আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
বঙ্গবন্ধু পরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করেননি। কিন্তু তাঁর জীবন বৈচিত্র্যময় মহাকাব্যের মতো। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কেউ তাঁকে বলেছেন গ্রিক ট্র্যাজেডির হিরো। আমি তা বিশ্বাস করি না। গ্রিক ট্র্যাজেডির হিরোরা মৃত্যুতেই চিরকালের জন্য বিলীন হয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তা হননি। তিনি আবার মৃত্যু থেকে জেগে উঠেছেন। ২০২০ সাল ছিল তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর বছর। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয়েছে। তাঁর আদর্শের পতাকা আবার তুলে ধরতে চাইছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। আজ বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নেই কে বলবে? তিনি আছেন বাঙালির স্বপ্নে, জাগরণে, প্রাত্যহিক জীবনে।
কার্ল মার্কস সম্পর্কে বলতে গিয়ে মানবতাবাদী আন্দোলনের নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেছিলেন, ‘মৃতকে কখনো কেউ লাথি মারে না। কার্ল মার্কস যে এখনো জীবিত তার প্রমাণ ক্যাপিটালিস্টরা সুযোগ পেলেই তাঁর মূর্তি ভাঙে। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এখনো মার্কসের সঙ্গে যে শত্রুতা তারা করে চলেছে, কোনো জীবিত শত্রুর বিরুদ্ধেও তারা তা করে না।’ এম এন রায়ের এ কথাটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও সত্য। তাঁকে শেষ রাত্রির ষড়যন্ত্রে হত্যা করে তাঁর শত্রুরা ক্ষান্ত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর চার দশক পরেও তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রচার চালাচ্ছে, তাঁর ভাস্কর্য ভাঙতে চাইছে, তাতে মনে হয় একজন জীবিত শত্রুর বিরুদ্ধেও তারা এভাবে লড়ে না। বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর ভক্ত ও অনুসারীদের মধ্যে নয়, তাঁর শত্রুদের মধ্যেও চির জাগরূক হয়ে আছেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনকে কেউ কেউ মহাসাগরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমার মতে, এই মহাসাগরও মাঝে মাঝে নদীর মতো বাঁক নিয়েছে। এই বাঁক নেওয়াটাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের তুলনাহীন বৈশিষ্ট্য। ভারতের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে জওহর লাল নেহরুর সঙ্গে তুলনা করেন। আমার মনে হয়, এই তুলনা সঠিক নয়। নেহরু বিলেতে লেখাপড়া শিখতে গিয়ে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। ভারতের সোশ্যালিস্টরা অসীম আশায় অপেক্ষা করছিলেন ইয়াং সোশ্যালিস্ট নেহরু কখন ভারতে ফেরেন এবং সোশ্যালিস্ট মুভমেন্টের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের আশা আরও বলশালী হয়েছিল নেহরু গান্ধীর আশ্রম রাজনীতি ও রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার তীব্র সমালোচনা করে যখন বক্তব্য রাখেন এবং গান্ধীকে ‘হিন্দু আশ্রমিক নেতা’ বলে সমালোচনা করেন। নেহরুর অসাম্প্রদায়িকতা ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল।
কিন্তু ভারতে ফিরেই নেহরু গান্ধীর প্রভাবে পড়ে যান এবং তাঁর যে ‘হিন্দু আশ্রমিক রাজনীতির’ প্রতি তীব্র অনাসক্তি ছিল, সে রাজনীতির শিবিরে যুক্ত হয়ে যান। এ ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির বাঁক ফেরা সম্পূর্ণ আলাদা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছর। তখন গান্ধী ও আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন শুরু হওয়ার উত্তাপ ভারতের রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধু এই রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র গঠন তখন থেকেই শুরু। প্রাক-যৌবনে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রভাবে পড়ে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যোগ দেন। কিন্তু মুসলিম লীগ প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রগতিশীল অংশে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভাগ হলে তিনি আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন অংশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পাকিস্তান হওয়ার পর যখন নাজিমুদ্দীনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক অংশ পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে ‘গণতান্ত্রিক কর্মী শিবির’ নামে একটি অসাম্প্রদায়িক বিরোধী সংগঠন গঠন করেন। ছাত্রলীগকেও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব থেকে মুক্ত করে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের নাম ছিল নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং তার নেতা ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে যার প্রকৃত রাজনৈতিক জীবনের অবসান হয়।
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চরিত্র গঠিত হয়েছে বিভিন্ন নেতার প্রভাব দ্বারা। প্রথম যৌবনে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যুক্ত হলেও তাঁর কাছে আদর্শ ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, ফজলুল হক, আবুল হাশিম ও মওলানা ভাসানী। শেখ মুজিবকে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শিষ্য বলে পরিচয় দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তিনি মওলানা ভাসানীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে নয়। প্রথমে ধরা যাক ভাষা আন্দোলনের কথা। এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নেতা বঙ্গবন্ধু। তিনি শুধু আন্দোলনে নেতৃত্ব দান নয়, মওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে ভাষা আন্দোলনে সমর্থন দিতে রাজি করান সোহরাওয়ার্দীকে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পদক্ষেপ প্রথমে ছাত্রলীগ, তারপর আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন করা। তাঁর তৃতীয় ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেশে স্বতন্ত্র নির্বাচনের বদলে যুক্ত নির্বাচন প্রবর্তনের আন্দোলন। পাকিস্তান দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এই রাষ্ট্রের শাসকদের কাছ থেকে যুক্ত নির্বাচনের দাবিটি আদায় করা ছিল অসম্ভব। কিন্তু ভাসানী-মুজিব যৌথ নেতৃত্ব এই দাবি আদায়েও সফল হয়।
এটা ছিল মুজির রাজনীতির প্রথম বাঁক ঘোরা। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খোলস ফেলে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাতাবরণ উন্মোচন। সোশ্যালিস্ট নেহরু পেছনে সরে এসেছিলেন। সোশ্যালিস্ট থেকে হয়েছিলেন গান্ধীবাদী। অন্যদিকে শেখ মুজিব বিলেতি শিক্ষার সোশ্যালিস্ট না হয়েও তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সামনের দিকে এগিয়েছেন, পেছনের দিকে নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্রসরমাণ ধারাই সেই যুব বয়সেই চলে এসেছিলেন। আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার। মুসলিম লীগের রাজনীতি করলেও ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের সময় তিনি আবুল হাশিম ও শরৎ বসুর অসাম্প্রদায়িক যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার সমর্থক ছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে খণ্ডিত পূর্ব পাকিস্তানের নয়। তাঁর মধ্যে এই সময় অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ দেখা যায়। তিনি পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা এবং চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক হেডকোয়ার্টার এবং নেভাল হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের আগেই তিনি অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হন। নইলে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণে অত সহজে এগিয়ে আসতে পারতেন না। ১৯৪৬ সালে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে পরিচিত ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করা এবং বিপন্ন নর-নারীকে নিজের জীবন বিপন্ন করে রক্ষার ব্যাপারে এক অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন করার পর শেখ মুজিবের রাজনীতি ছিল উদার পশ্চিমা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই পাকিস্তানি শাসকদের রবীন্দ্র সাহিত্য বর্জন, বাংলা হরফ পরিবর্তন ও বাঙালির জাতি পরিচয় মুছে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। পাকিস্তানি শাসকদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি, আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ।
অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধু বুঝি ঐতিহাসিক ৬ দফা তাঁর কিছু বুদ্ধিজীবী বন্ধুর সহায়তায় তৈরি করে ১৯৬৬ সালে তার ভিত্তিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ধারণাটা সত্য নয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি কোনো অর্থনীতিবিদ কথাটি বলার আগে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের জন্য দুই ধরনের অর্থনীতি প্রবর্তন করা দরকার। পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিরা যাতে কৃষিভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের একচেটিয়া মার্কেটে পরিণত করতে না পারে, তার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সহজ ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সহজ যাতায়াতব্যবস্থার দাবি করেছিলেন। এ সময় তিনি ‘নতুন দিন’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন, তাতে ধারাবাহিকভাবে তাঁর দুই ইকোনমির থিওরি প্রকাশিত হয়েছে।
এই টু ইকোনমি থিওরি থেকেই তাঁর ৬ দফা দাবির উৎপত্তি। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তাঁর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগ নিয়ে মুজিব রাজনীতির দ্বিতীয় বাঁক পরিবর্তন। আওয়ামী লীগ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা এবং নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের দাবি জানায়। ক্রমেই শেখ মুজিবের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ও শোষণবিহীন অর্থনৈতিক আন্দোলন পরিচালনার আগ্রহ প্রবল হতে দেখা যায়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের পর তিনি ৬ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করেন। পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি করে। এই মামলার নাম আগরতলা মামলা। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি কারামুক্ত হন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ কথাটি তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়। মুজিব রাজনীতির এটা তৃতীয় বাঁক।
এই রাজনীতির চতুর্থ বাঁকে দেখা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশে ফিরেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে চারটি মূল নীতি সংযোজন করেছেন—বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে আব্রাহাম লিঙ্কন ও মহাত্মা গান্ধীর চেয়েও মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণের সময় জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্রের দর্শন এবং তৃণমূলভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের শাসন। প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবীচক্র মুজিবকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে নয়। আজ ১৫ আগস্ট শোকগ্রস্ত জাতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু তাদের কতটা বন্ধু ছিলেন। তাঁর আদর্শকে ভিত্তি করে যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, আমার বিশ্বাস, তারাই একদিন বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে নামবে। সেদিনটি খুব দূরে নয়।
লন্ডন, ১২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, ২০২১
বঙ্গবন্ধু পরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করেননি। কিন্তু তাঁর জীবন বৈচিত্র্যময় মহাকাব্যের মতো। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ কেউ তাঁকে বলেছেন গ্রিক ট্র্যাজেডির হিরো। আমি তা বিশ্বাস করি না। গ্রিক ট্র্যাজেডির হিরোরা মৃত্যুতেই চিরকালের জন্য বিলীন হয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তা হননি। তিনি আবার মৃত্যু থেকে জেগে উঠেছেন। ২০২০ সাল ছিল তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর বছর। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয়েছে। তাঁর আদর্শের পতাকা আবার তুলে ধরতে চাইছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। আজ বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নেই কে বলবে? তিনি আছেন বাঙালির স্বপ্নে, জাগরণে, প্রাত্যহিক জীবনে।
কার্ল মার্কস সম্পর্কে বলতে গিয়ে মানবতাবাদী আন্দোলনের নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেছিলেন, ‘মৃতকে কখনো কেউ লাথি মারে না। কার্ল মার্কস যে এখনো জীবিত তার প্রমাণ ক্যাপিটালিস্টরা সুযোগ পেলেই তাঁর মূর্তি ভাঙে। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এখনো মার্কসের সঙ্গে যে শত্রুতা তারা করে চলেছে, কোনো জীবিত শত্রুর বিরুদ্ধেও তারা তা করে না।’ এম এন রায়ের এ কথাটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও সত্য। তাঁকে শেষ রাত্রির ষড়যন্ত্রে হত্যা করে তাঁর শত্রুরা ক্ষান্ত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর চার দশক পরেও তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রচার চালাচ্ছে, তাঁর ভাস্কর্য ভাঙতে চাইছে, তাতে মনে হয় একজন জীবিত শত্রুর বিরুদ্ধেও তারা এভাবে লড়ে না। বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর ভক্ত ও অনুসারীদের মধ্যে নয়, তাঁর শত্রুদের মধ্যেও চির জাগরূক হয়ে আছেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনকে কেউ কেউ মহাসাগরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমার মতে, এই মহাসাগরও মাঝে মাঝে নদীর মতো বাঁক নিয়েছে। এই বাঁক নেওয়াটাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের তুলনাহীন বৈশিষ্ট্য। ভারতের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে জওহর লাল নেহরুর সঙ্গে তুলনা করেন। আমার মনে হয়, এই তুলনা সঠিক নয়। নেহরু বিলেতে লেখাপড়া শিখতে গিয়ে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। ভারতের সোশ্যালিস্টরা অসীম আশায় অপেক্ষা করছিলেন ইয়াং সোশ্যালিস্ট নেহরু কখন ভারতে ফেরেন এবং সোশ্যালিস্ট মুভমেন্টের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের আশা আরও বলশালী হয়েছিল নেহরু গান্ধীর আশ্রম রাজনীতি ও রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার তীব্র সমালোচনা করে যখন বক্তব্য রাখেন এবং গান্ধীকে ‘হিন্দু আশ্রমিক নেতা’ বলে সমালোচনা করেন। নেহরুর অসাম্প্রদায়িকতা ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল।
কিন্তু ভারতে ফিরেই নেহরু গান্ধীর প্রভাবে পড়ে যান এবং তাঁর যে ‘হিন্দু আশ্রমিক রাজনীতির’ প্রতি তীব্র অনাসক্তি ছিল, সে রাজনীতির শিবিরে যুক্ত হয়ে যান। এ ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির বাঁক ফেরা সম্পূর্ণ আলাদা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছর। তখন গান্ধী ও আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন শুরু হওয়ার উত্তাপ ভারতের রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধু এই রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র গঠন তখন থেকেই শুরু। প্রাক-যৌবনে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রভাবে পড়ে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যোগ দেন। কিন্তু মুসলিম লীগ প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রগতিশীল অংশে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভাগ হলে তিনি আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন অংশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পাকিস্তান হওয়ার পর যখন নাজিমুদ্দীনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক অংশ পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে ‘গণতান্ত্রিক কর্মী শিবির’ নামে একটি অসাম্প্রদায়িক বিরোধী সংগঠন গঠন করেন। ছাত্রলীগকেও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব থেকে মুক্ত করে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের নাম ছিল নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং তার নেতা ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে যার প্রকৃত রাজনৈতিক জীবনের অবসান হয়।
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চরিত্র গঠিত হয়েছে বিভিন্ন নেতার প্রভাব দ্বারা। প্রথম যৌবনে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যুক্ত হলেও তাঁর কাছে আদর্শ ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, ফজলুল হক, আবুল হাশিম ও মওলানা ভাসানী। শেখ মুজিবকে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শিষ্য বলে পরিচয় দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তিনি মওলানা ভাসানীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে নয়। প্রথমে ধরা যাক ভাষা আন্দোলনের কথা। এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নেতা বঙ্গবন্ধু। তিনি শুধু আন্দোলনে নেতৃত্ব দান নয়, মওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে ভাষা আন্দোলনে সমর্থন দিতে রাজি করান সোহরাওয়ার্দীকে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পদক্ষেপ প্রথমে ছাত্রলীগ, তারপর আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন করা। তাঁর তৃতীয় ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেশে স্বতন্ত্র নির্বাচনের বদলে যুক্ত নির্বাচন প্রবর্তনের আন্দোলন। পাকিস্তান দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এই রাষ্ট্রের শাসকদের কাছ থেকে যুক্ত নির্বাচনের দাবিটি আদায় করা ছিল অসম্ভব। কিন্তু ভাসানী-মুজিব যৌথ নেতৃত্ব এই দাবি আদায়েও সফল হয়।
এটা ছিল মুজির রাজনীতির প্রথম বাঁক ঘোরা। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খোলস ফেলে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাতাবরণ উন্মোচন। সোশ্যালিস্ট নেহরু পেছনে সরে এসেছিলেন। সোশ্যালিস্ট থেকে হয়েছিলেন গান্ধীবাদী। অন্যদিকে শেখ মুজিব বিলেতি শিক্ষার সোশ্যালিস্ট না হয়েও তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সামনের দিকে এগিয়েছেন, পেছনের দিকে নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্রসরমাণ ধারাই সেই যুব বয়সেই চলে এসেছিলেন। আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার। মুসলিম লীগের রাজনীতি করলেও ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের সময় তিনি আবুল হাশিম ও শরৎ বসুর অসাম্প্রদায়িক যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার সমর্থক ছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে খণ্ডিত পূর্ব পাকিস্তানের নয়। তাঁর মধ্যে এই সময় অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ দেখা যায়। তিনি পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা এবং চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক হেডকোয়ার্টার এবং নেভাল হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের আগেই তিনি অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হন। নইলে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণে অত সহজে এগিয়ে আসতে পারতেন না। ১৯৪৬ সালে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে পরিচিত ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করা এবং বিপন্ন নর-নারীকে নিজের জীবন বিপন্ন করে রক্ষার ব্যাপারে এক অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন করার পর শেখ মুজিবের রাজনীতি ছিল উদার পশ্চিমা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই পাকিস্তানি শাসকদের রবীন্দ্র সাহিত্য বর্জন, বাংলা হরফ পরিবর্তন ও বাঙালির জাতি পরিচয় মুছে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। পাকিস্তানি শাসকদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি, আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ।
অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধু বুঝি ঐতিহাসিক ৬ দফা তাঁর কিছু বুদ্ধিজীবী বন্ধুর সহায়তায় তৈরি করে ১৯৬৬ সালে তার ভিত্তিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ধারণাটা সত্য নয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি কোনো অর্থনীতিবিদ কথাটি বলার আগে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের জন্য দুই ধরনের অর্থনীতি প্রবর্তন করা দরকার। পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিরা যাতে কৃষিভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের একচেটিয়া মার্কেটে পরিণত করতে না পারে, তার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সহজ ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সহজ যাতায়াতব্যবস্থার দাবি করেছিলেন। এ সময় তিনি ‘নতুন দিন’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন, তাতে ধারাবাহিকভাবে তাঁর দুই ইকোনমির থিওরি প্রকাশিত হয়েছে।
এই টু ইকোনমি থিওরি থেকেই তাঁর ৬ দফা দাবির উৎপত্তি। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তাঁর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগ নিয়ে মুজিব রাজনীতির দ্বিতীয় বাঁক পরিবর্তন। আওয়ামী লীগ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা এবং নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের দাবি জানায়। ক্রমেই শেখ মুজিবের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ ও শোষণবিহীন অর্থনৈতিক আন্দোলন পরিচালনার আগ্রহ প্রবল হতে দেখা যায়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের পর তিনি ৬ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করেন। পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি করে। এই মামলার নাম আগরতলা মামলা। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি কারামুক্ত হন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ কথাটি তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়। মুজিব রাজনীতির এটা তৃতীয় বাঁক।
এই রাজনীতির চতুর্থ বাঁকে দেখা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশে ফিরেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে চারটি মূল নীতি সংযোজন করেছেন—বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে আব্রাহাম লিঙ্কন ও মহাত্মা গান্ধীর চেয়েও মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণের সময় জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্রের দর্শন এবং তৃণমূলভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের শাসন। প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবীচক্র মুজিবকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে নয়। আজ ১৫ আগস্ট শোকগ্রস্ত জাতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু তাদের কতটা বন্ধু ছিলেন। তাঁর আদর্শকে ভিত্তি করে যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, আমার বিশ্বাস, তারাই একদিন বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে নামবে। সেদিনটি খুব দূরে নয়।
লন্ডন, ১২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, ২০২১
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪