ক্যাডার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। রেজাল্টের আগে পুলিশ ক্যাডারে নিজের রোল নম্বর কল্পনা করতাম। কিন্তু প্রথম হব তা কখনো ভাবিনি। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষকেরা সবার খুশিতে আনন্দ অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
স্বপ্নের শুরু
গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয় ২০১৯ সালে। এর আগে ব্যাচমেটরা বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু আমরা গুটিকয়েক বন্ধুবান্ধব দেশে চাকরি করার চিন্তা করি। বিসিএস জব ভালো চাকরি বিধায় বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি
নিতে শুরু করি।
যেভাবে প্রস্তুতি
গ্র্যাজুয়েশনের পর ভার্সিটির হল ছেড়ে দিই। এরপর বন্ধুরা মিলে উত্তরায় বাসা নিই। আরেক বন্ধু মিলে বিসিএসের জন্য পড়াশোনা শুরু করি। বাকিরা অন্য চাকরি ও বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কিছুদিন বাদে বিশ্বব্যাপী করোনা হানা দেয়। সে জন্য বাসা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। সবার সঙ্গে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। নানা জটিলতা ও করোনার প্রকোপ সামলে প্রথম ৪১তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কয়েক দিন পর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তখন ৪৩তম বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। বন্ধুরা একসঙ্গে পরামর্শ করে বই কিনেছিলাম। অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যাই। এবার প্রিলিতে উত্তীর্ণ হই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা খানিকটা কঠিন মনে হলেও লিখিত পরীক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল। লিখিতের পুরো প্রস্তুতি বাসায় থেকেই নিয়েছি, অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছি। পড়াশোনা-পরীক্ষা নিয়ে শারীরিকভাবে বেশ ধকল পোহাতে হয়। আম্মু এই সময়টাতে অনেক বেশি মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে লিখিত পরীক্ষা ভালো হয়।পরে ভাইভাতেও ভালোভাবে উত্তীর্ণ হই এবং পছন্দের ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
দের অনুপ্রেরণা পেয়েছি
বিসিএসের যাত্রায় অনেকেই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। এই সংখ্যা অনেক বড়, তাই নাম বলে শেষ করা যাবে না। আমার জীবনে চলার পথে পরিচিত হওয়া সর্বস্তরের মানুষ আমাকে নানাভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁদের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নব্যাংক সমাধান করলেই প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালোমতো জানা যায়। যেসব বিষয় প্রথমে কঠিন মনে হয়, সেগুলোও নিয়মিত অনুশীলন করার পরে সহজ হয়ে যায়।
প্রস্তুতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার
করোনার মধ্যে বিসিএসের প্রস্তুতি চলছিল। তখন প্রযুক্তির সাহায্য না নিলে হয়তো আমার ক্যাডার হওয়া হতো না। বিসিএস রিলেটেড গ্রুপগুলোতে অনেক লেখালেখি শেয়ার হতো; যা আমার প্রস্তুতিতে দারুণ কাজে দিয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মভিত্তিক পরীক্ষাগুলো আমার জন্য আশীর্বাদসূচক ছিল। সব মিলিয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহারে আমি অনেকটাই উপকৃত হয়েছি। তবে নতুনদের খেয়াল রাখতে হবে লেখাপড়া যেন সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক না হয়ে যায়; বরং এটাকে মূল প্রচেষ্টার সাপোর্ট হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। আর এখানে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের প্রবণতা মারাত্মক হতে পারে।
নতুনদের উদ্দেশে পরামর্শ
নতুনদের উদ্দেশ্যে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই:
- অন্যের উন্মাদনা দেখে বিসিএসে আসা উচিত নয়। নিজের ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিন।
- একটা সমমনা গ্রুপ বা বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে বই কেনা থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রস্তুতি নিন। এতে করে প্রচেষ্টা ও সময়, দুটোই কম খরচ হবে।
- পড়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে নিজের অবস্থান যাচাই করা ভালো হবে। নিজের দুর্বল জায়গাগুলো আস্তে আস্তে উন্নতি করতে হবে।
- পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিন। ভালো কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এসব আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে। কোনো অবস্থাতেই হতাশ হবেন না।
- বিসিএসের পড়াকে প্রাধান্য দিলেও অন্য সুযোগগুলো খেয়াল রাখুন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক্যাডার হলেও ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ইচ্ছা আছে। একটি সুখী-সমৃদ্ধ প্রত্যাশিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেকে প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান সেবক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে চাই।