মৃত্যুঞ্জয় রায়
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে পৃথিবীর গোটা জীবজগতের ওপর বেশ ভালোভাবেই পড়েছে, তা একাধিক গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অনেক প্রাণীর দেহের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে, রং ও চেহারা বদলে যাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার জন্য অনেক উদ্ভিদের শারীরিক গঠনে পরিবর্তন এসেছে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫২টি প্রজাতির প্রায় ৭০ হাজার পাখির ওপর গবেষণা চালান অস্ট্রেলিয়ার ডেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণায় তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ক্রমশ আকার বদলাচ্ছে সেই সব পাখির। এর ব্যাখ্যাও তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ডারউইনের সেই পুরোনো তত্ত্বে। তত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছিল, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেহের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যেকোনো প্রাণী তার দেহতল বাড়ায়। বহু বছর আগে করা ডারউইনের তত্ত্বের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে একালের বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও পর্যালোচনা। অনেক পাখি ও প্রাণীর দেহের মূল কাঠামো বা গড়ন ঠিক থাকলেও কিছু কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ হিসেবে গবেষক দলের গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সারা রাইডিং বলেছেন, ১৮৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই দেড় শ বছরে অস্ট্রেলিয়ান তোতাপাখির চোখের আকার বেড়েছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ। এভাবে কোনো কোনো প্রাণীর বেড়েছে নখ ও লেজের দৈর্ঘ্য। এসেছে বিভিন্ন প্রাণীর আচরণেরও পরিবর্তন।
মেরু অঞ্চলের পুরুষ ভালুকেরা বাঁচার জন্য এখন মেয়ে ও শিশু মেরু ভালুকদের খেয়ে ফেলছে। সেখানে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তনকে বিবর্তনের স্বাভাবিক ধারা হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীদের মানিয়ে নেওয়ার ঘটনা হিসেবে মানতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এসব পরিবর্তনের সঙ্গে যখন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্পর্ক দেখা যায়, তখন তা আমাদের অবশ্যই দুশ্চিন্তায় ফেলে। কোনো প্রজাতির ব্যাপক পরিবর্তন ও বিলুপ্তি গোটা জীবজগতের খাদ্যশৃঙ্খলের বিশৃঙ্খলাকেই ইঙ্গিত দেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তির শঙ্কা। আমরা কি তাহলে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দিকেই যাচ্ছি? তেজষ্ক্রিয়মিতি অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫৭ কোটি বছর। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদ্যাগত ঘটনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, পৃথিবীতে এর আগে পাঁচবার গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন যুগের সীমা নির্ধারিত হয়েছে এ ধরনের গণবিলুপ্তির ঘটনায়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিটেশিয়াস যুগ ও প্যালিওজিন যুগের সীমা নির্ধারণ করেছে একটি বিলুপ্তির ঘটনা, যার নাম ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি বিলুপ্তির ঘটনা। এই বিলুপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বিলুপ্তির ঝুঁকি
গত ৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বিশ্বখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ প্রজাতির উদ্ভিদ ও মেরুদণ্ডী প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা এর আগে জাতিসংঘের হিসাবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এই পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, তার মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশ হলো অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যাদের ৯০ শতাংশ পতঙ্গ বা পোকামাকড়। এসব পোকামাকড় আমাদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরাগায়ণ ঘটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এরা জৈব আবর্জনা পচিয়ে মাটিকে উর্বর করছে।
সত্যি যদি পোকামাকড় এই পৃথিবীতে না থাকে বা কমে যায়, তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনে বর্তমানে ২৪ শতাংশ অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ১৮ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং ২৭ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমরা শুধু পৃথিবীর ওপরের জীববৈচিত্র্য নিয়েই ভাবছি। অথচ মাটির মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জীবগোষ্ঠী। গবেষকেরা বলেন, এখন যে হারে যত দ্রুত বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের বিলোপ ঘটছে, এর আগে মানবসভ্যতার ইতিহাসে আর কখনো সেরূপ দেখা যায়নি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী ৫০ বছরে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে তিন ভাগের এক ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি।
প্রকৃতির রূপবদল
ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান অবস্থা বোঝাতে গত ২১ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃতি তার রূপ পরিবর্তনের ধরন পাল্টেছে। এতে বদলে যাচ্ছে ঋতুবৈচিত্র্য। গাছে ফুল ফুটছে হয় আগে, না হয় পরে। জাপানে গত ৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর চেরি ফুল ফোটার তারিখ রেকর্ড করা হচ্ছে। রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালেও চেরি ফুল ফুটেছিল ২৬ মার্চ, ২০২২ সালে ফুটেছে ১ এপ্রিল। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশ হয়ে গেছে ২ বা ৩ ঋতুর। এভাবে ঋতু বদলের বিপাকে ভবিষ্যতে কদম ফুল কখন ফুটবে, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কদম ফুল বর্ষায় ফুটত, এখন তা বছরের বিভিন্ন সময়ে ফুটছে। হেমন্তেও এখন কদম ফুল ফুটছে। জাত বা ঋতুচক্রের বিপাকে পড়ে হোক, বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বেই হোক, এখন অসময়েও আমগাছে মুকুল আসছে। তবে উদ্ভিদজগতে জলবায়ুর প্রভাব কিন্তু সুস্পষ্ট।
স্বাস্থ্যের ক্ষতি
সম্প্রতি এক সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এবং বায়ু, পানি ও মাটির গুণমান প্রভাবিত করে দূষণের মাত্রা আরও খারাপ করে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও সমস্ত জীবের স্বাস্থ্যের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অনেক রোগ-জীবাণু আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কোনো কোনো জীবাণু। বিগত কুড়ি বছরে ডেঙ্গু রোগ বিস্তৃত হয়েছে ১২৯টি দেশে, যা কুড়ি বছর আগে সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ৯টি দেশে। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে আগের চেয়ে এখন প্রতিটি পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় কতটা বেড়ে গেছে, স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার কারণে আমাদের কতটা কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
দরকার প্রকৃতিপ্রেম
পরিবেশসংশ্লিষ্ট সবাই এখন উপলব্ধি করছেন, আমাদের তথা মানব জাতি ও পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ মূলে কাজ করতে হবে। কথার চেয়ে এখন কাজই বেশি দরকার। কোন দেশে কে কী করেছে, তা জানার চেয়ে নিজেরা কী করছি তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের দেশ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস কত শতাংশ কমাব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রোডম্যাপ আছে? নিলে তার কৌশলগুলো কী, তা কি আমরা সবাই জানি? সেই লক্ষ্যে কতটুকু কাজ হয়েছে, অগ্রগতি কী—এসব পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তবে এর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি দরকার সবার আগে।
প্রথমে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে পারিবারিকভাবে পরিবেশ শিক্ষায় শিশুদের শিক্ষিত বা আগ্রহী করতে, যেন প্রথম থেকেই তারা নিজেদের পরিবেশের প্রতি যত্নবান হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশকর্মী, সংগঠন, গ্রুপ ও তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে সঠিক কৌশলপত্র প্রণয়ন করে জীবজগতের প্রতিটি জীবের প্রতি দয়াবান হওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে। শিক্ষালয়ের পাঠ্যবইয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কতটুকু আছে, সেটাও দেখতে হবে, পাঠ্যক্রমে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যোগ করতে হবে। অন্তর থেকে পরিবেশ ও জীবের প্রতি মমতা সৃষ্টি না হলে হাজার পাতা লিখে ও বক্তৃতা দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
আমেরিকান লেখিকা লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের (১৮৬৭-১৯৫৭) কথাটাই বড় সত্যি হয়ে যেন আজ কানে বাজছে, ‘যদি তুমি সত্যি সত্যি প্রকৃতিকে ভালোবাসো, তুমি সর্বত্রই সুন্দরকে খুঁজে পাবে।’
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে পৃথিবীর গোটা জীবজগতের ওপর বেশ ভালোভাবেই পড়েছে, তা একাধিক গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অনেক প্রাণীর দেহের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে, রং ও চেহারা বদলে যাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার জন্য অনেক উদ্ভিদের শারীরিক গঠনে পরিবর্তন এসেছে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫২টি প্রজাতির প্রায় ৭০ হাজার পাখির ওপর গবেষণা চালান অস্ট্রেলিয়ার ডেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণায় তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ক্রমশ আকার বদলাচ্ছে সেই সব পাখির। এর ব্যাখ্যাও তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ডারউইনের সেই পুরোনো তত্ত্বে। তত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছিল, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেহের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যেকোনো প্রাণী তার দেহতল বাড়ায়। বহু বছর আগে করা ডারউইনের তত্ত্বের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে একালের বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও পর্যালোচনা। অনেক পাখি ও প্রাণীর দেহের মূল কাঠামো বা গড়ন ঠিক থাকলেও কিছু কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ হিসেবে গবেষক দলের গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সারা রাইডিং বলেছেন, ১৮৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই দেড় শ বছরে অস্ট্রেলিয়ান তোতাপাখির চোখের আকার বেড়েছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ। এভাবে কোনো কোনো প্রাণীর বেড়েছে নখ ও লেজের দৈর্ঘ্য। এসেছে বিভিন্ন প্রাণীর আচরণেরও পরিবর্তন।
মেরু অঞ্চলের পুরুষ ভালুকেরা বাঁচার জন্য এখন মেয়ে ও শিশু মেরু ভালুকদের খেয়ে ফেলছে। সেখানে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তনকে বিবর্তনের স্বাভাবিক ধারা হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীদের মানিয়ে নেওয়ার ঘটনা হিসেবে মানতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এসব পরিবর্তনের সঙ্গে যখন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্পর্ক দেখা যায়, তখন তা আমাদের অবশ্যই দুশ্চিন্তায় ফেলে। কোনো প্রজাতির ব্যাপক পরিবর্তন ও বিলুপ্তি গোটা জীবজগতের খাদ্যশৃঙ্খলের বিশৃঙ্খলাকেই ইঙ্গিত দেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তির শঙ্কা। আমরা কি তাহলে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দিকেই যাচ্ছি? তেজষ্ক্রিয়মিতি অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫৭ কোটি বছর। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদ্যাগত ঘটনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, পৃথিবীতে এর আগে পাঁচবার গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন যুগের সীমা নির্ধারিত হয়েছে এ ধরনের গণবিলুপ্তির ঘটনায়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিটেশিয়াস যুগ ও প্যালিওজিন যুগের সীমা নির্ধারণ করেছে একটি বিলুপ্তির ঘটনা, যার নাম ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি বিলুপ্তির ঘটনা। এই বিলুপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বিলুপ্তির ঝুঁকি
গত ৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বিশ্বখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ প্রজাতির উদ্ভিদ ও মেরুদণ্ডী প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা এর আগে জাতিসংঘের হিসাবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এই পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, তার মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশ হলো অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যাদের ৯০ শতাংশ পতঙ্গ বা পোকামাকড়। এসব পোকামাকড় আমাদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরাগায়ণ ঘটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এরা জৈব আবর্জনা পচিয়ে মাটিকে উর্বর করছে।
সত্যি যদি পোকামাকড় এই পৃথিবীতে না থাকে বা কমে যায়, তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনে বর্তমানে ২৪ শতাংশ অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ১৮ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং ২৭ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমরা শুধু পৃথিবীর ওপরের জীববৈচিত্র্য নিয়েই ভাবছি। অথচ মাটির মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জীবগোষ্ঠী। গবেষকেরা বলেন, এখন যে হারে যত দ্রুত বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের বিলোপ ঘটছে, এর আগে মানবসভ্যতার ইতিহাসে আর কখনো সেরূপ দেখা যায়নি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী ৫০ বছরে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে তিন ভাগের এক ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি।
প্রকৃতির রূপবদল
ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান অবস্থা বোঝাতে গত ২১ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃতি তার রূপ পরিবর্তনের ধরন পাল্টেছে। এতে বদলে যাচ্ছে ঋতুবৈচিত্র্য। গাছে ফুল ফুটছে হয় আগে, না হয় পরে। জাপানে গত ৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর চেরি ফুল ফোটার তারিখ রেকর্ড করা হচ্ছে। রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালেও চেরি ফুল ফুটেছিল ২৬ মার্চ, ২০২২ সালে ফুটেছে ১ এপ্রিল। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশ হয়ে গেছে ২ বা ৩ ঋতুর। এভাবে ঋতু বদলের বিপাকে ভবিষ্যতে কদম ফুল কখন ফুটবে, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কদম ফুল বর্ষায় ফুটত, এখন তা বছরের বিভিন্ন সময়ে ফুটছে। হেমন্তেও এখন কদম ফুল ফুটছে। জাত বা ঋতুচক্রের বিপাকে পড়ে হোক, বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বেই হোক, এখন অসময়েও আমগাছে মুকুল আসছে। তবে উদ্ভিদজগতে জলবায়ুর প্রভাব কিন্তু সুস্পষ্ট।
স্বাস্থ্যের ক্ষতি
সম্প্রতি এক সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এবং বায়ু, পানি ও মাটির গুণমান প্রভাবিত করে দূষণের মাত্রা আরও খারাপ করে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও সমস্ত জীবের স্বাস্থ্যের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অনেক রোগ-জীবাণু আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কোনো কোনো জীবাণু। বিগত কুড়ি বছরে ডেঙ্গু রোগ বিস্তৃত হয়েছে ১২৯টি দেশে, যা কুড়ি বছর আগে সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ৯টি দেশে। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে আগের চেয়ে এখন প্রতিটি পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় কতটা বেড়ে গেছে, স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার কারণে আমাদের কতটা কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
দরকার প্রকৃতিপ্রেম
পরিবেশসংশ্লিষ্ট সবাই এখন উপলব্ধি করছেন, আমাদের তথা মানব জাতি ও পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ মূলে কাজ করতে হবে। কথার চেয়ে এখন কাজই বেশি দরকার। কোন দেশে কে কী করেছে, তা জানার চেয়ে নিজেরা কী করছি তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের দেশ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস কত শতাংশ কমাব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রোডম্যাপ আছে? নিলে তার কৌশলগুলো কী, তা কি আমরা সবাই জানি? সেই লক্ষ্যে কতটুকু কাজ হয়েছে, অগ্রগতি কী—এসব পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তবে এর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি দরকার সবার আগে।
প্রথমে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে পারিবারিকভাবে পরিবেশ শিক্ষায় শিশুদের শিক্ষিত বা আগ্রহী করতে, যেন প্রথম থেকেই তারা নিজেদের পরিবেশের প্রতি যত্নবান হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশকর্মী, সংগঠন, গ্রুপ ও তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে সঠিক কৌশলপত্র প্রণয়ন করে জীবজগতের প্রতিটি জীবের প্রতি দয়াবান হওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে। শিক্ষালয়ের পাঠ্যবইয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কতটুকু আছে, সেটাও দেখতে হবে, পাঠ্যক্রমে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যোগ করতে হবে। অন্তর থেকে পরিবেশ ও জীবের প্রতি মমতা সৃষ্টি না হলে হাজার পাতা লিখে ও বক্তৃতা দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
আমেরিকান লেখিকা লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের (১৮৬৭-১৯৫৭) কথাটাই বড় সত্যি হয়ে যেন আজ কানে বাজছে, ‘যদি তুমি সত্যি সত্যি প্রকৃতিকে ভালোবাসো, তুমি সর্বত্রই সুন্দরকে খুঁজে পাবে।’
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৯ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৯ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৯ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১০ ঘণ্টা আগে