গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্স (আইসিএসসি)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক এই সংস্থার বাংলাদেশি সদস্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এ কথা জানা গেছে। 

ঐতিহাসিক স্থান, জাদুঘর ও স্মৃতি সংরক্ষণের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী কাজ করে আইসিএসসি। সংস্থাটি মানুষের অতীতের সংগ্রাম, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে তুলে ধরতে চেষ্টা করে। 

সদস্যদের উদ্দেশ্যে আইসিএসসি বলেছে, ‘গাজায় আমরা আজ যা দেখছি তা হলো একটি নৈতিক পরাজয় এবং একটি মানবিক বিপর্যয়, যা বিশ্বকে গভীর মেরুকরণ আর সহিংসতার নতুন চক্রে নিমজ্জিত করবে।’ 

মাত্র ছয় সপ্তাহে গাজায় ১২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫ হাজার শিশু রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে আইসিএসসি জানায়, গুরুতর আহত হাজার হাজার মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এবং অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন। 

আইসিএসসি জানায়, ইসরায়েলের অবরোধ ও হাসপাতালগুলোতে হামলার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে হাসপাতালে মারা যাচ্ছে রোগীরা এবং তাদের মধ্যে অবুঝ শিশুরাও রয়েছে। একই সঙ্গে, হাজার হাজার পরিবার মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছে নিখোঁজ, অপহৃত ও নিহত প্রিয়জনের খবর পাওয়ার আশায়। 

জাতিসংঘ এবং বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এক মাসেরও বেশি সময় চলা এই মানবিক বিপর্যয়ে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পরিমাণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব। এই বিষয়ে অনেকে চোখ বন্ধ করে রাখেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অনেকে সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের সহিংসতাকে সমর্থন করেন। 

 ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইসিএসসি বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের সংঘাত মোকাবিলা নিয়ে কাজ করছে। সংস্থাটি জানায়, সহিংসতা কখনোই শান্তি ও নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে না। কাঠামোগত বা সক্রিয় যেমনই হোক না কেন, সহিংসতা কখনো শান্তি ও নিরাপত্তার সৃষ্টি বা পুনরুদ্ধার করে না। সহিংসতা কেবল আরও সহিংসতার জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা হ্রাস করে এবং যুদ্ধরত দলগুলোকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়। 

আইসিএসসি জানায়, আত্মরক্ষার নামে গাজার বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান আক্রমণ কেবল বেআইনিই নয় বরং বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে। একই সঙ্গে, এটি সহিংসতার নতুন চক্রকে ইন্ধন জোগাচ্ছে, কেননা ইতিমধ্যেই আমরা পৃথিবী জুড়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আরব-বিরোধী, ইসলাম-ফোবিক এবং ইহুদি-বিরোধী কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি। 

আইসিএসসি আহ্বান জানিয়েছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির। এ ছাড়া গাজার জনগণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা, ইসরায়েলের কারাগারে নির্বিচারে আটক সব ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয়ের সমান অধিকারের দাবি জানিয়েছে এই সংস্থাটি।