কারসাজিতে ফরচুনের অস্বাভাবিক চমক

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ১৭

মূল ব্যবসায় তেমন নজর না থাকলেও শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে পারদর্শিতা দেখানোর ইস্যুতে বরাবরই আলোচনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফরচুন শুজ লিমিটেড। আইপিওর মাধ্যমে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে আসে কোম্পানিটি। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারদর ৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করত। কিন্তু আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও মাত্র ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হয় ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮ টাকা থেকে বেড়ে ২১ অক্টোবর দাঁড়ায় ১০৫ টাকায়। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুঁজিবাজারের কারসাজিকারক হিসেবে পরিচিত সমবায় কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু। আবার হিরু চক্রের হয়ে কারসাজির অন্য সব শেয়ারে বিনিয়োগ করে শেয়ারদর বাড়াতে বা কারসাজিতে সহায়তা করেছে ফরচুন শুজ কর্তৃপক্ষ।  শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরুকে জরিমানা করা হলেও কিছু হয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের। 

কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারদর বাড়ানোর পরও বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না কোম্পানিটি। এমনকি ঘোষণা করেও মুনাফা না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে ফরচুন শুজের অবস্থান নেমেছে ‘জেড’ শ্রেণিতে। এতেই শেষ নয়, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনেও ধরা পড়েছে রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি। 

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়ে ফরচুন শুজের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা করেন হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর ও তাঁর সহযোগীরা। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও এ সময়ে কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনেছিলেন। এ কারণে আবুল কালাম মাতবর ও তাঁর সহযোগীদের ২০২২ সালে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। 

হিরু চক্র যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আইপিডিসি, জেনেক্স ইনফোসিস, সোনালি পেপার, এনআরবিসি ব্যাংক, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স। এসব কোম্পানির মধ্যে আইপিডিসি, জেনেক্স ইনফোসিস ও সোনালি পেপারের শেয়ারদর বাড়ানোর জন্য ফরচুন শুজ থেকে বিনিয়োগ করা হয়। 

তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৩০ জুন ফরচুন শুজ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিসে ৫০ হাজার, আইপিডিসিতে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং সোনালি পেপারে ২৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়।

এরপরে ২০২৩ সালের ৩০ জুনে হিরু চক্রের সহযোগিতার অংশ হিসেবে আইপিডিসি ও সোনালি পেপারেও বড় বিনিয়োগ ছিল ফরচুন শুজের। ওই সময় ফরচুনের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ৩৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইপিডিসিতে ৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও সোনালি পেপারে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল। 

ফরচুন শুজের ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার না থাকায় নিরীক্ষক ওই সম্পদের সত্যতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মজুত পণ্য ও ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বিক্রি হওয়া পণ্যের ব্যয়ের (কস্ট অব গুডস সোল্ড) সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 

ফরচুন শুজ ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে নির্দিষ্ট সময়ে বিতরণ না করায় ডিএসইতে অভিযোগ দিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে গত ৯ জুন ওই লভ্যাংশ প্রেরণ করেছে বলে ডিএসইতে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘোষণা করা ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এখনো বিতরণ করেনি। 

তুরস্কে অবস্থান করায় এ বিষয়ে ফরচুন শুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ভাই রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (হিরু) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। কোম্পানির যত প্রকার ক্ষতি, তিনি করেছেন। কোম্পানিটাকে তিনি ডুবিয়েছেন।’ 

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফরচুন শুজের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত