সুভাষ চৌধুরী
ঘন ঘন দুর্যোগ আর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলেও এগিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা। নানা সমস্যা আর সম্ভাবনা সঙ্গে নিয়ে ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যে সাতক্ষীরা জেলা যাত্রা করেছিল, ৩৭ বছরে এসে সেই সাতক্ষীরা এখন পত্রপল্লব ও পুষ্পশোভিত একটি পূর্ণ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরার হিমায়িত খাদ্য চিংড়ি, কাঁকড়া ও আম বিদেশের বাজার দখল করেছে। উৎপাদিত ধান, মাছ, শাকসবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
দুর্যোগপ্রবণ এই জেলায় ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ভয়াল সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মের ভয়ংকর আইলার জলোচ্ছ্বাস, ২০২০-এর ২০ মে তারিখের সুপার সাইক্লোন আম্পান এবং সর্বশেষ ২০২১-এর ২৬ মে প্রবল শক্তিশালী ইয়াসের দাপট দক্ষিণ উপকূলের জেলা সাতক্ষীরাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ২০১৯-এর বুলবুল এবং একই বছরের ফণীও ক্ষতি করে এই জনপদকে।
দুর্যোগের এই ভয়াবহতার মধ্যে এই জনপদের মানুষ বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। পরাজয় না মেনে এগিয়ে নিয়েছে সাতক্ষীরাকে। এখন তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরে গেছে। দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মশক্তি বেড়েছে। শিক্ষায় এসেছে গতি। শিক্ষিতের হারও বাড়তে শুরু করেছে। সাতটি উপজেলা, আটটি থানা, দুটি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়নের সাতক্ষীরা জনপদে যুক্ত রয়েছে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ২২০ কিলোমিটার জল ও স্থল সীমান্ত।
পিডিবি ও সিবিএসের নেটওয়ার্কের আওতায় সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব গ্রামে এখন বিদ্যুৎ আছে। গ্রামেও বাড়িতে বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রকৃতির কারণে লোনাপানির দাপট থাকলেও সুপেয় পানি পাওয়ার উৎস খুঁজে নিচ্ছে মানুষ। তারা ঘরে ঘরে ছোট ছোট খামার বানিয়ে চাষ করছে মাছ ও কাঁকড়া। গ্রামে প্রসার ঘটেছে কুটিরশিল্পের। গড়ে উঠেছে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্রশিল্প। সাতক্ষীরার তাঁতশিল্পে এসেছে সমৃদ্ধি। নলতায় তৈরি হওয়া গজ ব্যান্ডেজ চিকিৎসার সরঞ্জাম হিসেবে দেশের চাহিদার একাংশ মিটিয়ে দিচ্ছে।
সাতক্ষীরায় এবার ৬৮ হাজার হেক্টর জমির ঘেরে চাষ হয়েছে চিংড়ি। এখানে উৎপাদিত হয় ৪০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি। এর মধ্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লোনাপানির বাগদা আর ১০ হাজার মেট্রিক টন মিঠাপানির গলদা চিংড়ি। সাদা জাতের মাছ উৎপাদিত হয়েছে অঢেল। মাছ উৎপাদনে সাতক্ষীরায় নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। এবার আম হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর একাংশ গেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশে। জেলায় উৎপাদিত কাঁকড়াও যাচ্ছে বিদেশে। সাতক্ষীরায় চিংড়ি ও কাঁকড়াশিল্প স্থাপিত হয়েছে। এর হাত ধরে এসেছে কর্মসংস্থান।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি অর্থবছরে ভোমরা বন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই বন্দরে রয়েছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। শহরের অদূরে ভোমরা সড়কসংশ্লিষ্ট বাঁকাল থেকে খুলনামুখী সড়কের বেনেরপোতা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মিত হয়েছে। ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাইপাস সড়ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী আরও কম সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সুযোগ আরও বাড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময়ের স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষ তার দুই তীরে বহু জনপদ ও স্থাপনা তৈরির সুযোগ করে দিলেও কালের বিবর্তনে শুকিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া বারবার ডুবে যাচ্ছিল। কয়েক বছরের জলাবদ্ধতায় কপোতাক্ষের দুই তীরের বাসিন্দারা হারিয়ে ফেলে তাদের কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। পরে সরকারের উদ্যোগে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন করায় আগের যৌবন ফিরে না এলেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ বহুলাংশে দূর হয়েছে। এখন কপোতাক্ষে জোয়ার-ভাটা খেলে।
সুন্দরবন এলাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে যশোরের নাভারন পর্যন্ত রেলসংযোগ স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। রেলসংযোগ স্থাপিত হলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য আরও সহজে ও কম সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে। আরও গতিশীল হবে অর্থনীতি।
সাতক্ষীরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সরকারি মেডিকেল কলেজ। সেখানে স্থাপিত হয়েছে আরটিপিসিআর ল্যাব। বিশ্বমানের এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এরই মধ্যে ছয়টি ব্যাচ কোর্স শেষ করে কাজ খুঁজে নিয়েছে। এখানে আছে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট। কালীগঞ্জের নলতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ছড়িয়ে পড়ছেন দেশ-বিদেশে। এই জনপদের ২৩ লাখ মানুষ এখন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের জোরালো দাবি রয়েছে সাতক্ষীরার মানুষের। শ্যামনগরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ ও বিনোদন স্পট ‘আকাশ নিলা’। সাতক্ষীরার আরেকটি রপ্তানি পণ্য হতে পারে সুন্দরবনের মধু ও মোম। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়াও রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরা থেকে। অব্যাহত লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্প সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসটি পুনরায় চালু করা গেলে এ অঞ্চলে আরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সাতক্ষীরার দীর্ঘদিনের সমস্যা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বারবার দুর্যোগে ভেঙে বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, চিংড়িঘের ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব জরাজীর্ণ বাঁধ ফেলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা গেলে সাতক্ষীরার জনপদকে সুরক্ষা দেওয়ার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
সাতক্ষীরায় এখন প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ১০০ মেট্রিক টন দুধ। বাণিজ্যিকভাবে গবাদিপশু পালন করে এই জনপদের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে ৯টি দৈনিক সংবাদপত্র। সাতক্ষীরার ওল, ঘোল, কুল, সন্দেশ, মাছ, নারিকেল আর গাছের কলমের দেশজোড়া সুনাম রয়েছে। এই সাত সম্পদকে সুরক্ষা দিয়ে দুর্যোগেও এগিয়ে চলেছে সাতক্ষীরা।
সুভাষ চৌধুরী
সাংবাদিক
ঘন ঘন দুর্যোগ আর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলেও এগিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা। নানা সমস্যা আর সম্ভাবনা সঙ্গে নিয়ে ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যে সাতক্ষীরা জেলা যাত্রা করেছিল, ৩৭ বছরে এসে সেই সাতক্ষীরা এখন পত্রপল্লব ও পুষ্পশোভিত একটি পূর্ণ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরার হিমায়িত খাদ্য চিংড়ি, কাঁকড়া ও আম বিদেশের বাজার দখল করেছে। উৎপাদিত ধান, মাছ, শাকসবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
দুর্যোগপ্রবণ এই জেলায় ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ভয়াল সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মের ভয়ংকর আইলার জলোচ্ছ্বাস, ২০২০-এর ২০ মে তারিখের সুপার সাইক্লোন আম্পান এবং সর্বশেষ ২০২১-এর ২৬ মে প্রবল শক্তিশালী ইয়াসের দাপট দক্ষিণ উপকূলের জেলা সাতক্ষীরাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ২০১৯-এর বুলবুল এবং একই বছরের ফণীও ক্ষতি করে এই জনপদকে।
দুর্যোগের এই ভয়াবহতার মধ্যে এই জনপদের মানুষ বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। পরাজয় না মেনে এগিয়ে নিয়েছে সাতক্ষীরাকে। এখন তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরে গেছে। দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মশক্তি বেড়েছে। শিক্ষায় এসেছে গতি। শিক্ষিতের হারও বাড়তে শুরু করেছে। সাতটি উপজেলা, আটটি থানা, দুটি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়নের সাতক্ষীরা জনপদে যুক্ত রয়েছে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ২২০ কিলোমিটার জল ও স্থল সীমান্ত।
পিডিবি ও সিবিএসের নেটওয়ার্কের আওতায় সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব গ্রামে এখন বিদ্যুৎ আছে। গ্রামেও বাড়িতে বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রকৃতির কারণে লোনাপানির দাপট থাকলেও সুপেয় পানি পাওয়ার উৎস খুঁজে নিচ্ছে মানুষ। তারা ঘরে ঘরে ছোট ছোট খামার বানিয়ে চাষ করছে মাছ ও কাঁকড়া। গ্রামে প্রসার ঘটেছে কুটিরশিল্পের। গড়ে উঠেছে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্রশিল্প। সাতক্ষীরার তাঁতশিল্পে এসেছে সমৃদ্ধি। নলতায় তৈরি হওয়া গজ ব্যান্ডেজ চিকিৎসার সরঞ্জাম হিসেবে দেশের চাহিদার একাংশ মিটিয়ে দিচ্ছে।
সাতক্ষীরায় এবার ৬৮ হাজার হেক্টর জমির ঘেরে চাষ হয়েছে চিংড়ি। এখানে উৎপাদিত হয় ৪০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি। এর মধ্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লোনাপানির বাগদা আর ১০ হাজার মেট্রিক টন মিঠাপানির গলদা চিংড়ি। সাদা জাতের মাছ উৎপাদিত হয়েছে অঢেল। মাছ উৎপাদনে সাতক্ষীরায় নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। এবার আম হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর একাংশ গেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশে। জেলায় উৎপাদিত কাঁকড়াও যাচ্ছে বিদেশে। সাতক্ষীরায় চিংড়ি ও কাঁকড়াশিল্প স্থাপিত হয়েছে। এর হাত ধরে এসেছে কর্মসংস্থান।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি অর্থবছরে ভোমরা বন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই বন্দরে রয়েছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। শহরের অদূরে ভোমরা সড়কসংশ্লিষ্ট বাঁকাল থেকে খুলনামুখী সড়কের বেনেরপোতা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মিত হয়েছে। ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাইপাস সড়ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী আরও কম সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সুযোগ আরও বাড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময়ের স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষ তার দুই তীরে বহু জনপদ ও স্থাপনা তৈরির সুযোগ করে দিলেও কালের বিবর্তনে শুকিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া বারবার ডুবে যাচ্ছিল। কয়েক বছরের জলাবদ্ধতায় কপোতাক্ষের দুই তীরের বাসিন্দারা হারিয়ে ফেলে তাদের কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। পরে সরকারের উদ্যোগে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন করায় আগের যৌবন ফিরে না এলেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ বহুলাংশে দূর হয়েছে। এখন কপোতাক্ষে জোয়ার-ভাটা খেলে।
সুন্দরবন এলাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে যশোরের নাভারন পর্যন্ত রেলসংযোগ স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। রেলসংযোগ স্থাপিত হলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য আরও সহজে ও কম সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে। আরও গতিশীল হবে অর্থনীতি।
সাতক্ষীরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সরকারি মেডিকেল কলেজ। সেখানে স্থাপিত হয়েছে আরটিপিসিআর ল্যাব। বিশ্বমানের এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এরই মধ্যে ছয়টি ব্যাচ কোর্স শেষ করে কাজ খুঁজে নিয়েছে। এখানে আছে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট। কালীগঞ্জের নলতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ছড়িয়ে পড়ছেন দেশ-বিদেশে। এই জনপদের ২৩ লাখ মানুষ এখন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের জোরালো দাবি রয়েছে সাতক্ষীরার মানুষের। শ্যামনগরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ ও বিনোদন স্পট ‘আকাশ নিলা’। সাতক্ষীরার আরেকটি রপ্তানি পণ্য হতে পারে সুন্দরবনের মধু ও মোম। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়াও রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরা থেকে। অব্যাহত লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্প সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসটি পুনরায় চালু করা গেলে এ অঞ্চলে আরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সাতক্ষীরার দীর্ঘদিনের সমস্যা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বারবার দুর্যোগে ভেঙে বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, চিংড়িঘের ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব জরাজীর্ণ বাঁধ ফেলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা গেলে সাতক্ষীরার জনপদকে সুরক্ষা দেওয়ার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
সাতক্ষীরায় এখন প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ১০০ মেট্রিক টন দুধ। বাণিজ্যিকভাবে গবাদিপশু পালন করে এই জনপদের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে ৯টি দৈনিক সংবাদপত্র। সাতক্ষীরার ওল, ঘোল, কুল, সন্দেশ, মাছ, নারিকেল আর গাছের কলমের দেশজোড়া সুনাম রয়েছে। এই সাত সম্পদকে সুরক্ষা দিয়ে দুর্যোগেও এগিয়ে চলেছে সাতক্ষীরা।
সুভাষ চৌধুরী
সাংবাদিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪