খায়রুল বাসার নির্ঝর
ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান ফিল্ম’ বিদেশি ভাষার সিনেমার ক্ষেত্রে এ নীতিই মেনে চলে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের যেকোনো দেশ থেকে প্রতিবছর কেবল একটি সিনেমাই পাঠানো যাবে অস্কার মনোনয়নের জন্য। কিন্তু এমন তো নয় যে একটি দেশে বছরে একটিই ভালো সিনেমা হয়! একাধিকও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনটিকে নির্বাচন করা হবে? এ প্রশ্নটি মাথায় রেখেই পৃথিবীর অনেক দেশে সিলেকশন কমিটির উদ্ভব।
প্রতিবছর সিনেমা আহ্বান করা হয়। যাচাই-বাছাই করে কমিটি সিদ্ধান্ত দেয় কোনটি অস্কারে পাঠানোর উপযোগী। যুক্তরাজ্যে এ কাজটি করে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ দায়িত্ব পালন করে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। আবার ব্রাজিলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা অন্য রকম। অস্কারে সিনেমা পাঠানো-সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখভাল করে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশেও এ–সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’। ২০০২ সাল থেকে তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের উদ্যোগে ওই বছর তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশি ছবির অস্কারযাত্রা। এই দীর্ঘ সময়ে অস্কারগামী বাংলাদেশি ছবির সংখ্যা ঠেকেছে ১৬ তে।
বাংলাদেশি সিনেমার জন্য এটি অত গৌরবের বিষয় না হলেও একেবারেই ফেলনা নয়। অতীতে অস্কারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা সিনেমার তালিকায় প্রশংসিত কাজ যেমন ছিল, তেমনি এমন অনেক সিনেমা ছিল যেগুলো নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা বাদ পড়েছে।
ফিসফিসানিটা ক্রমেই বাড়ছে। ভারতে তো অস্কার সিলেকশন কমিটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবারই প্রকাশ্যে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন নির্মাতা-প্রযোজক! প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অস্কার কমিটি সিনেমা বাছাইকরণ প্রক্রিয়ায় কতখানি স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে?
হাবিবুর রহমান খান, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিনেমার প্রযোজক। তিনি শুরু থেকেই অস্কার কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রতিবছর অস্কার কমিটির কাছে আমাদের কমিটির তালিকা পাঠাতে হয়। ওরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজটা করি।’
নয় সদস্যের কমিটি। কারা থাকেন এতে? চেয়ারম্যান হিসেবে এ বছরও আছেন হাবিবুর রহমান খান। আরও আছেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি আব্দুস সেলিম, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু, ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মূসা দেবু, নির্মাতা শামীমা আক্তার ও আবু সাইয়ীদ।
কে কী বলছেন?
বিতর্ক করার জন্য কিছু লোক তো থাকেই
হাবিবুর রহমান খান চেয়ারম্যান, অস্কার বাংলাদেশ কমিটি
প্রতিবছর অস্কারের মূল কমিটির কাছে আমাদের কমিটির তালিকা পাঠাতে হয়। ওরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজটা করি। এখানে আমরা ওদের অ্যাফিলিয়েটেড কমিটি। ইচ্ছা করলেই আমি একটা কমিটি করলাম বা আপনি একটা করলেন—সেটা হবে না। আর বিতর্কের বিষয়ে বলব, বিতর্ক করার জন্য কিছু লোক তো থাকেই। কেউ বিতর্ক করতে চাইলে কিছু করতে পারব আমরা? একটা কথা বলি, এখনকার অনেক স্থপতি আছেন যাঁরা তাজমহলেরও ভুল ধরেন! কীই-বা করার আছে। প্রতিবছর একটা-দুটা-তিনটা করে ছবি জমা পড়ে। অস্কারের আবার বিভিন্ন নিয়মনীতি আছে—কোনটা দেওয়া যাবে, কোনটা যাবে না। সব যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিই।
একাধিক সিনেমা পাঠানো গেলে ভালো হতো
আবু সাইয়ীদ, অস্কার বাংলাদেশ কমিটির সদস্য, ‘নিরন্তর’ পরিচালক
এটা সত্যি যে, একটা প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি থাকতে হয়। তবে কমিটিতে কে থাকবে, কে থাকবে না এ নিয়ে একাডেমির কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। এটা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল বডি নয়, লোকাল বডি; ফলে তার জায়গা থেকে কমিটি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেখান থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি এ রকম হতো, একটা দেশ থেকে দুটি বা তিনটি ছবি যাবে, অস্কারের সাবকমিটি যেকোনো একটা নির্বাচন করবে, তাহলে আরেক রকম হতো। ভারতেও মাঝে মাঝে দেখা যায়, একটা ছবি সাবমিটেড হলে অন্যরা সেটা পছন্দ করে না। এর বাইরে অন্য কোথাও বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক হয় কি না, সেটা জানার তেমন সুযোগ নেই। কারণ, এটা খুবই ছোট একটা বিষয়! তবে আমার মনে হয় একাধিক ছবি পাঠানোর সুযোগ থাকলে জটিলতা কমত।
জয়যাত্রা কিন্তু অস্কারে যায়নি
তৌকীর আহমেদ, ‘অজ্ঞাতনামা’ পরিচালক
এই কমিটির মাধ্যমেই বাংলাদেশি ছবি প্রথম অস্কারে যায়। সময়ের সঙ্গে হয়তো কমিটি আরও অর্গানাইজড হবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যে খুব ভালো ছবি বানাচ্ছি, তা-ও তো নয়। এখান থেকে যে সিলেকশনটা দেওয়া হয়, এটা একধরনের প্রতিনিধিত্ব। একটা সময়ে আমাদের ছবি মূল পর্বে সিলেক্ট হবে, সে রকম স্বপ্নও আমরা দেখতে পারি। কিন্তু সে রকম ছবি তো নির্মাণ করতে হবে!
আমি তো আগেও ছবি বানিয়েছি, ‘জয়যাত্রা’ [২০০৪] ভীষণ প্রশংসিত ছবি। ‘জয়যাত্রা’ কিন্তু অস্কারে যায়নি। আবার ‘অজ্ঞাতনামা’ পাঠানো হয়েছিল অস্কারে।
এখানে একটা কমিটি কাজ করছে। সিলেকশন যত নিরপেক্ষ হবে, আমাদের জন্য ততই মঙ্গল। আশা করছি সাংগঠনিকভাবে এসব কমিটি আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। প্রত্যাশা করি, তাঁরা যেন উপযুক্ত সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন। কারণ, এটা একটা দেশের ইমেজের ব্যাপার। যত সুষ্ঠু হবে প্রক্রিয়াটা, ততই চলচ্চিত্রের জন্য মঙ্গল।
আপনার ইচ্ছা হলে নাটকও একটা পাঠাতে পারেন
অমিতাভ রেজা চৌধুরী, পরিচালক
আমার কোনো আইডিয়াই নেই এসব ব্যাপারে। আমি আসলে আগ্রহী নই। আমার ছবি বানাতে পারলেই হয়, এসব পুরস্কার-অস্কার নিয়ে তেমন কিছুই জানি না। কানে প্রতিবছর দুই লাখ ছবি এন্ট্রি হয়, আপনার ইচ্ছা হলে নাটকও একটা পাঠাতে পারেন। অসুবিধা তো নেই! অস্কারেও তো এ রকম অনেক ছবি যায়। এখন প্রতি দেশ থেকে একটা ছবিই যায়, নাকি কীভাবে যায়, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের কী নিয়ম—কিচ্ছু জানি না। কান-বার্লিন সম্বন্ধে জানি, অস্কার নিয়ে জানি না। বাংলাদেশ থেকে ‘আয়নাবাজি’ অস্কারে পাঠানোর মতো ছবি বলেও মনে হয় না। সারা পৃথিবী থেকে বিদেশি ভাষায় যে ছবিগুলো অস্কার পায়, সেগুলোর কাছাকাছি মানের কোনো ছবি আমরা বানাতে পেরেছি নাকি?
অস্কার কমিটিই অধিক দায়িত্বশীল
আবু শাহেদ ইমন, ‘জালালের গল্প’ পরিচালক
বাংলাদেশে অস্কার কমিটি কীভাবে হবে, এটার জন্য একটা দিকনির্দেশনা আছে। দিকনির্দেশনা মোতাবেক অস্কার কমিটি গঠন করা হয়। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা থাকেন এখানে। এফডিসির প্রতিনিধিরা থাকেন। চলচ্চিত্র সংসদগুলোর প্রতিনিধিরাও থাকেন। গত কয়েক বছরে যে ছবিগুলো অস্কারে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। দু-একটা বছর হয়তো কিছু ছবি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। জাতীয়ভাবে যেসব পুরস্কার দেওয়া হয়, সেখানে বিদেশে পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির ব্যাপারে একধরনের অনীহা দেখা যায়। যতগুলো ছবি অস্কারে গেছে, সেসবের বেশির ভাগই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়নি। আমার তো মনে হয়, অস্কার কমিটিই অধিক দায়িত্বশীল।
অস্কারে যত সিনেমা
মাটির ময়না [২০০২] তারেক মাসুদ
শ্যামল ছায়া [২০০৫] হুমায়ূন আহমেদ
নিরন্তর [২০০৬] আবু সাইয়ীদ
স্বপ্নডানায় [২০০৭] গোলাম রাব্বানী বিপ্লব
আহা! [২০০৮] এনামুল করিম নির্ঝর
বৃত্তের বাইরে [২০০৯] গোলাম রাব্বানী বিপ্লব
থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার [২০১০] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
ঘেটুপুত্র কমলা [২০১২] হুমায়ূন আহমেদ
টেলিভিশন [২০১৩] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
জোনাকির আলো [২০১৪] খালিদ মাহমুদ মিঠু
জালালের গল্প [২০১৫] আবু শাহেদ ইমন
অজ্ঞাতনামা [২০১৬] তৌকীর আহমেদ
খাঁচা [২০১৭] আকরাম খান
ডুব [২০১৮] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আলফা [২০১৯] নাসির উদ্দীন ইউসুফ
ইতি তোমারই ঢাকা [২০২০] ১১ জন নির্মাতা
ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান ফিল্ম’ বিদেশি ভাষার সিনেমার ক্ষেত্রে এ নীতিই মেনে চলে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের যেকোনো দেশ থেকে প্রতিবছর কেবল একটি সিনেমাই পাঠানো যাবে অস্কার মনোনয়নের জন্য। কিন্তু এমন তো নয় যে একটি দেশে বছরে একটিই ভালো সিনেমা হয়! একাধিকও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনটিকে নির্বাচন করা হবে? এ প্রশ্নটি মাথায় রেখেই পৃথিবীর অনেক দেশে সিলেকশন কমিটির উদ্ভব।
প্রতিবছর সিনেমা আহ্বান করা হয়। যাচাই-বাছাই করে কমিটি সিদ্ধান্ত দেয় কোনটি অস্কারে পাঠানোর উপযোগী। যুক্তরাজ্যে এ কাজটি করে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ দায়িত্ব পালন করে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। আবার ব্রাজিলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা অন্য রকম। অস্কারে সিনেমা পাঠানো-সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখভাল করে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশেও এ–সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে ‘অস্কার বাংলাদেশ কমিটি’। ২০০২ সাল থেকে তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের উদ্যোগে ওই বছর তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশি ছবির অস্কারযাত্রা। এই দীর্ঘ সময়ে অস্কারগামী বাংলাদেশি ছবির সংখ্যা ঠেকেছে ১৬ তে।
বাংলাদেশি সিনেমার জন্য এটি অত গৌরবের বিষয় না হলেও একেবারেই ফেলনা নয়। অতীতে অস্কারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা সিনেমার তালিকায় প্রশংসিত কাজ যেমন ছিল, তেমনি এমন অনেক সিনেমা ছিল যেগুলো নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা বাদ পড়েছে।
ফিসফিসানিটা ক্রমেই বাড়ছে। ভারতে তো অস্কার সিলেকশন কমিটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবারই প্রকাশ্যে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন নির্মাতা-প্রযোজক! প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অস্কার কমিটি সিনেমা বাছাইকরণ প্রক্রিয়ায় কতখানি স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে?
হাবিবুর রহমান খান, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিনেমার প্রযোজক। তিনি শুরু থেকেই অস্কার কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রতিবছর অস্কার কমিটির কাছে আমাদের কমিটির তালিকা পাঠাতে হয়। ওরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজটা করি।’
নয় সদস্যের কমিটি। কারা থাকেন এতে? চেয়ারম্যান হিসেবে এ বছরও আছেন হাবিবুর রহমান খান। আরও আছেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি আব্দুস সেলিম, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু, ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মূসা দেবু, নির্মাতা শামীমা আক্তার ও আবু সাইয়ীদ।
কে কী বলছেন?
বিতর্ক করার জন্য কিছু লোক তো থাকেই
হাবিবুর রহমান খান চেয়ারম্যান, অস্কার বাংলাদেশ কমিটি
প্রতিবছর অস্কারের মূল কমিটির কাছে আমাদের কমিটির তালিকা পাঠাতে হয়। ওরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা কাজটা করি। এখানে আমরা ওদের অ্যাফিলিয়েটেড কমিটি। ইচ্ছা করলেই আমি একটা কমিটি করলাম বা আপনি একটা করলেন—সেটা হবে না। আর বিতর্কের বিষয়ে বলব, বিতর্ক করার জন্য কিছু লোক তো থাকেই। কেউ বিতর্ক করতে চাইলে কিছু করতে পারব আমরা? একটা কথা বলি, এখনকার অনেক স্থপতি আছেন যাঁরা তাজমহলেরও ভুল ধরেন! কীই-বা করার আছে। প্রতিবছর একটা-দুটা-তিনটা করে ছবি জমা পড়ে। অস্কারের আবার বিভিন্ন নিয়মনীতি আছে—কোনটা দেওয়া যাবে, কোনটা যাবে না। সব যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিই।
একাধিক সিনেমা পাঠানো গেলে ভালো হতো
আবু সাইয়ীদ, অস্কার বাংলাদেশ কমিটির সদস্য, ‘নিরন্তর’ পরিচালক
এটা সত্যি যে, একটা প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি থাকতে হয়। তবে কমিটিতে কে থাকবে, কে থাকবে না এ নিয়ে একাডেমির কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। এটা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল বডি নয়, লোকাল বডি; ফলে তার জায়গা থেকে কমিটি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেখান থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি এ রকম হতো, একটা দেশ থেকে দুটি বা তিনটি ছবি যাবে, অস্কারের সাবকমিটি যেকোনো একটা নির্বাচন করবে, তাহলে আরেক রকম হতো। ভারতেও মাঝে মাঝে দেখা যায়, একটা ছবি সাবমিটেড হলে অন্যরা সেটা পছন্দ করে না। এর বাইরে অন্য কোথাও বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক হয় কি না, সেটা জানার তেমন সুযোগ নেই। কারণ, এটা খুবই ছোট একটা বিষয়! তবে আমার মনে হয় একাধিক ছবি পাঠানোর সুযোগ থাকলে জটিলতা কমত।
জয়যাত্রা কিন্তু অস্কারে যায়নি
তৌকীর আহমেদ, ‘অজ্ঞাতনামা’ পরিচালক
এই কমিটির মাধ্যমেই বাংলাদেশি ছবি প্রথম অস্কারে যায়। সময়ের সঙ্গে হয়তো কমিটি আরও অর্গানাইজড হবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যে খুব ভালো ছবি বানাচ্ছি, তা-ও তো নয়। এখান থেকে যে সিলেকশনটা দেওয়া হয়, এটা একধরনের প্রতিনিধিত্ব। একটা সময়ে আমাদের ছবি মূল পর্বে সিলেক্ট হবে, সে রকম স্বপ্নও আমরা দেখতে পারি। কিন্তু সে রকম ছবি তো নির্মাণ করতে হবে!
আমি তো আগেও ছবি বানিয়েছি, ‘জয়যাত্রা’ [২০০৪] ভীষণ প্রশংসিত ছবি। ‘জয়যাত্রা’ কিন্তু অস্কারে যায়নি। আবার ‘অজ্ঞাতনামা’ পাঠানো হয়েছিল অস্কারে।
এখানে একটা কমিটি কাজ করছে। সিলেকশন যত নিরপেক্ষ হবে, আমাদের জন্য ততই মঙ্গল। আশা করছি সাংগঠনিকভাবে এসব কমিটি আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। প্রত্যাশা করি, তাঁরা যেন উপযুক্ত সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন। কারণ, এটা একটা দেশের ইমেজের ব্যাপার। যত সুষ্ঠু হবে প্রক্রিয়াটা, ততই চলচ্চিত্রের জন্য মঙ্গল।
আপনার ইচ্ছা হলে নাটকও একটা পাঠাতে পারেন
অমিতাভ রেজা চৌধুরী, পরিচালক
আমার কোনো আইডিয়াই নেই এসব ব্যাপারে। আমি আসলে আগ্রহী নই। আমার ছবি বানাতে পারলেই হয়, এসব পুরস্কার-অস্কার নিয়ে তেমন কিছুই জানি না। কানে প্রতিবছর দুই লাখ ছবি এন্ট্রি হয়, আপনার ইচ্ছা হলে নাটকও একটা পাঠাতে পারেন। অসুবিধা তো নেই! অস্কারেও তো এ রকম অনেক ছবি যায়। এখন প্রতি দেশ থেকে একটা ছবিই যায়, নাকি কীভাবে যায়, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের কী নিয়ম—কিচ্ছু জানি না। কান-বার্লিন সম্বন্ধে জানি, অস্কার নিয়ে জানি না। বাংলাদেশ থেকে ‘আয়নাবাজি’ অস্কারে পাঠানোর মতো ছবি বলেও মনে হয় না। সারা পৃথিবী থেকে বিদেশি ভাষায় যে ছবিগুলো অস্কার পায়, সেগুলোর কাছাকাছি মানের কোনো ছবি আমরা বানাতে পেরেছি নাকি?
অস্কার কমিটিই অধিক দায়িত্বশীল
আবু শাহেদ ইমন, ‘জালালের গল্প’ পরিচালক
বাংলাদেশে অস্কার কমিটি কীভাবে হবে, এটার জন্য একটা দিকনির্দেশনা আছে। দিকনির্দেশনা মোতাবেক অস্কার কমিটি গঠন করা হয়। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা থাকেন এখানে। এফডিসির প্রতিনিধিরা থাকেন। চলচ্চিত্র সংসদগুলোর প্রতিনিধিরাও থাকেন। গত কয়েক বছরে যে ছবিগুলো অস্কারে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। দু-একটা বছর হয়তো কিছু ছবি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। জাতীয়ভাবে যেসব পুরস্কার দেওয়া হয়, সেখানে বিদেশে পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির ব্যাপারে একধরনের অনীহা দেখা যায়। যতগুলো ছবি অস্কারে গেছে, সেসবের বেশির ভাগই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়নি। আমার তো মনে হয়, অস্কার কমিটিই অধিক দায়িত্বশীল।
অস্কারে যত সিনেমা
মাটির ময়না [২০০২] তারেক মাসুদ
শ্যামল ছায়া [২০০৫] হুমায়ূন আহমেদ
নিরন্তর [২০০৬] আবু সাইয়ীদ
স্বপ্নডানায় [২০০৭] গোলাম রাব্বানী বিপ্লব
আহা! [২০০৮] এনামুল করিম নির্ঝর
বৃত্তের বাইরে [২০০৯] গোলাম রাব্বানী বিপ্লব
থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার [২০১০] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
ঘেটুপুত্র কমলা [২০১২] হুমায়ূন আহমেদ
টেলিভিশন [২০১৩] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
জোনাকির আলো [২০১৪] খালিদ মাহমুদ মিঠু
জালালের গল্প [২০১৫] আবু শাহেদ ইমন
অজ্ঞাতনামা [২০১৬] তৌকীর আহমেদ
খাঁচা [২০১৭] আকরাম খান
ডুব [২০১৮] মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আলফা [২০১৯] নাসির উদ্দীন ইউসুফ
ইতি তোমারই ঢাকা [২০২০] ১১ জন নির্মাতা
সিনেমার গল্প চুড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমে মান্নাকেই ভেবেছিলেন কাজী হায়াৎ। তবে প্রযোজক ডিপজলের সঙ্গে সে সময় মান্নার দূরত্ব চলছিল। তাই মান্নাকে নিতে রাজি ছিলেন না ডিপজল। ভাবা হচ্ছিল, রুবেল কিংবা হুমায়ূন ফরীদির কথা।
৯ ঘণ্টা আগেপুরোনো ভিডিও এডিট করে মিথ্যা ক্যাপশন জুড়ে দেওয়ায় বিব্রত অভিনেত্রী। মিম বলেন, ‘জুয়েলারি শোরুমের ভিডিওটি জোড়াতালি দিয়ে অনেকেই লিখছেন, আমি মবের শিকার হয়েছি। আমাকে উদ্বোধনে বাধা দেওয়া হয়েছে। আসলে তেমন কোনো কিছু আমার সঙ্গে ঘটেনি।’
১০ ঘণ্টা আগেবিদেশে তুমুল অভ্যর্থনা পেলেও নিজের দেশ ভারতেই কনসার্ট করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন দিলজিৎ। তেলেঙ্গানা সরকার নোটিশ পাঠিয়ে তাঁকে সতর্ক করেছে, মাদকদ্রব্যের প্রচার করা হয়, এমন কোনো গান তিনি যেন কনসার্টে না করেন।
১১ ঘণ্টা আগেচার দশকের ক্যারিয়ার আমির খানের। বলিউডের মাসালা সিনেমার ভিড়ে খানিকটা অন্য ধরনের কাজের কথা উঠলেই আসে তাঁর নাম। নিজের কাজ নিয়ে এতটাই খুঁতখুঁতে থাকেন যে আমিরের আরেক নাম হয়ে গেছে মিস্টার পারফেকশনিস্ট। তবে তাঁর এই সাফল্যের পালে বেশ বড়সড় ধাক্কা লাগে ‘লাল সিং চাড্ডা’র সময়।
১৩ ঘণ্টা আগে