মুহম্মদ আল আমীন বাকলাই
চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৬-৬৪৬ খ্রিঃ যখন ভারতবর্ষে ভ্রমন করেন তখন দক্ষিনের এই সমৃদ্ধশালী জনপদ ‘বাকলা’র পশ্চিমভাগে উত্তাল তরঙ্গময়ী সুগন্ধা নদী প্রবাহিত ছিল। এই নদীর একতীরে পোনাবালিয়া গ্রামের শ্যামরাইলে শিবলিঙ্গ এবং অন্যতীরে শিকারপুরের উগ্রতারাদেবী স্থাপিত ছিল। এ ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী ঝালকাঠির বৃহদাংশ ভূখন্ড সুগন্ধা নদীর দান। সুগন্ধা বিষখালী গাবখান ধানসিড়ি কালিজিরা জাঙ্গালীয়া নদীর জল অঙ্গে নিয়ে দুই তীরে গড়ে ওঠা লোকজীবনের কৃষ্টি কালচার ধর্ম আচার অনুষ্ঠানে মিশে আছে ঝালকাঠির সংস্কৃতি। নদীকেন্দ্রীক ব্যবসা, জীবনঘনিষ্ট নাটক, পালাগান, পূঁথি, জারি-সারি, যাত্রা, কবিতা, সাহিত্যে কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাতি অর্জন করে। ১৮৭৫ সালে ঝালকাঠি পৌরসভা গঠনের মধ্য দিয়ে এর নগরায়নের যাত্রা শুরু। ৪টি থানা (উপজেলা), ৩২ টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝালকাঠি জেলা ঘোষিত হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এ জেলার অর্থনীতি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইতিহাস গর্বের ও গৌরবের।
মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতিমান বাসন্ডা’র জমিদার চন্ডিচরণ সেণ (১৮৪৫-১৯০৬) সর্ব প্রথম বাংলায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেন। তার কন্যা কবি কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩) সে যুগের অবিভক্ত বাংলার প্রথম গ্রাজুয়েট ও শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি। কবি কামিনী রায়ের কবিতা—‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন-মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে/আপনার কথা ভুলিয়া যাও’—জনসাধারনের হৃদয়ে হৃদয়ে মুদ্রিত।আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, পৌরানিকী, গুঞ্জন, অশোক স্মৃতি, মাল্য ও নির্মাল্য, ঠাকুরমার চিঠি, দীপ ও ধুপ প্রভৃতি বহু কাব্য গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে কামিনী রায় এর অমর সৃষ্টি।
ধানসিঁড়ি নদীর স্মৃতিধন্য আধুনিক বাংলা কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালি কবি জীবনানন্দ দাশ। ধানসিঁড়ি নদী, নদীর তীরের অপরুপ প্রকৃতি, নানা প্রজাতির গাছ, পাখির রূপের গভীরে জীবনানন্দের অর্ন্তদৃষ্টি। ‘হায় চিল, সোঁনালি ডানার চিল এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে।’ তাই কবির ইচ্ছা—‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়।’ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নদীর আধুনিক রূপকার। ধানসিঁড়ি আর ঝালকাঠি ধন্য জীবনানন্দকে বুকে ধারন করে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় স্থিতিশীল মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে আরব পারস্যের সুফী সাধকদের আগমন ঘটতে থাকে। নির্যাতিত বহু মানুষ ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ১৭ শতকে ইসলামের ব্যাপক প্রসারে এ দেশে জারিগান, পুঁথি, কবিগানের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। ঝালকাঠিতে সৃষ্টিহয় বহু কবিয়াল, গায়েন, জারি শিল্পী, পুঁথির পাঠক। দেশের গন্ডি পেরিয়ে কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী এলকায়ও এদের ডাক পরত। জারিসম্রাট আঃ গনি বয়াতীর জন্ম ঝালকাঠির নরুল্লাপুর গ্রামে ১৯০৯ খ্রীষ্টাদ্ধে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জারি দল গঠন করে গানগেয়ে খ্যাতি ও পুরস্কার লাভ করে বিখ্যাত হন তিনি।
উস্কো খুস্কো চুল, মুখে রাগাল দাঁড়ি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া বা সাদা লুঙ্গি ও লম্বা পাঞ্জাবী পরিহিত এক হাতে একতারা ও অন্য হাতে গোপী যন্ত্র সমেত দরাজ গলায় সুরের লহরী ছেড়ে নির্মিলিত চোখে একটানা মরমী গান গেয়ে যায় বাউল। বাউলের পিঠস্থান ঝালকাঠি। মুকুন্দ দাশের ভবিশিষ্য কালাকেষ্ঠ, পাগলা কানাই, মানিক ফকির ঝালকাঠিকে ধন্য করেছে। রতন বাউল, সোহরাব বাউল, মনির, সবুর সে ধারা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে।
লোক সভ্যতা বিকাশের পূর্বে ‘যাত্রা’ ছিল বিনোদনের অন্যতম বাহন। ১৮৭২ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় প্রথম জাতীয় যাত্রা মঞ্চ স্থাপিত হয়। তার মাত্র ২ বছর পর ১৮৭৪ খ্রিঃ ঝালকাঠির পাজিপুঁথিাড়া’য় ‘নট্ট কোম্পানী’ যাত্রা দলের শক্তিমান আবির্ভাব। নট্ট কোম্পানীর শিল্প সম্মত অভিনয় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার নাট্য জগতেও নাম করে। ১৮৫৫ সালে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত ‘নাথ কোম্পানী’। যাত্রা দলে ১৯১৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত নারী চরিত্রে অভিনয় করত পুরুষ শিল্পীরা। ১৯১৫ সালে বাংলায় প্রথম নারী যাত্রাদল গঠন করে ইতিহাস হয়ে আছে ঝালকাঠির শ্রীমতি পূন্যলক্ষ্মী বোচা'র ‘লেডি কোম্পানী।’ বৃটিশ শাসনামলে ঝালকাঠিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা অবলম্বনে রচিত “গুনাই বিবির পালাগান” আর ‘আসমান সিংহের ফাঁসি’ লোক সংস্কৃতির অন্যতম উপস্থাপনা।
“পেয়ারা আর শীতলপাটি” এই নিয়ে ঝালকাঠি। ঝালকাঠিতে ধান,পান,সুপার,নারিকেল প্রভৃতি অর্থকরি ফসলের পাশাপাশি পেয়ারা চাষ ও এশিয়া মহাদেশের একমাত্র ভাসমান পেয়ারা বাজার। ঝালকাঠি জেলার ২৪টি গ্রামে পাশাপাশি প্রায় ১৮৫০ একর জমিতে বছরে ৬৫০০ টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এখানে উৎপন্ন হয়। সবচেয়ে নান্দনিক এর বিক্রয় ব্যবস্থা। একই আকৃতিরৃ শত শত নৌকায় চাষীরা পেয়ারা বোঝাই করে নদীতে একত্রিত হয় ভাসমান পেয়ারা বাজার ভিমরুলীতে। এখন থেকে কলওয়ালা নৌকায় তোলে ব্যাপারীরা। যা সারাদেশে রপ্তানী হয়। বর্তমানে পেয়ারার পাশাপাশি শত শত একর জমিতে আমড়া চাষ জেলার অর্থনীতিকে সাবলম্বী করছে। আমড়াও বিক্রি হয় এই ভাসমান বাজারে। দৃষ্টিনন্দন এই বাজার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে দিনে দিনে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বহু দর্শনার্থী পর্যটক ভীড় করে এই বাজারে।
ঝালকাঠি, রাজাপুর, নলছিটি উপজেলার শীতলপাটি খুবই আরামদায়ক বিছানা। বর্তমানে পাটিকররা বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে রপ্তানী করছে বিদেশেও।
লবণ শিল্প, তেলের ডিপো ঝালকাঠির পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা। এখানে গ
উঠেছিল প্রায় ৭২টি লবণ মিল। সমস্ত দক্ষিণ বাংলার মানুষের জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয় তেলের ডিপো থেকে। ঝালকাঠির তাঁতের গামছার কদর সারাদেশে জুড়ে।
১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পর এ দেশে আগত সুফি সাধকগন স্থায়ী বসতি স্থাপনের পর পরই একাধিক মসজিদ নির্মান করেন। রাজাপুরে প্রায় ৬০০/৬৫০ বছর আগে একই আকৃতির ৩ টি করে মসজিদ ইসলামী সভ্যতা বিকাশের সাক্ষ্য বহন করে। ঝালকাঠিতে রয়েছে দেশ বরেন্য আলেম হযরত কায়েদ সাহের (র:) মাযারসহ বহু পীর আউলিয়ার মাজার।
শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হকের জন্মস্থান এ জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া মাতুলালয়ে।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পৃথিবীর রোল মডেল। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়ন। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রেল সেতু আর এক আর্শীবাদ। বিদ্যুৎ বিপ্লবের মাধ্যমে গ্রাম এখন শহর। ১১২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত পায়রা সমুদ্র বন্দর ঝালকাঠি বন্দরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়াল লক্ষে ঝালকাঠিতে যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং কলেজ সকলে মিলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে।
মুহম্মদ আল আমীন বাকলাই
কবি ও গবেষক
চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৬-৬৪৬ খ্রিঃ যখন ভারতবর্ষে ভ্রমন করেন তখন দক্ষিনের এই সমৃদ্ধশালী জনপদ ‘বাকলা’র পশ্চিমভাগে উত্তাল তরঙ্গময়ী সুগন্ধা নদী প্রবাহিত ছিল। এই নদীর একতীরে পোনাবালিয়া গ্রামের শ্যামরাইলে শিবলিঙ্গ এবং অন্যতীরে শিকারপুরের উগ্রতারাদেবী স্থাপিত ছিল। এ ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী ঝালকাঠির বৃহদাংশ ভূখন্ড সুগন্ধা নদীর দান। সুগন্ধা বিষখালী গাবখান ধানসিড়ি কালিজিরা জাঙ্গালীয়া নদীর জল অঙ্গে নিয়ে দুই তীরে গড়ে ওঠা লোকজীবনের কৃষ্টি কালচার ধর্ম আচার অনুষ্ঠানে মিশে আছে ঝালকাঠির সংস্কৃতি। নদীকেন্দ্রীক ব্যবসা, জীবনঘনিষ্ট নাটক, পালাগান, পূঁথি, জারি-সারি, যাত্রা, কবিতা, সাহিত্যে কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাতি অর্জন করে। ১৮৭৫ সালে ঝালকাঠি পৌরসভা গঠনের মধ্য দিয়ে এর নগরায়নের যাত্রা শুরু। ৪টি থানা (উপজেলা), ৩২ টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝালকাঠি জেলা ঘোষিত হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এ জেলার অর্থনীতি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইতিহাস গর্বের ও গৌরবের।
মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতিমান বাসন্ডা’র জমিদার চন্ডিচরণ সেণ (১৮৪৫-১৯০৬) সর্ব প্রথম বাংলায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেন। তার কন্যা কবি কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩) সে যুগের অবিভক্ত বাংলার প্রথম গ্রাজুয়েট ও শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি। কবি কামিনী রায়ের কবিতা—‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন-মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে/আপনার কথা ভুলিয়া যাও’—জনসাধারনের হৃদয়ে হৃদয়ে মুদ্রিত।আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, পৌরানিকী, গুঞ্জন, অশোক স্মৃতি, মাল্য ও নির্মাল্য, ঠাকুরমার চিঠি, দীপ ও ধুপ প্রভৃতি বহু কাব্য গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে কামিনী রায় এর অমর সৃষ্টি।
ধানসিঁড়ি নদীর স্মৃতিধন্য আধুনিক বাংলা কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালি কবি জীবনানন্দ দাশ। ধানসিঁড়ি নদী, নদীর তীরের অপরুপ প্রকৃতি, নানা প্রজাতির গাছ, পাখির রূপের গভীরে জীবনানন্দের অর্ন্তদৃষ্টি। ‘হায় চিল, সোঁনালি ডানার চিল এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে।’ তাই কবির ইচ্ছা—‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়।’ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নদীর আধুনিক রূপকার। ধানসিঁড়ি আর ঝালকাঠি ধন্য জীবনানন্দকে বুকে ধারন করে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় স্থিতিশীল মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে আরব পারস্যের সুফী সাধকদের আগমন ঘটতে থাকে। নির্যাতিত বহু মানুষ ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ১৭ শতকে ইসলামের ব্যাপক প্রসারে এ দেশে জারিগান, পুঁথি, কবিগানের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। ঝালকাঠিতে সৃষ্টিহয় বহু কবিয়াল, গায়েন, জারি শিল্পী, পুঁথির পাঠক। দেশের গন্ডি পেরিয়ে কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী এলকায়ও এদের ডাক পরত। জারিসম্রাট আঃ গনি বয়াতীর জন্ম ঝালকাঠির নরুল্লাপুর গ্রামে ১৯০৯ খ্রীষ্টাদ্ধে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জারি দল গঠন করে গানগেয়ে খ্যাতি ও পুরস্কার লাভ করে বিখ্যাত হন তিনি।
উস্কো খুস্কো চুল, মুখে রাগাল দাঁড়ি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া বা সাদা লুঙ্গি ও লম্বা পাঞ্জাবী পরিহিত এক হাতে একতারা ও অন্য হাতে গোপী যন্ত্র সমেত দরাজ গলায় সুরের লহরী ছেড়ে নির্মিলিত চোখে একটানা মরমী গান গেয়ে যায় বাউল। বাউলের পিঠস্থান ঝালকাঠি। মুকুন্দ দাশের ভবিশিষ্য কালাকেষ্ঠ, পাগলা কানাই, মানিক ফকির ঝালকাঠিকে ধন্য করেছে। রতন বাউল, সোহরাব বাউল, মনির, সবুর সে ধারা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে।
লোক সভ্যতা বিকাশের পূর্বে ‘যাত্রা’ ছিল বিনোদনের অন্যতম বাহন। ১৮৭২ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় প্রথম জাতীয় যাত্রা মঞ্চ স্থাপিত হয়। তার মাত্র ২ বছর পর ১৮৭৪ খ্রিঃ ঝালকাঠির পাজিপুঁথিাড়া’য় ‘নট্ট কোম্পানী’ যাত্রা দলের শক্তিমান আবির্ভাব। নট্ট কোম্পানীর শিল্প সম্মত অভিনয় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার নাট্য জগতেও নাম করে। ১৮৫৫ সালে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত ‘নাথ কোম্পানী’। যাত্রা দলে ১৯১৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত নারী চরিত্রে অভিনয় করত পুরুষ শিল্পীরা। ১৯১৫ সালে বাংলায় প্রথম নারী যাত্রাদল গঠন করে ইতিহাস হয়ে আছে ঝালকাঠির শ্রীমতি পূন্যলক্ষ্মী বোচা'র ‘লেডি কোম্পানী।’ বৃটিশ শাসনামলে ঝালকাঠিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা অবলম্বনে রচিত “গুনাই বিবির পালাগান” আর ‘আসমান সিংহের ফাঁসি’ লোক সংস্কৃতির অন্যতম উপস্থাপনা।
“পেয়ারা আর শীতলপাটি” এই নিয়ে ঝালকাঠি। ঝালকাঠিতে ধান,পান,সুপার,নারিকেল প্রভৃতি অর্থকরি ফসলের পাশাপাশি পেয়ারা চাষ ও এশিয়া মহাদেশের একমাত্র ভাসমান পেয়ারা বাজার। ঝালকাঠি জেলার ২৪টি গ্রামে পাশাপাশি প্রায় ১৮৫০ একর জমিতে বছরে ৬৫০০ টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এখানে উৎপন্ন হয়। সবচেয়ে নান্দনিক এর বিক্রয় ব্যবস্থা। একই আকৃতিরৃ শত শত নৌকায় চাষীরা পেয়ারা বোঝাই করে নদীতে একত্রিত হয় ভাসমান পেয়ারা বাজার ভিমরুলীতে। এখন থেকে কলওয়ালা নৌকায় তোলে ব্যাপারীরা। যা সারাদেশে রপ্তানী হয়। বর্তমানে পেয়ারার পাশাপাশি শত শত একর জমিতে আমড়া চাষ জেলার অর্থনীতিকে সাবলম্বী করছে। আমড়াও বিক্রি হয় এই ভাসমান বাজারে। দৃষ্টিনন্দন এই বাজার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে দিনে দিনে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বহু দর্শনার্থী পর্যটক ভীড় করে এই বাজারে।
ঝালকাঠি, রাজাপুর, নলছিটি উপজেলার শীতলপাটি খুবই আরামদায়ক বিছানা। বর্তমানে পাটিকররা বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে রপ্তানী করছে বিদেশেও।
লবণ শিল্প, তেলের ডিপো ঝালকাঠির পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা। এখানে গ
উঠেছিল প্রায় ৭২টি লবণ মিল। সমস্ত দক্ষিণ বাংলার মানুষের জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয় তেলের ডিপো থেকে। ঝালকাঠির তাঁতের গামছার কদর সারাদেশে জুড়ে।
১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পর এ দেশে আগত সুফি সাধকগন স্থায়ী বসতি স্থাপনের পর পরই একাধিক মসজিদ নির্মান করেন। রাজাপুরে প্রায় ৬০০/৬৫০ বছর আগে একই আকৃতির ৩ টি করে মসজিদ ইসলামী সভ্যতা বিকাশের সাক্ষ্য বহন করে। ঝালকাঠিতে রয়েছে দেশ বরেন্য আলেম হযরত কায়েদ সাহের (র:) মাযারসহ বহু পীর আউলিয়ার মাজার।
শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হকের জন্মস্থান এ জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া মাতুলালয়ে।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পৃথিবীর রোল মডেল। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়ন। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রেল সেতু আর এক আর্শীবাদ। বিদ্যুৎ বিপ্লবের মাধ্যমে গ্রাম এখন শহর। ১১২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত পায়রা সমুদ্র বন্দর ঝালকাঠি বন্দরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়াল লক্ষে ঝালকাঠিতে যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক, কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং কলেজ সকলে মিলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে।
মুহম্মদ আল আমীন বাকলাই
কবি ও গবেষক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪