নিরূপা দেওয়ান
পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের ভূখণ্ড হলেও একসময় যেন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এ পাহাড়ি অঞ্চলটি। ছিল না সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আগপর্যন্ত এ এলাকাটি ছিল অনগ্রসর একটি অঞ্চল। পাহাড়ের মানুষ রাষ্ট্রের সুযোগ–সুবিধা থেকে প্রায় বঞ্চিত ছিল বলা যায়। এ চুক্তি অনেক আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। বাস্তবায়নে ছিল কত বাধাবিপত্তি! সরকার যখন এসব বাধা উপেক্ষা করে পাহাড়ের দিকে মনোযোগী হয়, তখন থেকে পাহাড়ের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। সমস্যার মধ্যে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্ত বরাবর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত যে পার্বত্য ভূমি রয়েছে, তা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত।
১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সৃষ্টি হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা এই তিনটি জেলায় রূপান্তরিত হয়। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক এলাকায় ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অবস্থান। এর উত্তর ও পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে বান্দরবান পার্বত্য জেলা এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পাঁচটি নদী চেঙ্গী, মাইনী, কর্ণফুলী, কাচালং ও রেইংক্যয়ং এবং ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ; ৩৫৬ বর্গমাইল এলাকা বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ।
স্বাধীনতা–পূর্ব কিংবা পরবর্তীকালে রাঙামাটির কাঁচা রাস্তায় হাঁটা ছিল একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম। পাহাড়ের উঁচু–নিচু পথ, ছড়া, ঝিরি বর্ষাকালে ভয়াবহ হতো। বরং নৌপথ ছিল তখনকার সহজতর যোগাযোগমাধ্যম। বর্তমানে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা থেকে রাঙামাটি জেলায় প্রবেশের এলাকার বেতবুনিয়া পর্যন্ত এই সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা থেকে চট্টগ্রাম জেলায় সড়কপথে যাতায়াতের জন্য ৭৪ কিলোমিটারের সড়কটি ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি করা হয়। কিন্তু এ সড়কটি দীর্ঘ সময় জরাজীর্ণ ছিল। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মূল সড়কটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হলেও পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু রাস্তা তৈরি হয়। এসব রাস্তার তেমন সংস্কার হয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছু সংস্কারের কাজ করলেও পর্যটন শহরের উপযোগী তেমন উল্লেখযোগ্য সড়কপথ এ জেলায় তৈরি করা হয়নি। এমনকি রাঙামাটি সদরের বেশ কিছু ইউনিয়ন ও মৌজায় সরাসরি যোগাযোগের রাস্তা নেই। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কাউখালী, কাপ্তাই, রাজস্থলী ও নানিয়ারচর ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলায় নৌপথ ছাড়া সরাসরি যাতায়াতের রাস্তা এখনো তৈরি হয়নি।
গত বছর ৫০০ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মিত হওয়ায় লংগদু উপজেলা পর্যন্ত সরাসরি সড়কপথে যাতায়াতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি সদর ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় কিছু ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণসহ রাস্তাঘাট কিছুটা সংস্কার হলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। সব উপজেলায় এমন কিছু দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানে হেঁটে বা নৌকায় যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এমন কিছু ইউনিয়ন ও মৌজা আছে, যেগুলোতে হেঁটে যেতে তিন–চার দিন লাগে। এলাকাগুলোর দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে কিন্তু এসব অঞ্চল পিছিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের উন্নয়ন যথাযথ হবে না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ৪টি উপজেলা ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলায় নৌপথে যাতায়াত করতে হয়। লঞ্চ, স্পিড বোট, ইঞ্জিন বোট ও নৌকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) নদী ও কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে উপজেলাগুলোতে নৌপথে যাতায়াতে প্রকট অসুবিধার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে নদী ও কাপ্তাই হ্রদের উভয় তীরের ভূমিধস এবং নৌপথে যাতায়াতকারী জনগণ ও পর্যটকদের নিক্ষিপ্ত বিভিন্ন আবর্জনা, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল ইত্যাদির কারণেও নদী ও কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা কমে গিয়ে নৌপথে যোগাযোগের ক্ষতি সাধন করছে। আর নদী ও হ্রদের পানিতে দূষণ সৃষ্টি করছে। দীর্ঘদিন ধরে অনেক প্রতিবেদন, বক্তব্য দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির কারণে সারা বিশ্বে বর্তমানে এই ইন্টারনেট সেবা শ্রেষ্ঠ যোগাযোগমাধ্যম। ইন্টারনেট সেবার আওতায় বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ যখন ইন্টারনেটের আওতায় ছিল, তখনো পার্বত্যবাসী ইন্টারনেটের গল্প শুনত, মোবাইলে কথা বলার দৃশ্য স্বপ্নে দেখত। এক অজ্ঞাত কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল পাহাড়ের মানুষ। অবশেষে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাহাড়ে সীমিত আকারে ইন্টারনেট সেবা চালু করে। পরবর্তী সময়ে এর বিস্তার ঘটলেও এখনো অনেক এলাকা ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে তথ্যপ্রযুক্তিব্যবস্থা সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হয়েছে। তার আওতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বিদ্যুৎ–সুবিধার জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হলে ২২ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি, ১৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় ১ লাখ মানুষ (যার মধ্যে ৭০ শতাংশ চাকমা সম্প্রদায়) নিজ বাসভূমি ছেড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অথচ এত বছর পরও এই রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অনেক উপজেলা বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে না। যার কারণে ওই এলাকার অধিবাসীরা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই করোনাকালীন সংকটে অনলাইনের মাধ্যমে যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে, সে কার্যক্রমের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে পার্বত্য এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় করোনাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার অধিবাসীরা।
পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থাকে সুসংহত করা, দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, লাইন সেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারের উপযোগী বৈদ্যুতিক সংযোগ অথবা সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। সর্বোপরি পার্বত্য এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এলাকাভিত্তিক চাহিদা নিরূপণের জন্য এলাকার জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
নিরূপা দেওয়ান
সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের ভূখণ্ড হলেও একসময় যেন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এ পাহাড়ি অঞ্চলটি। ছিল না সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির আগপর্যন্ত এ এলাকাটি ছিল অনগ্রসর একটি অঞ্চল। পাহাড়ের মানুষ রাষ্ট্রের সুযোগ–সুবিধা থেকে প্রায় বঞ্চিত ছিল বলা যায়। এ চুক্তি অনেক আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। বাস্তবায়নে ছিল কত বাধাবিপত্তি! সরকার যখন এসব বাধা উপেক্ষা করে পাহাড়ের দিকে মনোযোগী হয়, তখন থেকে পাহাড়ের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। সমস্যার মধ্যে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্ত বরাবর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত যে পার্বত্য ভূমি রয়েছে, তা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত।
১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সৃষ্টি হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা এই তিনটি জেলায় রূপান্তরিত হয়। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক এলাকায় ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অবস্থান। এর উত্তর ও পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে বান্দরবান পার্বত্য জেলা এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পাঁচটি নদী চেঙ্গী, মাইনী, কর্ণফুলী, কাচালং ও রেইংক্যয়ং এবং ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ; ৩৫৬ বর্গমাইল এলাকা বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ।
স্বাধীনতা–পূর্ব কিংবা পরবর্তীকালে রাঙামাটির কাঁচা রাস্তায় হাঁটা ছিল একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম। পাহাড়ের উঁচু–নিচু পথ, ছড়া, ঝিরি বর্ষাকালে ভয়াবহ হতো। বরং নৌপথ ছিল তখনকার সহজতর যোগাযোগমাধ্যম। বর্তমানে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা থেকে রাঙামাটি জেলায় প্রবেশের এলাকার বেতবুনিয়া পর্যন্ত এই সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা থেকে চট্টগ্রাম জেলায় সড়কপথে যাতায়াতের জন্য ৭৪ কিলোমিটারের সড়কটি ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি করা হয়। কিন্তু এ সড়কটি দীর্ঘ সময় জরাজীর্ণ ছিল। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মূল সড়কটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হলেও পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু রাস্তা তৈরি হয়। এসব রাস্তার তেমন সংস্কার হয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছু সংস্কারের কাজ করলেও পর্যটন শহরের উপযোগী তেমন উল্লেখযোগ্য সড়কপথ এ জেলায় তৈরি করা হয়নি। এমনকি রাঙামাটি সদরের বেশ কিছু ইউনিয়ন ও মৌজায় সরাসরি যোগাযোগের রাস্তা নেই। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কাউখালী, কাপ্তাই, রাজস্থলী ও নানিয়ারচর ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলায় নৌপথ ছাড়া সরাসরি যাতায়াতের রাস্তা এখনো তৈরি হয়নি।
গত বছর ৫০০ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মিত হওয়ায় লংগদু উপজেলা পর্যন্ত সরাসরি সড়কপথে যাতায়াতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি সদর ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় কিছু ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণসহ রাস্তাঘাট কিছুটা সংস্কার হলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। সব উপজেলায় এমন কিছু দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানে হেঁটে বা নৌকায় যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এমন কিছু ইউনিয়ন ও মৌজা আছে, যেগুলোতে হেঁটে যেতে তিন–চার দিন লাগে। এলাকাগুলোর দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে কিন্তু এসব অঞ্চল পিছিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের উন্নয়ন যথাযথ হবে না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ৪টি উপজেলা ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলায় নৌপথে যাতায়াত করতে হয়। লঞ্চ, স্পিড বোট, ইঞ্জিন বোট ও নৌকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) নদী ও কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে উপজেলাগুলোতে নৌপথে যাতায়াতে প্রকট অসুবিধার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে নদী ও কাপ্তাই হ্রদের উভয় তীরের ভূমিধস এবং নৌপথে যাতায়াতকারী জনগণ ও পর্যটকদের নিক্ষিপ্ত বিভিন্ন আবর্জনা, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল ইত্যাদির কারণেও নদী ও কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা কমে গিয়ে নৌপথে যোগাযোগের ক্ষতি সাধন করছে। আর নদী ও হ্রদের পানিতে দূষণ সৃষ্টি করছে। দীর্ঘদিন ধরে অনেক প্রতিবেদন, বক্তব্য দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির কারণে সারা বিশ্বে বর্তমানে এই ইন্টারনেট সেবা শ্রেষ্ঠ যোগাযোগমাধ্যম। ইন্টারনেট সেবার আওতায় বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ যখন ইন্টারনেটের আওতায় ছিল, তখনো পার্বত্যবাসী ইন্টারনেটের গল্প শুনত, মোবাইলে কথা বলার দৃশ্য স্বপ্নে দেখত। এক অজ্ঞাত কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল পাহাড়ের মানুষ। অবশেষে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাহাড়ে সীমিত আকারে ইন্টারনেট সেবা চালু করে। পরবর্তী সময়ে এর বিস্তার ঘটলেও এখনো অনেক এলাকা ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে তথ্যপ্রযুক্তিব্যবস্থা সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হয়েছে। তার আওতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বিদ্যুৎ–সুবিধার জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হলে ২২ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি, ১৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় ১ লাখ মানুষ (যার মধ্যে ৭০ শতাংশ চাকমা সম্প্রদায়) নিজ বাসভূমি ছেড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অথচ এত বছর পরও এই রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অনেক উপজেলা বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে না। যার কারণে ওই এলাকার অধিবাসীরা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই করোনাকালীন সংকটে অনলাইনের মাধ্যমে যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে, সে কার্যক্রমের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে পার্বত্য এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় করোনাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার অধিবাসীরা।
পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থাকে সুসংহত করা, দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, লাইন সেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারের উপযোগী বৈদ্যুতিক সংযোগ অথবা সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। সর্বোপরি পার্বত্য এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এলাকাভিত্তিক চাহিদা নিরূপণের জন্য এলাকার জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
নিরূপা দেওয়ান
সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪