জাহাঙ্গীর আলম জাহান
হাওরের মানুষ কোনো দিন ভাবেনি তাদের ঘরে বিজলী বাতি জ্বলবে। ভাবেনি তাদের রাস্তাগুলো পাকা হবে। সেই রাস্তায় গাড়ি চলবে। অথচ মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে চির পশ্চাৎপদ হাওরের দৃশ্যপট আমূল বদলে গেছে। এখন হাওরের জনপদে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে, রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে, সেই রাস্তায় মোটরগাড়ি চলে।
রোগে-শোকে বিপন্ন জটিল রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে কিংবা রাজধানীর হাসপাতালে স্থানান্তরের চিন্তা যেখানে ছিল আকাশকুসুম কল্পনা, সেই জনপদে হাওরের বুক চিরে দৃষ্টিনন্দন পাকা সড়ক নির্মিত হবে, এ–ও ছিল অলীক কল্পনা। পশ্চাৎপদতার কারণে যে জনপদে ‘বর্ষায় নাও-শুকনায় পাও’ বলে একটি প্রবাদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় সেই প্রবাদও আজ মিথ্যে হয়ে গেল। কিশোরগঞ্জ জেলার তিনটি হাওর উপজেলাকে (ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন) উন্নত মানের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিশাল হাওরের মাঝখান দিয়ে নির্মিত হয়েছে চোখঝলসানো অল-ওয়েদার সড়ক।
এই সড়ক নির্মাণের আগে ডুবোসড়ক (সাব-মার্জেবল রোড) নির্মাণ করা হয়েছিল। যে সড়ক বর্ষা মৌসুমে হাওরের গভীর পানিতে তলিয়ে থাকত। বর্ষা চলে গেলে আবার ভেসে উঠত। অর্থাৎ বছরের ছয় মাস ডুবোসড়ক ব্যবহার করা যেত। এতে হাওরবাসীর দুঃখ পুরোপুরি দূর হয়নি। সেটা দূর করলেন হাওরের ভূমিপুত্র রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাঁর স্বপ্ন ও ভাবনা পাল্টে দিয়েছে হাওরের দৃশ্যপট। পাল্টে দিয়েছে হাওরবাসীর প্রাত্যহিক জীবন। কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদ এখন হয়ে উঠেছে চোখজুড়ানো আধুনিক এক পর্যটন এলাকা।
উজানভাটির মিলিত ঐশ্বর্যে বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির এক সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা বিভাগের এই জেলাটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি বহন করছে। মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাস, তাঁর কন্যা বাংলা ভাষার মধ্যযুগীয় নারীকবি চন্দ্রাবতী, বীর কেশরী মসনদে আলা ঈশা খাঁ আর বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী এবং তাঁর পুত্র সুকুমার রায়ের স্মৃতিধন্য আজকের কিশোরগঞ্জ। রেলপথ ও সড়কপথে এ জেলায় সহজে যাতায়াত করা যায়। এ জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। ইতিহাসসমৃদ্ধ দর্শনীয় স্থানগুলোর বাইরে হাল আমলে এখানে আরও কিছু নান্দনিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক এসব স্থানে আসছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম। এ তিন উপজেলাকে বর্তমান সরকার হাওর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর বাইরে নিকলী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা হাওর হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও বাজিতপুর উপজেলার অংশবিশেষও হাওরের অন্তর্ভুক্ত।
চির অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ হাওরের মানুষের কাছে একদিনের অসম্ভব স্বপ্নই আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি হাওর অঞ্চলকে সারা বছর সহজ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য অল-ওয়েদার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। মূলত তাঁর স্বপ্নের পথ ধরেই পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনার জন্য এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে।
হাওরের বিশাল জলরাশি ভেদ করে নির্মিত হওয়ায় সড়কটিকে মনে হয় সাগরের ওপর ভাসমান ঝুলন্ত এক আশ্চর্য স্থাপনা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হৃদয় ছলকানো এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা হয় এখানে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ হাওরের দৃষ্টিকাড়া প্রাচুর্য উপভোগের জন্য এখানে ছুটে আসছেন। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে এ অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এখানেই শেষ নয়, এখন পুরো হাওর অঞ্চলে উড়োসড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পুরো দেশবাসী সবিস্ময়ে দেখবে হাওরের বিশাল জলরাশির চল্লিশ ফুট ওপরে উড়োসড়কে শাঁ শাঁ করে ছুটে যাচ্ছে যান্ত্রিক শকট।
জাহাঙ্গীর আলম জাহান
মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসংস্কৃতি গবেষক
হাওরের মানুষ কোনো দিন ভাবেনি তাদের ঘরে বিজলী বাতি জ্বলবে। ভাবেনি তাদের রাস্তাগুলো পাকা হবে। সেই রাস্তায় গাড়ি চলবে। অথচ মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে চির পশ্চাৎপদ হাওরের দৃশ্যপট আমূল বদলে গেছে। এখন হাওরের জনপদে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে, রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে, সেই রাস্তায় মোটরগাড়ি চলে।
রোগে-শোকে বিপন্ন জটিল রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে কিংবা রাজধানীর হাসপাতালে স্থানান্তরের চিন্তা যেখানে ছিল আকাশকুসুম কল্পনা, সেই জনপদে হাওরের বুক চিরে দৃষ্টিনন্দন পাকা সড়ক নির্মিত হবে, এ–ও ছিল অলীক কল্পনা। পশ্চাৎপদতার কারণে যে জনপদে ‘বর্ষায় নাও-শুকনায় পাও’ বলে একটি প্রবাদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় সেই প্রবাদও আজ মিথ্যে হয়ে গেল। কিশোরগঞ্জ জেলার তিনটি হাওর উপজেলাকে (ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন) উন্নত মানের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিশাল হাওরের মাঝখান দিয়ে নির্মিত হয়েছে চোখঝলসানো অল-ওয়েদার সড়ক।
এই সড়ক নির্মাণের আগে ডুবোসড়ক (সাব-মার্জেবল রোড) নির্মাণ করা হয়েছিল। যে সড়ক বর্ষা মৌসুমে হাওরের গভীর পানিতে তলিয়ে থাকত। বর্ষা চলে গেলে আবার ভেসে উঠত। অর্থাৎ বছরের ছয় মাস ডুবোসড়ক ব্যবহার করা যেত। এতে হাওরবাসীর দুঃখ পুরোপুরি দূর হয়নি। সেটা দূর করলেন হাওরের ভূমিপুত্র রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাঁর স্বপ্ন ও ভাবনা পাল্টে দিয়েছে হাওরের দৃশ্যপট। পাল্টে দিয়েছে হাওরবাসীর প্রাত্যহিক জীবন। কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদ এখন হয়ে উঠেছে চোখজুড়ানো আধুনিক এক পর্যটন এলাকা।
উজানভাটির মিলিত ঐশ্বর্যে বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির এক সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা বিভাগের এই জেলাটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি বহন করছে। মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাস, তাঁর কন্যা বাংলা ভাষার মধ্যযুগীয় নারীকবি চন্দ্রাবতী, বীর কেশরী মসনদে আলা ঈশা খাঁ আর বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী এবং তাঁর পুত্র সুকুমার রায়ের স্মৃতিধন্য আজকের কিশোরগঞ্জ। রেলপথ ও সড়কপথে এ জেলায় সহজে যাতায়াত করা যায়। এ জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। ইতিহাসসমৃদ্ধ দর্শনীয় স্থানগুলোর বাইরে হাল আমলে এখানে আরও কিছু নান্দনিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক এসব স্থানে আসছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম। এ তিন উপজেলাকে বর্তমান সরকার হাওর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর বাইরে নিকলী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা হাওর হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও বাজিতপুর উপজেলার অংশবিশেষও হাওরের অন্তর্ভুক্ত।
চির অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ হাওরের মানুষের কাছে একদিনের অসম্ভব স্বপ্নই আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি হাওর অঞ্চলকে সারা বছর সহজ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য অল-ওয়েদার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। মূলত তাঁর স্বপ্নের পথ ধরেই পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনার জন্য এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে।
হাওরের বিশাল জলরাশি ভেদ করে নির্মিত হওয়ায় সড়কটিকে মনে হয় সাগরের ওপর ভাসমান ঝুলন্ত এক আশ্চর্য স্থাপনা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হৃদয় ছলকানো এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা হয় এখানে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ হাওরের দৃষ্টিকাড়া প্রাচুর্য উপভোগের জন্য এখানে ছুটে আসছেন। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে এ অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এখানেই শেষ নয়, এখন পুরো হাওর অঞ্চলে উড়োসড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পুরো দেশবাসী সবিস্ময়ে দেখবে হাওরের বিশাল জলরাশির চল্লিশ ফুট ওপরে উড়োসড়কে শাঁ শাঁ করে ছুটে যাচ্ছে যান্ত্রিক শকট।
জাহাঙ্গীর আলম জাহান
মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসংস্কৃতি গবেষক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪