হিলাল ফয়েজী
বাল্যকালে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ‘ডি ভ্যালেরার ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামের একটি রচনা। ডি ভ্যালেরা ইংল্যান্ডের হাত থেকে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান নেতা। কারাবন্দী অবস্থায় কী করে কারাগারের তালার নকশা সাবানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে সেই সাবান বাইরে পাঠিয়ে চাবি তৈরির ব্যবস্থা করে, সেই চাবি জেলের ভেতরে এনে তালা খুলে স্বমুক্তির আয়োজন করেছিল—এই কাহিনি মনের ভেতরে যে ছাপ ফেলেছে ষাট-পঁয়ষট্টি বছর আগে, আজও তা উদ্দীপিত রাখে।
না, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ‘তাজুলের ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামে কোনো রচনার আশা করি না। এ দেশে তাজুল ইসলাম কিংবা নূর হোসেনরা ‘শহীদ’ হয়েও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান না। পৃথিবীতে আর কোথাও খালি গায়ে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে-পিঠে লিখে বুলেট বিদীর্ণ হওয়ার কাহিনি শুনিনি। একজন খেতমজুর সংগঠক কিশোরগঞ্জ থেকে সাইকেল চালিয়ে নূর হোসেনের শাহাদাতের দিনে মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন—সেই শহীদ টিটোর খোঁজ আমরা রাখি না।
একজন ‘তাজুল’কেও আমরা হয়তো ভুলে গেছি। দেশে বিপুল শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আছেন, দুর্ভাগ্য সুস্থ-সাহসী-সদুদ্দেশ্যে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন বিরল। ২০২৩ সালের ১ মার্চ শহীদ তাজুল দিবসে একাই গিয়েছিলাম তাজুলের অন্তিম ঠিকানা উত্তর মতলবগঞ্জের বদরপুর, বেলতলী, শিকদারবাড়ীতে। ‘এক তাজুলের রক্ত থেকে লক্ষ তাজুল জন্ম নেবে’—এই স্লোগান তাজুলের বিবর্ণ সমাধিতে মাথা কুটে মরছে। তাজুলকে আমরা বুঝি ভুলে গেছি ৪০ বছরেই। না, ক্ষমা চাওয়ার মতো নৈতিক সাহস পোষণ করি না। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বুঝিবা একই সঙ্গে তাজুলও বিলীন হয়ে গেছেন। প্রশ্ন নিজের কাছে, আমরা কি তাজুলকে বিলীন হতে দেব?
প্রতিকূল পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবারে জন্ম নেওয়া তাজুল ইসলাম অসাধারণ মেধাবী ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। দারিদ্র্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাজুল একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই তখনকার দেশের এক নম্বর কলেজ ‘ঢাকা কলেজে’ ভর্তি হয়েছিলেন মানবিক বিভাগে। তাজুলকে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভূমিকা আমারও ছিল। তখন বুঝিনি ‘বিপ্লবের লাল ফুল’ হয়ে তাজুল বাংলা মাতাবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
সেই তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়েছেন। নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলানোর অমোঘ কামনা তাঁকে নিয়ে গেল আদমজী পাটকলে, ঢাকার অদূরে, সিদ্ধিরগঞ্জে। উচ্চশিক্ষিত তাজুল ‘ক্যারিয়ার’ গড়ার অতি স্বাভাবিক গতিধারায় শামিল হননি। তিনি শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করার কঠিন কাজটুকু স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার ‘অহং’ চূর্ণ করে তিনি এমন একটি উদাহরণ গড়লেন, যার নজির গোটা পৃথিবীতে আর আছে কি না, জানা নেই আমার। তাজুল ঠিক ‘শ্রমিকের মতো শ্রমিক’ হয়ে নিজে চট বানানোর যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়লেন একজন বদলি পাটশ্রমিক হিসেবে। তিনি শ্রমিকের বস্তিতে একজন বস্তিবাসী হয়ে শ্রমিক সংগঠন গড়তে শুরু করলেন। এমন উদাহরণ শ্রমিকেরা দেখেননি। সবার কাছে ‘শ্রদ্ধার পাত্র’ হতে সময় লাগেনি তাঁর।
আদমজী পাটকল তখন রাষ্ট্রায়ত্ত হলেও এই বিশাল কারখানায় ‘কায়েমি স্বার্থ’ প্রবল হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময় আদমজী-তেজগাঁও-টঙ্গীতে হাজার হাজার শ্রমিক যোগ দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম বেগবান করার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলতে গেলে সেই শ্রমিক নেতৃত্বই উত্তরকালে স্বৈরসামরিক সরকারের পদলেহন করে চলছিল ১৯৮৪ সালে। তাজুল ছিলেন তাদের পথের কাঁটা। তদুপরি শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে মিলমালিক যে শাসন চালিয়ে আসছিল, সেই বিষাক্ত অস্ত্র দিয়েও তাজুলকে আঘাত করে করে ‘শ্রমিকবিচ্ছিন্ন’ করে রাখার চেষ্টা হয়েছে। বিষাক্ত অস্ত্রটির নাম ‘আঞ্চলিকতা’। অর্থাৎ, ঢাকা-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের ভিত্তিতেই মূলত শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে সামষ্টিক শ্রমিক আন্দোলন বিভক্ত করে রাখা হতো।
এদিকে গ্রামের এক সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে নাসিমার সঙ্গে জীবনঘর গড়লেন তাজুল পারস্পরিক হৃদয় অনুভবে। নাসিমার জনক তাজুলের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করার নানা রকম আয়োজন করতে চাইলেন। তাজুল সেই প্রয়াসে যুক্ত হতে অস্বীকার করলেন। নাসিমা বললেন, ‘আমাদের দুটি সন্তান, আমি তো মা হিসেবে ওদের দুধের জোগান দিতে চাইব।’ তাজুল বললেন, ‘তুমি আমার যোগ্য হয়ে ওঠো। দারিদ্র্যের কঠিন পরীক্ষায় আমাদের পাস করতেই হবে।’ নাসিমা তা-ও মেনে নিলেন জীবনসঙ্গীর চেতনার দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি ছিল সচেতন, ব্যতিক্রমী। সন্তানের ক্ষুধা এবং অপুষ্টিতেও তাজুল ছিলেন অটল।
এমনি তাজুলকে আদমজী কর্তৃপক্ষ ও কায়েমি শ্রমিক নেতৃত্ব সহ্য করতে পারেনি। তারা ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হরতালের সময় আদমজী পাটকলে পিকেটিংয়ের সময় তাজুলের মাথায় এমনভাবে আঘাত হানে, যাতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়। হিংস্র শক্তির হাতে তাজুলের এই মর্মান্তিক জীবনাবসানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও তেজি হয়ে ওঠে। সারা দেশে এমন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী শ্রমিকনেতার জীবন উদাহরণে এক অসাধারণ বিস্ময় ও শ্রদ্ধার উন্মেষ ঘটায়।
স্বৈরচার জেনারেল এরশাদের ওপর সবটুকু দোষ আমরা দিলেই তাজুলের মৃত্যুর সব অপরাধীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। তাজুলের জীবনসঙ্গিনী যত দিন বেঁচে ছিলেন, এই কষ্ট, এই ক্ষোভ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আদমজীতে সেই রাতে ঢাকা ও নোয়াখালীর নেতৃত্ব একজোট হয়ে তাজুলকে আঘাত হেনেছিল। সেখানে তাজুলের সংগঠনের নেতৃত্বেরও সংযোগ ছিল বলে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
শহীদ তাজুলের কমিউনিস্ট পার্টি, শহীদ তাজুলের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র তাজুল হত্যার সব দোষ স্বৈরাচারের ওপর ন্যস্ত করেই ক্ষান্ত ছিল, একটি তদন্ত কমিটিও করেনি। বরং সন্দেহের বিষয়টিকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচার ও ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনের সবটুকু সম্পন্ন হয়নি। ইতিহাসে অনেক কাল পরেও হত্যার তদন্ত হয়। তাজুলের নেতৃত্বের কেউ কেউ বেঁচে আছেন, একটি তদন্ত কি এখনো হতে পারে না?
অনেকে বলেন, তাজুল বেঁচে থাকলে শাসকগোষ্ঠী আদমজী পাটকল বিলীন করে দিতে সক্ষম হতো না। সে কথায় না গিয়েও বলি, তাজুল হত্যার অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হোক না হোক, বিপ্লবী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুলের ইচ্ছাশক্তিকে আমরা সমুজ্জ্বল রাখবই। আদমজী জুট মিল এলাকাতেই হোক কিংবা তাজুলের সমাধিপ্রান্তর উত্তর মতলবের বেলতলীতেই হোক, তাজুলের আত্মদানের একটি সম্মানসৌধ আমাদের গড়তেই হবে। তাজুলের যেসব সঙ্গী বেঁচে আছেন, এটি তাদের মহতী কর্তব্য। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি উদ্বুদ্ধ করুক নিপীড়িত মানবসমাজকে।
লেখক: প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা একাত্তর
বাল্যকালে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ‘ডি ভ্যালেরার ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামের একটি রচনা। ডি ভ্যালেরা ইংল্যান্ডের হাত থেকে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান নেতা। কারাবন্দী অবস্থায় কী করে কারাগারের তালার নকশা সাবানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে সেই সাবান বাইরে পাঠিয়ে চাবি তৈরির ব্যবস্থা করে, সেই চাবি জেলের ভেতরে এনে তালা খুলে স্বমুক্তির আয়োজন করেছিল—এই কাহিনি মনের ভেতরে যে ছাপ ফেলেছে ষাট-পঁয়ষট্টি বছর আগে, আজও তা উদ্দীপিত রাখে।
না, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ‘তাজুলের ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামে কোনো রচনার আশা করি না। এ দেশে তাজুল ইসলাম কিংবা নূর হোসেনরা ‘শহীদ’ হয়েও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান না। পৃথিবীতে আর কোথাও খালি গায়ে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে-পিঠে লিখে বুলেট বিদীর্ণ হওয়ার কাহিনি শুনিনি। একজন খেতমজুর সংগঠক কিশোরগঞ্জ থেকে সাইকেল চালিয়ে নূর হোসেনের শাহাদাতের দিনে মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন—সেই শহীদ টিটোর খোঁজ আমরা রাখি না।
একজন ‘তাজুল’কেও আমরা হয়তো ভুলে গেছি। দেশে বিপুল শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আছেন, দুর্ভাগ্য সুস্থ-সাহসী-সদুদ্দেশ্যে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন বিরল। ২০২৩ সালের ১ মার্চ শহীদ তাজুল দিবসে একাই গিয়েছিলাম তাজুলের অন্তিম ঠিকানা উত্তর মতলবগঞ্জের বদরপুর, বেলতলী, শিকদারবাড়ীতে। ‘এক তাজুলের রক্ত থেকে লক্ষ তাজুল জন্ম নেবে’—এই স্লোগান তাজুলের বিবর্ণ সমাধিতে মাথা কুটে মরছে। তাজুলকে আমরা বুঝি ভুলে গেছি ৪০ বছরেই। না, ক্ষমা চাওয়ার মতো নৈতিক সাহস পোষণ করি না। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বুঝিবা একই সঙ্গে তাজুলও বিলীন হয়ে গেছেন। প্রশ্ন নিজের কাছে, আমরা কি তাজুলকে বিলীন হতে দেব?
প্রতিকূল পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবারে জন্ম নেওয়া তাজুল ইসলাম অসাধারণ মেধাবী ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। দারিদ্র্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাজুল একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই তখনকার দেশের এক নম্বর কলেজ ‘ঢাকা কলেজে’ ভর্তি হয়েছিলেন মানবিক বিভাগে। তাজুলকে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভূমিকা আমারও ছিল। তখন বুঝিনি ‘বিপ্লবের লাল ফুল’ হয়ে তাজুল বাংলা মাতাবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
সেই তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়েছেন। নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলানোর অমোঘ কামনা তাঁকে নিয়ে গেল আদমজী পাটকলে, ঢাকার অদূরে, সিদ্ধিরগঞ্জে। উচ্চশিক্ষিত তাজুল ‘ক্যারিয়ার’ গড়ার অতি স্বাভাবিক গতিধারায় শামিল হননি। তিনি শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করার কঠিন কাজটুকু স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার ‘অহং’ চূর্ণ করে তিনি এমন একটি উদাহরণ গড়লেন, যার নজির গোটা পৃথিবীতে আর আছে কি না, জানা নেই আমার। তাজুল ঠিক ‘শ্রমিকের মতো শ্রমিক’ হয়ে নিজে চট বানানোর যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়লেন একজন বদলি পাটশ্রমিক হিসেবে। তিনি শ্রমিকের বস্তিতে একজন বস্তিবাসী হয়ে শ্রমিক সংগঠন গড়তে শুরু করলেন। এমন উদাহরণ শ্রমিকেরা দেখেননি। সবার কাছে ‘শ্রদ্ধার পাত্র’ হতে সময় লাগেনি তাঁর।
আদমজী পাটকল তখন রাষ্ট্রায়ত্ত হলেও এই বিশাল কারখানায় ‘কায়েমি স্বার্থ’ প্রবল হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময় আদমজী-তেজগাঁও-টঙ্গীতে হাজার হাজার শ্রমিক যোগ দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম বেগবান করার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলতে গেলে সেই শ্রমিক নেতৃত্বই উত্তরকালে স্বৈরসামরিক সরকারের পদলেহন করে চলছিল ১৯৮৪ সালে। তাজুল ছিলেন তাদের পথের কাঁটা। তদুপরি শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে মিলমালিক যে শাসন চালিয়ে আসছিল, সেই বিষাক্ত অস্ত্র দিয়েও তাজুলকে আঘাত করে করে ‘শ্রমিকবিচ্ছিন্ন’ করে রাখার চেষ্টা হয়েছে। বিষাক্ত অস্ত্রটির নাম ‘আঞ্চলিকতা’। অর্থাৎ, ঢাকা-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের ভিত্তিতেই মূলত শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে সামষ্টিক শ্রমিক আন্দোলন বিভক্ত করে রাখা হতো।
এদিকে গ্রামের এক সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে নাসিমার সঙ্গে জীবনঘর গড়লেন তাজুল পারস্পরিক হৃদয় অনুভবে। নাসিমার জনক তাজুলের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করার নানা রকম আয়োজন করতে চাইলেন। তাজুল সেই প্রয়াসে যুক্ত হতে অস্বীকার করলেন। নাসিমা বললেন, ‘আমাদের দুটি সন্তান, আমি তো মা হিসেবে ওদের দুধের জোগান দিতে চাইব।’ তাজুল বললেন, ‘তুমি আমার যোগ্য হয়ে ওঠো। দারিদ্র্যের কঠিন পরীক্ষায় আমাদের পাস করতেই হবে।’ নাসিমা তা-ও মেনে নিলেন জীবনসঙ্গীর চেতনার দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি ছিল সচেতন, ব্যতিক্রমী। সন্তানের ক্ষুধা এবং অপুষ্টিতেও তাজুল ছিলেন অটল।
এমনি তাজুলকে আদমজী কর্তৃপক্ষ ও কায়েমি শ্রমিক নেতৃত্ব সহ্য করতে পারেনি। তারা ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হরতালের সময় আদমজী পাটকলে পিকেটিংয়ের সময় তাজুলের মাথায় এমনভাবে আঘাত হানে, যাতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়। হিংস্র শক্তির হাতে তাজুলের এই মর্মান্তিক জীবনাবসানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও তেজি হয়ে ওঠে। সারা দেশে এমন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী শ্রমিকনেতার জীবন উদাহরণে এক অসাধারণ বিস্ময় ও শ্রদ্ধার উন্মেষ ঘটায়।
স্বৈরচার জেনারেল এরশাদের ওপর সবটুকু দোষ আমরা দিলেই তাজুলের মৃত্যুর সব অপরাধীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। তাজুলের জীবনসঙ্গিনী যত দিন বেঁচে ছিলেন, এই কষ্ট, এই ক্ষোভ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আদমজীতে সেই রাতে ঢাকা ও নোয়াখালীর নেতৃত্ব একজোট হয়ে তাজুলকে আঘাত হেনেছিল। সেখানে তাজুলের সংগঠনের নেতৃত্বেরও সংযোগ ছিল বলে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
শহীদ তাজুলের কমিউনিস্ট পার্টি, শহীদ তাজুলের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র তাজুল হত্যার সব দোষ স্বৈরাচারের ওপর ন্যস্ত করেই ক্ষান্ত ছিল, একটি তদন্ত কমিটিও করেনি। বরং সন্দেহের বিষয়টিকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচার ও ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনের সবটুকু সম্পন্ন হয়নি। ইতিহাসে অনেক কাল পরেও হত্যার তদন্ত হয়। তাজুলের নেতৃত্বের কেউ কেউ বেঁচে আছেন, একটি তদন্ত কি এখনো হতে পারে না?
অনেকে বলেন, তাজুল বেঁচে থাকলে শাসকগোষ্ঠী আদমজী পাটকল বিলীন করে দিতে সক্ষম হতো না। সে কথায় না গিয়েও বলি, তাজুল হত্যার অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হোক না হোক, বিপ্লবী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুলের ইচ্ছাশক্তিকে আমরা সমুজ্জ্বল রাখবই। আদমজী জুট মিল এলাকাতেই হোক কিংবা তাজুলের সমাধিপ্রান্তর উত্তর মতলবের বেলতলীতেই হোক, তাজুলের আত্মদানের একটি সম্মানসৌধ আমাদের গড়তেই হবে। তাজুলের যেসব সঙ্গী বেঁচে আছেন, এটি তাদের মহতী কর্তব্য। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি উদ্বুদ্ধ করুক নিপীড়িত মানবসমাজকে।
লেখক: প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা একাত্তর
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে