আদানির ঘুষ কেলেঙ্কারিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফ্রান্সের টোটালএনার্জি

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৭
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ০১
গৌতম আদানি ও প্যাট্রিক পুইয়ান্নে। ছবি: আদানি

ফ্রান্সভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি টোটালএনার্জির প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক পুইয়ান্নে এর আগে উদীয়মান বাজারে জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছেন। সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পরও ২০১৮ সালে তিনি দেশটির ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভে’ যুক্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সময়ও তিনি রাশিয়ায় কোম্পানির কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘ সময় নিয়েছেন।

ভারতীয় বিলিয়নিয়ার গৌতম আদানির সঙ্গে টোটালএনার্জির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আদানি এখন ঘুষ কেলেঙ্কারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত। এতে টোটালএনার্জির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে।

টোটালএনার্জির সঙ্গে আদানি গ্রুপের সম্পর্কের শুরু ২০১৮ সালে। এ সময় তারা যৌথভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবসা গড়ে তোলে। বর্তমানে পুইয়ান্নে আদানি টোটাল গ্যাসের ৩৭ শতাংশ শেয়ার এবং আদানি গ্রিন এনার্জির ২০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেন।

আদানি গ্রিন এনার্জির বর্তমানে ১১ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আদানিই এখন শীর্ষস্থানীয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে টোটালএনার্জি আদানি গ্রিনের সঙ্গে একটি পৃথক সৌরবিদ্যুৎ যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও জোরদার করে।

আদানি গ্রিন এনার্জি এখন ঘুষ কেলেঙ্কারির নিয়ে মার্কিন আদালতে মামলার প্রধান অভিযুক্ত। মার্কিন প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গৌতম আদানি ও অন্যরা ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছেন। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ কেনার চুক্তি নিশ্চিত করতেই আদানি কর্মকর্তাদের এই ঘুষ দেয়।

এই অভিযোগের সূত্র ধরে জানা যায়, আদানি গ্রিন ২০২১ সালে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছিল।

টোটালের বিনিয়োগকারীরা অবশ্য আপাতত এই পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত। কারণ তাঁরা মনে করছেন, এটি ২০১৮ সালের ইরানের অভিজ্ঞতার মতো নয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে টোটাল ইরানের একটি বড় গ্যাস প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে টোটাল সরাসরি কোনো অভিযোগের মুখোমুখি হয়নি। তা সত্ত্বেও, আদানি সম্পর্কিত কেলেঙ্কারি টোটালের ভারতীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলোর ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে।

বার্নস্টেইন বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, আদানির সঙ্গে অংশীদারত্বে যাওয়ার আগে টোটালের যথাযথ ‘ডিউ ডিলিজেন্স’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। টোটালের মোট মূলধনের মাত্র ৩ শতাংশ ভারতে বিনিয়োগ হলেও, কোম্পানিটির নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ বা ৬ গিগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা এই দেশেই। ২০৩০ সালের মধ্যে আদানি গ্রিনের ৫০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য, টোটালের ১০০ গিগাওয়াট সক্ষমতার লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২০২৩ সালে আদানি গ্রিনের সঙ্গে নতুন অংশীদারত্বের সময়, টোটাল সতর্ক করেছিল যে, অনুপযুক্ত অংশীদার নির্বাচন বা অংশীদারত্বের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না হলে লাভের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলো থেকে টোটাল প্রায় ১০ শতাংশ রিটার্ন অন ক্যাপিটাল এমপ্লয়েড (আরওসিই) পায়। তবে এখনকার পরিস্থিতি কোম্পানির লাভের অঙ্ক কমিয়ে দিতে পারে।

তবে ইরানের ঘটনার মতো বড় ধরনের পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা কম। পুইয়ান্নে এই সংকটকে পেছনে ফেলার চেষ্টা করবেন, যেমন তিনি গত বছর আদানি সম্পর্কিত শর্ট–সেলার ঘটনার সময় করেছিলেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনি চাপ টোটালের ভারতীয় কার্যক্রমের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত