খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরুনা গ্রামে হরি নদীর তীরে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছে ২৭ পরিবার। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলেছে। হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন, মাছ ও সবজি চাষ করে সচ্ছলতা ফিরেছে তাঁদের। সন্তানেরা পেয়েছে পড়ালেখা করার সুযোগ। আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁরা।

জানা গেছে, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ধামালিয়া ইউনিয়নের বরুনা পশ্চিমপাড়া এলাকায় হরি নদীর চরের ৮৫ শতাংশ জমির ওপর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২৭টি পরিবারের জন্য রঙিন পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে একযোগে ঘরগুলো হস্তান্তর করলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ আশ্রয়ণে বসবাস শুরু করেন ঘর পাওয়া পরিবারগুলো।

ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করছে পাশের বিডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ণের প্রতিটি ঘরের আঙিনায় লাগানো হয়েছে নানান শাক-সবজি। আশ্রয়ণের প্রায় সবারই রয়েছে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। আশ্রয়ণের পুকুরটিতে করা হচ্ছে মাছ চাষ। পুরুষেরা গেছেন দৈনন্দিন কাজে। ছেলে-মেয়েরা গেছে স্কুলে। নারীরা গৃহে নানান কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশ্রয়ণের উত্তর দিকে নদীর পাশ দিয়ে ১২ ফুট প্রস্থের একটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সুপেয় পানির জন্য ৩টি গভীর টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে মিলেমিশে বাস করছেন এখানে।

আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া রূপসী বিশ্বাস নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘আগে বসবাস করার মতো বাড়ি ছিল না আমাদের। দিন শেষে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারতাম না। বৃষ্টির সময় ঘরের মধ্যে পানি পড়ত। এখন প্রধানমন্ত্রী জমিসহ সুন্দর একটি পাকা ঘর দিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের কুঠির। তিন ছেলে মেয়ের একজন পাশের বিডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। স্বামী অসিত বিশ্বাস দিনমজুরের কাজের পাশাপাশি আশ্রয়ণের ঘরের আঙিনায় সবজি চাষ করেন। আমি নিজেও হাঁস-মুরগি পালন করি। সব মিলিয়ে আগের থেকে অনেক ভালো আছি।’

আরেক বাসিন্দা ইব্রাহিম দফাদারের স্ত্রী নার্গিস বেগম (২৪) বলেন, ‘কাটেঙ্গা পূর্বপাড়া এলাকা থেকে আমরা এখানে এসেছি। আগে ছোট্ট ভাঙা ঘরের মধ্যে শিশুসন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টিতে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। সরকার আমাদের এখন জমিসহ রঙিন পাকা ঘর দিয়েছে, আমরা অনেক খুশি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন। এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬৪০টি ঘর হস্তান্তরিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৫টি ঘরের কাজ চলমান। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে।’