মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
প্রায় দেড় বছর ধরে গোটা পৃথিবী এক অণুজীবের কাছে নাকাল হচ্ছে। করোনাভাইরাস নামের এই অণুজীবের সংক্রমণ রোধে কী না করেছে ও করছে মানুষ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, এর প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও চলছে এই টিকাদান কর্মসূচি।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের নামটি জড়িয়ে আছে। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ওই দিন নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের খবর প্রকাশ হলে গোটা দেশের আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছিল জেলাটি। এক ধরনের শঙ্কার আবহ ঘিরে ধরেছিল। মৃত্যুভয়ের চেয়ে বড় কিছু তো নেই। সেই মৃত্যুভয়ের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে পরদিনই কাজ শুরু করি।
এ ধরনের দুর্যোগে জনসচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রথমেই আমরা করোনা থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট ছাপিয়ে পাড়া–মহল্লা, বাজার, মসজিদ-মন্দিরে বিলি করা শুরু করি। সঙ্গে শুরু করি সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ।
এভাবেই আমাদের শুরু। দশ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে জানানো হয়। শঙ্কা আরও বাড়ল। লকডাউনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের গুঞ্জন শুরু হতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কেট, ফার্মেসিগুলো শূন্য হয়ে গেল। কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী। এই অবস্থায় আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিদ্যানন্দ থেকে ফর্মুলা নিয়ে স্যানিটাইজার বানানো শুরু করি। ১৮ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত আমরা ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও কাপড় কাচার সাবান প্রক্রিয়াজাত করে ১০ হাজার বোতল তরল সাবান তৈরি করে জেলায় বিনা মূল্যে বিতরণ শুরু করি। এই সময়ে আমাদের নিয়ে সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আমাদের এই উদ্যোগের একটি নাম দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় আজকের ‘টিম খোরশেদ’–এর।
গত বছরের মার্চের করোনায় মৃত্যু বাড়তে থাকলে মরদেহ দাফন বা সৎকার নিয়ে মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়। সন্তানের মৃত মাকে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া, কবর খননের লোক না পাওয়া যাওয়া, এমনকি কবরস্থানে দাফন করতে গেলে এলাকাবাসীর বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটতে শুরু করে। এই অবস্থায় আমরা ‘টিম খোরশেদ’-এর পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করি।
গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে আমরা করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন ও সৎকার শুরু করি, যা ছিল দেশে এ ধরনের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগ। এর আগে আমরা আমাদের সহযোগী সংগঠন ‘টাইম টু গিভ’–এর সহায়তায় লন্ডন রয়্যাল হসপিটালের করোনা ইউনিটে কর্মরত ডা. তানভীরের কাছ থেকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু পিপিই বানিয়ে বাজার থেকে গামবুট ও গ্লাভস কিনে কাজে নামি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতে শুরু করে। অনেকে সতর্ক করে। কিন্তু আমরা ‘করোনা আক্রান্ত মৃতদেহের স্বজন আমরা’ স্লোগান সামনে রেখে সব বাধা উপেক্ষা করে দাফন ও সৎকার চালু রাখি।
এ কার্যক্রমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে আমরা যেমন বাহবা পেতে শুরু করি, তেমনি মানুষের মধ্যে যে অজানা মৃত্যুভয় কাজ করছিল, তা–ও ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করে। তরুণেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তারাও যোগ দেয়। আমরা এই তরুণদের মরদেহ গোসল ও দাফনের পদ্ধতি শেখাই। সুরক্ষাসামগ্রীও সরবরাহ করি। আমরা কতজনের দাফন করলাম, সে সংখ্যার চেয়ে মানুষের ভয় ভাঙতে পেরেই আমরা বেশি গর্বিত। আমরা মানুষকে সাহসী করতে পেরেছি—এটাই আমাদের মূল সার্থকতা।
গত বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ১০ চিকিৎসকের সমন্বয়ে টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম শুরু করি। জুনের শুরু থেকে ‘টিম খোরশেদ’-এর কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়। আমাদের কর্মতালিকায় যুক্ত হয় বিনা মূল্যে অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স ও প্লাজমা দানের বিষয়গুলো। আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় চার শতাধিক মানুষকে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ, ১০২ জনকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও ১১২ জনকে প্লাজমা দান করা হয়। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সারা দেশের প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। আর ২০২ মরদেহ সৎকারের পাশাপাশি ৯ হাজার পরিবারকে কয়েক দফা খাদ্যসহায়তা দিয়েছে আমাদের এই দল।
এসব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কখনোই জাতি–ধর্ম, দলমত ইত্যাদি গুরুত্ব পায়নি। যেকোনোভাবে মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। রোজা রেখেই অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মুখাগ্নি পর্যন্ত করেছি আমরা। ভয়ে কোনো আত্মীয়স্বজন আসেনি মৃতদেহের সঙ্গে। অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করে এনেছি বাড়ির সিঁড়ি ও উঠান থেকে। এমন অনেক মৃতদেহ আমরা দাফন করেছি, যাঁদের জানাজায় পরিবারের কেউ অংশ নিতে আসেনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
করোনার মতো এমন মহামারি নিকট অতীতে পৃথিবী দেখেনি। তাই আমরা মনে করেছি, মানব জন্ম সার্থক করার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। মনে হয়েছে, আমরাও তো কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হতে পারি। তাই মনের তাগিদেই এই করোনাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
এই সুযোগে দলের নেতা হিসেবে আমি আমার দলের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেড় বছরে আমি, আমার স্ত্রীসহ দলের ১০ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েও আবার কাজে ফিরেছি আল্লাহর রহমতে। কৃতজ্ঞতা জানাই ‘টাইম টু গিভ’ ও দিগন্ত ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনার জন্য। এ কাজে সর্বাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই মডেল গ্রুপকে। নগদ টাকা আমরা অনুদান নিই না। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে অনেকেই আমাদের সহায়তা করেছেন।
এই দুর্যোগে কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় আমরা জীবন বাজি রাখিনি। আমরা কোনো মৃত ব্যক্তির বাড়ি বা হাসপাতালে পৌঁছালে, তার স্বজনের চোখে যে নির্ভরতার ছায়া দেখি, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মানুষ আমাদের ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছে, সেটাই আমাদের পরম পাওয়া। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে এক দিনের জন্যও আমরা পিছপা হইনি। এই মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই আমরা অব্যাহত রাখব। আল্লাহর রহমতে ও সবার সম্মিলিত সহায়তায় আমরা বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করতে ভূমিকা রাখব—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
‘টিম খোরশেদ’-এর দলনেতা এবং নারায়ণগঞ্জ
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর
প্রায় দেড় বছর ধরে গোটা পৃথিবী এক অণুজীবের কাছে নাকাল হচ্ছে। করোনাভাইরাস নামের এই অণুজীবের সংক্রমণ রোধে কী না করেছে ও করছে মানুষ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, এর প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও চলছে এই টিকাদান কর্মসূচি।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের নামটি জড়িয়ে আছে। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ওই দিন নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের খবর প্রকাশ হলে গোটা দেশের আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছিল জেলাটি। এক ধরনের শঙ্কার আবহ ঘিরে ধরেছিল। মৃত্যুভয়ের চেয়ে বড় কিছু তো নেই। সেই মৃত্যুভয়ের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে পরদিনই কাজ শুরু করি।
এ ধরনের দুর্যোগে জনসচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রথমেই আমরা করোনা থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট ছাপিয়ে পাড়া–মহল্লা, বাজার, মসজিদ-মন্দিরে বিলি করা শুরু করি। সঙ্গে শুরু করি সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ।
এভাবেই আমাদের শুরু। দশ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে জানানো হয়। শঙ্কা আরও বাড়ল। লকডাউনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের গুঞ্জন শুরু হতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কেট, ফার্মেসিগুলো শূন্য হয়ে গেল। কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী। এই অবস্থায় আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিদ্যানন্দ থেকে ফর্মুলা নিয়ে স্যানিটাইজার বানানো শুরু করি। ১৮ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত আমরা ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও কাপড় কাচার সাবান প্রক্রিয়াজাত করে ১০ হাজার বোতল তরল সাবান তৈরি করে জেলায় বিনা মূল্যে বিতরণ শুরু করি। এই সময়ে আমাদের নিয়ে সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আমাদের এই উদ্যোগের একটি নাম দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় আজকের ‘টিম খোরশেদ’–এর।
গত বছরের মার্চের করোনায় মৃত্যু বাড়তে থাকলে মরদেহ দাফন বা সৎকার নিয়ে মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়। সন্তানের মৃত মাকে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া, কবর খননের লোক না পাওয়া যাওয়া, এমনকি কবরস্থানে দাফন করতে গেলে এলাকাবাসীর বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটতে শুরু করে। এই অবস্থায় আমরা ‘টিম খোরশেদ’-এর পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করি।
গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে আমরা করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন ও সৎকার শুরু করি, যা ছিল দেশে এ ধরনের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগ। এর আগে আমরা আমাদের সহযোগী সংগঠন ‘টাইম টু গিভ’–এর সহায়তায় লন্ডন রয়্যাল হসপিটালের করোনা ইউনিটে কর্মরত ডা. তানভীরের কাছ থেকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু পিপিই বানিয়ে বাজার থেকে গামবুট ও গ্লাভস কিনে কাজে নামি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতে শুরু করে। অনেকে সতর্ক করে। কিন্তু আমরা ‘করোনা আক্রান্ত মৃতদেহের স্বজন আমরা’ স্লোগান সামনে রেখে সব বাধা উপেক্ষা করে দাফন ও সৎকার চালু রাখি।
এ কার্যক্রমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে আমরা যেমন বাহবা পেতে শুরু করি, তেমনি মানুষের মধ্যে যে অজানা মৃত্যুভয় কাজ করছিল, তা–ও ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করে। তরুণেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তারাও যোগ দেয়। আমরা এই তরুণদের মরদেহ গোসল ও দাফনের পদ্ধতি শেখাই। সুরক্ষাসামগ্রীও সরবরাহ করি। আমরা কতজনের দাফন করলাম, সে সংখ্যার চেয়ে মানুষের ভয় ভাঙতে পেরেই আমরা বেশি গর্বিত। আমরা মানুষকে সাহসী করতে পেরেছি—এটাই আমাদের মূল সার্থকতা।
গত বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ১০ চিকিৎসকের সমন্বয়ে টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম শুরু করি। জুনের শুরু থেকে ‘টিম খোরশেদ’-এর কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়। আমাদের কর্মতালিকায় যুক্ত হয় বিনা মূল্যে অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স ও প্লাজমা দানের বিষয়গুলো। আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় চার শতাধিক মানুষকে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ, ১০২ জনকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও ১১২ জনকে প্লাজমা দান করা হয়। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সারা দেশের প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। আর ২০২ মরদেহ সৎকারের পাশাপাশি ৯ হাজার পরিবারকে কয়েক দফা খাদ্যসহায়তা দিয়েছে আমাদের এই দল।
এসব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কখনোই জাতি–ধর্ম, দলমত ইত্যাদি গুরুত্ব পায়নি। যেকোনোভাবে মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। রোজা রেখেই অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মুখাগ্নি পর্যন্ত করেছি আমরা। ভয়ে কোনো আত্মীয়স্বজন আসেনি মৃতদেহের সঙ্গে। অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করে এনেছি বাড়ির সিঁড়ি ও উঠান থেকে। এমন অনেক মৃতদেহ আমরা দাফন করেছি, যাঁদের জানাজায় পরিবারের কেউ অংশ নিতে আসেনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
করোনার মতো এমন মহামারি নিকট অতীতে পৃথিবী দেখেনি। তাই আমরা মনে করেছি, মানব জন্ম সার্থক করার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। মনে হয়েছে, আমরাও তো কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হতে পারি। তাই মনের তাগিদেই এই করোনাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
এই সুযোগে দলের নেতা হিসেবে আমি আমার দলের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেড় বছরে আমি, আমার স্ত্রীসহ দলের ১০ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েও আবার কাজে ফিরেছি আল্লাহর রহমতে। কৃতজ্ঞতা জানাই ‘টাইম টু গিভ’ ও দিগন্ত ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনার জন্য। এ কাজে সর্বাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই মডেল গ্রুপকে। নগদ টাকা আমরা অনুদান নিই না। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে অনেকেই আমাদের সহায়তা করেছেন।
এই দুর্যোগে কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় আমরা জীবন বাজি রাখিনি। আমরা কোনো মৃত ব্যক্তির বাড়ি বা হাসপাতালে পৌঁছালে, তার স্বজনের চোখে যে নির্ভরতার ছায়া দেখি, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মানুষ আমাদের ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছে, সেটাই আমাদের পরম পাওয়া। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে এক দিনের জন্যও আমরা পিছপা হইনি। এই মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই আমরা অব্যাহত রাখব। আল্লাহর রহমতে ও সবার সম্মিলিত সহায়তায় আমরা বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করতে ভূমিকা রাখব—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
‘টিম খোরশেদ’-এর দলনেতা এবং নারায়ণগঞ্জ
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪