মামুনুর রশীদ
অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলাফল চট্টগ্রামেও প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে। রেললাইন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পর এবার মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হলো।
এ কথা সত্যি, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম যে পরিমাণ উন্নয়ন আশা করেছে তার কাছাকাছিও যায়নি; বরং দিন দিন শহরটি যানজটে এবং জলজটে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই আপত্তি করেন যে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হয়নি। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাণিজ্যিক রাজধানী থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ভারতের মুম্বাই, কানাডার টরন্টো—এ রকম অনেক দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বা নগরী রয়েছে।
একদা চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থেই বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনার চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাঁদের নিজেদের স্বার্থে এটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। যেমন বহু বছর ধরেই রেলওয়ের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় অফিস থাকা স্বাভাবিক। বন্দরের মালামাল পরিবহনের জন্য রেল খুবই যথার্থ ব্যবস্থা। রেলকে ধ্বংস করার জন্য নীলনকশার সূচনা হলো রেলের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় অফিসও এখন ঢাকায়। কাস্টমসের প্রধান ক্ষেত্র হলো চট্টগ্রাম। ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ চট্টগ্রাম নিয়ে গেলে কেমন হয়?
একবার ভেবেছিলাম দেশের ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি চট্টগ্রামে গেলেই ভালো হয়। মুম্বাইয়ের মতো দীর্ঘ একটি সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গেছে, তার পাশে বিস্তীর্ণ জায়গা রয়েছে। এখানে ফিল্ম ও টেলিভিশনের জন্য স্থান সংকুলানের কোনো সমস্যা হতো না। বিপুলসংখ্যক শুটিং কক্সবাজারে এখনো হয়ে থাকে, কিন্তু তা-ও অসম্ভব। কারণ এ ইন্ডাস্ট্রিটি কোনো পেশাদারির চেহারায় রূপ পায়নি। এরপরও সরকার চট্টগ্রামের দিকে নজর দিয়েছে, এটা আশার কথা। কিন্তু ঢাকার সব চেহারা এখন চট্টগ্রামে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
একদা নির্বিঘ্নে এই শহরে আমরা যেতে পারতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় যানজটে বহু সময় লেগে যায়। আর বৃষ্টির দিনে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে জনজীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে প্রাণহানিও ঘটেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক কোনো সমর্থন নেই। প্রতিটি কাজের জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়। রেলব্যবস্থায় ৫২ বছরে যে অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। প্রচুর বাসের যাতায়াত বেড়েছে, ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে শহরগুলো পড়ে, সেই শহরগুলোতে যানজটের একটা ভয়ংকর রূপ দেখা যায়।
শুধু তা-ই নয়, পণ্য পরিবহনের জন্য রেলের পরিবর্তে যে পরিমাণে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যাওয়া-আসা করে তাতে যানজট ও পরিবেশদূষণ একটা নতুন মাত্রা পায়। দেশের নদীপথে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা তৈরি হচ্ছে না। খরচের দিক থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম এবং যাতায়াতটাও যথেষ্ট নির্বিঘ্নে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত খাত নৌ পরিবহনের ব্যবস্থা একেবারেই কতগুলো ফেরি পরিচালনায় সীমাবদ্ধ। নদীগুলো নাব্য করা এবং নদীর সীমানা দখলমুক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাতে আবার ভাটা পড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোরেল পরিচালনায় যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু অন্যান্য পথে এখনো ডিজেল ইঞ্জিনের প্রচলন রয়ে গেছে, যেখানে তেলের বাণিজ্যটা বহু বছর ধরেই নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি রেললাইন সম্প্রসারণের একটা নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। সেখানে শতাব্দী প্রাচীন ডিজেল ইঞ্জিন কেন চলবে? যে ডিজেল রেলে ব্যবহার করা হয়, সেই ডিজেল প্রয়োজনে জেনারেটরে দিয়ে রেলে ব্যবহার করা যায়। খুব বেশি দিন হয়নি, একবার লালমনিরহাট থেকে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলাম একটা ট্রেনে, হঠাৎ ট্রেনটি থেমে গেল।
কিন্তু যাত্রীরা খুব একটা বিরক্ত হলো না। আমি যে কামরয় যাচ্ছিলাম, সেখানে ছিলেন এলাকার সাংসদ সদস্য। কিছু লোক এসে খবর দিল, চালক তেল চুরি করছেন। তখন এটি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই তেল সম্ভবত ভারতে পাচার করা হতো। জ্বালানি তেল ভারতে পাচার হওয়ার বিষয়টি বহু পুরোনো। এখন বন্ধ হয়েছে কি না, জানি না।
যানজটের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভবত ভাবনা বাদ দিয়েছে। এত দিন হয়ে গেল ট্রাফিক পুলিশের কাজের ধরন পড়ে আছে সেই মধ্যযুগীয় কায়দায়। হাতের সিগন্যালেই চলছে আর রাতের বেলায় সেই হাতটি সম্প্রসারিত হয়ে একটা আলোকবর্তিকা হয়ে যায়। বহু লেখালেখি এবং আলাপ-আলোচনার পরেও এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। অনেক সময় শহরগুলোতে ভিআইপিদের জন্য একটা মনোরম ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে এই সিগন্যাল বাতিগুলোকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
একমাত্র ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় একটা সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা দেখা যায়, যেখানে প্রতিটি গাড়িকে সিগন্যাল মেনে চলতে হয়।
ঢাকা শহরে গাড়ি-ঘোড়ার যে চাপ সেখানে কোনো মানুষের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব? এই বাস্তবতা জেনেও ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ
সিগন্যাল প্রথা চালু করছে না। এই ঢিলেঢালা ব্যবস্থার কারণে উল্টো পথ দিয়ে গাড়ি তো চলছেই এবং রিকশার জন্য তা একেবারে স্বাধীন। ঢাকা ক্রমেই রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে এবং এই রিকশাচালকেরা এখন বেপরোয়া। গাড়ির চালকদের ধমকে বেড়ান। কোনো আইনকানুন তাঁরা জানেন না, মানেনও না। কোনো গাড়িতে ধাক্কা লাগিয়ে দিলেও তাতে দুঃখ প্রকাশ করেন না; বরং সংঘবদ্ধ হয়ে গাড়ির চালকদের ওপর চড়াও হন। রিকশা অদক্ষ হাতে চলে বলেই কৃষি থেকে দলে দলে মানুষ ঢাকায় চলে আসছেন এবং একটা রিকশা নিয়ে পথে নেমে যাচ্ছেন। কোনো আইনকানুন বোঝার বালাই তাঁদের নেই। অন্যদিকে দলে দলে বেকার তরুণেরা শহরমুখী হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশাল পরিবহনব্যবস্থা চালু করেছেন। তাঁরাও বেপরোয়া। এভাবে চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যে দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
মোটকথা, অবকাঠামো ব্যবহারের যে সংস্কৃতির সেটির ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি।
রাজপথের এই বিশৃঙ্খলা আসলে আমাদের সমগ্র জাতির মানসিক বিশৃঙ্খলারই প্রতিফলন। পৃথিবীর সব দেশেই ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকে অত্যন্ত কঠিন। আজ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে যেকোনো আইন ভঙ্গকারীকে শনাক্ত করাও কোনো কঠিন কাজ নয়। শহরের অনেক জায়গা এখন ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় চলে এসেছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের উচ্চমূল্যে জরিমানা করার কথা। কিন্তু দুঃখজনক, পরিবহনশ্রমিকদের কাছে সব সময়ই সরকার নতি স্বীকার করে আসছে। সাধারণত কোনো প্রভাবশালী সরকারি দলের নেতা এসব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকেন, তাঁরা যেন সব সময়ই আইন ভাঙার পক্ষে। এমনকি এই নেতারা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্যও চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। জাতীয় স্বার্থ সেখানে অসহায়। শহরগুলোতে নাগরিকেরা যে লোকাল বাস ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো ক্ষতবিক্ষত এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল বহনকারী ট্রাকগুলোর কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। তবুও এগুলো শহরে চলাচল করছে। তাদের কাছে থাকে অদৃশ্য কোনো সার্টিফিকেট, তাতেই কাজ হয়ে যায়।
বহুদিন আগে একবার সিরাজগঞ্জ গিয়েছিলাম। সিরাজগঞ্জ শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন করে নিয়ন বাতি এসেছে। শহরের তরুণেরা তখন খুবই শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করতেন। লিটল ম্যাগাজিন বের হতো। তাঁরা রাজনৈতিক সচেতনও ছিলেন। শহরগুলোতে দারিদ্র্য ছিল, অবশ্য এখনো আছে। এক তরুণ ছড়াকার লিখেছিলেন, ‘নিয়ন বাতির তলে ক্ষুধার আগুন জ্বলে’। আজ চারদিকে অবকাঠামোর উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। আবার একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। উন্নয়নের সমান্তরালে এই দৃশ্যমান আলোর মধ্যে আমরা কি অন্য জগৎটাও দেখব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলাফল চট্টগ্রামেও প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে। রেললাইন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পর এবার মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হলো।
এ কথা সত্যি, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম যে পরিমাণ উন্নয়ন আশা করেছে তার কাছাকাছিও যায়নি; বরং দিন দিন শহরটি যানজটে এবং জলজটে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই আপত্তি করেন যে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হয়নি। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাণিজ্যিক রাজধানী থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ভারতের মুম্বাই, কানাডার টরন্টো—এ রকম অনেক দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বা নগরী রয়েছে।
একদা চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থেই বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনার চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাঁদের নিজেদের স্বার্থে এটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। যেমন বহু বছর ধরেই রেলওয়ের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় অফিস থাকা স্বাভাবিক। বন্দরের মালামাল পরিবহনের জন্য রেল খুবই যথার্থ ব্যবস্থা। রেলকে ধ্বংস করার জন্য নীলনকশার সূচনা হলো রেলের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় অফিসও এখন ঢাকায়। কাস্টমসের প্রধান ক্ষেত্র হলো চট্টগ্রাম। ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ চট্টগ্রাম নিয়ে গেলে কেমন হয়?
একবার ভেবেছিলাম দেশের ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি চট্টগ্রামে গেলেই ভালো হয়। মুম্বাইয়ের মতো দীর্ঘ একটি সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গেছে, তার পাশে বিস্তীর্ণ জায়গা রয়েছে। এখানে ফিল্ম ও টেলিভিশনের জন্য স্থান সংকুলানের কোনো সমস্যা হতো না। বিপুলসংখ্যক শুটিং কক্সবাজারে এখনো হয়ে থাকে, কিন্তু তা-ও অসম্ভব। কারণ এ ইন্ডাস্ট্রিটি কোনো পেশাদারির চেহারায় রূপ পায়নি। এরপরও সরকার চট্টগ্রামের দিকে নজর দিয়েছে, এটা আশার কথা। কিন্তু ঢাকার সব চেহারা এখন চট্টগ্রামে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
একদা নির্বিঘ্নে এই শহরে আমরা যেতে পারতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় যানজটে বহু সময় লেগে যায়। আর বৃষ্টির দিনে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে জনজীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে প্রাণহানিও ঘটেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক কোনো সমর্থন নেই। প্রতিটি কাজের জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়। রেলব্যবস্থায় ৫২ বছরে যে অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। প্রচুর বাসের যাতায়াত বেড়েছে, ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে শহরগুলো পড়ে, সেই শহরগুলোতে যানজটের একটা ভয়ংকর রূপ দেখা যায়।
শুধু তা-ই নয়, পণ্য পরিবহনের জন্য রেলের পরিবর্তে যে পরিমাণে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যাওয়া-আসা করে তাতে যানজট ও পরিবেশদূষণ একটা নতুন মাত্রা পায়। দেশের নদীপথে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা তৈরি হচ্ছে না। খরচের দিক থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম এবং যাতায়াতটাও যথেষ্ট নির্বিঘ্নে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত খাত নৌ পরিবহনের ব্যবস্থা একেবারেই কতগুলো ফেরি পরিচালনায় সীমাবদ্ধ। নদীগুলো নাব্য করা এবং নদীর সীমানা দখলমুক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাতে আবার ভাটা পড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোরেল পরিচালনায় যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু অন্যান্য পথে এখনো ডিজেল ইঞ্জিনের প্রচলন রয়ে গেছে, যেখানে তেলের বাণিজ্যটা বহু বছর ধরেই নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি রেললাইন সম্প্রসারণের একটা নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। সেখানে শতাব্দী প্রাচীন ডিজেল ইঞ্জিন কেন চলবে? যে ডিজেল রেলে ব্যবহার করা হয়, সেই ডিজেল প্রয়োজনে জেনারেটরে দিয়ে রেলে ব্যবহার করা যায়। খুব বেশি দিন হয়নি, একবার লালমনিরহাট থেকে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলাম একটা ট্রেনে, হঠাৎ ট্রেনটি থেমে গেল।
কিন্তু যাত্রীরা খুব একটা বিরক্ত হলো না। আমি যে কামরয় যাচ্ছিলাম, সেখানে ছিলেন এলাকার সাংসদ সদস্য। কিছু লোক এসে খবর দিল, চালক তেল চুরি করছেন। তখন এটি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই তেল সম্ভবত ভারতে পাচার করা হতো। জ্বালানি তেল ভারতে পাচার হওয়ার বিষয়টি বহু পুরোনো। এখন বন্ধ হয়েছে কি না, জানি না।
যানজটের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভবত ভাবনা বাদ দিয়েছে। এত দিন হয়ে গেল ট্রাফিক পুলিশের কাজের ধরন পড়ে আছে সেই মধ্যযুগীয় কায়দায়। হাতের সিগন্যালেই চলছে আর রাতের বেলায় সেই হাতটি সম্প্রসারিত হয়ে একটা আলোকবর্তিকা হয়ে যায়। বহু লেখালেখি এবং আলাপ-আলোচনার পরেও এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। অনেক সময় শহরগুলোতে ভিআইপিদের জন্য একটা মনোরম ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে এই সিগন্যাল বাতিগুলোকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
একমাত্র ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় একটা সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা দেখা যায়, যেখানে প্রতিটি গাড়িকে সিগন্যাল মেনে চলতে হয়।
ঢাকা শহরে গাড়ি-ঘোড়ার যে চাপ সেখানে কোনো মানুষের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব? এই বাস্তবতা জেনেও ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ
সিগন্যাল প্রথা চালু করছে না। এই ঢিলেঢালা ব্যবস্থার কারণে উল্টো পথ দিয়ে গাড়ি তো চলছেই এবং রিকশার জন্য তা একেবারে স্বাধীন। ঢাকা ক্রমেই রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে এবং এই রিকশাচালকেরা এখন বেপরোয়া। গাড়ির চালকদের ধমকে বেড়ান। কোনো আইনকানুন তাঁরা জানেন না, মানেনও না। কোনো গাড়িতে ধাক্কা লাগিয়ে দিলেও তাতে দুঃখ প্রকাশ করেন না; বরং সংঘবদ্ধ হয়ে গাড়ির চালকদের ওপর চড়াও হন। রিকশা অদক্ষ হাতে চলে বলেই কৃষি থেকে দলে দলে মানুষ ঢাকায় চলে আসছেন এবং একটা রিকশা নিয়ে পথে নেমে যাচ্ছেন। কোনো আইনকানুন বোঝার বালাই তাঁদের নেই। অন্যদিকে দলে দলে বেকার তরুণেরা শহরমুখী হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশাল পরিবহনব্যবস্থা চালু করেছেন। তাঁরাও বেপরোয়া। এভাবে চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যে দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
মোটকথা, অবকাঠামো ব্যবহারের যে সংস্কৃতির সেটির ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি।
রাজপথের এই বিশৃঙ্খলা আসলে আমাদের সমগ্র জাতির মানসিক বিশৃঙ্খলারই প্রতিফলন। পৃথিবীর সব দেশেই ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকে অত্যন্ত কঠিন। আজ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে যেকোনো আইন ভঙ্গকারীকে শনাক্ত করাও কোনো কঠিন কাজ নয়। শহরের অনেক জায়গা এখন ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় চলে এসেছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের উচ্চমূল্যে জরিমানা করার কথা। কিন্তু দুঃখজনক, পরিবহনশ্রমিকদের কাছে সব সময়ই সরকার নতি স্বীকার করে আসছে। সাধারণত কোনো প্রভাবশালী সরকারি দলের নেতা এসব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকেন, তাঁরা যেন সব সময়ই আইন ভাঙার পক্ষে। এমনকি এই নেতারা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্যও চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। জাতীয় স্বার্থ সেখানে অসহায়। শহরগুলোতে নাগরিকেরা যে লোকাল বাস ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো ক্ষতবিক্ষত এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল বহনকারী ট্রাকগুলোর কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। তবুও এগুলো শহরে চলাচল করছে। তাদের কাছে থাকে অদৃশ্য কোনো সার্টিফিকেট, তাতেই কাজ হয়ে যায়।
বহুদিন আগে একবার সিরাজগঞ্জ গিয়েছিলাম। সিরাজগঞ্জ শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন করে নিয়ন বাতি এসেছে। শহরের তরুণেরা তখন খুবই শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করতেন। লিটল ম্যাগাজিন বের হতো। তাঁরা রাজনৈতিক সচেতনও ছিলেন। শহরগুলোতে দারিদ্র্য ছিল, অবশ্য এখনো আছে। এক তরুণ ছড়াকার লিখেছিলেন, ‘নিয়ন বাতির তলে ক্ষুধার আগুন জ্বলে’। আজ চারদিকে অবকাঠামোর উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। আবার একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। উন্নয়নের সমান্তরালে এই দৃশ্যমান আলোর মধ্যে আমরা কি অন্য জগৎটাও দেখব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৯ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৯ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৯ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১০ ঘণ্টা আগে