ফুটবল বিশ্বকাপের স্পনসর সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো, সমালোচনার মুখে ফিফা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৩৮

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকোর সঙ্গে অংশীদারত্বের ঘোষণা দিয়েছে ফিফা। ২০২৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকা এই চুক্তির আওতায় ২০২৬ সালে পুরুষদের এবং পরের বছর নারীদের বিশ্বকাপ ফুটবলের স্পনসরের অধিকার পেয়েছে আরামকো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

আরামকোর ইতিমধ্যে ফর্মুলা ওয়ানের সঙ্গেও স্পনসরশিপ চুক্তি রয়েছে এবং কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের অংশীদার। আরামকোর সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, ‘বিশ্বমানের ক্রীড়া ইভেন্টে সমর্থন করার জন্য আরামকোর রয়েছে দারুণ পূর্ব অভিজ্ঞতা। তৃণমূলে খেলাধুলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার দিকেও তাদের মনোযোগ রয়েছে।’

ফিফার সঙ্গে আরামকোর এই অংশীদারত্বের চুক্তির অর্থ হলো—উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী খেলাধুলায় তার প্রভাব বৃদ্ধি করে চলেছে। তবে সৌদি আরবের এই খেলাধুলায় বিনিয়োগ করা এবং বিশ্বমানের ইভেন্ট আয়োজন করাকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেক সমালোচক। দেশটির এ ধরনের তৎপরতাকে ‘স্পোর্টসওয়াশিং’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তারা। ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত বা রাষ্ট্রীয় স্তরে করা অপকর্ম ঢাকতে খেলাধুলাকে ব্যবহার করার চর্চাকেই মূলত স্পোর্টসওয়াশিং বলা হয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড, নারী অধিকার লঙ্ঘন, সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা, বাক্‌স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা এবং ইয়েমেনে যুদ্ধের জন্য সমালোচিত হয়েছে সৌদি আরব।

২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ২১টি খেলায় সৌদি আরব থেকেই মোট ৩১২টি স্পনসরশিপ চুক্তি করা হয়েছে। আর, ২০৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দৌড়ে একমাত্র সৌদি আরবই রয়েছে। গত অক্টোবরে ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে গত মার্চ মাসে সৌদি আরব শুরু করে তাদের প্রচারণা। ফিফা এ বছরের শেষের দিকে আয়োজকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে।

ফিফার সঙ্গে আরামকোর চুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে, এতে মানবাধিকারবিষয়ক উদ্বেগ বেড়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের অধিকার দেওয়ার আগে ফিফার উচিত শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে বাধ্যতামূলক চুক্তি করা।

শুধু তাই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি আরামকোর সঙ্গে স্পনসরশিপ চুক্তি বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে সমালোচনা করেছে পরিবেশবিষয়ক সংস্থাগুলো। তাদের সমালোচনার কারণ হচ্ছে—বিশ্বকাপটি আয়োজিত হবে তিনটি ভিন্ন মহাদেশের ছয়টি দেশে। তবে ফিফা বলেছে যে, তারা পরিবেশগত প্রভাব প্রশমিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস সম্পর্কে মিথ্যা দাবির অভিযোগ উঠেছিল ফিফার বিরুদ্ধে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ফিফা ও আরামকোর মধ্যে চুক্তির পর এ নিয়ে সমালোচনায় মেতেছে ফসিল ফ্রি ফুটবল। ফুটবলকে পরিবেশ দূষণকারীদের থেকে দূরে রাখার জন্য কাজ করা সংগঠনটি বলেছে, ‘সৌদি আরামকো এবং সৌদি রাষ্ট্র বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে আসক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর। তারা এখন তাদের দূষণকারী পণ্য বিক্রি করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে এবং তাদের ভাবমূর্তি পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে।’

বৃহত্তর দূষণকারীদের সঙ্গে ফিফার সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত—এমন দাবি জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে যে, ফুটবল অনুরাগী এবং খেলোয়াড়রা আরও ভালো কিছুর প্রাপ্য।

গ্রিনপিসের একজন মুখপাত্র এই চুক্তিকে ফিফার জন্য ‘নিজস্ব লক্ষ্য’ এবং ‘স্পোর্টসওয়াশিংয়ের নির্লজ্জ উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পরিবেশবাদী স্বাধীন সংস্থা কার্বন ট্র্যাকারের মতে, আরামকো বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী করপোরেট কোম্পানি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আরামকো দাবি করেছে যে, তেলশিল্পে তাদের আপস্ট্রিম কার্বন ফুটপ্রিন্টই সর্বনিম্ন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত