সুবল বিশ্বাস
দেশের মধ্য-দক্ষিণ বা ভাটিবঙ্গের ছোট্ট একটি জনপদ মাদারীপুর। পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, ময়নাকাটা ও পালরদী নদীর পলিবিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক উর্বর ভূমি। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট দেখতে যেমন শিল্পীর চিত্রপটে আঁকা ছবির মতো, তেমনই সব স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের শক্ত ঘাঁটি নামেও খ্যাত। এ অঞ্চলের মানুষ কখনো প্রকৃতির মতো শান্ত; আবার কখনো ভয়ংকর সিংহশার্দূল। এ কারণে একসময় এই জনপদটি পরিচিত ছিল ‘চিতোর অব বেঙ্গল’নামে। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির ভান্ডার মাদারীপুর আদিকাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগপর্যন্ত ছিল অনুন্নত এক প্লাবনভূমি। প্রকৃতির বৈরিতা, শ্রেণিবৈষম্য ও শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে কোনো দিন উন্নয়নের ছোঁয়াটুকুও লাগেনি। নদ-নদী, বিল-বাঁওড় ও ভাঙনপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় একমাত্র নৌপথ ছাড়া এখানকার যাতায়াতব্যবস্থার আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই দুর্গম জনপদে সহজ যাতায়াতে নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত জেলার ভেতর বয়ে যাওয়া নদ-নদী দিয়ে। অবশ্য ওই সব জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন করত। তখন হাতে গোনা কয়েকটি স্টিমারে মানুষের যাতায়াত ছিল আন্তজেলাভিত্তিক। এর পাশাপাশি কাঠের তৈরি কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করত অভ্যন্তরীণ নৌপথে। শুষ্ক মৌসুমে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতের জন্য ছিল মেঠোপথ। এক থানা থেকে অন্য থানায় যেতে খাল-বিলের অন্তত ১০–১৫টি সাঁকো পার হতে হয়েছে। তখন এই জনপদ জেলায় উন্নীত হয়নি। ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে আদি শহর বিলীন হয়ে যায়। প্রাচীন শহরে অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। কৃষিপণ্যের মধ্যে পাট ছিল প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট ব্যবসায়ের জন্য চরমুগরিয়া বন্দর ছিল মাড়োয়ারিদের প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র। এই নদীবন্দরটি গড়ে ওঠে লোয়ার কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের সংগমস্থলে। এখান থেকে পাটের বেল্ট বড় বড় জাহাজে কলকাতা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতেন মাড়োয়ারিরা। পরবর্তীকালে প্রকৃতির বৈরিতায় শুকিয়ে যেতে থাকে নদ-নদী। সেই সঙ্গে একসময়ের প্রসিদ্ধ চরমুগরিয়া নদীবন্দরের মাড়োয়ারিরা ধীরে ধীরে এখান থেকে চলে যান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে কিছুসংখ্যক প্রাইমারি ও হাতে গোনা দু–একটি মাধ্যমিক স্কুল ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো কলেজ ছিল না। পঞ্চাশের দশকে শহরে একটি মাত্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাদারীপুরের দিকে ফিরে তাকালে সেকাল-একালের মধ্যে আকাশ–পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। অনুন্নত জনপদ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। শিক্ষা-সংস্কৃতি, যাতায়াতব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মেগা প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্প। আর এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরের শিবচরে গড়ে উঠছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি, বেনারসিপল্লি, হাইটেক পার্ক, অলিম্পিক ভিলেজসহ একাধিক মেগা প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে। মাদারীপুর জেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুরের ভেতর দিয়ে রেললাইন চলে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
অবকাঠামোর দিক দিয়ে একসময় যে জনপদে কোনো বহুতল ভবন ছিল না, আজ সেখানে গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন। গড়ে উঠেছে একাধিক আট-দশতলাবিশিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সুরম্য ভবন। আধুনিক উদ্যান, ইকোপার্ক, শিশুপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র শকুনী লেক, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৫৫০ আসনবিশিষ্ট আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। শহরের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ফোর লেন সড়ক। রয়েছে পৌর শহরের প্রধান সড়কজুড়ে বর্ণিল সড়কবাতি, আধুনিক বাস টার্মিনাল, শত শত ব্রিজ–কালভার্ট, শিক্ষাবিস্তারে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত শত স্কুল–কলেজ-মাদ্রাসা। রয়েছে মেরিন একাডেমির মতো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। জেলার মানুষ তাঁদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন গ্রামে থেকেই। দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ হাজার হাজার ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী। প্রতিটি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। একই মডেলে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ করে ডিজিটাল ই-সেবা চালু হয়েছে। শহর থেকে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় নির্মিত হয়েছে সংযোগ সড়ক। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ জেলার মানুষকে ঢাকামুখী না হলেও চলে। ভূমি–সংক্রান্ত কোনো ভোগান্তি নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা ভূমি অফিস এমনকি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন। কৃষকবান্ধব হয়ে উঠেছে কৃষি খাত। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে।
শিবচর উপজেলায় আধুনিক অডিটরিয়াম, লালনমঞ্চ, মুক্তমঞ্চ, অসংখ্য ম্যুরাল রয়েছে। রয়েছে দাদা ভাই উপশহর, চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটরিয়াম ও প্রবহমান ‘৭১ ভাস্কর্য, রবীন্দ্রসরোবর, সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বঙ্গমাতার ম্যুরাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভবন, ‘৭১ সড়ক, শেখ হাসিনা সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ভাস্কর্য মুক্তবাংলা, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি। পর্যটকেরা দেখলে তারা একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হবে শিবচর যেন পদ্মাপারের এক টুকরো সোনার বাংলা।
কালকিনি উপজেলাসহ ডাসার এখন উচ্চশিক্ষার আদর্শ স্থান। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ উল্লেখযোগ্য। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে গেছে দেশব্যাপী। গত পাঁচ-ছয় বছর এই কলেজের পাসের হার শতভাগ। অজপাড়াগাঁয়ের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো এবং আশপাশের পরিবেশ যেকোনো উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একসময় দক্ষিণ ডাসার ছিল বিল-বাঁওড়বেষ্টিত এক দুর্গম জনপদ। আজ সেই দুর্গম এলাকা অবিশ্বাস্য আধুনিকতার ছোঁয়া আর নানামাত্রিকতায় পাল্টে গেছে।
সুবল বিশ্বাস
কবি ও সাংবাদিক
দেশের মধ্য-দক্ষিণ বা ভাটিবঙ্গের ছোট্ট একটি জনপদ মাদারীপুর। পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, ময়নাকাটা ও পালরদী নদীর পলিবিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক উর্বর ভূমি। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট দেখতে যেমন শিল্পীর চিত্রপটে আঁকা ছবির মতো, তেমনই সব স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের শক্ত ঘাঁটি নামেও খ্যাত। এ অঞ্চলের মানুষ কখনো প্রকৃতির মতো শান্ত; আবার কখনো ভয়ংকর সিংহশার্দূল। এ কারণে একসময় এই জনপদটি পরিচিত ছিল ‘চিতোর অব বেঙ্গল’নামে। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির ভান্ডার মাদারীপুর আদিকাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগপর্যন্ত ছিল অনুন্নত এক প্লাবনভূমি। প্রকৃতির বৈরিতা, শ্রেণিবৈষম্য ও শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে কোনো দিন উন্নয়নের ছোঁয়াটুকুও লাগেনি। নদ-নদী, বিল-বাঁওড় ও ভাঙনপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় একমাত্র নৌপথ ছাড়া এখানকার যাতায়াতব্যবস্থার আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই দুর্গম জনপদে সহজ যাতায়াতে নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত জেলার ভেতর বয়ে যাওয়া নদ-নদী দিয়ে। অবশ্য ওই সব জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন করত। তখন হাতে গোনা কয়েকটি স্টিমারে মানুষের যাতায়াত ছিল আন্তজেলাভিত্তিক। এর পাশাপাশি কাঠের তৈরি কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করত অভ্যন্তরীণ নৌপথে। শুষ্ক মৌসুমে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতের জন্য ছিল মেঠোপথ। এক থানা থেকে অন্য থানায় যেতে খাল-বিলের অন্তত ১০–১৫টি সাঁকো পার হতে হয়েছে। তখন এই জনপদ জেলায় উন্নীত হয়নি। ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে আদি শহর বিলীন হয়ে যায়। প্রাচীন শহরে অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। কৃষিপণ্যের মধ্যে পাট ছিল প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট ব্যবসায়ের জন্য চরমুগরিয়া বন্দর ছিল মাড়োয়ারিদের প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র। এই নদীবন্দরটি গড়ে ওঠে লোয়ার কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের সংগমস্থলে। এখান থেকে পাটের বেল্ট বড় বড় জাহাজে কলকাতা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতেন মাড়োয়ারিরা। পরবর্তীকালে প্রকৃতির বৈরিতায় শুকিয়ে যেতে থাকে নদ-নদী। সেই সঙ্গে একসময়ের প্রসিদ্ধ চরমুগরিয়া নদীবন্দরের মাড়োয়ারিরা ধীরে ধীরে এখান থেকে চলে যান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে কিছুসংখ্যক প্রাইমারি ও হাতে গোনা দু–একটি মাধ্যমিক স্কুল ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো কলেজ ছিল না। পঞ্চাশের দশকে শহরে একটি মাত্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাদারীপুরের দিকে ফিরে তাকালে সেকাল-একালের মধ্যে আকাশ–পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। অনুন্নত জনপদ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। শিক্ষা-সংস্কৃতি, যাতায়াতব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মেগা প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্প। আর এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরের শিবচরে গড়ে উঠছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি, বেনারসিপল্লি, হাইটেক পার্ক, অলিম্পিক ভিলেজসহ একাধিক মেগা প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে। মাদারীপুর জেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুরের ভেতর দিয়ে রেললাইন চলে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
অবকাঠামোর দিক দিয়ে একসময় যে জনপদে কোনো বহুতল ভবন ছিল না, আজ সেখানে গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন। গড়ে উঠেছে একাধিক আট-দশতলাবিশিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সুরম্য ভবন। আধুনিক উদ্যান, ইকোপার্ক, শিশুপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র শকুনী লেক, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৫৫০ আসনবিশিষ্ট আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। শহরের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ফোর লেন সড়ক। রয়েছে পৌর শহরের প্রধান সড়কজুড়ে বর্ণিল সড়কবাতি, আধুনিক বাস টার্মিনাল, শত শত ব্রিজ–কালভার্ট, শিক্ষাবিস্তারে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত শত স্কুল–কলেজ-মাদ্রাসা। রয়েছে মেরিন একাডেমির মতো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। জেলার মানুষ তাঁদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন গ্রামে থেকেই। দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ হাজার হাজার ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী। প্রতিটি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। একই মডেলে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ করে ডিজিটাল ই-সেবা চালু হয়েছে। শহর থেকে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় নির্মিত হয়েছে সংযোগ সড়ক। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ জেলার মানুষকে ঢাকামুখী না হলেও চলে। ভূমি–সংক্রান্ত কোনো ভোগান্তি নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা ভূমি অফিস এমনকি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন। কৃষকবান্ধব হয়ে উঠেছে কৃষি খাত। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে।
শিবচর উপজেলায় আধুনিক অডিটরিয়াম, লালনমঞ্চ, মুক্তমঞ্চ, অসংখ্য ম্যুরাল রয়েছে। রয়েছে দাদা ভাই উপশহর, চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটরিয়াম ও প্রবহমান ‘৭১ ভাস্কর্য, রবীন্দ্রসরোবর, সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বঙ্গমাতার ম্যুরাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভবন, ‘৭১ সড়ক, শেখ হাসিনা সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ভাস্কর্য মুক্তবাংলা, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি। পর্যটকেরা দেখলে তারা একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হবে শিবচর যেন পদ্মাপারের এক টুকরো সোনার বাংলা।
কালকিনি উপজেলাসহ ডাসার এখন উচ্চশিক্ষার আদর্শ স্থান। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ উল্লেখযোগ্য। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে গেছে দেশব্যাপী। গত পাঁচ-ছয় বছর এই কলেজের পাসের হার শতভাগ। অজপাড়াগাঁয়ের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো এবং আশপাশের পরিবেশ যেকোনো উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একসময় দক্ষিণ ডাসার ছিল বিল-বাঁওড়বেষ্টিত এক দুর্গম জনপদ। আজ সেই দুর্গম এলাকা অবিশ্বাস্য আধুনিকতার ছোঁয়া আর নানামাত্রিকতায় পাল্টে গেছে।
সুবল বিশ্বাস
কবি ও সাংবাদিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪