পুঁজিবাজারের সংস্কারের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। টাস্কফোর্সের অধীনে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হবে বেশ কিছু ফোকাস গ্রুপ। নির্ধারিত বিষয়ের জন্য এসব ফোকাস গ্রুপের কাজ হবে অসংগতি ও করণীয় সম্পর্কে তথ্য দিয়ে টাস্কফোর্সকে সহায়তা করা। 

রোববার (২০ অক্টোবর) রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। 

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও কল্যাণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংস্কার। দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই ও যথাযথ সংস্কারের জন্য বিএসইসির গঠিত টাস্কফোর্স স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সংস্কারের পরিকল্পনায় টাস্কফোর্সের অধীনে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত বেশ কিছু ফোকাস গ্রুপ কাজ করবে। 

সভায় বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসী চৌধুরী, ফারজানা লালারুখ, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেনসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ফোকাস গ্রুপের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ হবে। যেমন-ক্যাপিটাল ইস্যু নিয়ে একটা ফোকাস গ্রুপ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে যেসব সমস্যা ও অসংগতি রয়েছে, সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরবে। কতটুকু পরিবর্তন করা দরকার বা সম্ভব, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন। এভাবে পুঁজিবাজার সংস্কারে টাস্কফোর্সকে সহায়তা করবে এসব ফোকাস গ্রুপ। 

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে বিশেষ অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী ও সরকারের মালিকানাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে বিশেষ অবদান রাখতে হবে। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের বিকাশ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি জরুরি। মিউচুয়াল ফান্ডকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে এবং এই খাতের উন্নয়ন, বিকাশে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইসিবিকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। 

আইসিবির এমডি আবুল হোসেন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ ও নতুন পণ্য আনার ক্ষেত্রে আইসিবির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নের বিষয়েও বেশ কিছু কৌশলগত প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। 

পুঁজিবাজারের সংস্কারে সভায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে আইসিবি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংস্থানের নীতিমালা প্রণয়ন, সিকিউরিটিজ কেনার ক্ষেত্রে ট্রেক হোল্ডারস মার্জিন রেগুলেশন্সের সংস্কার, গ্রাহকের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবের সুদ বণ্টন বিধিমালার সংস্কার, ব্রোকারেজ কমিশনের যুক্তিসংগত নিম্নসীমা নির্ধারণ, ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন ও সুদ প্রদান সহজীকরণ, দেশে বিদ্যমান সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ, মার্কেট মেকার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন, স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে ট্রেজারি বিলের নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে বিশেষায়িত বন্ড, গ্রিন ফাইন্যান্সিংসহ ব্লু-ইকোনমিক জোনভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য বা সেবা চালুকরণ, সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ার সেটেলমেন্টের সময়সীমার সংস্কার এবং পুঁজিবাজারের কর সংক্রান্ত পলিসির সংস্কার।