তরুণ চক্রবর্তী
সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে