আসিফ
১৯৯৯ সালের এপ্রিলের কোনো একদিন আমি আর প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা গিয়েছিলাম শিমুলিয়া থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দর্শনে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় একজন শরফুদ্দিন সাহেব। দ্বিজেন শর্মার গ্রাম শিমুলিয়া। সেটা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে আট কিলোমিটারের পথ ছিল।
সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম, দুই পাশে টিলা এবং গাছপালার সারি। যত ভেতরে প্রবেশ করছি, ক্রমেই তা ঘন হয়ে উঠেছে। কখনো পাখির ডাক, কখনো ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে টিলার ওপরে মানুষজন ঘর-বাড়ি উঠিয়ে বসতি গড়ে তুলেছে। প্রচণ্ড রোদে পাহাড়ি অঞ্চল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। দূরে পাথারিয়া পাহাড় দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে খাসিয়াপঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আঁকাবাঁকা পথ ধরে কোথায় যেন চলছে। শরফুদ্দিনের কাছে জানা গেল, এ স্থানটা আরও ঘন ছিল, ঢোকাও সহজসাধ্য ছিল না, রয়েল বেঙ্গল টাইগারও ছিল; আসামের জঙ্গল থেকে আসত পাথারিয়া পাহাড়ে হাতি, গন্ডার ও বন্য মহিষের দল। তবে যেভাবে চারদিকে গাছ ও বনজঙ্গল নিধনের আয়োজন দেখলাম, তাতে কয়েক দিন পরে মশা-মাছি ছাড়া কিছুই থাকবে না, বন একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। টিলাময় চা-বাগানের ভেতর দিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে যেতে সেই সব ভয়াবহ দিনের গল্পই হচ্ছিল।
ওই সময় তিনি আমাকে ব্রাজিলের বন ধ্বংসের একটি গল্প বলেছিলেন। স্থানীয় লোকদের ব্যবহার করে বন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এরপর ওখানে প্রচুর ঘাস জন্মে ও গবাদিপশুর চারণভূমিতে রূপান্তরিত হয় এবং পশু পালনে মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। গজিয়ে ওঠে নানা ধরনের পশুপালনের খামার। যেহেতু ওই জমির উর্বরতা ছিল না, ফলে কিছুদিনের মধ্যে গবাদিপশুর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ঘাসের অভাবে। একসময় এগুলোকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় পশু-পালকেরা। এভাবে ম্যাকডোনাল্ডের মতো কোম্পানিগুলো তাদের মাংসের চাহিদা মিটিয়েছিল বিশ্বব্যাপী। এটা যদিও হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো মনে হলেও এর মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা ছিল বলে পরে জানা গিয়েছিল। এরপর যখন এক উৎস শেষ হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে কোম্পানি আরেকটি উৎসস্থলে ছুটে যায়।
পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্সআমাজনিয়ান সড়ক, যা আমাজনের বুক ফুঁড়ে চলে গেছে, আর চারপাশে রেখে গেছে ধ্বংসের ছাপ। রাস্তা নির্মাণের জন্য পোড়ানো হয়েছিল পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত এই বন। এই সড়ক নির্মাণের ফলে আমাজনের অনেক আদিবাসী উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
এতে করে বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়। অনেক আদিবাসী উদ্বাস্তু হয়, রেড ইন্ডিয়ানদের বিলুপ্তি ঘটে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে অনেক প্রজাতি হুমকির মুখে পড়ে এবং ভূমির ক্ষয় হয়। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন চিকো মেন্ডেস। তিনি বলতেন, ‘আমি ফুল চাই না। কেননা, আমি জানি ফুলটি আপনি বন থেকে ছিঁড়ে এনে দেবেন।’ গাছের প্রতি, পরিবেশের প্রতি এমন ভালোবাসা তাঁর ছিল। সরকার ও ভূস্বামী উভয়ের হাতে মার খেয়েছেন তিনি। এরপর একদিন গোধূলিবেলা ঘাতকের বুলেটের মুখে আমাজনের মতো উদাত্ত বুক পেতে দিয়েছেন চিকো মেন্ডেস। যেমন দিয়েছিলেন আমাদের দেশের চলেশ রিছিল, পীরেন স্নাল, আলফ্রেড সরেনেরা। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক আদ্রিয়ান কোওয়েল আমাজনের ওপর ‘ডিকেড অব ডিসট্রাকশন’ নামে একটা তথ্যচিত্র বানান।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে মানুষ ভারত, রোম, তাওস, মেক্সিকো বা নীল নদের তীরে বাড়ি বানাত আকাশে সূর্যের গতিপথ লক্ষ্য করে, যাতে প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস ও পরিবেশগত সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে মানুষ সেই ভাবনা থেকে সরে এল একসময়। মানুষ প্রযুক্তির বলে প্রকৃতিকে উপেক্ষা করতে থাকল। পৃথিবীকে গতিময়, উত্তপ্ত, আলোকিত ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করতে থাকল বিদ্যুৎ। স্থপতিরা এমন দালান তৈরি করলেন, যা একটি ছোট শহরের সমপরিমাণ শক্তি ভোগ করে। এভাবে তৈরি হলো প্রকৃতিবিমুখতা ও মানুষ বিচ্ছিন্নতা।
জীবাশ্ম জ্বালানির পরিণাম কি ষষ্ঠ-গণবিলুপ্তি?
২০১৫ সালের ১৯ জুন ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকী’তে প্রকাশিত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৪ গুণ দ্রুতহারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই বিলীয়মান সারির প্রথমেই মনুষ্য প্রজাতি থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী করেছেন, পৃথিবীর প্রাণিকুল ষষ্ঠবারের মতো গণবিলুপ্তির শিকার হতে যাচ্ছে, আর এটি ঘটবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি হারে। মানুষ পরিবেশগতভাবে যে বিষাক্ততা ছড়িয়েছে, তা প্রাণীদের বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে, আর তাই গত দেড় হাজার বছরে ৭৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৪০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। আরও বলা হয়, ক্রিটাশিয়াস-টারিশিয়ারি যুগের পরে এটিই হতে চলেছে প্রজাতির বৃহত্তম গণবিলুপ্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এরিখ অনেকটা দ্বিধাহীনভাবেই দাবি করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা ষষ্ঠতম গণবিলুপ্তির পর্যায়ে রয়েছি।
গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক জেরার্ডো সেবালোস বলেছেন, মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিলুপ্তির বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে, এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কয়েক লাখ বছর সময় লাগবে; কিন্তু পৃথিবীর অনেক প্রজাতিই হয়তো তার আগেই হারিয়ে যাবে। অধ্যাপক পল এরিখ মনে করেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বজনীন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। গবেষকদের মতে, এই ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি এড়াতে হলে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের স্বার্থে আমাদের জলবায়ুগত পরিবর্তন, প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস রোধ করতে হবে এবং প্রাণীদের বংশবিস্তারে উদ্যোগী হতে হবে।
পৃথিবী এ পর্যন্ত পাঁচটি গণবিলুপ্তি প্রত্যক্ষ করেছে, যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ বছর আগে প্রথমবারের মতো ওর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান বিলুপ্তিতে সামুদ্রিক ৮৩ শতাংশ প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর ৩৯ কোটি বছর আগে ডেভোনিয়ান বিলুপ্তিতে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়। ২৪ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে পার্মিয়ান বিলুপ্তিতে তীব্র খরায় ৯৬ শতাংশ প্রাণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ২০ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো ৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে ডাইনোসরের বিলোপ ঘটে। অধিকাংশ গবেষকই একমত পোষণ করেন যে ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির হার আগে কখনো এত ব্যাপক ছিল না।
বর্তমানে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে মানুষের অবস্থান নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা, তা কতটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, সেটা নিশ্চিত করা না গেলেও দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে সেই আলাপগুলোই যেন কানে বাজছিল। আমি আপনমনে ভাবছিলাম, ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা এখন একই মানুষ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরিশীলিত সংস্কৃতিমান মানুষেরা তাদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমরা কি লোভ ও লাভের ভয়াবহ অন্ধকার থেকে বাঁচতে পারব?
লেখক: আসিফ
বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
১৯৯৯ সালের এপ্রিলের কোনো একদিন আমি আর প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা গিয়েছিলাম শিমুলিয়া থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দর্শনে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় একজন শরফুদ্দিন সাহেব। দ্বিজেন শর্মার গ্রাম শিমুলিয়া। সেটা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে আট কিলোমিটারের পথ ছিল।
সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম, দুই পাশে টিলা এবং গাছপালার সারি। যত ভেতরে প্রবেশ করছি, ক্রমেই তা ঘন হয়ে উঠেছে। কখনো পাখির ডাক, কখনো ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে টিলার ওপরে মানুষজন ঘর-বাড়ি উঠিয়ে বসতি গড়ে তুলেছে। প্রচণ্ড রোদে পাহাড়ি অঞ্চল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। দূরে পাথারিয়া পাহাড় দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে খাসিয়াপঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আঁকাবাঁকা পথ ধরে কোথায় যেন চলছে। শরফুদ্দিনের কাছে জানা গেল, এ স্থানটা আরও ঘন ছিল, ঢোকাও সহজসাধ্য ছিল না, রয়েল বেঙ্গল টাইগারও ছিল; আসামের জঙ্গল থেকে আসত পাথারিয়া পাহাড়ে হাতি, গন্ডার ও বন্য মহিষের দল। তবে যেভাবে চারদিকে গাছ ও বনজঙ্গল নিধনের আয়োজন দেখলাম, তাতে কয়েক দিন পরে মশা-মাছি ছাড়া কিছুই থাকবে না, বন একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। টিলাময় চা-বাগানের ভেতর দিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে যেতে সেই সব ভয়াবহ দিনের গল্পই হচ্ছিল।
ওই সময় তিনি আমাকে ব্রাজিলের বন ধ্বংসের একটি গল্প বলেছিলেন। স্থানীয় লোকদের ব্যবহার করে বন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এরপর ওখানে প্রচুর ঘাস জন্মে ও গবাদিপশুর চারণভূমিতে রূপান্তরিত হয় এবং পশু পালনে মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। গজিয়ে ওঠে নানা ধরনের পশুপালনের খামার। যেহেতু ওই জমির উর্বরতা ছিল না, ফলে কিছুদিনের মধ্যে গবাদিপশুর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ঘাসের অভাবে। একসময় এগুলোকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় পশু-পালকেরা। এভাবে ম্যাকডোনাল্ডের মতো কোম্পানিগুলো তাদের মাংসের চাহিদা মিটিয়েছিল বিশ্বব্যাপী। এটা যদিও হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো মনে হলেও এর মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা ছিল বলে পরে জানা গিয়েছিল। এরপর যখন এক উৎস শেষ হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে কোম্পানি আরেকটি উৎসস্থলে ছুটে যায়।
পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্সআমাজনিয়ান সড়ক, যা আমাজনের বুক ফুঁড়ে চলে গেছে, আর চারপাশে রেখে গেছে ধ্বংসের ছাপ। রাস্তা নির্মাণের জন্য পোড়ানো হয়েছিল পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত এই বন। এই সড়ক নির্মাণের ফলে আমাজনের অনেক আদিবাসী উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
এতে করে বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়। অনেক আদিবাসী উদ্বাস্তু হয়, রেড ইন্ডিয়ানদের বিলুপ্তি ঘটে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে অনেক প্রজাতি হুমকির মুখে পড়ে এবং ভূমির ক্ষয় হয়। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন চিকো মেন্ডেস। তিনি বলতেন, ‘আমি ফুল চাই না। কেননা, আমি জানি ফুলটি আপনি বন থেকে ছিঁড়ে এনে দেবেন।’ গাছের প্রতি, পরিবেশের প্রতি এমন ভালোবাসা তাঁর ছিল। সরকার ও ভূস্বামী উভয়ের হাতে মার খেয়েছেন তিনি। এরপর একদিন গোধূলিবেলা ঘাতকের বুলেটের মুখে আমাজনের মতো উদাত্ত বুক পেতে দিয়েছেন চিকো মেন্ডেস। যেমন দিয়েছিলেন আমাদের দেশের চলেশ রিছিল, পীরেন স্নাল, আলফ্রেড সরেনেরা। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক আদ্রিয়ান কোওয়েল আমাজনের ওপর ‘ডিকেড অব ডিসট্রাকশন’ নামে একটা তথ্যচিত্র বানান।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে মানুষ ভারত, রোম, তাওস, মেক্সিকো বা নীল নদের তীরে বাড়ি বানাত আকাশে সূর্যের গতিপথ লক্ষ্য করে, যাতে প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস ও পরিবেশগত সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে মানুষ সেই ভাবনা থেকে সরে এল একসময়। মানুষ প্রযুক্তির বলে প্রকৃতিকে উপেক্ষা করতে থাকল। পৃথিবীকে গতিময়, উত্তপ্ত, আলোকিত ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করতে থাকল বিদ্যুৎ। স্থপতিরা এমন দালান তৈরি করলেন, যা একটি ছোট শহরের সমপরিমাণ শক্তি ভোগ করে। এভাবে তৈরি হলো প্রকৃতিবিমুখতা ও মানুষ বিচ্ছিন্নতা।
জীবাশ্ম জ্বালানির পরিণাম কি ষষ্ঠ-গণবিলুপ্তি?
২০১৫ সালের ১৯ জুন ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকী’তে প্রকাশিত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৪ গুণ দ্রুতহারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই বিলীয়মান সারির প্রথমেই মনুষ্য প্রজাতি থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী করেছেন, পৃথিবীর প্রাণিকুল ষষ্ঠবারের মতো গণবিলুপ্তির শিকার হতে যাচ্ছে, আর এটি ঘটবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি হারে। মানুষ পরিবেশগতভাবে যে বিষাক্ততা ছড়িয়েছে, তা প্রাণীদের বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে, আর তাই গত দেড় হাজার বছরে ৭৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৪০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। আরও বলা হয়, ক্রিটাশিয়াস-টারিশিয়ারি যুগের পরে এটিই হতে চলেছে প্রজাতির বৃহত্তম গণবিলুপ্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এরিখ অনেকটা দ্বিধাহীনভাবেই দাবি করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা ষষ্ঠতম গণবিলুপ্তির পর্যায়ে রয়েছি।
গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক জেরার্ডো সেবালোস বলেছেন, মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিলুপ্তির বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে, এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কয়েক লাখ বছর সময় লাগবে; কিন্তু পৃথিবীর অনেক প্রজাতিই হয়তো তার আগেই হারিয়ে যাবে। অধ্যাপক পল এরিখ মনে করেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বজনীন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। গবেষকদের মতে, এই ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি এড়াতে হলে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের স্বার্থে আমাদের জলবায়ুগত পরিবর্তন, প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস রোধ করতে হবে এবং প্রাণীদের বংশবিস্তারে উদ্যোগী হতে হবে।
পৃথিবী এ পর্যন্ত পাঁচটি গণবিলুপ্তি প্রত্যক্ষ করেছে, যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ বছর আগে প্রথমবারের মতো ওর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান বিলুপ্তিতে সামুদ্রিক ৮৩ শতাংশ প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপর ৩৯ কোটি বছর আগে ডেভোনিয়ান বিলুপ্তিতে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়। ২৪ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে পার্মিয়ান বিলুপ্তিতে তীব্র খরায় ৯৬ শতাংশ প্রাণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ২০ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো ৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে ডাইনোসরের বিলোপ ঘটে। অধিকাংশ গবেষকই একমত পোষণ করেন যে ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির হার আগে কখনো এত ব্যাপক ছিল না।
বর্তমানে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে মানুষের অবস্থান নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা, তা কতটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, সেটা নিশ্চিত করা না গেলেও দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে সেই আলাপগুলোই যেন কানে বাজছিল। আমি আপনমনে ভাবছিলাম, ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা এখন একই মানুষ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরিশীলিত সংস্কৃতিমান মানুষেরা তাদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমরা কি লোভ ও লাভের ভয়াবহ অন্ধকার থেকে বাঁচতে পারব?
লেখক: আসিফ
বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে