে ইতিহাসের যতটা পুনঃমঞ্চায়ন হলে পুনরাবৃত্তি বলা যায়, সেটা বোধ হয় আমরা দেখতে যাচ্ছি। আসন্ন দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তেমনটাই আভাস দিচ্ছে।
সেই ইতিহাস দূরবর্তী কোনো ঘটনাকেন্দ্রিক নয় বলে আমরা তা ভালোভাবেই স্মরণ করতে পারি। আমরা মনে করে দেখতে পারি, ২০১৪ এবং বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ও ঘটনাবলি। এবারও কি বিএনপি নির্বাচনের বাইরেই থাকবে? তাদের দাবি তো কিছুই পূরণ হয়নি। এক দফার আন্দোলনও এখন নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে জনগণের বয়ানে যদি তা হয়, জনগণ যদি তেমন কিছু করে তাহলে সৃষ্টি হতে পারে নয়া ইতিহাস।
তবে সেই সম্ভাবনা কম বলেই মনে হয়। কারণ নির্বাচনের যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে তার গতি রোধ করে উল্টোযাত্রায় বাধ্য করানো অনেক বড় শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপার। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা দলীয় অ্যাকটিভিস্ট, তাঁদের কারও কারও মধ্যে এমন একটা বিশ্বাস রয়েছে বলেও লক্ষ করা যায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাঁদেরই কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে এসেছে।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো বলে। তবে একমাত্র রাজনৈতিক হত্যা এবং ক্যুর মতো গভীরতর এবং যুগান্তকারী (নেতিবাচক অর্থে) কোনো ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ছাড়া তাঁদের এই বিশ্বাসের বাস্তব কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির বিষয়টি স্পষ্ট। যেমন বিএনপি এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গী সমমনা দলগুলোর দাবি-দাওয়াকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই কাজ করে যাবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত দলগুলো দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টি বিএনপির অনুগামী হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না। তবে তাদের কিছু ইস্যু আছে। সেগুলোর ফয়সালা করে নিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে চায়। তৃণমূল বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছে। পাশাপাশি বিএনপির আরও কিছু নেতা নির্বাচনে শামিল হবেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ার সূত্রে জানা গেছে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আরও একটি উদাহরণ হলো নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির হুমকির পাশাপাশি তাদের সমমনা এবং অনুগামী দলগুলোর হরতাল আহ্বান করা। অবরোধ তো আছেই। তারা সবাই মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহনে আগুন লাগানো শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার একটানা হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর হয়তো আরও বড় ধরনের লাগাতার হরতালের কর্মসূচি দেবে তারা। আগুন লাগানোসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাবলিও বাড়তে থাকবে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাড়তে থাকবে পুলিশের হাতে আটক গ্রেপ্তার মামলা-মোকদ্দমা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। সরকারি দল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রাখবে। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অদূর অতীতের ইতিহাসের অনুরূপই বটে।
এত সব বিঘ্ন অতিক্রম করে বিএনপি এবং তার অনুগামীদের পক্ষে নির্বাচন হতে না দেওয়া অসম্ভবেরই নামান্তর। যেমন হয়েছে অতীতে। এই হিসাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনাই এখন দৃশ্যমান। নয়া ইতিহাস সৃষ্টি নয়। নয়া ইতিহাস সৃষ্টির ক্ষীণতম যে সুযোগটুকু ছিল তা-ও কাজে লাগানো হয়নি কিংবা কাজে লাগানো যায়নি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে অথবা দম্ভের কারণে। সেই সুযোগটুকু নেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল সংলাপ। শর্তহীন সংলাপ।
কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই সংলাপের শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি। তারা বলেছিল, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন করা যায়, সেটাই হতে পারে সংলাপের বিষয়? অন্য কিছু নিয়ে সংলাপ হবে না। আওয়ামী লীগ তখন এই সুযোগটুকু নিয়েছিল। তারা বলেছিল, কোনো রকম শর্তযুক্ত সংলাপে তারা রাজি নয়। বিদেশিরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করাসহ এমন কিছু তৎপরতা শুরু করে, যাতে বিএনপি এবং তার অনুগামীরা মনে করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাতে সরকার কিছুটা চাপেও পড়েছিল। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ভূমিকার অন্তরালে ছিল তাদের কিছু স্বার্থ, যা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সহায়ক।
সেই সব স্বার্থ হাসিলের বিষয়ে তারা যখন নিশ্চিত হয়েছে, তখন তাদের অবস্থানও পরিবর্তিত হয়েছে। তখন থেকেই বিএনপি পড়ে যায় বিভ্রান্তিতে। সরকারবিরোধী তাদের আন্দোলনে বিদেশিদের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের মোহমুক্তি ঘটতে শুরু করে তখনই।
এরপর জল অনেকটাই গড়ানোর পর গত সপ্তাহে দেশের তিনটি বড় দলের কাছে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করে বলতে শুরু করেছে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের; অর্থাৎ সরকার দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করলে তারা তাতে অংশ নিতে পারে।
এটা অবশ্য অযৌক্তিক কথা নয়। সরকারেরই উচিত দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসা। কিন্তু কথা হলো সরকার এখন তা কেন করবে? সে তো এখন আর আগের মতো চাপে নেই। অন্তত সরকার তো তা-ই মনে করছে। তার ওপর আবার নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়ে গেছে। এখন তো সরকার বা সরকারি দল বলতেই পারে যে এখন আর আলোচনার সময় নেই। তারা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এখন কেউ যদি নির্বাচনে আসে আসতে পারে। না আসতে চাইলে না-ও আসতে পারে। এ কথাই তো এখন বলছে সরকারি দল।
এখন ধরা যাক বিষয়টি যদি এমন হতো যে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পাওয়ার পরই বিএনপি তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলে দিল যে তারা শর্তহীন আলোচনায় বসতে রাজি। তখন কিন্তু সরকার নতুন করে দেশে-বিদেশে আরেকটা চাপের মধ্যে পড়ত। তখন সরকার বা সরকারি দলের পক্ষে এটা বলা সহজ হতো না যে এখন আর আলোচনার সময় নেই। তখন দেখা যেত বিদেশি বন্ধুরা চাইছে শর্তহীন আলোচনা। দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও তাতে রাজি। সুতরাং নামকাওয়াস্তে হলেও একটা আলোচনার আয়োজন করতে হতো। আর আলোচনায় বসলে তো যে যার শর্ত নিয়েই আলোচনা করে। হয়তো সে আলোচনা বিরোধীদের জন্য কোনো ফল বয়ে আনত না। কিন্তু আন্দোলনরত বিরোধী দল অনেক বেশি সহানুভূতি পেত। রাজনৈতিক দৃশ্যপট এখনকার চেয়ে অনেকটাই ভিন্নতর হতো।
কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। যা হলো তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেখানে সংঘাত আছে। সংঘর্ষ আছে। আছে প্রাণহানির আশঙ্কাও। সর্বোপরি হয়তো আছে আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। তবে নয়া ইতিহাস সৃষ্টির সম্ভাবনা যে নেই, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
এমন একটি কথা প্রচলিত আছে যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না; অর্থাৎ ইতিহাস কখনো হুবহু একইভাবে ফিরে আসে না। তবে স্থান-কাল-পরিস্থিতিভেদে ইতিহাসের যতটা পুনঃমঞ্চায়ন হলে পুনরাবৃত্তি বলা যায়, সেটা বোধ হয় আমরা দেখতে যাচ্ছি। আসন্ন দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তেমনটাই আভাস দিচ্ছে।
সেই ইতিহাস দূরবর্তী কোনো ঘটনাকেন্দ্রিক নয় বলে আমরা তা ভালোভাবেই স্মরণ করতে পারি। আমরা মনে করে দেখতে পারি, ২০১৪ এবং বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ও ঘটনাবলি। এবারও কি বিএনপি নির্বাচনের বাইরেই থাকবে? তাদের দাবি তো কিছুই পূরণ হয়নি। এক দফার আন্দোলনও এখন নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে জনগণের বয়ানে যদি তা হয়, জনগণ যদি তেমন কিছু করে তাহলে সৃষ্টি হতে পারে নয়া ইতিহাস।
তবে সেই সম্ভাবনা কম বলেই মনে হয়। কারণ নির্বাচনের যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে তার গতি রোধ করে উল্টোযাত্রায় বাধ্য করানো অনেক বড় শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপার। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা দলীয় অ্যাকটিভিস্ট, তাঁদের কারও কারও মধ্যে এমন একটা বিশ্বাস রয়েছে বলেও লক্ষ করা যায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাঁদেরই কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে এসেছে।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো বলে। তবে একমাত্র রাজনৈতিক হত্যা এবং ক্যুর মতো গভীরতর এবং যুগান্তকারী (নেতিবাচক অর্থে) কোনো ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ছাড়া তাঁদের এই বিশ্বাসের বাস্তব কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির বিষয়টি স্পষ্ট। যেমন বিএনপি এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গী সমমনা দলগুলোর দাবি-দাওয়াকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই কাজ করে যাবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত দলগুলো দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টি বিএনপির অনুগামী হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না। তবে তাদের কিছু ইস্যু আছে। সেগুলোর ফয়সালা করে নিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে চায়। তৃণমূল বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছে। পাশাপাশি বিএনপির আরও কিছু নেতা নির্বাচনে শামিল হবেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ার সূত্রে জানা গেছে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আরও একটি উদাহরণ হলো নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির হুমকির পাশাপাশি তাদের সমমনা এবং অনুগামী দলগুলোর হরতাল আহ্বান করা। অবরোধ তো আছেই। তারা সবাই মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহনে আগুন লাগানো শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার একটানা হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর হয়তো আরও বড় ধরনের লাগাতার হরতালের কর্মসূচি দেবে তারা। আগুন লাগানোসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাবলিও বাড়তে থাকবে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাড়তে থাকবে পুলিশের হাতে আটক গ্রেপ্তার মামলা-মোকদ্দমা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। সরকারি দল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রাখবে। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের অদূর অতীতের ইতিহাসের অনুরূপই বটে।
এত সব বিঘ্ন অতিক্রম করে বিএনপি এবং তার অনুগামীদের পক্ষে নির্বাচন হতে না দেওয়া অসম্ভবেরই নামান্তর। যেমন হয়েছে অতীতে। এই হিসাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনাই এখন দৃশ্যমান। নয়া ইতিহাস সৃষ্টি নয়। নয়া ইতিহাস সৃষ্টির ক্ষীণতম যে সুযোগটুকু ছিল তা-ও কাজে লাগানো হয়নি কিংবা কাজে লাগানো যায়নি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে অথবা দম্ভের কারণে। সেই সুযোগটুকু নেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল সংলাপ। শর্তহীন সংলাপ।
কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই সংলাপের শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি। তারা বলেছিল, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন করা যায়, সেটাই হতে পারে সংলাপের বিষয়? অন্য কিছু নিয়ে সংলাপ হবে না। আওয়ামী লীগ তখন এই সুযোগটুকু নিয়েছিল। তারা বলেছিল, কোনো রকম শর্তযুক্ত সংলাপে তারা রাজি নয়। বিদেশিরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করাসহ এমন কিছু তৎপরতা শুরু করে, যাতে বিএনপি এবং তার অনুগামীরা মনে করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাতে সরকার কিছুটা চাপেও পড়েছিল। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ভূমিকার অন্তরালে ছিল তাদের কিছু স্বার্থ, যা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সহায়ক।
সেই সব স্বার্থ হাসিলের বিষয়ে তারা যখন নিশ্চিত হয়েছে, তখন তাদের অবস্থানও পরিবর্তিত হয়েছে। তখন থেকেই বিএনপি পড়ে যায় বিভ্রান্তিতে। সরকারবিরোধী তাদের আন্দোলনে বিদেশিদের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের মোহমুক্তি ঘটতে শুরু করে তখনই।
এরপর জল অনেকটাই গড়ানোর পর গত সপ্তাহে দেশের তিনটি বড় দলের কাছে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করে বলতে শুরু করেছে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের; অর্থাৎ সরকার দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করলে তারা তাতে অংশ নিতে পারে।
এটা অবশ্য অযৌক্তিক কথা নয়। সরকারেরই উচিত দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসা। কিন্তু কথা হলো সরকার এখন তা কেন করবে? সে তো এখন আর আগের মতো চাপে নেই। অন্তত সরকার তো তা-ই মনে করছে। তার ওপর আবার নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়ে গেছে। এখন তো সরকার বা সরকারি দল বলতেই পারে যে এখন আর আলোচনার সময় নেই। তারা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এখন কেউ যদি নির্বাচনে আসে আসতে পারে। না আসতে চাইলে না-ও আসতে পারে। এ কথাই তো এখন বলছে সরকারি দল।
এখন ধরা যাক বিষয়টি যদি এমন হতো যে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পাওয়ার পরই বিএনপি তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলে দিল যে তারা শর্তহীন আলোচনায় বসতে রাজি। তখন কিন্তু সরকার নতুন করে দেশে-বিদেশে আরেকটা চাপের মধ্যে পড়ত। তখন সরকার বা সরকারি দলের পক্ষে এটা বলা সহজ হতো না যে এখন আর আলোচনার সময় নেই। তখন দেখা যেত বিদেশি বন্ধুরা চাইছে শর্তহীন আলোচনা। দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও তাতে রাজি। সুতরাং নামকাওয়াস্তে হলেও একটা আলোচনার আয়োজন করতে হতো। আর আলোচনায় বসলে তো যে যার শর্ত নিয়েই আলোচনা করে। হয়তো সে আলোচনা বিরোধীদের জন্য কোনো ফল বয়ে আনত না। কিন্তু আন্দোলনরত বিরোধী দল অনেক বেশি সহানুভূতি পেত। রাজনৈতিক দৃশ্যপট এখনকার চেয়ে অনেকটাই ভিন্নতর হতো।
কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। যা হলো তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেখানে সংঘাত আছে। সংঘর্ষ আছে। আছে প্রাণহানির আশঙ্কাও। সর্বোপরি হয়তো আছে আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। তবে নয়া ইতিহাস সৃষ্টির সম্ভাবনা যে নেই, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৮ ঘণ্টা আগে