কপ–২৯: ধনী দেশগুলোর প্রস্তাব ‘বিশ্বাসঘাতকতা ও অপমানজনক’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ১৫
জলবায়ু তহবিলে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে উন্নত ধনী দেশগুলো। ছবি: কপ

জলবায়ু তহবিলে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে ধনী দেশগুলো। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিম্ন–কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এই অর্থ দেওয়া হবে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের সময়সীমা একদিন বাড়িয়ে দীর্ঘ আলাপ–আলোচনা ও অভিযোগ শেষে তারা এ অর্থ দিতে রাজি হয়েছে। যদিও এটিকে’ বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যায়িত করছে উন্নয়নশীল দেশগুলো ও জলবায়ু কর্মীরা।

আজারবাইজানের বাকুতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ–২৯ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর)। উন্নত দেশগুলোর কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন (১ লাখ ৩০ হাজার কোটি) ডলার অর্থায়নের প্রস্তাব ছিল। এ আলোচনার কোনো সমাধান না পাওয়ায় সম্মেলনের সময় একদিন বাড়ানো হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে আরও অর্থায়ন এবং তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রে বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে (যেমন: ভারত) নির্বাচন না করে, বেশি প্রয়োজন এমন দেশগুলোকে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সম্মেলন বর্জনও করে। পরে আবার অংশ নেয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর উন্নত দেশগুলোর অর্থায়নের আলোচনা আরও বেশি শঙ্কায় পড়ে যায়। ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তহবিল দিতে তিনি আগ্রহী নন।

এদিকে উন্নত দেশগুলো তাদের নিজস্ব বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে আর কোনো অতিরিক্ত তহবিল দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো ভারত, বলিভিয়া, কিউবা ও নাইজেরিয়া এই অবস্থানের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পরিবেশকর্মীরাও এই চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেন।

ব্রাজিলের জলবায়ু পরিবর্তন সংগঠন অবজারভেটরি দো ক্লিমার ক্লাউডিও অ্যাঞ্জেলো বলেন, ধনী দেশগুলো আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একটি চুক্তি গ্রহণে বাধ্য করছে। তারা নতুন অর্থ দিতে রাজি নয় বরং ঋণের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ৩০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও স্বল্প সুদের ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। বাকি টাকা আসবে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এবং নতুন সম্ভাব্য অর্থের উৎস, যেমন: জীবাশ্ম জ্বালানি ও উড়োজাহাজে নিয়মিত ভ্রমণকারীদের থেকে পাওয়া সম্ভাব্য শুল্ক থেকে। তবে এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহামেদ আদৌ বলেন, কপ–২৯ সম্মেলনটি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি বিপর্যয়। উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করলেও তাদের এই অর্থায়ন অপমানজনক। ধনী দেশগুলো ভবিষ্যতে কিছু অর্থায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মানুষ এখনই জীবন ও জীবিকা হারাচ্ছে।

বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃহত্তম নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বার্ষিক ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ’ (কপ)–এর প্রধান এই দুই দেশ এবারের সম্মেলনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। ঘোষণা অনুযায়ী, চীন স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যকবলিত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল দেবে, তবে ধনী দেশগুলো বাধ্যতামূলকভাবে দেবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ব সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী অনি দাস গুপ্ত বলেন, বড় প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সম্মেলনে আলোচনাকারীরা একটি চুক্তি বের করতে সক্ষম হয়েছেন। এ চুক্তির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন অন্তত তিনগুণ বাড়বে। প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার পর্যাপ্ত না হলেও প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এ চুক্তি থেকে বোঝা যায়, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ঋণ নয় বরং তহবিল বাড়ানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত