গুঞ্জন রহমান
বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক
বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪