আগামী ১৯ মে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষায় ৩ লাখ ১৮ হাজার জন আবেদন করেছেন। এর মধ্য থেকে মাত্র ১৫-১৬ হাজার (বিগত বিসিএস পরীক্ষাগুলোর হিসাব অনুযায়ী) লিখিত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন। এমন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে থাকতে হলে কৌশলগত প্রস্তুতির বিকল্প নেই।
পরীক্ষার আগে করণীয়:
রুটিন বানিয়ে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। খেয়াল রাখতে হবে, কোনো বিষয় যাতে বাদ না পড়ে।
বাজারের প্রচলিত ভালো কোনো প্রকাশনীর সদ্য প্রকাশিত একটি ডাইজেস্ট বই কিনে পড়ে ফেলুন।
যথাযথ সময় বণ্টন, নেগেটিভ মার্কিং এড়ানো, কোন বিষয়ের পর কোন বিষয় দাগানো উচিত—এসব সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে নিজের দুর্বল দিকগুলো শনাক্ত করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য ছয়-সাতটি মডেল টেস্ট দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে অনলাইন অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘লাইভ এমসিকিউ’ বেশ কার্যকর।
পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে প্রতিটি বিষয়ের জটিল বা মুখস্থনির্ভর টপিকগুলোতে হালকা করে চোখ বোলানো ভালো। এমনকি যে বিষয়টি একেবারেই মনে থাকে না, সেটি পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় পড়া যেতে পারে, যেমন: আমি সংবিধানের অনুচ্ছেদ এবং ইংরেজি সাহিত্য পার্ট অবশ্যই পরীক্ষার আগের দিন পড়তাম।
পরীক্ষার হলে দ্রুত বৃত্ত ভরাট করতে পুরোনো ব্যবহৃত মোটা কালির অন্তত দুটি বলপেন প্রস্তুত করে রাখা।
পরীক্ষার আগের রাতে যথাসম্ভব দ্রুত ঘুমাতে যেতে হবে। যাঁদের দুশ্চিন্তায় কোনোভাবেই ঘুম আসতে চায় না, তাঁরা প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে কম পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ খেয়ে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবেন।
পরীক্ষার দিনের পরামর্শ:
মূল পরীক্ষা শুরুর আগে করণীয়: খেয়াল করে প্রবেশপত্র ও একাধিক বলপেন নিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হবেন।
ওএমআর শিট পূরণের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘর পূরণ করবেন। প্রবেশপত্রে প্রদত্ত স্বাক্ষরের সঙ্গে ওএমআর শিটের স্বাক্ষর যেন হুবহু একই রকম হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এ ছাড়া, যে সেট কোডের ওএমআর শিট পেয়েছেন তার সঙ্গে পরিদর্শক কর্তৃক আপনাকে প্রদত্ত প্রশ্নের সেট কোড একই কিনা তাতে বিশেষ লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
সময় বাঁচাতে করণীয়:
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়স্বল্পতা। গণিত ও মানসিক দক্ষতা ছাড়া অন্যসব বিষয়ের প্রশ্ন সমাধানের ক্ষেত্রে প্রতি ৫০টি প্রশ্নের জন্য ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট করে সময় বরাদ্দ রেখে উত্তর করার চেষ্টা করলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। আর কনফিউজিং প্রশ্নগুলো পরে উত্তর করার জন্য প্রশ্নপত্রে হালকা করে দাগিয়ে রাখা যেতে পারে।
প্রতিটি প্রশ্ন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওএমআর শিটে একটি একটি করে বৃত্তভরাট করলে সময়ক্ষেপণ কিছুটা বেশি হয়। তাই এক্ষেত্রে সময় বাঁচাতে প্রতিটি প্রশ্ন পড়ে প্রশ্নপত্রে উত্তরের ওপর কলম দিয়ে বিন্দু ফেলে কিংবা হালকা দাগ দিয়ে ওএমআর শিটে একসঙ্গে ৪০-৫০টি প্রশ্নের উত্তরে বৃত্তভরাট করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বৃত্তভরাট করার সময় প্রশ্নে প্রদত্ত প্রশ্ন নম্বর ও অপশনের দিকে সতর্কতার সঙ্গে চোখ রেখে ওএমআর শিটে দাগানো জরুরি। এ ছাড়াও প্রশ্নে প্রদত্ত অপশনের ক্রমের দিকেও (ক, খ, গ, ঘ নাকি ক, গ, খ, ঘ) বিশেষ লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
পরীক্ষার হলের জন্যপরামর্শ:
প্রশ্ন কঠিন হলে সেটা সবার জন্যই কঠিন, তাই ঘাবড়ানো উচিত নয়। এমনকি একাধারে ১০-১২টি প্রশ্ন একেবারে অপরিচিত হলেও মাথা ঠান্ডা রেখে অন্য প্রশ্নের দিকে মনোযোগ দিয়ে সমাধান করতে হবে। কেননা যেকোনো প্রশ্নে কাট মার্ক তুলতে ৬০ শতাংশ নম্বরই যথেষ্ট।
সাবধানে প্রশ্ন পড়া। যেমন—প্রশ্নে ‘কোনটি পাললিক শিলার উদাহরণ নয়’ লেখা থাকলে অনেকে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পড়ে থাকেন ‘কোনটি পাললিক শিলার উদাহরণ’ এবং সে অনুযায়ী ভুল উত্তরে দাগিয়ে ফেলেন।
পরীক্ষার মাঝামাঝি গণিত অংশের উত্তর করা শ্রেয়।
প্রথমে নিশ্চিত পারা প্রশ্নগুলো উত্তর করবেন। পরে কনফিউজিং প্রশ্নগুলো ভেবেচিন্তে উত্তর করবেন।
সাখাওয়াত হোসেন ইমন: ৪০তম বিসিএসে প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জনকারী
অনুলিখন: মোছা. জেলি খাতুন