কাজে ফেরেননি আসামি হিসেবে নাম থাকা পুলিশকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৫২
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ৪১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় করা কয়েকটি মামলায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। তাঁদের কয়েকজন চাকরিতে বহাল থাকলেও কর্মস্থলে যাচ্ছেন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মস্থলে হামলার আশঙ্কায় ওই কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পুলিশ সদর দপ্তরের পিআইএমএস (কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার) হ্যাক হয়েছিল। সেখানে কর্মকর্তাদের বাসা-বাড়ির ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য ছিল। ঢাকায় বসবাস করা ওই কর্মকর্তাদের কারও কারও বাসায় পরে হামলা হয়েছে। 

ডিএমপির সূত্র বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীতে নিহতের ঘটনায় অন্তত ২৭টি হত্যা মামলায় ৯৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে ডিএমপির কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ও মো. আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও খন্দকার নুরুন্নবী। ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ১০ আগস্ট থেকে অন্য কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিলেও তাঁরা আসেননি। এরই মধ্যে তাঁদের কাউকে কাউকে অবসরে পাঠানো হয়েছে, কাউকে কাউকে বদলি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. মাইনুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে অনেকের বদলি হয়েছে। তাঁরা স্টেশন ত্যাগ করছেন। যাঁরা আছেন তাঁদের অনেকেই অফিস করা শুরু করেছেন। 

তবে গত মঙ্গলবার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের তেমন দেখা যায়নি। সেদিন ডিবি ও সিটিটিসিতে সাত-আটজন করে কর্মকর্তাকে দেখা গেছে। ডিবিতে গুলশান বিভাগের নেতৃত্বে আসামিদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্য সাত ইউনিটের সেভাবে কার্যক্রম নেই। সিটিটিসির সদ্য সাবেক প্রধান মো. আসাদুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সাত দিন পর কেউ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হননি। ডিবি ইউনিটের প্রধানও ছিলেন না ১০ দিন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় নিহতের ঘটনায় ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়েছে। এই হত্যা মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের পাশাপাশি ডিএমপির রমনা বিভাগের চারজন কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আশরাফ ইমাম, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ, সহকারী কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম রিফাত ও নিউমার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে ডিসি আশরাফ ও ওসি আমিনুলকে বদলি করা হয়েছে। বাকি দুজন বদলি না হলেও ৫ আগস্টের পর আর অফিসে যাননি। 

একইভাবে ওই আন্দোলনের সময় কলেজছাত্র ইমাম হাসান তাইম হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম, এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ও উপপরিদর্শক শাহাদাৎ আলীকে। তাঁরা কেউ অফিস করছেন না। নিহত তাইমের বাবা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়া। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশের ওই কর্মকর্তাদের অনেককে নিয়মিত অনুসরণ করছেন। অফিসে এসেও খোঁজখবর নেন। অফিসে দেখলে দলেবলে এসে আক্রমণ করতে পারেন, সেই আশঙ্কায় মামলায় আসামি হওয়া অনেক কর্মকর্তা অফিসে যাচ্ছেন না। 

জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের এখানে আসলে কিছু করার নেই। প্রথমে তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুলিশ সদস্যরা কোনো দলের হয়ে কাজ না করে আইন অনুযায়ী কাজ করলে এমন সংকট কখনো হতো না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত