আহসান রফিক
১৯৭১ সালে মোঃ আব্দুল জব্বার যখন হারমোনিয়াম কাঁধে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজপথে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে ব্যস্ত, তখন তাঁর দরাজ কণ্ঠের গান বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছে।
সময়টা ছিল তাঁর সঙ্গীত জীবনের মধ্যগগণ। পূর্ব বাংলার রুপালি পর্দার সে সময়টায় আব্দুল জব্বার ছিলেন এক প্রয়োজনীয় কন্ঠ। বিশেষ করে বিরহের গানের উপস্থাপনায় তিনি ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। রেডিও, টিভিতে তাঁর উপস্থিতি ছিল অনিবার্য ও প্রাঞ্জল।
আব্দুল জব্বারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর, কুষ্টিয়ায়। ৮ ভাই- বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। আকাশবাণী কলকাতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান শুনে কৈশোরেই মনের মধ্যে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল। কুষ্টিয়ায় আব্দুল জব্বারের গানের হাতেখড়ি ওসমান মাস্টারের কাছে। ক্ল্যাসিক্যাল শিখেছেন ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে।
এরপর হুট করেই পালালেন কলকাতার রানাঘাটে। সেখানে প্রশিক্ষণ নেন ওস্তাদ শীবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। টানা সাত বছর গান শিখে ফিরে আসেন কুষ্টিয়ায়। একদিন এক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় তিনি নজর কাড়েন সে সময়ের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের।
আজিজুর রহমান তাঁকে ঢাকায় এনে নিজ বাড়িতে রাখেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে থেকে আব্দুল জব্বার রেডিওতে অডিশন দিয়ে পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। রেডিওতে তাঁর গাওয়া প্রথম গানটি ছিল আজিজুর রহমানেরই লেখা ‘হারিয়ে এলাম কোথায় বলো আমার সেই সাথীটিরে’। আজিজুর রহমানের লেখা আরও দুটি গান— ‘নিশিথের চাঁদ ডুবে ব্যথার বকুল বনে’ এবং ‘তারা ভরা রাতে তোমার কথা যে মনে পড়ে বেদনায় গো’ তাঁকে শ্রোতাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংগীত পরিচালক রবীন ঘোষ তাঁকে প্রথম প্লেব্যাক করান এহতেশামের ‘নতুন সুর’ ছবিতে।
চলচ্চিত্রে আব্দুল জব্বারের প্রথম গানটি ছিল ফেরদৌসী রহমানের সাথে দ্বৈত গান ‘তুমি আছ কাছে তাই’। একই বছর তিনি বিয়ে করেন ছোটবেলার সাথী হালিমা খাতুনকে। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন থেকেই আব্দুল জব্বার টিভিতে গান গেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম উর্দু রঙিন সিনেমাস্কোপ জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’-এ একটি কোরাসে কন্ঠ দেন। এরপর ‘আঁখেরি স্টেশন’সহ আরও কিছু উর্দু ছবিতে প্লেব্যাক করেন আব্দুল জব্বার।
তাঁর প্লেব্যাক অধ্যায়টি ছিল বর্ণাঢ্য। বাংলা ছবির গানের স্বর্ণযুগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রধান কন্ঠ। অস্বীকার করার উপায় নেই, মাহমুদুন্নবী, মোঃ আলী সিদ্দিকী, বশীর আহমেদ, খন্দকার ফারুক আহমেদ, সৈয়দ আব্দুল হাদী ও খুরশীদ আলম—তাঁরা সবাই মিলেই সেই স্বর্ণালি অধ্যায়টি গড়েছিলেন, তবে মধ্যমণি ছিলেন আব্দুল জব্বার।
চলচ্চিত্রের ভাবগম্ভীর দৃশ্যে আব্দুল জব্বারের গান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে স্যাড মুডের গানগুলোকে নিয়ে যেতেন অন্য মাত্রায়। ১৯৬৬ সালে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও সত্য সাহার সুরে ‘কাগজের নৌকা’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘তোমার অসীম সুদূঢ় পথের পরে, অশ্রু আমার বকুল হয়ে ঝরে’ গানটি শুনলে যে কোনো অনুভুতিসম্পন্ন শ্রোতার বুকে কান্নার রোল ওঠে। গানটির প্রথম অন্তরায় ‘গন্ধে তাহার আকুল হলো নিবিড় স্মৃতিগুলি’ আব্দুল জব্বারের ভয়েস ভ্যারিয়েশন ও অফ হ্যাণ্ড মুড কন্ট্রোলিং বিশেষভাবে উল্লেখের দাবী রাখে।
ঢাকাই ছবির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, টাইটেল গানের ব্যবহার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছবির টাইটেল গান গেয়েছেন আব্দুল জব্বার।
আনোয়ার পারভেজের সুইট টিউন আর রিচ অর্কেস্ট্রেশনে শাহনাজ রহমতুল্লাহর সাথে গাওয়া ‘কত যে মিনতি’ ছবির ‘তুমি সাত সাগরের ওপার হতে আমায় দেখেছ’ গানটিকে অনেক সংগীতবোদ্ধা প্লেব্যাকের সেরা ডুয়েট হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আব্দুল জব্বারের কণ্ঠ-বৈচিত্রের প্রমাণ পাওয়া যায় ‘আলিঙ্গন’ ছবির কমেডি গান ‘গোস্বা তুমি কইরো না’তে। কাজী জহীরের বিখ্যাত ছবি ‘অবুঝ মন’-এ বেশিরভাগ শ্রোতা মনে রেখেছেন সাবিনা ইয়াসমীনের সেই রোমান্টিক অ্যাপ্রোচ ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। কিন্তু এর স্যাড ভার্সনটি মন দিয়ে শুনলে বোঝা যায়, এটি গাইতে আব্দুল জব্বার কীভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন।
যেভাবে সমস্ত আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘এতটুকু আশা’ ছবির সেই কালজয়ী গান ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’। আব্দুল জব্বারের এই গানটির অসাধারণ গায়কি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। প্রথম অন্তরায় ‘আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলে ঝরে যায়/ শুকনো পাতার মর্মরে বাজে কত সুর বেদনায়’, তারপর স্থায়ী হয়ে সঞ্চারী— ‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে/ জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে’ গানটির এই দু-এরিয়া জুড়ে আপার-লোয়ার ভয়েস ভ্যারিয়েশন, রিদমিক ফ্র্যাকচুয়েশন তারপর শেষ অন্তরায় আপার নোটে জাম্পিং, এই টোটাল কম্বিনেশনটাই যেন এক ‘আব্দুল জব্বার স্পেশাল’।
আব্দুল জব্বার গান গেয়েছেন তিন শতাধিক ছবিতে। তাঁর গাওয়া রেডিওর আধুনিক গান আমাদের সংগীতের মূল্যবান সম্পদ হয়ে আরও বহুকাল সগৌরবে বেঁচে থাকবে।
আব্দুল জব্বারের গাওয়া দুটি শিশুতোষ গান— একটি রেডিওতে প্রচারিত ‘খোকন মণি রাগ করে না বায়না অমন ধরে না’ এবং ‘সখী তুমি কার’ ছবিতে ‘এক দেশে ছিল এক বাদশা/ সেই বাদশার ছিল এক বেগম’ তাঁকে শিশুদের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। আব্দুল জব্বারের শ্রোতাপ্রিয় গানের সংখ্যা অসংখ্য। তাঁর গাওয়া বহু গান যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়েও গেছে।
আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের আবির্ভাব ও এর সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রধান গায়ক হিসেবে পশ্চিম বাংলার পথে-প্রান্তরে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহ করেছেন। প্রবাসী সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রায় তের লক্ষ রুপি।
তাঁর ভরাট কন্ঠে গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘মুজিব বাইয়া যাও রে’, ‘আমার বাংলা সোনার বাংলা’, ‘সাত কোটি মানুষের আরেক নাম মুজিবর’, ‘হাজার বছর পরে/ আবার এসেছি ফিরে/ বাংলার বুকে আছি দাঁড়িয়ে’ গানগুলো মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা হয়েছিলেন উদ্দীপ্ত ।
মানবতার গায়ক আব্দুল জব্বারের গান পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে খালাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথমেই যাদের খোঁজ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল জব্বারও। যাকে তিনি আদর করে ‘পাগলা’ বলে ডাকতেন। একবার ৩২ নম্বরে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, ‘কি রে পাগলা, তুই যেভাবে শুরু করেছিস, সরকার তো তোকে জেলে ঢোকাবে’। উত্তরে আব্দুল জব্বার বললেন, ‘জেলে ঢুকলে ঢুকব, তবে আপনাকে একটু প্রাণভরে দেখে নেই বাবা’। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত এই বাবা আর পাগলার মধুর সম্পর্ক অটুট ছিল।
বঙ্গবন্ধু প্রস্তাব দিয়েছিলেন বেতারের বড় চেয়ার অলংকৃত করার। কিন্তু আব্দুল জব্বার চেয়েছিলেন শুধু গান গাইতে। গানের মাধ্যমে জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে। তবু, শ্রোতার হৃদয়ে এক অতৃপ্তি রয়ে গেছে ‘ওরে নীল দরিয়া’র মতো গনের গায়ক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি বলে। বাউল সুর মিশ্রিত ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটিও শ্রোতাদেরকে আলোড়িত করে চলেছে আজ অবধি।
১৯৭১ সালে মোঃ আব্দুল জব্বার যখন হারমোনিয়াম কাঁধে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজপথে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে ব্যস্ত, তখন তাঁর দরাজ কণ্ঠের গান বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছে।
সময়টা ছিল তাঁর সঙ্গীত জীবনের মধ্যগগণ। পূর্ব বাংলার রুপালি পর্দার সে সময়টায় আব্দুল জব্বার ছিলেন এক প্রয়োজনীয় কন্ঠ। বিশেষ করে বিরহের গানের উপস্থাপনায় তিনি ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। রেডিও, টিভিতে তাঁর উপস্থিতি ছিল অনিবার্য ও প্রাঞ্জল।
আব্দুল জব্বারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর, কুষ্টিয়ায়। ৮ ভাই- বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। আকাশবাণী কলকাতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান শুনে কৈশোরেই মনের মধ্যে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল। কুষ্টিয়ায় আব্দুল জব্বারের গানের হাতেখড়ি ওসমান মাস্টারের কাছে। ক্ল্যাসিক্যাল শিখেছেন ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে।
এরপর হুট করেই পালালেন কলকাতার রানাঘাটে। সেখানে প্রশিক্ষণ নেন ওস্তাদ শীবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। টানা সাত বছর গান শিখে ফিরে আসেন কুষ্টিয়ায়। একদিন এক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় তিনি নজর কাড়েন সে সময়ের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের।
আজিজুর রহমান তাঁকে ঢাকায় এনে নিজ বাড়িতে রাখেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে থেকে আব্দুল জব্বার রেডিওতে অডিশন দিয়ে পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। রেডিওতে তাঁর গাওয়া প্রথম গানটি ছিল আজিজুর রহমানেরই লেখা ‘হারিয়ে এলাম কোথায় বলো আমার সেই সাথীটিরে’। আজিজুর রহমানের লেখা আরও দুটি গান— ‘নিশিথের চাঁদ ডুবে ব্যথার বকুল বনে’ এবং ‘তারা ভরা রাতে তোমার কথা যে মনে পড়ে বেদনায় গো’ তাঁকে শ্রোতাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংগীত পরিচালক রবীন ঘোষ তাঁকে প্রথম প্লেব্যাক করান এহতেশামের ‘নতুন সুর’ ছবিতে।
চলচ্চিত্রে আব্দুল জব্বারের প্রথম গানটি ছিল ফেরদৌসী রহমানের সাথে দ্বৈত গান ‘তুমি আছ কাছে তাই’। একই বছর তিনি বিয়ে করেন ছোটবেলার সাথী হালিমা খাতুনকে। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন থেকেই আব্দুল জব্বার টিভিতে গান গেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম উর্দু রঙিন সিনেমাস্কোপ জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’-এ একটি কোরাসে কন্ঠ দেন। এরপর ‘আঁখেরি স্টেশন’সহ আরও কিছু উর্দু ছবিতে প্লেব্যাক করেন আব্দুল জব্বার।
তাঁর প্লেব্যাক অধ্যায়টি ছিল বর্ণাঢ্য। বাংলা ছবির গানের স্বর্ণযুগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রধান কন্ঠ। অস্বীকার করার উপায় নেই, মাহমুদুন্নবী, মোঃ আলী সিদ্দিকী, বশীর আহমেদ, খন্দকার ফারুক আহমেদ, সৈয়দ আব্দুল হাদী ও খুরশীদ আলম—তাঁরা সবাই মিলেই সেই স্বর্ণালি অধ্যায়টি গড়েছিলেন, তবে মধ্যমণি ছিলেন আব্দুল জব্বার।
চলচ্চিত্রের ভাবগম্ভীর দৃশ্যে আব্দুল জব্বারের গান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে স্যাড মুডের গানগুলোকে নিয়ে যেতেন অন্য মাত্রায়। ১৯৬৬ সালে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও সত্য সাহার সুরে ‘কাগজের নৌকা’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘তোমার অসীম সুদূঢ় পথের পরে, অশ্রু আমার বকুল হয়ে ঝরে’ গানটি শুনলে যে কোনো অনুভুতিসম্পন্ন শ্রোতার বুকে কান্নার রোল ওঠে। গানটির প্রথম অন্তরায় ‘গন্ধে তাহার আকুল হলো নিবিড় স্মৃতিগুলি’ আব্দুল জব্বারের ভয়েস ভ্যারিয়েশন ও অফ হ্যাণ্ড মুড কন্ট্রোলিং বিশেষভাবে উল্লেখের দাবী রাখে।
ঢাকাই ছবির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, টাইটেল গানের ব্যবহার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছবির টাইটেল গান গেয়েছেন আব্দুল জব্বার।
আনোয়ার পারভেজের সুইট টিউন আর রিচ অর্কেস্ট্রেশনে শাহনাজ রহমতুল্লাহর সাথে গাওয়া ‘কত যে মিনতি’ ছবির ‘তুমি সাত সাগরের ওপার হতে আমায় দেখেছ’ গানটিকে অনেক সংগীতবোদ্ধা প্লেব্যাকের সেরা ডুয়েট হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আব্দুল জব্বারের কণ্ঠ-বৈচিত্রের প্রমাণ পাওয়া যায় ‘আলিঙ্গন’ ছবির কমেডি গান ‘গোস্বা তুমি কইরো না’তে। কাজী জহীরের বিখ্যাত ছবি ‘অবুঝ মন’-এ বেশিরভাগ শ্রোতা মনে রেখেছেন সাবিনা ইয়াসমীনের সেই রোমান্টিক অ্যাপ্রোচ ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। কিন্তু এর স্যাড ভার্সনটি মন দিয়ে শুনলে বোঝা যায়, এটি গাইতে আব্দুল জব্বার কীভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন।
যেভাবে সমস্ত আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘এতটুকু আশা’ ছবির সেই কালজয়ী গান ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’। আব্দুল জব্বারের এই গানটির অসাধারণ গায়কি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। প্রথম অন্তরায় ‘আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলে ঝরে যায়/ শুকনো পাতার মর্মরে বাজে কত সুর বেদনায়’, তারপর স্থায়ী হয়ে সঞ্চারী— ‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে/ জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে’ গানটির এই দু-এরিয়া জুড়ে আপার-লোয়ার ভয়েস ভ্যারিয়েশন, রিদমিক ফ্র্যাকচুয়েশন তারপর শেষ অন্তরায় আপার নোটে জাম্পিং, এই টোটাল কম্বিনেশনটাই যেন এক ‘আব্দুল জব্বার স্পেশাল’।
আব্দুল জব্বার গান গেয়েছেন তিন শতাধিক ছবিতে। তাঁর গাওয়া রেডিওর আধুনিক গান আমাদের সংগীতের মূল্যবান সম্পদ হয়ে আরও বহুকাল সগৌরবে বেঁচে থাকবে।
আব্দুল জব্বারের গাওয়া দুটি শিশুতোষ গান— একটি রেডিওতে প্রচারিত ‘খোকন মণি রাগ করে না বায়না অমন ধরে না’ এবং ‘সখী তুমি কার’ ছবিতে ‘এক দেশে ছিল এক বাদশা/ সেই বাদশার ছিল এক বেগম’ তাঁকে শিশুদের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। আব্দুল জব্বারের শ্রোতাপ্রিয় গানের সংখ্যা অসংখ্য। তাঁর গাওয়া বহু গান যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়েও গেছে।
আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের আবির্ভাব ও এর সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রধান গায়ক হিসেবে পশ্চিম বাংলার পথে-প্রান্তরে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহ করেছেন। প্রবাসী সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রায় তের লক্ষ রুপি।
তাঁর ভরাট কন্ঠে গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘মুজিব বাইয়া যাও রে’, ‘আমার বাংলা সোনার বাংলা’, ‘সাত কোটি মানুষের আরেক নাম মুজিবর’, ‘হাজার বছর পরে/ আবার এসেছি ফিরে/ বাংলার বুকে আছি দাঁড়িয়ে’ গানগুলো মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা হয়েছিলেন উদ্দীপ্ত ।
মানবতার গায়ক আব্দুল জব্বারের গান পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে খালাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথমেই যাদের খোঁজ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল জব্বারও। যাকে তিনি আদর করে ‘পাগলা’ বলে ডাকতেন। একবার ৩২ নম্বরে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, ‘কি রে পাগলা, তুই যেভাবে শুরু করেছিস, সরকার তো তোকে জেলে ঢোকাবে’। উত্তরে আব্দুল জব্বার বললেন, ‘জেলে ঢুকলে ঢুকব, তবে আপনাকে একটু প্রাণভরে দেখে নেই বাবা’। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত এই বাবা আর পাগলার মধুর সম্পর্ক অটুট ছিল।
বঙ্গবন্ধু প্রস্তাব দিয়েছিলেন বেতারের বড় চেয়ার অলংকৃত করার। কিন্তু আব্দুল জব্বার চেয়েছিলেন শুধু গান গাইতে। গানের মাধ্যমে জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে। তবু, শ্রোতার হৃদয়ে এক অতৃপ্তি রয়ে গেছে ‘ওরে নীল দরিয়া’র মতো গনের গায়ক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি বলে। বাউল সুর মিশ্রিত ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটিও শ্রোতাদেরকে আলোড়িত করে চলেছে আজ অবধি।
ভারতে এক জুনিয়র আইনজীবীর ওভারটাইম কাজের পরদিন অফিসে দেরিতে হবে জানিয়ে একটি বার্তা পাঠান সিনিয়র আইনজীবীকে। বার্তাটি সহজভাবে নেননি সিনিয়র আইনজীবী। তিনি প্রকাশ্য জুনিয়র আইনজীবীর সমালোচনা করেছেন। এতে দেশটিতে কর্মস্থলের সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেচলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সিডনি, মেলবোর্ন ও অ্যাডিলেডে কয়েকটি কনসার্ট করেছেন। ফিরেই ব্যস্ত হয়েছেন দেশের মঞ্চে। ১৫ নভেম্বর সেনা প্রাঙ্গণে গেয়েছেন ‘ঢাকা রেট্রো’ কনসার্টে। এবার জেমস জানালেন নতুন খবর।
৫ ঘণ্টা আগেচার দশকের বেশি সময় ধরে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আমির খান। মনপ্রাণ দিয়ে এত দিন শুধু কাজই করে গেছেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। কাজের ব্যস্ততায় পরিবারের দিকে খেয়াল রাখার তেমন সুযোগ পাননি। ফলে সন্তানদের সঙ্গে তাঁর এক ধরনের দূরত্ব রয়ে গেছে। এই দূরত্ব দূর করতে উদ্যোগী হয়েছেন আমিরকন্যা ইরা খান। বাবাকে নিয়ে মানস
৫ ঘণ্টা আগেসত্যজিৎ রায়, ‘পথের পাঁচালী’, অপু ও দুর্গা—যেন ইতিহাসের একই সুতোয় বাঁধা। সত্যজিৎ রায় যেমন মনে গেঁথে আছে সিনেমাপ্রেমী মানুষের মনে, তেমনি আছে কিশোরী দুর্গা। সেই কিশোরী চরিত্রটিতে যিনি অভিনয় করেছিলেন তিনি উমা। পুরো নাম উমা দাশগুপ্ত। ওই একটি মাত্র সিনেমাতেই অভিনয় করেছিলেন তিনি, আর তাতেই পেয়েছেন জগৎজোড়া..
৯ ঘণ্টা আগে