রোবট নিয়ে অনেকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে—রোবট মানেই মানুষের মতো হাত-পাওয়ালা একটি যন্ত্র। অটোমেটেড যেকোনো যন্ত্র, যা চারপাশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে প্রয়োজনমতো সাড়া দিতে সক্ষম, সেটাকেই আমরা রোবট বলি।
আর রোবট নিয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে, সেটাই হচ্ছে রোবোটিকস। আর মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং হলো মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্সের সমন্বিত একটি শাখা, যা মূলত কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে মেকানিক্যাল ডিভাইসকে ইলেকট্রনিকসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করার বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করে।
পড়ার যোগ্যতা
এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মোট জিপিএ ১০-এর মধ্যে সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৮ পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই বিভাগে পড়ার সুযোগ পায়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আলাদাভাবে কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে কমপক্ষে ১২.৫ (লিখিত ও এমসিকিউ মিলে) নম্বর করে পেতে হয়।
এ ছাড়া মাস্টার্স প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ওই বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভর্তির সুযোগ পেলেও অন্য বিভাগ কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক ও প্রাইভেট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার (লিখিত ও ভাইভা) মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়।
সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপ্লাইড ফিজিকস, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সংশ্লিষ্ট যেকোনো একটি বিভাগ থেকে ন্যূনতম ৩.২৫ (৪-এর মধ্যে) সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে হবে।
কোথায় পড়া যায়
রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রুয়েটের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, চুয়েটের মেকাট্রনিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, কুয়েটের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট অব থিংকস অ্যান্ড রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এ-সম্পর্কিত বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
বেসরকারিভাবে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মেকাট্রনিকস অ্যান্ড অটোমেশন, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মেকাট্রনিকস টেকনোলজি বিভাগে ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বয়সীদের রোবোটিকস শিক্ষার জন্য কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কুল অব রোবোটিকস।
কর্মসংস্থানের সুযোগ
বাংলাদেশে অনেকগুলো অটোমেটেড ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। যেগুলো চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের দেশের নিজস্ব কোনো এক্সপার্ট নেই। ফলে সেই ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিদেশ থেকে মিলিয়ন ডলার খরচ করে এক্সপার্ট আনতে হয়, যা দেশের ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কোনো এক্সপার্ট থাকলে অনেক খরচ কমে যেত এবং দেশের মুদ্রা দেশেই থাকত।
তাই এই সেক্টরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে এই বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে রোবোটিকসের গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে গার্মেন্টস ও প্রোডাকশন সেক্টরে রোবোটিকসের ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। এমনকি বর্তমানে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যে হাই-টেক পার্ক গড়ে উঠছে, সেখানে বিশ্বের নামীদামি কোম্পানিগুলো জায়গা করে নেবে। সেখানে চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা অগ্রাধিকার পাবে।
রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা
এই আধুনিক ও যুগোপযোগী বিভাগ বাংলাদেশের মেধাবী প্রজন্মকে রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করবে; যা দেশে প্রযুক্তিসম্বৃদ্ধ গার্মেন্টস সেক্টর, পাওয়ার সেক্টর, নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি উৎপাদন ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থসামজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রোবোটিকসের বিভিন্ন প্রযুক্তি, যেমন অটোমেটেড আন্ডারওয়াটার ভেহিক্যাল কিংবা রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল ইত্যাদির মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান ও আরোহণ করা যাবে।
এভাবে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে রোবোটিকসের ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তাই রোবট এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অগ্নিকাণ্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবোটিকস বিষয়ে দক্ষতা অর্জন না করতে পারলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। কারণ রোবোটিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রোডাকশন বাড়াতে না পারলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে পড়ব। ফলে মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের এক্সপোর্ট খাত।
যেসব কোর্সে পড়ানো হয়
মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্স–এই তিনটি সাবজেক্টের সমন্বয়ে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি গঠিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এ তিনটি বিষয়ের ওপর সমন্বিত কোর্সগুলো পড়ানো হয়। কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসকে অ্যানালাইসিস করে, নিজের মতো করে সার্কিট ডিজাইন করার জন্য ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক সার্কিট, ডিজিটাল লজিক সার্কিট থেকে শুরু করে মেকানিক্যাল ডিভাইসকে দক্ষভাবে কন্ট্রোল করার জন্য যতটুকু ইলেকট্রনিক জ্ঞানের প্রয়োজন তা সবই পড়ানো হয়। মেকানিক্যাল সিস্টেম নিয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য সলিড মেকানিকস, ফ্লুয়িড মেকানিকস, মেকানিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, হাইব্রিড ইলেকট্রিক্যাল ভেহিক্যাল, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসের ওপর বিস্তারিত কোর্স রয়েছে। ইলেকট্রনিকস ও মেকানিক্যাল সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজটি করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। এ ক্ষেত্রে বেসিক প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ‘অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং’ বিভাগে পড়ানো হয়। বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোল সিস্টেম, যেমন মাইক্রোকন্ট্রোলার, মাইক্রোপ্রসেসর, পিএলসি, সিএনসি নিয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের কন্ট্রোল সিস্টেমে দক্ষ বানাতে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম, যেমন পিআইডি অ্যালগরিদম, ডেরিভেটিভ অ্যালগরিদম, ইন্টিগ্রাল অ্যালগরিদম এখানে শেখানো হয়। রোবটের দর্শন ও ইন্টারেকশন ক্ষমতা তৈরির জন্য রোবট ভিশন, ইন্টারনেট অব থিংকস, হিউম্যান রোবট ইন্টারেকশন ও ইমেইজ প্রসেসিং কোর্স পড়ানো হয়, যা একটি রোবট ইমেজিং সেন্সর থেকে সিগন্যাল গ্রহণ, সরবরাহ, কন্ডিশনিং, রূপান্তর, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায়। রোবটের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের সিমুলেশন করার জন্য ম্যাটল্যাব, সলিড ওয়ার্ক, এনসিস, রোবট অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করানো হয়। রোবটকে প্রোগ্রামের বাইরে নিজে নিজে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম বানাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিং লার্নিং ও ডিপ লার্নিং বিস্তারিত পড়ানো হয়। এ ছাড়া হাতে-কলমে কাজ করার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা। রোবোটিকস ল্যাবে হেক্সা রোবট, অহনি ভি৫, নাও রোবট, রোভার ভি৫, থ্রিডি প্রিন্টার, ই-পাক রোবট, ড্রোনসহ অনেক ধরনের ম্যানুপেলেটর রয়েছে। অটোমেশন নিয়ে কাজ করার জন্য মেকাট্রনিকস ল্যাবে রয়েছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সিএনসি মিলিং মেশিন, প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডুলার সিস্টেম ও লেজার কাটার মেশিন।
পড়ার খরচ কেমন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র অর্থ খরচ করে এ রকম একটি ব্যয়বহুল বিভাগে পড়াশোনা করা যায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্ষেত্রবিশেষে খুবই রিজনেবল খরচে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা
উচ্চশিক্ষার জন্য এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সামনে খুলে যাচ্ছে রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকসের বিশাল দুয়ার। কারণ ইউরোপ-আমেরিকার নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রোবোটিকস ও মেকাট্রনিকসের ওপর বেশ কাজ হচ্ছে। সে জন্য এই সাবজেক্টে পড়ে দেশের বাইরে ভালো স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া খুবই সহজ।
তা ছাড়া আপনি যেকোনো সাবজেক্টে চাইলেই শিফট করতে পারবেন; যেমন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি। উপরন্তু এ বিষয়ে রয়েছে রিসার্চের অনেক সুযোগ। এর কারণ হচ্ছে বিষয়টি মাল্টি ডাইমেনশনাল। বর্তমান প্রজন্মে বিভিন্ন ডাইমেনশনের সমন্বয় সাধন করে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম
মো. আরিফুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক, রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রোবট নিয়ে অনেকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে—রোবট মানেই মানুষের মতো হাত-পাওয়ালা একটি যন্ত্র। অটোমেটেড যেকোনো যন্ত্র, যা চারপাশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে প্রয়োজনমতো সাড়া দিতে সক্ষম, সেটাকেই আমরা রোবট বলি।
আর রোবট নিয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে, সেটাই হচ্ছে রোবোটিকস। আর মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং হলো মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্সের সমন্বিত একটি শাখা, যা মূলত কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে মেকানিক্যাল ডিভাইসকে ইলেকট্রনিকসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করার বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করে।
পড়ার যোগ্যতা
এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মোট জিপিএ ১০-এর মধ্যে সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৮ পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই বিভাগে পড়ার সুযোগ পায়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আলাদাভাবে কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে কমপক্ষে ১২.৫ (লিখিত ও এমসিকিউ মিলে) নম্বর করে পেতে হয়।
এ ছাড়া মাস্টার্স প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ওই বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভর্তির সুযোগ পেলেও অন্য বিভাগ কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক ও প্রাইভেট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার (লিখিত ও ভাইভা) মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়।
সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপ্লাইড ফিজিকস, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সংশ্লিষ্ট যেকোনো একটি বিভাগ থেকে ন্যূনতম ৩.২৫ (৪-এর মধ্যে) সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে হবে।
কোথায় পড়া যায়
রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রুয়েটের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, চুয়েটের মেকাট্রনিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, কুয়েটের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট অব থিংকস অ্যান্ড রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এ-সম্পর্কিত বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
বেসরকারিভাবে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মেকাট্রনিকস অ্যান্ড অটোমেশন, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মেকাট্রনিকস টেকনোলজি বিভাগে ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বয়সীদের রোবোটিকস শিক্ষার জন্য কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কুল অব রোবোটিকস।
কর্মসংস্থানের সুযোগ
বাংলাদেশে অনেকগুলো অটোমেটেড ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। যেগুলো চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের দেশের নিজস্ব কোনো এক্সপার্ট নেই। ফলে সেই ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিদেশ থেকে মিলিয়ন ডলার খরচ করে এক্সপার্ট আনতে হয়, যা দেশের ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কোনো এক্সপার্ট থাকলে অনেক খরচ কমে যেত এবং দেশের মুদ্রা দেশেই থাকত।
তাই এই সেক্টরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে এই বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে রোবোটিকসের গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে গার্মেন্টস ও প্রোডাকশন সেক্টরে রোবোটিকসের ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। এমনকি বর্তমানে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যে হাই-টেক পার্ক গড়ে উঠছে, সেখানে বিশ্বের নামীদামি কোম্পানিগুলো জায়গা করে নেবে। সেখানে চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা অগ্রাধিকার পাবে।
রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা
এই আধুনিক ও যুগোপযোগী বিভাগ বাংলাদেশের মেধাবী প্রজন্মকে রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করবে; যা দেশে প্রযুক্তিসম্বৃদ্ধ গার্মেন্টস সেক্টর, পাওয়ার সেক্টর, নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি উৎপাদন ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থসামজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রোবোটিকসের বিভিন্ন প্রযুক্তি, যেমন অটোমেটেড আন্ডারওয়াটার ভেহিক্যাল কিংবা রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল ইত্যাদির মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান ও আরোহণ করা যাবে।
এভাবে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে রোবোটিকসের ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তাই রোবট এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অগ্নিকাণ্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবোটিকস বিষয়ে দক্ষতা অর্জন না করতে পারলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। কারণ রোবোটিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রোডাকশন বাড়াতে না পারলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে পড়ব। ফলে মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের এক্সপোর্ট খাত।
যেসব কোর্সে পড়ানো হয়
মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্স–এই তিনটি সাবজেক্টের সমন্বয়ে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি গঠিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এ তিনটি বিষয়ের ওপর সমন্বিত কোর্সগুলো পড়ানো হয়। কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসকে অ্যানালাইসিস করে, নিজের মতো করে সার্কিট ডিজাইন করার জন্য ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক সার্কিট, ডিজিটাল লজিক সার্কিট থেকে শুরু করে মেকানিক্যাল ডিভাইসকে দক্ষভাবে কন্ট্রোল করার জন্য যতটুকু ইলেকট্রনিক জ্ঞানের প্রয়োজন তা সবই পড়ানো হয়। মেকানিক্যাল সিস্টেম নিয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য সলিড মেকানিকস, ফ্লুয়িড মেকানিকস, মেকানিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, হাইব্রিড ইলেকট্রিক্যাল ভেহিক্যাল, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসের ওপর বিস্তারিত কোর্স রয়েছে। ইলেকট্রনিকস ও মেকানিক্যাল সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজটি করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। এ ক্ষেত্রে বেসিক প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ‘অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং’ বিভাগে পড়ানো হয়। বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোল সিস্টেম, যেমন মাইক্রোকন্ট্রোলার, মাইক্রোপ্রসেসর, পিএলসি, সিএনসি নিয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের কন্ট্রোল সিস্টেমে দক্ষ বানাতে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম, যেমন পিআইডি অ্যালগরিদম, ডেরিভেটিভ অ্যালগরিদম, ইন্টিগ্রাল অ্যালগরিদম এখানে শেখানো হয়। রোবটের দর্শন ও ইন্টারেকশন ক্ষমতা তৈরির জন্য রোবট ভিশন, ইন্টারনেট অব থিংকস, হিউম্যান রোবট ইন্টারেকশন ও ইমেইজ প্রসেসিং কোর্স পড়ানো হয়, যা একটি রোবট ইমেজিং সেন্সর থেকে সিগন্যাল গ্রহণ, সরবরাহ, কন্ডিশনিং, রূপান্তর, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায়। রোবটের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের সিমুলেশন করার জন্য ম্যাটল্যাব, সলিড ওয়ার্ক, এনসিস, রোবট অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করানো হয়। রোবটকে প্রোগ্রামের বাইরে নিজে নিজে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম বানাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিং লার্নিং ও ডিপ লার্নিং বিস্তারিত পড়ানো হয়। এ ছাড়া হাতে-কলমে কাজ করার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা। রোবোটিকস ল্যাবে হেক্সা রোবট, অহনি ভি৫, নাও রোবট, রোভার ভি৫, থ্রিডি প্রিন্টার, ই-পাক রোবট, ড্রোনসহ অনেক ধরনের ম্যানুপেলেটর রয়েছে। অটোমেশন নিয়ে কাজ করার জন্য মেকাট্রনিকস ল্যাবে রয়েছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সিএনসি মিলিং মেশিন, প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডুলার সিস্টেম ও লেজার কাটার মেশিন।
পড়ার খরচ কেমন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র অর্থ খরচ করে এ রকম একটি ব্যয়বহুল বিভাগে পড়াশোনা করা যায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্ষেত্রবিশেষে খুবই রিজনেবল খরচে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা
উচ্চশিক্ষার জন্য এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সামনে খুলে যাচ্ছে রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকসের বিশাল দুয়ার। কারণ ইউরোপ-আমেরিকার নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রোবোটিকস ও মেকাট্রনিকসের ওপর বেশ কাজ হচ্ছে। সে জন্য এই সাবজেক্টে পড়ে দেশের বাইরে ভালো স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া খুবই সহজ।
তা ছাড়া আপনি যেকোনো সাবজেক্টে চাইলেই শিফট করতে পারবেন; যেমন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি। উপরন্তু এ বিষয়ে রয়েছে রিসার্চের অনেক সুযোগ। এর কারণ হচ্ছে বিষয়টি মাল্টি ডাইমেনশনাল। বর্তমান প্রজন্মে বিভিন্ন ডাইমেনশনের সমন্বয় সাধন করে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম
মো. আরিফুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক, রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইকিউএসি’র যৌথ উদ্যোগে ‘প্রিপারেশন ফর অ্যাক্রেডিটেশন: ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড এভিডেন্স’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার গ্রিন ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট রুমে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
১১ ঘণ্টা আগেএইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণে ৯ টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৪০৫ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছেন ৮৭২ জন, নতুন করে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৫৯২ জন। আর ফেল থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ২ জন।
১৪ ঘণ্টা আগেমেরিন ফিশারিজ একাডেমি (এমএফএ) বা বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি (বিএমএফএ) মৎস্য শিল্প, বণিক জাহাজ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মেরিটাইম শিল্পগুলোতে প্রবেশ করতে আগ্রহী ক্যাডেটদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বা
১৮ ঘণ্টা আগে২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম ফয়সাল বাতেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে