খাল দখলে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দী ১২ লাখ মানুষ

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৫০

ভারী বৃষ্টি ও ফেনী থেকে নেমে আসা বানের পানিতে গত ২০ আগস্ট প্লাবিত হয় নোয়াখালীর আট উপজেলা। সম্প্রতি এ বন্যা জেলার গত ৫০-৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। সরকারি হিসাবে, সারা দেশে চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে।

এদিকে বন্যা-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ হয়েছে জেলার জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি। এর কারণ হিসেবে খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট ও বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ।

গত বুধবার জেলা প্রশাসকের তথ্যমতে, জেলায় বন্যায় এখনো পানিবন্দী রয়েছেন ১১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। খোলা রয়েছে ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে এখনো রয়েছেন ৭ শতাধিক মানুষ। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো পানি রয়েছে প্রতিটি বাড়ির উঠোনে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ আগস্ট রাতে ফেনী থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ঢুকে পৌরসভার সব কটি এলাকা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে টানা ভারী বৃষ্টিতে প্রতিটি বাড়ির উঠোন ও সড়ক ৮-৯ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। নিজেরদের বসতঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বহুতল ভবন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন বন্যাকবলিত মানুষজন। এখনো অনেকে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন। 
বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল জেলার সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলা। কিন্তু বন্যার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পানিবন্দী রয়েছে চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ ওয়ার্ড। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ বাড়ির উঠোনে এখনো হাঁটুপানি রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয়, একই চিত্র জেলার সদরের নেয়াজপুর, চরমটুয়া, কাদির হানিফ ইউনিয়ন, কবিরহাটের নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড় ও ডমুরুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, নোয়াখালী খালের সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশ, শহরের মধ্যে ছাগলমারা খাল, চাটখিলের খিলপাড়া, রামনারায়ণপুর, বদলকোট, নোয়খলা, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া উত্তর পোল থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত, কলেজ গেট থেকে নান্দিয়াপাড়া পর্যন্ত, বজরা থেকে চাঁদুপুর পর্যন্ত খাল দখল হয়ে আছে। বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্থাপনা রয়েছে। চৌমুহনী বাজারে খালের সিংহভাগ অংশ ব্যবসায়ীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করেছেন। এ ছাড়া কবিরহাট উপজেলার রিকশাওয়ালার দোকান এলাকায় খালের মাঝখানে দেওয়া হয়েছে একাধিক বাঁধ। দখল করা হয়েছে ওয়াপদা খালের বেশির ভাগ অংশ। আর এই খাল দখল ও বাঁধই হয়েছে জেলার মানুষের গলার কাঁটা।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ বলেন, বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি সব কটি এলাকা অনেক নিচু। এদিকে চৌমুহনী বাজারের বড় খালগুলোতে ময়লা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। আশপাশের সবগুলো ছোট খাল দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। বড় খাল সংস্কার করার পাশাপাশি ছোট খালগুলোর দখল করা জায়গাগুলো উদ্ধার করা না হলে পানি সহজে নামবে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উপজেলার একাধিক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানিপ্রবাহ সচল করতে খাল পরিষ্কারের কাজও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দখল করে তৈরি স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খাল পুনঃ সংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত