বিসিএস ক্যাডার হতে ইচ্ছুক এমন প্রার্থীর উচিত ভাইভার জন্য পর্যাপ্ত পড়াশোনা করা। অনেকেই ভাইভা নিয়ে ভয় পান, তাই আমি মনে করি, ভালো পড়াশোনা করা থাকলে একজন প্রার্থী নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসী থাকতে পারেন। অভিজ্ঞতার আলোকে বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) প্রস্তুতি-সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রাকিবুর রহমান।
ভাইভা পড়াশোনাকে কয়েকটা অধ্যায়ে ভাগ করা যায়। যেমন–
- মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু: ভাইভা প্রস্তুতির জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রায় সব পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু থেকে প্রশ্ন করা হয়। আমি যেসব বই পড়েছিলাম, সেগুলোর একটি ধারণা দিই আপনাদের। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (শেখ মুজিবুর রহমান), ‘কারাগারের রোজনামচা’ (শেখ মুজিবুর রহমান), ‘আমার দেখা নয়া চীন’ (শেখ মুজিবুর রহমান), ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ (শেখ হাসিনা), ‘মূলধারা ৭১’ (মঈদুল হাসান), ‘মা’ (আনিসুল হক), ‘একাত্তরের ডায়েরি’ (জাহানারা ইমাম), ‘একাত্তরের চিঠি, মুজিব হত্যার তদন্ত ও রায়’ (পরেশ সাহা), ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত’ (ড. এমরান হোসাইন) ইত্যাদি। আপনার পছন্দসই বই পড়ুন ও বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ঘটনাগুলো নোট করে রাখুন।
- সাম্প্রতিক ঘটনা (দেশ ও আন্তর্জাতিক), দেশের উন্নয়নের সাম্প্রতিক চিত্র: নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকা উচিত, এতে একজন প্রার্থী চলতি ঘটনা নিয়ে আপডেট থাকতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তৃতা, দেশ-বিদেশ সফর, বিভিন্ন সংস্থার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ ইত্যাদি অনুসরণ করুন। সরকারের Facebook Page অনুসরণ করুন, এতে সাম্প্রতিক উন্নয়নের বিভিন্ন তথ্য পাবেন। জিডিপি, আয়, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানি, রিজার্ভের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ভাইভার তারিখে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস আছে কি না, দেখে যাবেন।
- আপনার পঠিত বিষয়: অনার্স ও মাস্টার্সে একজন প্রার্থীর পঠিত বিষয় থেকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে এবং এই প্রশ্নের উত্তরগুলো করতে পারা সমীচীন। নিজের পঠিত বিষয়ের খুঁটিনাটি জানুন। পিএসসিপ্রদত্ত বিসিএস লিখিত সিলেবাসে অনার্সে পঠিত সব বিষয়ের আলাদা সিলেবাস দেওয়া আছে, প্রার্থী চাইলে ওই সিলেবাসটি অনুসরণ করতে পারেন।
- ক্যাডার চয়েজ: একজন প্রার্থীর প্রথম পছন্দের ক্যাডার নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে হবে; পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। ধরুন, আপনার প্রথম পছন্দ বিসিএস (পুলিশ), সে ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাস, কার্যাবলি, সংশ্লিষ্ট আইন, কাঠামোসহ খুঁটিনাটি বিষয় জানা উচিত। ক্যাডার পছন্দের সঙ্গে আপনার পঠিত বিষয়ের কী সম্পর্ক, আপনার অর্জিত জ্ঞান কীভাবে কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাবেন, এ রকম প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত রাখুন। বাজারে বিভিন্ন গাইড বই (ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি, BCS সাক্ষাৎকার, Crack to BCS Interview, ড. জামিল'স ক্যাডার) পাওয়া যায়, যা প্রার্থীর ভালো প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে।
- নিজ জেলা: নিজ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্থান, নদ-নদী, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জেলার সম্পর্কিত বিষয়, সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা রাখা উচিত। জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে জেলা-সম্পর্কিত পড়াশোনা করতে পারেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত আপনার জেলা-সম্পর্কিত বইটি পড়তে পারেন।
- অন্যান্য: দেশের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন-ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর শাসনামল, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা, ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড ও বিচার, বাকশাল, জাতীয় চার নেতা ও তাঁদের হত্যাকাণ্ডের বিচার, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, গ্রেনেড হামলাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্জন), সংবিধান (প্রণয়ন, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ, সংশোধন), নিজ পছন্দের সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম, জাতীয় সংগীতসহ অন্যান্য জাতীয় বিষয়াবলি নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করাটা একজন প্রার্থীর ভাগ্যের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তবে একজন প্রার্থীর চেষ্টা থাকা উচিত ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভাইভায় অংশগ্রহণ করা, এতে তিনি অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকবেন, যা ভাইভা পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অনুলিখন: মোছা. জেলি খাতুন