সাক্ষাৎকার

ডাকসুকে যত দ্রুত সম্ভব ক্রিয়াশীল করতে সচেষ্ট আছি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।

প্রশ্ন: গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নবীন শিক্ষার্থীদেরও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম কেমন চলছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন?

উপাচার্য: একটা অনিশ্চিত সময় অতিক্রম করে সবার সহযোগিতায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। পাঠদান শুরুর পর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি। ক্লাস শুরুর পরপরই আমরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। অভিভাবকদের সঙ্গেও বিভিন্ন পর্যায়ে আমার কথা হয়েছে। এটা সত্যি যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে একটা অনিশ্চয়তা ছিল, যেটা সময়ের ব্যবধানে কেটে যাচ্ছে। আমি তিনটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এসব বিভাগে নিয়মিত ৮৬-৯০ ভাগ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হচ্ছেন। নতুন শিক্ষাবর্ষে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁরাও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ক্লাসে থাকছেন।

প্রশ্ন: সিন্ডিকেট এক সিদ্ধান্তে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু শিক্ষার্থীরা নন, শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দলীয় রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে...

উপাচার্য: দলীয় রাজনীতির বিষয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। যেটা হয়েছে সেটা হলো নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা। আমরা এটা এর আগেও বহুবার বলেছি, ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব। তবে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বলতে আমরা যে কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত, বিগত বছরগুলোতে যে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চর্চা হয়েছে, যেটার মাধ্যমে আমাদের যে কঠিন ও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটাকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। এ ধরনের রাজনীতি চলতে দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন: এখন ডাকসু নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু এবং ১৮টি হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের ৫ বছর পার হয়ে গেছে। নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন?

উপাচার্য: আমাদের নীতিগত ও সংবিধিবদ্ধ যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর আওতায় ডাকসু এবং ডাকসুকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব তৈরির যে গণতান্ত্রিক চর্চা, সেটি আমরা সবাই ভালোভাবে অবগত। ডাকসুকে যত দ্রুত সম্ভব ক্রিয়াশীল করতে সচেষ্ট আছি। তবে বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করতে চাই। বিশেষ করে আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই—সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেব। তবে ডাকসুর প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই অনুভব করি।

প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই আন্দোলন সফল হয়েছে। আন্দোলনে ঢাবি থেকে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের দুজন এখন সরকারে আছেন। সামনের সারির বাকি দুজন ছায়া সরকারের ভূমিকায়। তাঁদের কারও কারও এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি। তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে?

উপাচার্য: যেকোনো বিবেচনায় আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ প্রক্রিয়ায় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের সবার প্রতিই আমাদের অভিবাদন এবং কৃতজ্ঞতা আছে। এ বিপ্লবে যাঁরা সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমরা সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রাখব। তাঁদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগও হচ্ছে। যাঁরা সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, কিন্তু এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের প্রতিও আমাদের সমান শ্রদ্ধা-সম্মান রয়েছে। এখনো হাসপাতালগুলোতে যাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন, আমরা তাঁদের বিষয়েও সচেতন রয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের স্মরণ করার জন্য বিশেষায়িত ক্লাবগুলোর মাধ্যমে কিছু মূল্যবান ছবি সংগ্রহ করেছি। কিছু গ্রাফিতি বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। জাতিসংঘের যে দলটি এই অভ্যুত্থান নিয়ে তদন্ত করছে, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তাদের এসব সরবরাহ করব। আমরা নিজেরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো তদন্তে একটি কমিটি করেছি। এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি কর্নার করার চিন্তা রয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে কিছু সভা-সেমিনার ও একাডেমিক আলোচনা আমরা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে একাডেমিক এবং এক্সট্রা কারিকুলার—দুই দিক থেকেই স্মরণ করতে চাই, তাঁদের অবদানকে স্বীকার করতে চাই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত