আফসান চৌধুরী
বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চার একটা সমস্যা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা এটাকে একটা পবিত্র বিষয় মনে করি। বিশ্লেষণের দিকে না গিয়ে যদি কোনো কিছুতে ধারণা থাকে, সেই ধারণাটা আঁকড়ে ধরি, তার বিপক্ষে বা অন্যদিক থেকে এটা দেখার চেষ্টা করি না। এই অসহিষ্ণুতা আমাদের ইতিহাসচর্চাকে অনেকটা আক্রান্ত করেছে।
আমরা সবাই বাঙালি, বাঙালি হিসেবেই সংগ্রাম করেছি। এটা মূলত আমরা বলি এই কারণে যে পাকিস্তানি যে রাজনীতি আছে, সেটায় সবাই মুসলমান। সেই রাজনীতির বিপক্ষে আমরা অবস্থান তৈরি করেছি। কিন্তু আমাদের যে আরও অনেক পরিচিতি আছে, ঐতিহাসিক পরিচিতি আছে, সেদিকে আমরা কিন্তু নজর দিই না।
আমরা ধরে নিয়েছি, কেবল একটাই বাস্তবতা রয়েছে। এর ফলে আমাদের ইতিহাসচর্চার ত্রুটিগুলো বেড়েছে। এবং আমাদের যে শিক্ষা দেওয়া হয়, আমাদের নতুন যে ভাবনাচিন্তা যে কোন ইতিহাসের বিষয়ের ক্ষেত্রে হওয়ার কথা, সেটা পাইনি।
ফলে যে সমস্যাটা তৈরি হয়েছে, এই যে বাঙালি, বাঙালি যে পবিত্র একটা বিষয়, প্রশ্নাতীত একটা বিষয়, তা বলে দুর্বলতা তৈরি করেছি। আমরা মানুষ চিনতে ভুল করছি। যাঁদের ভুল করে চিনেছি, তাঁদের একজনের নাম মাওলানা ভাসানী। অন্যজনের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা খুঁজছি না, তাঁরা কোন রাজনীতি করেছেন তাঁদের সারা জীবনে। ফলে আমাদের ইতিহাস থেকে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে তো বটেই, গোটা বয়ান থেকে বাদ পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শেখ মুজিবকে আমরা শুধু বাঙালি করে দেখেছি। সংগ্রামের সঙ্গে শেখ মুজিবের যে সম্পর্ক, সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।
শেখ মুজিবকে যদি বুঝতে হয়, তাহলে শেখ মুজিবের গোপালগঞ্জ পর্যায়ের পর্বটা দেখা দরকার।
দ্বন্দ্বগুলো দেখতে গেলে দেখতে হয় কার বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের সংগ্রাম ছিল, কার পক্ষে শেখ মুজিবের সংগ্রাম ছিল, কারা তাঁকে বন্ধু বলে ভাবছে, কারা
তাঁকে শত্রু বলে ভাবছে। এই যে শত্রু আর বন্ধুর সমীকরণ, এটা হচ্ছে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে, বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূল সম্পর্ক।
আমরা মনে করি, জাতীয়তাবাদের বাইরে গিয়ে যদি অন্য কিছু ভাবি, তাহলে হয়তো আমার নিজের দেশের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হবে। আমরা ভুলে যাই, শেখ মুজিবের সংগ্রামের ইতিহাস হচ্ছে আমাদের নিজস্ব ইতিহাসের দর্পণ। সেই দর্পণকে আমরা কিছুটা হলেও ঝাপসা করেছি জাতীয়তাবাদের ধুয়া দিয়ে।
শেখ মুজিবের অভিজ্ঞতাটাই বলি। শেখ সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের মূল মুহূর্ত কোনগুলো? ১৯৪৮ সালে যখন তাঁর সঙ্গে মিটিং করতে গিয়ে দেখা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দীর, তখন কোন পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হচ্ছে? পরিপ্রেক্ষিত হলো, ১৯৩৭-এর নির্বাচনের পরে যখন সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল হক সভা করতে গেলেন গোপালগঞ্জে, তাঁদের সভা করতে দিতে চায়নি শেখ মুজিবুর রহমানেরই স্বদেশিরা। শেখ সাহেব ওখানে গিয়ে বুর্জোয়া মানুষকে বলেছেন, সভা করতে দিতে হবে। এই মুহূর্তটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই যে গোপালগঞ্জে শেখ সাহেব যে সংগ্রাম করতে শিখেছেন, সেটা প্রান্তিক এলাকা। প্রান্তিক এলাকা থেকে তিনি এসেছেন কলকাতায়। মাত্র দু-তিন বছরের মধ্যেই তিনি কলকাতার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। শেখ সাহেব যেখানে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, সেখানে যাঁদের সঙ্গে উঠতেন-বসতেন, যাঁদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, ওই পরিমণ্ডল থেকেই কিন্তু শেখ সাহেবের সমগ্র রাজনীতি তৈরি হচ্ছে।
এই রাজনীতি তৈরি হওয়াতে কোন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ? দ্বন্দ্ব। মার্ক্সবাদীরা অনেক সময় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের কথা বলে, কিন্তু তারা নিজেরাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ প্রয়োগ করে না। তারা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল প্রয়োগ করে। শেখ সাহেবকে যদি বুঝতে হয়, তাহলে তাঁর দ্বন্দ্বকে দিয়ে বুঝতে হবে। আমাদের সমাজে কোনটা দ্বন্দ্ব ছিল? আমাদের সমাজে অনেক দ্বন্দ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব ছিল নির্যাতন। সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছিল জমিদারের হাতে। তারচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছিল গোটা ব্যবস্থার মধ্যে, যেখানে কৃষকদের সুযোগ অত্যন্ত কম ছিল। তাঁদের বড় ভূমিকাও ছিল। যাঁরা অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা জানেন, বিভিন্ন সময়ে এই সুবিধাবাদী জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন তৈরি হয়েছিল। নির্যাতিত হতো বাংলার মানুষ। সেই নির্যাতন প্রক্রিয়াটা কিন্তু ধার্মিক নয়। সম্প্রদায়ভিত্তিক না। ধর্মীয় সম্প্রদায়ভিত্তিক না। ভাষা–সম্প্রদায়ভিত্তিকও না। সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্কভিত্তিক।
এই অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথাটা শেখ সাহেব বলে গেছেন। এবং আমার মতে, এই কারণে তাঁর আত্মজীবনীটা পড়া উচিত। সেটা একটা আধুনিক বই। আমাদের ইতিহাস জীবনের একটা অন্যতম বই হচ্ছে আত্মজীবনীর বইটা। সেটা পড়ে দেখা যায়, শেখ সাহেব বিশ্লেষণগুলো করছেন যে মুসলমান জমিদারেরা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করছেন। এই সহজ-সরল কথাটার মধ্যেই কিন্তু রয়েছে সত্যতা। তো তাহলে বাঙালি ঐতিহ্যটা কোন জায়গা থেকে আসে? মূল সম্পর্কটা হলো জমিদারের সঙ্গে কৃষকের যে দ্বন্দ্ব। এটাই হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব অনেক উপদ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। মূলত এটাই হচ্ছে বিষয়।
উপনিবেশবাদ কিন্তু একক বিষয় নয়। উপনিবেশবাদ হচ্ছে অনেক জনগোষ্ঠী মিলে। যারা উপনিবেশবাদের দালাল ছিল, তারা উপনিবেশবাদ সৃষ্টি করেছে। তারা যে শুধু সুবিধা পেয়েছে তা নয়, তারা বিনিময়ে কিছু দিয়েছে। আমাদের দেশের উপনিবেশবাদ বলতে শুধু ইংরেজকে বোঝালে চলবে না, দালালগুলো সমানভাবে উপনিবেশবাদ তৈরি করছে। এটাই হচ্ছে মৌলিক। শেখ সাহেবের আন্দোলন ও বিদ্রোহ তাদের বিরুদ্ধে। শেখ সাহেবের এই বিষয়টা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখব, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে ১৯৪০-এ তো স্বাধীন দেশ হওয়ার ঘোষণা হয়ে গেছে। সেই ১৯৪০-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কথা। স্বাধীন হওয়ার কথা পূর্ব পাকিস্তান। বিষয়টা পূর্ব পাকিস্তান নয়, বিষয়টা স্বাধীনতা। কোনো দিন বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে পরাধীন অবস্থায় থাকবে, এটা ছিল না। ১৯৪০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত যত দলিল আছে তাতে দেখা যেতে পারে যে, সেই সময় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে যত কথাবার্তা হয়েছে, যত বই লেখা হয়েছে, যত স্টাডি হয়েছে, যত সংগঠন তৈরি হয়েছে, সেটা ১৯৪৬–এর নির্বাচনের পরে জিন্নাহ উল্টে দিলেন। আমি মনে করি জিন্নাহ একজন অসৎ রাজনীতিবিদ, একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ। নিজের সুবিধার জন্য যা প্রয়োজন হয়েছে, করেছেন। করাটাই স্বাভাবিক, যেহেতু তিনি উত্তর ভারতের মানুষ। উত্তর ভারতের মানুষেরা সব সময় বঙ্গকে দখল করতে চেয়েছে—সেটা আর্যই হোক, সেটা আফগানই হোক, সেটা মোগল হোক, সেটা পাকিস্তান হোক। এটা দখলকৃত অঞ্চল। তো দখলকৃত অঞ্চলের রাজনীতি আর দখলদার অঞ্চলের রাজনীতি তো এক হতে পারে না। সম্ভব না। সেই কারণে বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা কিন্তু তৃতীয় ধারার। একটা ধারা পাকিস্তানের, একটা ধারা ভারতের। দুটোই কিন্তু একত্রবাদের ধারা। অর্থাৎ আমরা সবাই এক। অর্থাৎ ভারতীয়রা, মানে কংগ্রেস বলছে, আমরা সবাই ইন্ডিয়ান। আর মুসলিম লীগ বলছে, আমরা সবাই মুসলমান। আর পরবর্তীকালে এসে বলছে, আমরা সবাই বাঙালি। কিন্তু তিনটা এক জিনিস না। আমাদের সমাজে মুসলমান আছে, হিন্দু আছে। বাঙালি আছে, আদিবাসী আছে। কিন্তু আমাদের একত্র করল কী? শেখ সাহেবের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাটা পালন করা সম্ভব হলো কী করে? এটা হচ্ছে, শেখ সাহেব যে ইতিহাস থেকে সৃষ্টি হয়েছেন, অন্য মানুষেরাও কিন্তু একই ইতিহাস থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক পরিচিতি, সংস্কৃতির পরিচিতি, অর্থাৎ আমি বাঙালি না মুসলমান ইত্যাদি ইত্যাদির চেয়েও অনেক বড়। কারণ, ভাষা বা অন্য কোনো জিনিসের যে বিরোধিতা করা যায়, তার প্রমাণ তো আমাদের দেশেই আছে। ১৯৪৭ সালে যখন ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট বা যৌথ বাংলা আন্দোলন হয়েছিল, সেই যৌথ বাংলা আন্দোলনের প্রথম সমর্থন করে পরে বিরোধিতা যে করেছিল তারা ভারতের বাঙালি। অর্থাৎ এখন যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকে। দেশভাগের যে কথা বলা হয় ১৯৪৭ সালে, তার প্রস্তাব এবং পাস করানোটা ছিল আজকের পশ্চিমবঙ্গের লোকদের। কেন করেছিল? কারণ তারা ভারতীয় হয়ে গিয়েছিল। তাদের একটা স্বাধীন দেশ করার ইচ্ছা ছিল না, যেকোনো কারণেই হোক, ইতিহাসের দিক থেকে। এই কারণে আমাদের দেশে ভাবনাটাই থাকে না যে, আমরা বাঙালি হিসেবেও এক। আমরা ৪০ সালের স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলেছি। আমরা যৌথ পাকিস্তান, তার অধীনে যে থাকব, তার কথা আমরা কোনো দিন বলিনি। তাই যদি হয়, তাহলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে আমরা তৃতীয় একটা সত্তা নিয়ে
এসেছি। তৃতীয় সত্তা কিন্তু জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত হয়নি। আমরা যদি বাঙালি হই, তাইলে ভারতীয় বাঙালিরা আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইল না কেন? আমরা যদি মুসলমান হব, তাহলে পাকিস্তানিরা আমাদের কেন মারল?
আমরা পাকিস্তানিও না, বাঙালিও না। যদি কোনোভাবে এ রকম পরিচিতি করা যায়, তাহলে বলতে হবে আমরা পূর্ববঙ্গ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতাকে বুঝতে হলে কিন্তু আমাদের সনাতনি জাতীয়তাবাদী ধারা থেকে সরে এসে বুঝতে হবে ইতিহাস কোন দিকে আমাদের নিয়ে গেছে। ইতিহাস নিজের দিকে এগোয়। শেখ সাহেবকে বুঝতে হলে এই বিষয়টা পরিষ্কার হতে হবে যে, ইতিহাসের পরিচিতি কী, সংস্কৃতির পরিচিতি কী, জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায় এবং সামাজিক সংগ্রামের যে জাতীয়তাবাদ, সেটা কী? সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ আর ঐতিহাসিক জাতীয়তাবাদ এক নয়। আমাদের এক করেছে আমাদের ইতিহাস। আমি মনে করি মাওলানা ভাসানীর ক্ষেত্রেও তা-ই। এখানে শেষ কথা আমি বলছি, ধারাবাহিকতাটা কীভাবে রক্ষা করতে হয়। দেখতে হয়, ১৯৩০ সালে এই লোকটা, মাওলানা ভাসানী মুসলিম লীগে যোগদান করেছেন। তিনি আর কংগ্রেস করেন না তখন। কেন করেছেন? কারণ সাধারণ মানুষেরা আসামে গিয়ে কষ্ট করছে, থাকছে। তাদের পক্ষে কে দাঁড়াবে? মাওলানা ভাসানী দাঁড়িয়েছেন। শেখ সাহেব যখন মুসলিম লীগ করতে গিয়েছেন, তিনি কি মুসলমান পরিচয় নিয়ে গেছেন? শেখ সাহেব গেছেন সংগ্রামী, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে। শেখ সাহেবের আত্মজীবনীতেই তা আছে। শেখ সাহেব প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। আমাদের ইতিহাস হচ্ছে প্রতিবাদ এবং সংগ্রাম। আমরা যে ধর্মীয় চর্চা করে জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছি, আমাদের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে সংগ্রাম, আমাদের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে প্রতিবাদ। এবং এটাই আমাদের পরিচিতি থাকবে। যত দিন আমরা মুক্তভাবে ইতিহাসকে দেখতে না শিখব, তত দিন আমরা বুঝতে পারব না শেখ মুজিবুর রহমানকে, বুঝতে পারব না মাওলানা ভাসানীকে। এবং বুঝতে পারব না বাংলাদেশকে।
আফসান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চার একটা সমস্যা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা এটাকে একটা পবিত্র বিষয় মনে করি। বিশ্লেষণের দিকে না গিয়ে যদি কোনো কিছুতে ধারণা থাকে, সেই ধারণাটা আঁকড়ে ধরি, তার বিপক্ষে বা অন্যদিক থেকে এটা দেখার চেষ্টা করি না। এই অসহিষ্ণুতা আমাদের ইতিহাসচর্চাকে অনেকটা আক্রান্ত করেছে।
আমরা সবাই বাঙালি, বাঙালি হিসেবেই সংগ্রাম করেছি। এটা মূলত আমরা বলি এই কারণে যে পাকিস্তানি যে রাজনীতি আছে, সেটায় সবাই মুসলমান। সেই রাজনীতির বিপক্ষে আমরা অবস্থান তৈরি করেছি। কিন্তু আমাদের যে আরও অনেক পরিচিতি আছে, ঐতিহাসিক পরিচিতি আছে, সেদিকে আমরা কিন্তু নজর দিই না।
আমরা ধরে নিয়েছি, কেবল একটাই বাস্তবতা রয়েছে। এর ফলে আমাদের ইতিহাসচর্চার ত্রুটিগুলো বেড়েছে। এবং আমাদের যে শিক্ষা দেওয়া হয়, আমাদের নতুন যে ভাবনাচিন্তা যে কোন ইতিহাসের বিষয়ের ক্ষেত্রে হওয়ার কথা, সেটা পাইনি।
ফলে যে সমস্যাটা তৈরি হয়েছে, এই যে বাঙালি, বাঙালি যে পবিত্র একটা বিষয়, প্রশ্নাতীত একটা বিষয়, তা বলে দুর্বলতা তৈরি করেছি। আমরা মানুষ চিনতে ভুল করছি। যাঁদের ভুল করে চিনেছি, তাঁদের একজনের নাম মাওলানা ভাসানী। অন্যজনের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা খুঁজছি না, তাঁরা কোন রাজনীতি করেছেন তাঁদের সারা জীবনে। ফলে আমাদের ইতিহাস থেকে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে তো বটেই, গোটা বয়ান থেকে বাদ পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শেখ মুজিবকে আমরা শুধু বাঙালি করে দেখেছি। সংগ্রামের সঙ্গে শেখ মুজিবের যে সম্পর্ক, সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।
শেখ মুজিবকে যদি বুঝতে হয়, তাহলে শেখ মুজিবের গোপালগঞ্জ পর্যায়ের পর্বটা দেখা দরকার।
দ্বন্দ্বগুলো দেখতে গেলে দেখতে হয় কার বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের সংগ্রাম ছিল, কার পক্ষে শেখ মুজিবের সংগ্রাম ছিল, কারা তাঁকে বন্ধু বলে ভাবছে, কারা
তাঁকে শত্রু বলে ভাবছে। এই যে শত্রু আর বন্ধুর সমীকরণ, এটা হচ্ছে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে, বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূল সম্পর্ক।
আমরা মনে করি, জাতীয়তাবাদের বাইরে গিয়ে যদি অন্য কিছু ভাবি, তাহলে হয়তো আমার নিজের দেশের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হবে। আমরা ভুলে যাই, শেখ মুজিবের সংগ্রামের ইতিহাস হচ্ছে আমাদের নিজস্ব ইতিহাসের দর্পণ। সেই দর্পণকে আমরা কিছুটা হলেও ঝাপসা করেছি জাতীয়তাবাদের ধুয়া দিয়ে।
শেখ মুজিবের অভিজ্ঞতাটাই বলি। শেখ সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের মূল মুহূর্ত কোনগুলো? ১৯৪৮ সালে যখন তাঁর সঙ্গে মিটিং করতে গিয়ে দেখা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দীর, তখন কোন পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হচ্ছে? পরিপ্রেক্ষিত হলো, ১৯৩৭-এর নির্বাচনের পরে যখন সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল হক সভা করতে গেলেন গোপালগঞ্জে, তাঁদের সভা করতে দিতে চায়নি শেখ মুজিবুর রহমানেরই স্বদেশিরা। শেখ সাহেব ওখানে গিয়ে বুর্জোয়া মানুষকে বলেছেন, সভা করতে দিতে হবে। এই মুহূর্তটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই যে গোপালগঞ্জে শেখ সাহেব যে সংগ্রাম করতে শিখেছেন, সেটা প্রান্তিক এলাকা। প্রান্তিক এলাকা থেকে তিনি এসেছেন কলকাতায়। মাত্র দু-তিন বছরের মধ্যেই তিনি কলকাতার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। শেখ সাহেব যেখানে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, সেখানে যাঁদের সঙ্গে উঠতেন-বসতেন, যাঁদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, ওই পরিমণ্ডল থেকেই কিন্তু শেখ সাহেবের সমগ্র রাজনীতি তৈরি হচ্ছে।
এই রাজনীতি তৈরি হওয়াতে কোন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ? দ্বন্দ্ব। মার্ক্সবাদীরা অনেক সময় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের কথা বলে, কিন্তু তারা নিজেরাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ প্রয়োগ করে না। তারা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল প্রয়োগ করে। শেখ সাহেবকে যদি বুঝতে হয়, তাহলে তাঁর দ্বন্দ্বকে দিয়ে বুঝতে হবে। আমাদের সমাজে কোনটা দ্বন্দ্ব ছিল? আমাদের সমাজে অনেক দ্বন্দ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব ছিল নির্যাতন। সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছিল জমিদারের হাতে। তারচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছিল গোটা ব্যবস্থার মধ্যে, যেখানে কৃষকদের সুযোগ অত্যন্ত কম ছিল। তাঁদের বড় ভূমিকাও ছিল। যাঁরা অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা জানেন, বিভিন্ন সময়ে এই সুবিধাবাদী জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন তৈরি হয়েছিল। নির্যাতিত হতো বাংলার মানুষ। সেই নির্যাতন প্রক্রিয়াটা কিন্তু ধার্মিক নয়। সম্প্রদায়ভিত্তিক না। ধর্মীয় সম্প্রদায়ভিত্তিক না। ভাষা–সম্প্রদায়ভিত্তিকও না। সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্কভিত্তিক।
এই অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথাটা শেখ সাহেব বলে গেছেন। এবং আমার মতে, এই কারণে তাঁর আত্মজীবনীটা পড়া উচিত। সেটা একটা আধুনিক বই। আমাদের ইতিহাস জীবনের একটা অন্যতম বই হচ্ছে আত্মজীবনীর বইটা। সেটা পড়ে দেখা যায়, শেখ সাহেব বিশ্লেষণগুলো করছেন যে মুসলমান জমিদারেরা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করছেন। এই সহজ-সরল কথাটার মধ্যেই কিন্তু রয়েছে সত্যতা। তো তাহলে বাঙালি ঐতিহ্যটা কোন জায়গা থেকে আসে? মূল সম্পর্কটা হলো জমিদারের সঙ্গে কৃষকের যে দ্বন্দ্ব। এটাই হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব অনেক উপদ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। মূলত এটাই হচ্ছে বিষয়।
উপনিবেশবাদ কিন্তু একক বিষয় নয়। উপনিবেশবাদ হচ্ছে অনেক জনগোষ্ঠী মিলে। যারা উপনিবেশবাদের দালাল ছিল, তারা উপনিবেশবাদ সৃষ্টি করেছে। তারা যে শুধু সুবিধা পেয়েছে তা নয়, তারা বিনিময়ে কিছু দিয়েছে। আমাদের দেশের উপনিবেশবাদ বলতে শুধু ইংরেজকে বোঝালে চলবে না, দালালগুলো সমানভাবে উপনিবেশবাদ তৈরি করছে। এটাই হচ্ছে মৌলিক। শেখ সাহেবের আন্দোলন ও বিদ্রোহ তাদের বিরুদ্ধে। শেখ সাহেবের এই বিষয়টা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখব, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে ১৯৪০-এ তো স্বাধীন দেশ হওয়ার ঘোষণা হয়ে গেছে। সেই ১৯৪০-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কথা। স্বাধীন হওয়ার কথা পূর্ব পাকিস্তান। বিষয়টা পূর্ব পাকিস্তান নয়, বিষয়টা স্বাধীনতা। কোনো দিন বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে পরাধীন অবস্থায় থাকবে, এটা ছিল না। ১৯৪০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত যত দলিল আছে তাতে দেখা যেতে পারে যে, সেই সময় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে যত কথাবার্তা হয়েছে, যত বই লেখা হয়েছে, যত স্টাডি হয়েছে, যত সংগঠন তৈরি হয়েছে, সেটা ১৯৪৬–এর নির্বাচনের পরে জিন্নাহ উল্টে দিলেন। আমি মনে করি জিন্নাহ একজন অসৎ রাজনীতিবিদ, একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ। নিজের সুবিধার জন্য যা প্রয়োজন হয়েছে, করেছেন। করাটাই স্বাভাবিক, যেহেতু তিনি উত্তর ভারতের মানুষ। উত্তর ভারতের মানুষেরা সব সময় বঙ্গকে দখল করতে চেয়েছে—সেটা আর্যই হোক, সেটা আফগানই হোক, সেটা মোগল হোক, সেটা পাকিস্তান হোক। এটা দখলকৃত অঞ্চল। তো দখলকৃত অঞ্চলের রাজনীতি আর দখলদার অঞ্চলের রাজনীতি তো এক হতে পারে না। সম্ভব না। সেই কারণে বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা কিন্তু তৃতীয় ধারার। একটা ধারা পাকিস্তানের, একটা ধারা ভারতের। দুটোই কিন্তু একত্রবাদের ধারা। অর্থাৎ আমরা সবাই এক। অর্থাৎ ভারতীয়রা, মানে কংগ্রেস বলছে, আমরা সবাই ইন্ডিয়ান। আর মুসলিম লীগ বলছে, আমরা সবাই মুসলমান। আর পরবর্তীকালে এসে বলছে, আমরা সবাই বাঙালি। কিন্তু তিনটা এক জিনিস না। আমাদের সমাজে মুসলমান আছে, হিন্দু আছে। বাঙালি আছে, আদিবাসী আছে। কিন্তু আমাদের একত্র করল কী? শেখ সাহেবের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাটা পালন করা সম্ভব হলো কী করে? এটা হচ্ছে, শেখ সাহেব যে ইতিহাস থেকে সৃষ্টি হয়েছেন, অন্য মানুষেরাও কিন্তু একই ইতিহাস থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক পরিচিতি, সংস্কৃতির পরিচিতি, অর্থাৎ আমি বাঙালি না মুসলমান ইত্যাদি ইত্যাদির চেয়েও অনেক বড়। কারণ, ভাষা বা অন্য কোনো জিনিসের যে বিরোধিতা করা যায়, তার প্রমাণ তো আমাদের দেশেই আছে। ১৯৪৭ সালে যখন ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট বা যৌথ বাংলা আন্দোলন হয়েছিল, সেই যৌথ বাংলা আন্দোলনের প্রথম সমর্থন করে পরে বিরোধিতা যে করেছিল তারা ভারতের বাঙালি। অর্থাৎ এখন যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকে। দেশভাগের যে কথা বলা হয় ১৯৪৭ সালে, তার প্রস্তাব এবং পাস করানোটা ছিল আজকের পশ্চিমবঙ্গের লোকদের। কেন করেছিল? কারণ তারা ভারতীয় হয়ে গিয়েছিল। তাদের একটা স্বাধীন দেশ করার ইচ্ছা ছিল না, যেকোনো কারণেই হোক, ইতিহাসের দিক থেকে। এই কারণে আমাদের দেশে ভাবনাটাই থাকে না যে, আমরা বাঙালি হিসেবেও এক। আমরা ৪০ সালের স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলেছি। আমরা যৌথ পাকিস্তান, তার অধীনে যে থাকব, তার কথা আমরা কোনো দিন বলিনি। তাই যদি হয়, তাহলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে আমরা তৃতীয় একটা সত্তা নিয়ে
এসেছি। তৃতীয় সত্তা কিন্তু জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত হয়নি। আমরা যদি বাঙালি হই, তাইলে ভারতীয় বাঙালিরা আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইল না কেন? আমরা যদি মুসলমান হব, তাহলে পাকিস্তানিরা আমাদের কেন মারল?
আমরা পাকিস্তানিও না, বাঙালিও না। যদি কোনোভাবে এ রকম পরিচিতি করা যায়, তাহলে বলতে হবে আমরা পূর্ববঙ্গ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতাকে বুঝতে হলে কিন্তু আমাদের সনাতনি জাতীয়তাবাদী ধারা থেকে সরে এসে বুঝতে হবে ইতিহাস কোন দিকে আমাদের নিয়ে গেছে। ইতিহাস নিজের দিকে এগোয়। শেখ সাহেবকে বুঝতে হলে এই বিষয়টা পরিষ্কার হতে হবে যে, ইতিহাসের পরিচিতি কী, সংস্কৃতির পরিচিতি কী, জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায় এবং সামাজিক সংগ্রামের যে জাতীয়তাবাদ, সেটা কী? সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ আর ঐতিহাসিক জাতীয়তাবাদ এক নয়। আমাদের এক করেছে আমাদের ইতিহাস। আমি মনে করি মাওলানা ভাসানীর ক্ষেত্রেও তা-ই। এখানে শেষ কথা আমি বলছি, ধারাবাহিকতাটা কীভাবে রক্ষা করতে হয়। দেখতে হয়, ১৯৩০ সালে এই লোকটা, মাওলানা ভাসানী মুসলিম লীগে যোগদান করেছেন। তিনি আর কংগ্রেস করেন না তখন। কেন করেছেন? কারণ সাধারণ মানুষেরা আসামে গিয়ে কষ্ট করছে, থাকছে। তাদের পক্ষে কে দাঁড়াবে? মাওলানা ভাসানী দাঁড়িয়েছেন। শেখ সাহেব যখন মুসলিম লীগ করতে গিয়েছেন, তিনি কি মুসলমান পরিচয় নিয়ে গেছেন? শেখ সাহেব গেছেন সংগ্রামী, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে। শেখ সাহেবের আত্মজীবনীতেই তা আছে। শেখ সাহেব প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। আমাদের ইতিহাস হচ্ছে প্রতিবাদ এবং সংগ্রাম। আমরা যে ধর্মীয় চর্চা করে জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছি, আমাদের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে সংগ্রাম, আমাদের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে প্রতিবাদ। এবং এটাই আমাদের পরিচিতি থাকবে। যত দিন আমরা মুক্তভাবে ইতিহাসকে দেখতে না শিখব, তত দিন আমরা বুঝতে পারব না শেখ মুজিবুর রহমানকে, বুঝতে পারব না মাওলানা ভাসানীকে। এবং বুঝতে পারব না বাংলাদেশকে।
আফসান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪