ড. মশিউর রহমান মৃধা
নরসিংদী সদর, শিবপুর, পলাশ, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা—এই ছয় উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী জেলা। দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে মেঘনাবিধৌত নিম্নভূমি, পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চ সমতল ভূমি এবং উত্তরাঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড়, টিলা, টেক ও নয়নাভিরাম অরণ্য আবরণে আবৃত। আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যার সুকোমল জলধারায় প্লাবিত এর জনপদ।
নরসিংদীর আদিভূমি বেলাব উপজেলার উয়ারী–বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতার নিদর্শনের জন্য বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টিতেও নরসিংদীর রয়েছে ঐতিহ্যময় ভূমিকা। উনসত্তরের গণ–আন্দোলনের মহানায়ক শহীদ আসাদ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান নরসিংদী জেলার সন্তান। শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিজগতের আলোকবর্তিকা হয়ে যাঁরা নরসিংদীকে ঐতিহ্যমণ্ডিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—উপমহাদেশের প্রধান বাঙালি আইসিএস স্যার কে জি গুপ্ত, পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন, কবিয়াল সম্রাট কবিগুণাকর হরিচরণ আচার্য, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী সাহাবুদ্দিন প্রমুখ। নরসিংদীর বাবুরহাটকে বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের বাজার ও তাঁতশিল্পের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। এ জেলায় উৎপাদিত কলা এবং অন্যান্য ফল ও সবজির সুখ্যাতি রয়েছে দেশে-বিদেশে।
নরসিংদীর ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নরসিংদীর শিক্ষাঙ্গনসমূহ। রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য—‘জ্ঞান মানুষের মধ্যে সকলের চেয়ে বড় ঐক্য। বাংলাদেশের এক কোণে যে ছেলে পড়াশুনা করছে, তার সঙ্গে য়্যুরোপ প্রান্তের শিক্ষিত মানুষের মিল অনেক বেশি সত্য—তার দুয়ারের পাশের মূর্খ প্রতিবেশীর চেয়ে।’ সুতরাং বৈশ্বিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে বিশ্বমানবে পরিণত হতে চাই শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষা। বলতে দ্বিধা নেই, একসময় নরসিংদী কলা ও কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে নরসিংদী শিক্ষার শহর।
এ সময়ে নরসিংদীর প্রায় সব প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষত নরসিংদী শহরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গড়ে ওঠা একাধিক কলেজ নিয়ে দৈনিক পত্রিকাসহ অন্যান্য মাধ্যমে অনেক নেতিবাচক কথা রয়েছে; রয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের কথাও। শিক্ষক হিসেবে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর থেকে বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলো সুনাম, সুখ্যাতি ও টিকে থাকার অনমনীয় লড়াই সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে নরসিংদী জেলায় কলেজের সংখ্যা অর্ধশতাধিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। শুধু সংখ্যার দিকটি আশাব্যঞ্জক তা নয়; বলব যে চেষ্টা, উদ্যোগ, আয়োজন সবকিছুতেই আগামীর আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি রয়েছে। নরসিংদী জেলায় এমন কোনো কলেজ নেই, যেখানে আমার ব্যক্তিগত বিচরণ নেই, অধিকাংশ স্কুলেও গিয়েছি। আমার সু-অনুভূতি দিয়ে প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করছি যে, সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীর সফলতার মাঝে বেঁচে থাকতে চান এবং শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখতে চান। গত এক যুগে নরসিংদী জেলায় কলেজের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং স্কুলের সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বেড়েছে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছে, উদ্বুদ্ধ করছে। নিশ্চয় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে, কারণ শিক্ষার্থীর অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলছে না বা বন্ধ হয়ে গেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই।
এই সময়ে নরসিংদী জেলা শিক্ষায় কতটা অগ্রগতি ও বিস্তার লাভ করেছে, তা জেনে নেওয়া জরুরি। গত এক যুগে নরসিংদীর একাধিক স্কুল ও কলেজ বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আমি নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনবার দ্বিতীয় স্থানসহ মোট ছয়বার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। এটি আমার লেখার বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্য নয়। এর আগে ২০০৮ সালে নরসিংদী মডেল কলেজ বোর্ডে স্থান পায় এবং দু-একটি স্কুলের ফলাফল বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। একই সঙ্গে গত এক যুগে নরসিংদীর অনেক স্কুল ও কলেজ বোর্ডে স্থান না পেলেও শতভাগ পাসসহ অতীতের তুলনায় অনেক ভালো ফল অর্জন করেছে। সেদিক থেকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রত্যাশার শীর্ষ চূড়ায় যাচ্ছে, অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে কমবেশি বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং দু-চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে পুরো জেলায় শিক্ষার ঢেউ লেগেছে।
যেহেতু বর্তমানে নরসিংদী জেলার স্কুল ও কলেজগুলোতে মানসম্মত পাঠদান ও ভালো ফল অর্জনের আন্দোলন চলছে এবং তুলনামূলক ভালো ফল হচ্ছে, সেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাটি নরসিংদীবাসীর হাতের মুঠোয় চলে আসছে বলে মনে করছি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে উচ্চশিক্ষা কেমন হওয়া উচিত? প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমান উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট গবেষণামূলক এবং বিশ্লেষণমূলক নয়, অনেক ক্ষেত্রেই গতানুগতিক এবং নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে কারাবন্দী হয়ে আছে। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে সৃজনশীলতায় ঋদ্ধ হবেন এবং বিশ্বমানের নাগরিক হবেন, সেরকম চিন্তা-দর্শন সামনে রেখেই বোধকরি নরসিংদীর শিক্ষাঙ্গনসমূহের পথচলা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথটি কুসুমাস্তীর্ণ করা এবং সম্ভাবনাকে আরও আলোকোজ্জ্বল করার প্রয়োজন নরসিংদীতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষায় অগ্রগতি ও সম্ভাবনা সামনে রেখে নরসিংদীর প্রেক্ষাপটে একটি উদাহরণ: নরসিংদী জেলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষক সমিতির (নকশিস) আয়োজনে ড্রিম হলিডে পার্কে ২০১৭ সালে ১০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষক পরিবারের সদস্য একত্র হয়েছিলেন। সেটি নিছক পিকনিক বা আনন্দ উৎসব ছিল না। সেই মিলনমেলায় স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল—শিক্ষা সংস্কৃতি সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্বের চাষবাস নিশ্চিত সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের সাথে আমাদের বসবাস। যত দূর জানি, একটি জেলায় এতসংখ্যক শিক্ষকের মিলনমেলা এটিই প্রথম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দের কথায় উঠে এসেছে নরসিংদীর শিক্ষাদানের খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ, উঠে এসেছে আগামীর সমূহ সম্ভাবনার কথা। শিক্ষকদের মুখে মুখে ছিল নির্মল অঙ্গীকারের কথাও।
ইতিমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের দাবিদার বাংলাদেশ। হেনরি কিসিঞ্জারের শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে দ্য ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। সেই নিরিখে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ইতিহাস, ঐতিহ্যে অনন্য ধারাবাহী একটি জেলা নরসিংদী।
ড. মশিউর রহমান মৃধা, শিক্ষক
নরসিংদী সদর, শিবপুর, পলাশ, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা—এই ছয় উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী জেলা। দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে মেঘনাবিধৌত নিম্নভূমি, পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চ সমতল ভূমি এবং উত্তরাঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড়, টিলা, টেক ও নয়নাভিরাম অরণ্য আবরণে আবৃত। আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যার সুকোমল জলধারায় প্লাবিত এর জনপদ।
নরসিংদীর আদিভূমি বেলাব উপজেলার উয়ারী–বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতার নিদর্শনের জন্য বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টিতেও নরসিংদীর রয়েছে ঐতিহ্যময় ভূমিকা। উনসত্তরের গণ–আন্দোলনের মহানায়ক শহীদ আসাদ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান নরসিংদী জেলার সন্তান। শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিজগতের আলোকবর্তিকা হয়ে যাঁরা নরসিংদীকে ঐতিহ্যমণ্ডিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—উপমহাদেশের প্রধান বাঙালি আইসিএস স্যার কে জি গুপ্ত, পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন, কবিয়াল সম্রাট কবিগুণাকর হরিচরণ আচার্য, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী সাহাবুদ্দিন প্রমুখ। নরসিংদীর বাবুরহাটকে বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের বাজার ও তাঁতশিল্পের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। এ জেলায় উৎপাদিত কলা এবং অন্যান্য ফল ও সবজির সুখ্যাতি রয়েছে দেশে-বিদেশে।
নরসিংদীর ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নরসিংদীর শিক্ষাঙ্গনসমূহ। রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য—‘জ্ঞান মানুষের মধ্যে সকলের চেয়ে বড় ঐক্য। বাংলাদেশের এক কোণে যে ছেলে পড়াশুনা করছে, তার সঙ্গে য়্যুরোপ প্রান্তের শিক্ষিত মানুষের মিল অনেক বেশি সত্য—তার দুয়ারের পাশের মূর্খ প্রতিবেশীর চেয়ে।’ সুতরাং বৈশ্বিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে বিশ্বমানবে পরিণত হতে চাই শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা এবং মানসম্মত শিক্ষা। বলতে দ্বিধা নেই, একসময় নরসিংদী কলা ও কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে নরসিংদী শিক্ষার শহর।
এ সময়ে নরসিংদীর প্রায় সব প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষত নরসিংদী শহরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গড়ে ওঠা একাধিক কলেজ নিয়ে দৈনিক পত্রিকাসহ অন্যান্য মাধ্যমে অনেক নেতিবাচক কথা রয়েছে; রয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের কথাও। শিক্ষক হিসেবে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর থেকে বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলো সুনাম, সুখ্যাতি ও টিকে থাকার অনমনীয় লড়াই সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে নরসিংদী জেলায় কলেজের সংখ্যা অর্ধশতাধিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। শুধু সংখ্যার দিকটি আশাব্যঞ্জক তা নয়; বলব যে চেষ্টা, উদ্যোগ, আয়োজন সবকিছুতেই আগামীর আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি রয়েছে। নরসিংদী জেলায় এমন কোনো কলেজ নেই, যেখানে আমার ব্যক্তিগত বিচরণ নেই, অধিকাংশ স্কুলেও গিয়েছি। আমার সু-অনুভূতি দিয়ে প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করছি যে, সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীর সফলতার মাঝে বেঁচে থাকতে চান এবং শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখতে চান। গত এক যুগে নরসিংদী জেলায় কলেজের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং স্কুলের সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বেড়েছে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছে, উদ্বুদ্ধ করছে। নিশ্চয় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে, কারণ শিক্ষার্থীর অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলছে না বা বন্ধ হয়ে গেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই।
এই সময়ে নরসিংদী জেলা শিক্ষায় কতটা অগ্রগতি ও বিস্তার লাভ করেছে, তা জেনে নেওয়া জরুরি। গত এক যুগে নরসিংদীর একাধিক স্কুল ও কলেজ বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আমি নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনবার দ্বিতীয় স্থানসহ মোট ছয়বার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। এটি আমার লেখার বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্য নয়। এর আগে ২০০৮ সালে নরসিংদী মডেল কলেজ বোর্ডে স্থান পায় এবং দু-একটি স্কুলের ফলাফল বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। একই সঙ্গে গত এক যুগে নরসিংদীর অনেক স্কুল ও কলেজ বোর্ডে স্থান না পেলেও শতভাগ পাসসহ অতীতের তুলনায় অনেক ভালো ফল অর্জন করেছে। সেদিক থেকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রত্যাশার শীর্ষ চূড়ায় যাচ্ছে, অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে কমবেশি বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং দু-চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে পুরো জেলায় শিক্ষার ঢেউ লেগেছে।
যেহেতু বর্তমানে নরসিংদী জেলার স্কুল ও কলেজগুলোতে মানসম্মত পাঠদান ও ভালো ফল অর্জনের আন্দোলন চলছে এবং তুলনামূলক ভালো ফল হচ্ছে, সেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাটি নরসিংদীবাসীর হাতের মুঠোয় চলে আসছে বলে মনে করছি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে উচ্চশিক্ষা কেমন হওয়া উচিত? প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমান উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট গবেষণামূলক এবং বিশ্লেষণমূলক নয়, অনেক ক্ষেত্রেই গতানুগতিক এবং নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে কারাবন্দী হয়ে আছে। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে সৃজনশীলতায় ঋদ্ধ হবেন এবং বিশ্বমানের নাগরিক হবেন, সেরকম চিন্তা-দর্শন সামনে রেখেই বোধকরি নরসিংদীর শিক্ষাঙ্গনসমূহের পথচলা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথটি কুসুমাস্তীর্ণ করা এবং সম্ভাবনাকে আরও আলোকোজ্জ্বল করার প্রয়োজন নরসিংদীতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষায় অগ্রগতি ও সম্ভাবনা সামনে রেখে নরসিংদীর প্রেক্ষাপটে একটি উদাহরণ: নরসিংদী জেলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষক সমিতির (নকশিস) আয়োজনে ড্রিম হলিডে পার্কে ২০১৭ সালে ১০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষক পরিবারের সদস্য একত্র হয়েছিলেন। সেটি নিছক পিকনিক বা আনন্দ উৎসব ছিল না। সেই মিলনমেলায় স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল—শিক্ষা সংস্কৃতি সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্বের চাষবাস নিশ্চিত সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের সাথে আমাদের বসবাস। যত দূর জানি, একটি জেলায় এতসংখ্যক শিক্ষকের মিলনমেলা এটিই প্রথম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দের কথায় উঠে এসেছে নরসিংদীর শিক্ষাদানের খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ, উঠে এসেছে আগামীর সমূহ সম্ভাবনার কথা। শিক্ষকদের মুখে মুখে ছিল নির্মল অঙ্গীকারের কথাও।
ইতিমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের দাবিদার বাংলাদেশ। হেনরি কিসিঞ্জারের শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে দ্য ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। সেই নিরিখে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ইতিহাস, ঐতিহ্যে অনন্য ধারাবাহী একটি জেলা নরসিংদী।
ড. মশিউর রহমান মৃধা, শিক্ষক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪