এম এস রানা
প্রথম সিজনের মতোই ‘মহানগর সিজন টু’ দর্শকের প্রশংসায় ভাসছে। আপনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রথম সিজনের চেয়েও বেশি পাচ্ছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিজন টু ওয়ার্ক করে না। এই চাপটা আমাদের মাঝে ছিল। তাই সতর্ক ছিলাম। যেন কোনোভাবেই দর্শকের সময় নষ্ট না হয়, দর্শকের প্রত্যাশা যেন নষ্ট না হয়। সবাই বলছেন, মহানগর টু বরং ওয়ানের চেয়ে আরও বেশি কমপ্যাক্ট, আরও মাল্টি লেয়ারড, আরও সাবপ্লটসহ অনেক এন্টারটেইনিং।
ওসি হারুন একজন ধূর্ত-দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসার, আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। নিজে দুর্নীতি করলেও অন্যায়কারীকে শাস্তির আওতায় আনে বুদ্ধি খাটিয়ে। এমন একটা দ্বৈত চরিত্র নিয়ে ভাবার নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?
প্রতিটি মানুষই কিন্তু দ্বৈত চরিত্রের। আমাদের যেমন স্ট্রেন্থ আছে, আবার লিমিটেশনসও আছে। সবাই আমাদের খুব পছন্দ করে বা সবাই খুব অপছন্দ করে, এমনটা হয় না। ওসি হারুন চরিত্রটাও তেমনি। তার স্ট্রেন্থ একদিকে, আবার তার লিমিটেশনস একদিকে। একটা উদাহরণ দিই, যেকোনো নারী চরিত্রের প্রতি তার বক্রদৃষ্টি দেখা যায় না। আবার তার চেয়ে পাওয়ারফুল ব্যক্তিদের সঙ্গে সে খেলতে পছন্দ করে। তাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা কিংবা তাকে ঝামেলায় ফেলা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে পিছপা হয় না। এটাই এই চরিত্রের গ্রাফ।
দুটি সিজন গেল। ওসি হারুনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো তথ্যই মিলল না। কেন?
সিজন ওয়ান ছিল এক রাতের গল্প। সিজন টুও একটা রাতের গল্প। এই দুইটা রাতের মধ্যে আমি ওসি হারুনের ফ্যামিলিকে আনতে চাইনি। পরে হয়তো ওসি হারুনের ফ্যামিলি সামনে আসতেও পারে।
ওসি হারুনের একটা দীর্ঘ ইন্টারগেশন চলল। অথচ, সিনিয়র অফিসারদের কোনো ইন্টারফেয়ার বা ইনভলভমেন্ট দেখা যায়নি। এটা কেন? এটা কি সিনিয়রদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয় না?
দিন শেষে এটা একটা ফিকশন, একটা গল্প। আমরা জানি না ইন্টারগেশন এভাবে বসিয়ে বসিয়ে রসিয়ে রসিয়ে এত সুন্দর করে হয় কি না। এটা পুরোটাই আমার কল্পনাপ্রসূত। নিশ্চয়ই এমন একজন অফিসারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ঊর্ধ্বতনরা খোঁজ নেবেন বা নির্দেশনা দেবেন। কিন্তু সিরিজের পুরো গল্পটাকে পরিকল্পনামতো এগিয়ে নিতেই ঘটনাটা এভাবে ডিজাইন করা।
ঘটনা বা চরিত্রগুলো বাস্তবতার ছায়া অবলম্বনে কি না?
মহানগর একটা ফিকশন। একজন লেখক বা শিল্পী যখন শিল্পচর্চা করেন, তখন আশপাশের এক ধরনের প্রভাব তো থাকেই। অবিকল পুরো ঘটনা উঠে আসে না। তাহলে এটা ডকুমেন্টারি হয়ে যেত। আশপাশের চরিত্রগুলোই লেখকের ভাবনার মতো করে গড়ে ওঠে। একটা উদাহরণ দিই, আমার নিজের কোনো বোন নেই। কিন্তু সিজন টুতে আমি যে ভাইবোনের ঝগড়াটা দেখালাম, বোনের যে টান, বোনের যে অনুভূতি, এটা কিন্তু আমার আশপাশের বোনদের দেখেই লেখা। বাস্তবতার প্রভাব শিল্পের সব শাখাতেই যেমন থাকে, আমার কাজেও সে রকম ছিল।
যখন মেয়র বা এমপির সম্পর্কটা দেখি, তখন নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি ও মেয়রের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাই, আবার যখন একজন ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ একজন নায়িকাকে ফোন করে আসতে বলেন, কিংবা অভিযানের নামে ক্রসফায়ার বা খেলা হবের মতো সংলাপ দেখি, তখন সাম্প্রতিক অনেক চরিত্র বা ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এটা কি সচেতনভাবেই করা?
এই যে চরিত্র বা সংলাপ বা ঘটনাগুলোর কথা বললেন, এর কোনোটাই বিনা প্রয়োজনে আসেনি। পুরোপুরি ফ্যান্টাসি কিছু বানাতে চাইলেই কেবল কল্পনা করে বানানো সম্ভব। একজন নির্মাতা ও লেখক হিসেবে আমি সব সময় চেষ্টা করি, যেন বর্তমান সময়টাকে ধরা যায়। সে ক্ষেত্রে সমসাময়িক ঘটনা বা চরিত্রের ছোঁয়া আসবেই। তার মানে এই না যে অনেকেই যেভাবে বলছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র বা খেলা হবে- দেখুন এগুলো কিন্তু আসলে একটা শব্দই বা একটা চরিত্র। দেশে যখন দুর্ভিক্ষ চলছিল, তখন জয়নুল আবেদিন দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন। আশপাশের ঘটনা বা চরিত্র দিয়েই কিন্তু শিল্পী প্রভাবিত হন।
চলতি ঘটনা এবং দুই বছর আগের একটা ঘটনা একই সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা একটা দারুণ ব্যাপার। বিষয়টা কি রিস্কি ছিল না? দর্শক কনফিউজড হয়ে যেতে পারত।
খুবই রিস্কি ছিল। যখন আমরা সিজন টু করছিলাম, প্রথমেই আমার টিমের কাছে জানতে চাইলাম, কীভাবে সিজন টু হতে পারে। সবাই নানা পয়েন্ট নিয়ে এল। দেখলাম, যেসব বিষয় তারা নোট করেছে, দর্শক আসলে সেভাবেই ভাববে। আমি একেবারেই নতুন করে, দর্শক কল্পনাও করবে না এমনভাবেই শুরু করলাম। রিস্ক ছিল আরও একটা কারণে, প্রথম সিজন যেমন এক রাতের গল্প, দ্বিতীয় সিজনে ফ্ল্যাশব্যাকে যে গল্পটা বলা হচ্ছে, সেটাও এক রাতের গল্প। আবার বর্তমান সময়ের যে গল্পটা, সেটাও এক রাতেরই গল্প। এই টাইমলাইনগুলোকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়াটা নিশ্চিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমি মনে করি সফলতার জন্য ঝুঁকি নিতেই হবে।
ওসি হারুন থেকে শুরু করে দীন মোহাম্মদ, আফনান চৌধুরী, সুকুমার বড়ুয়া, দীপুসহ বেশির ভাগ চরিত্রকেই দেখি দুর্নীতির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন বলুন তো?
ফিকশনের চরিত্রগুলো যদি সাদাকালো হয়ে যায়, তাহলে ক্যারেকটারে মজা থাকে না। ম্যারম্যারে হয়ে যায়। খেয়াল করবেন, বলা হয়েছে এখানে সিস্টেমের কোনায় কোনায় ভূত। আমরা জেনে না জেনে প্রায়ই দুর্নীতি করে ফেলি। একটা উদাহরণ দিই, হাঙ্গামা এড়াতে অনেক সময়ই আমরা ব্ল্যাকারকে একটু বেশি টাকা দিলে সে বাসায় এসে টিকিটটা দিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। হাঙ্গামা এড়াতে একটু বেশি টাকা দিয়েছিমাত্র। কিন্তু আমার কারণে বৈধভাবে লাইনে থাকা একটা মানুষ টিকিট পেল না। এটা কিন্তু দুর্নীতিই।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নিরপরাধীকে ভিকটিম বানানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব খাটানো, অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ার, ঘুষ-দুর্নীতি, ধর্ষণসহ নানা ইস্যু তুলে এনেছেন। নির্মাতা হিসেবে আপনি কোনো বিপদের আশঙ্কা করছেন?
যে টার্মগুলোর কথা বললেন, এগুলো তো পত্রিকায়, টিভিতে, ফেসবুকে, ইউটিউবে অহরহ আমরা দেখতে পাচ্ছি। একজন শিল্পী বা লেখকের সৃষ্টিতে এসব ঘটনা আসতেই পারে। ফিকশনগুলোতে অতটা আসছে না বলেই আমরা ঝুঁকি মনে করছি। দেখুন, জয়নুল আবেদিন যখন দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন তিনি কি তখন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য ছবি এঁকেছেন? নিশ্চয়ই না। শিল্পীদের তো সমাজের প্রতি দায় থাকে। সেই দায় থেকে একজন ক্ষুদ্র শিল্পী হিসেবে আমি যতটুকু করেছি, তার জন্য যদি বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে সেটা আমাকেই মোকাবিলা করতে হবে।
আফনান চৌধুরীকে যতটা ক্ষমতাবান মনে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তাকে ততটাই অসহায় মনে হয়েছে। এটা কি বাস্তবে হয়?
দুইটা ব্যাপার আছে, রিয়েলিটি এবং এথিক্যাল রিয়েলিটি। দর্শক এথিক্যাল রিয়েলিটি দেখতে পছন্দ করে। বাস্তবে যেমনটা ঘটছে, সেটা দর্শক পর্দায় কেন দেখবে? তাছাড়া আফনান চৌধুরীর পরিণতি কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শেষ দৃশ্যে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে এনেছেন। এটা কি কেবলই চমক? নাকি নতুন সিজনের আভাস?
অবশ্যই মহানগর সিজন থ্রি আসবে। অনেকগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েই গেছে। সেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য এবং অনির্বাণকে কেবল চমক দিতে নয়, নতুন সিজনের জন্যই আনা। গল্পটা শুনেই উনি রাজি হয়েছেন।
আপনার ফিকশনের চরিত্র নির্বাচন প্রক্রিয়াটা বলবেন?
আমার গল্পের চরিত্র নির্বাচন সব সময়ই আমার গাডস ফিলিংস থেকেই হয়। সেটা এমন না যে ওনারা কী ধরনের অভিনয় করেন, তার ওপর নির্ভর করে। যদি ওসি হারুনের কথাই বলি, মোশাররফ ভাই এত লম্বা সময় ধরে এ রকম একটা গ্রে শ্যাডেড ক্যারেকটার প্লে করেননি। দিব্য বা তানজিকার কথাই যদি বলি, দিব্য তো আগে অভিনয় করেনি, আবার তানজিকাকে ওটিটির কাজে আগে তেমন দেখাই যায়নি। আসলে একটা ক্যারেকটার যখন কমপ্লিটলি ডিরেক্টরের কাছে স্যারেন্ডার করে, তখনই কেবল আমি বলতে পারি, আপনি আমার উপর আস্থা রাখেন, আমি চরিত্রটাকে একটা সুন্দর ল্যান্ডিং দেব।
আপনার নতুন আর কোনো কাজের খবর আছে?
হইচইয়ের সঙ্গে বেশকিছু কাজের কথা হয়ে আছে। মহানগরের নতুন সিজন, ‘সাবরিনা’ সিরিজের নতুন সিজন, ‘কমন ম্যান’ নামের একটা সিরিজ করার কথা রয়েছে। দেশীয় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গেও কথা চলছে। সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে সেটা হয়নি। ‘গোল্লা’ নামের সিনেমাটি যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করব।
আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন সুখী মানুষ। আমার স্ত্রী এলিটা করিম একজন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং সাংবাদিক। এবার ঈদে রেনেসাঁর ফিচারে তাঁর একটি গান প্রকাশ হয়েছে। আমরা দুজনে শিল্পী বলেই একে অন্যকে সহজেই বুঝতে পারি এবং ছাড় দিতে পারি। তাই আমাদের কাজ করাটা সহজ হয়।
প্রথম সিজনের মতোই ‘মহানগর সিজন টু’ দর্শকের প্রশংসায় ভাসছে। আপনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রথম সিজনের চেয়েও বেশি পাচ্ছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিজন টু ওয়ার্ক করে না। এই চাপটা আমাদের মাঝে ছিল। তাই সতর্ক ছিলাম। যেন কোনোভাবেই দর্শকের সময় নষ্ট না হয়, দর্শকের প্রত্যাশা যেন নষ্ট না হয়। সবাই বলছেন, মহানগর টু বরং ওয়ানের চেয়ে আরও বেশি কমপ্যাক্ট, আরও মাল্টি লেয়ারড, আরও সাবপ্লটসহ অনেক এন্টারটেইনিং।
ওসি হারুন একজন ধূর্ত-দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসার, আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। নিজে দুর্নীতি করলেও অন্যায়কারীকে শাস্তির আওতায় আনে বুদ্ধি খাটিয়ে। এমন একটা দ্বৈত চরিত্র নিয়ে ভাবার নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?
প্রতিটি মানুষই কিন্তু দ্বৈত চরিত্রের। আমাদের যেমন স্ট্রেন্থ আছে, আবার লিমিটেশনসও আছে। সবাই আমাদের খুব পছন্দ করে বা সবাই খুব অপছন্দ করে, এমনটা হয় না। ওসি হারুন চরিত্রটাও তেমনি। তার স্ট্রেন্থ একদিকে, আবার তার লিমিটেশনস একদিকে। একটা উদাহরণ দিই, যেকোনো নারী চরিত্রের প্রতি তার বক্রদৃষ্টি দেখা যায় না। আবার তার চেয়ে পাওয়ারফুল ব্যক্তিদের সঙ্গে সে খেলতে পছন্দ করে। তাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা কিংবা তাকে ঝামেলায় ফেলা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে পিছপা হয় না। এটাই এই চরিত্রের গ্রাফ।
দুটি সিজন গেল। ওসি হারুনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো তথ্যই মিলল না। কেন?
সিজন ওয়ান ছিল এক রাতের গল্প। সিজন টুও একটা রাতের গল্প। এই দুইটা রাতের মধ্যে আমি ওসি হারুনের ফ্যামিলিকে আনতে চাইনি। পরে হয়তো ওসি হারুনের ফ্যামিলি সামনে আসতেও পারে।
ওসি হারুনের একটা দীর্ঘ ইন্টারগেশন চলল। অথচ, সিনিয়র অফিসারদের কোনো ইন্টারফেয়ার বা ইনভলভমেন্ট দেখা যায়নি। এটা কেন? এটা কি সিনিয়রদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয় না?
দিন শেষে এটা একটা ফিকশন, একটা গল্প। আমরা জানি না ইন্টারগেশন এভাবে বসিয়ে বসিয়ে রসিয়ে রসিয়ে এত সুন্দর করে হয় কি না। এটা পুরোটাই আমার কল্পনাপ্রসূত। নিশ্চয়ই এমন একজন অফিসারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ঊর্ধ্বতনরা খোঁজ নেবেন বা নির্দেশনা দেবেন। কিন্তু সিরিজের পুরো গল্পটাকে পরিকল্পনামতো এগিয়ে নিতেই ঘটনাটা এভাবে ডিজাইন করা।
ঘটনা বা চরিত্রগুলো বাস্তবতার ছায়া অবলম্বনে কি না?
মহানগর একটা ফিকশন। একজন লেখক বা শিল্পী যখন শিল্পচর্চা করেন, তখন আশপাশের এক ধরনের প্রভাব তো থাকেই। অবিকল পুরো ঘটনা উঠে আসে না। তাহলে এটা ডকুমেন্টারি হয়ে যেত। আশপাশের চরিত্রগুলোই লেখকের ভাবনার মতো করে গড়ে ওঠে। একটা উদাহরণ দিই, আমার নিজের কোনো বোন নেই। কিন্তু সিজন টুতে আমি যে ভাইবোনের ঝগড়াটা দেখালাম, বোনের যে টান, বোনের যে অনুভূতি, এটা কিন্তু আমার আশপাশের বোনদের দেখেই লেখা। বাস্তবতার প্রভাব শিল্পের সব শাখাতেই যেমন থাকে, আমার কাজেও সে রকম ছিল।
যখন মেয়র বা এমপির সম্পর্কটা দেখি, তখন নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি ও মেয়রের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাই, আবার যখন একজন ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ একজন নায়িকাকে ফোন করে আসতে বলেন, কিংবা অভিযানের নামে ক্রসফায়ার বা খেলা হবের মতো সংলাপ দেখি, তখন সাম্প্রতিক অনেক চরিত্র বা ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এটা কি সচেতনভাবেই করা?
এই যে চরিত্র বা সংলাপ বা ঘটনাগুলোর কথা বললেন, এর কোনোটাই বিনা প্রয়োজনে আসেনি। পুরোপুরি ফ্যান্টাসি কিছু বানাতে চাইলেই কেবল কল্পনা করে বানানো সম্ভব। একজন নির্মাতা ও লেখক হিসেবে আমি সব সময় চেষ্টা করি, যেন বর্তমান সময়টাকে ধরা যায়। সে ক্ষেত্রে সমসাময়িক ঘটনা বা চরিত্রের ছোঁয়া আসবেই। তার মানে এই না যে অনেকেই যেভাবে বলছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র বা খেলা হবে- দেখুন এগুলো কিন্তু আসলে একটা শব্দই বা একটা চরিত্র। দেশে যখন দুর্ভিক্ষ চলছিল, তখন জয়নুল আবেদিন দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন। আশপাশের ঘটনা বা চরিত্র দিয়েই কিন্তু শিল্পী প্রভাবিত হন।
চলতি ঘটনা এবং দুই বছর আগের একটা ঘটনা একই সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা একটা দারুণ ব্যাপার। বিষয়টা কি রিস্কি ছিল না? দর্শক কনফিউজড হয়ে যেতে পারত।
খুবই রিস্কি ছিল। যখন আমরা সিজন টু করছিলাম, প্রথমেই আমার টিমের কাছে জানতে চাইলাম, কীভাবে সিজন টু হতে পারে। সবাই নানা পয়েন্ট নিয়ে এল। দেখলাম, যেসব বিষয় তারা নোট করেছে, দর্শক আসলে সেভাবেই ভাববে। আমি একেবারেই নতুন করে, দর্শক কল্পনাও করবে না এমনভাবেই শুরু করলাম। রিস্ক ছিল আরও একটা কারণে, প্রথম সিজন যেমন এক রাতের গল্প, দ্বিতীয় সিজনে ফ্ল্যাশব্যাকে যে গল্পটা বলা হচ্ছে, সেটাও এক রাতের গল্প। আবার বর্তমান সময়ের যে গল্পটা, সেটাও এক রাতেরই গল্প। এই টাইমলাইনগুলোকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়াটা নিশ্চিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমি মনে করি সফলতার জন্য ঝুঁকি নিতেই হবে।
ওসি হারুন থেকে শুরু করে দীন মোহাম্মদ, আফনান চৌধুরী, সুকুমার বড়ুয়া, দীপুসহ বেশির ভাগ চরিত্রকেই দেখি দুর্নীতির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন বলুন তো?
ফিকশনের চরিত্রগুলো যদি সাদাকালো হয়ে যায়, তাহলে ক্যারেকটারে মজা থাকে না। ম্যারম্যারে হয়ে যায়। খেয়াল করবেন, বলা হয়েছে এখানে সিস্টেমের কোনায় কোনায় ভূত। আমরা জেনে না জেনে প্রায়ই দুর্নীতি করে ফেলি। একটা উদাহরণ দিই, হাঙ্গামা এড়াতে অনেক সময়ই আমরা ব্ল্যাকারকে একটু বেশি টাকা দিলে সে বাসায় এসে টিকিটটা দিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। হাঙ্গামা এড়াতে একটু বেশি টাকা দিয়েছিমাত্র। কিন্তু আমার কারণে বৈধভাবে লাইনে থাকা একটা মানুষ টিকিট পেল না। এটা কিন্তু দুর্নীতিই।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নিরপরাধীকে ভিকটিম বানানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব খাটানো, অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ার, ঘুষ-দুর্নীতি, ধর্ষণসহ নানা ইস্যু তুলে এনেছেন। নির্মাতা হিসেবে আপনি কোনো বিপদের আশঙ্কা করছেন?
যে টার্মগুলোর কথা বললেন, এগুলো তো পত্রিকায়, টিভিতে, ফেসবুকে, ইউটিউবে অহরহ আমরা দেখতে পাচ্ছি। একজন শিল্পী বা লেখকের সৃষ্টিতে এসব ঘটনা আসতেই পারে। ফিকশনগুলোতে অতটা আসছে না বলেই আমরা ঝুঁকি মনে করছি। দেখুন, জয়নুল আবেদিন যখন দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন তিনি কি তখন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য ছবি এঁকেছেন? নিশ্চয়ই না। শিল্পীদের তো সমাজের প্রতি দায় থাকে। সেই দায় থেকে একজন ক্ষুদ্র শিল্পী হিসেবে আমি যতটুকু করেছি, তার জন্য যদি বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে সেটা আমাকেই মোকাবিলা করতে হবে।
আফনান চৌধুরীকে যতটা ক্ষমতাবান মনে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তাকে ততটাই অসহায় মনে হয়েছে। এটা কি বাস্তবে হয়?
দুইটা ব্যাপার আছে, রিয়েলিটি এবং এথিক্যাল রিয়েলিটি। দর্শক এথিক্যাল রিয়েলিটি দেখতে পছন্দ করে। বাস্তবে যেমনটা ঘটছে, সেটা দর্শক পর্দায় কেন দেখবে? তাছাড়া আফনান চৌধুরীর পরিণতি কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শেষ দৃশ্যে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে এনেছেন। এটা কি কেবলই চমক? নাকি নতুন সিজনের আভাস?
অবশ্যই মহানগর সিজন থ্রি আসবে। অনেকগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েই গেছে। সেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য এবং অনির্বাণকে কেবল চমক দিতে নয়, নতুন সিজনের জন্যই আনা। গল্পটা শুনেই উনি রাজি হয়েছেন।
আপনার ফিকশনের চরিত্র নির্বাচন প্রক্রিয়াটা বলবেন?
আমার গল্পের চরিত্র নির্বাচন সব সময়ই আমার গাডস ফিলিংস থেকেই হয়। সেটা এমন না যে ওনারা কী ধরনের অভিনয় করেন, তার ওপর নির্ভর করে। যদি ওসি হারুনের কথাই বলি, মোশাররফ ভাই এত লম্বা সময় ধরে এ রকম একটা গ্রে শ্যাডেড ক্যারেকটার প্লে করেননি। দিব্য বা তানজিকার কথাই যদি বলি, দিব্য তো আগে অভিনয় করেনি, আবার তানজিকাকে ওটিটির কাজে আগে তেমন দেখাই যায়নি। আসলে একটা ক্যারেকটার যখন কমপ্লিটলি ডিরেক্টরের কাছে স্যারেন্ডার করে, তখনই কেবল আমি বলতে পারি, আপনি আমার উপর আস্থা রাখেন, আমি চরিত্রটাকে একটা সুন্দর ল্যান্ডিং দেব।
আপনার নতুন আর কোনো কাজের খবর আছে?
হইচইয়ের সঙ্গে বেশকিছু কাজের কথা হয়ে আছে। মহানগরের নতুন সিজন, ‘সাবরিনা’ সিরিজের নতুন সিজন, ‘কমন ম্যান’ নামের একটা সিরিজ করার কথা রয়েছে। দেশীয় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গেও কথা চলছে। সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে সেটা হয়নি। ‘গোল্লা’ নামের সিনেমাটি যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করব।
আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন সুখী মানুষ। আমার স্ত্রী এলিটা করিম একজন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং সাংবাদিক। এবার ঈদে রেনেসাঁর ফিচারে তাঁর একটি গান প্রকাশ হয়েছে। আমরা দুজনে শিল্পী বলেই একে অন্যকে সহজেই বুঝতে পারি এবং ছাড় দিতে পারি। তাই আমাদের কাজ করাটা সহজ হয়।
সিনেমার গল্প চুড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমে মান্নাকেই ভেবেছিলেন কাজী হায়াৎ। তবে প্রযোজক ডিপজলের সঙ্গে সে সময় মান্নার দূরত্ব চলছিল। তাই মান্নাকে নিতে রাজি ছিলেন না ডিপজল। ভাবা হচ্ছিল, রুবেল কিংবা হুমায়ূন ফরীদির কথা।
৩ ঘণ্টা আগেপুরোনো ভিডিও এডিট করে মিথ্যা ক্যাপশন জুড়ে দেওয়ায় বিব্রত অভিনেত্রী। মিম বলেন, ‘জুয়েলারি শোরুমের ভিডিওটি জোড়াতালি দিয়ে অনেকেই লিখছেন, আমি মবের শিকার হয়েছি। আমাকে উদ্বোধনে বাধা দেওয়া হয়েছে। আসলে তেমন কোনো কিছু আমার সঙ্গে ঘটেনি।’
৩ ঘণ্টা আগেবিদেশে তুমুল অভ্যর্থনা পেলেও নিজের দেশ ভারতেই কনসার্ট করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন দিলজিৎ। তেলেঙ্গানা সরকার নোটিশ পাঠিয়ে তাঁকে সতর্ক করেছে, মাদকদ্রব্যের প্রচার করা হয়, এমন কোনো গান তিনি যেন কনসার্টে না করেন।
৪ ঘণ্টা আগেচার দশকের ক্যারিয়ার আমির খানের। বলিউডের মাসালা সিনেমার ভিড়ে খানিকটা অন্য ধরনের কাজের কথা উঠলেই আসে তাঁর নাম। নিজের কাজ নিয়ে এতটাই খুঁতখুঁতে থাকেন যে আমিরের আরেক নাম হয়ে গেছে মিস্টার পারফেকশনিস্ট। তবে তাঁর এই সাফল্যের পালে বেশ বড়সড় ধাক্কা লাগে ‘লাল সিং চাড্ডা’র সময়।
৬ ঘণ্টা আগে