যতীন সরকার
দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ নামে একটি নতুন পত্রিকা বের হচ্ছে জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। খুশি হয়েছি এ কারণে, এত পত্রিকার ভিড়ে যখন আরেকটি পত্রিকা বের হচ্ছে, তার মানে এটা নিশ্চিত যে এই পত্রিকা অন্যরকম কিছু হবে। আমি আশা করি সেই অন্যরকমটা, মানে এটা জনগণের কথা বলবে। ইতিহাসে যেমন রাজ-রাজড়াদের কথা বেশি থাকে, তেমনি পত্রপত্রিকার মধ্যে নেতাদের কথা, রাজনীতিবিদদের কথা, ওপরতলার মানুষের কথাই বেশি থাকে। এটা ঠিক না। আমি মনে করি, নতুন পত্রিকা জনগণের কথা বলবে। জনগণের ভেতর থেকে যা উঠে আসে সেই কথা বলবে, কারণ এই জনগণই হচ্ছে আমাদের মূল সূত্র, মূল শক্তি। সাধারণ মানুষের অসাধারণ জীবনসংগ্রাম ও সাফল্যের কথা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনে মানুষ লোকজ জ্ঞানের প্রয়োগ করে কীভাবে বেঁচে থাকে, তার চিত্র যেন পাওয়া যায় আজকের পত্রিকায়।
রক্তের মূল্যে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীন দেশের সংবিধান রক্তের অক্ষরে লেখা। এই সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি, জনগণের এই মালিকানা নানাভাবে, নানা সময়ে ছিনতাই হয়ে গেছে কিংবা যাচ্ছে। প্রজাতন্ত্র তার চরিত্র ফিরে পাক, সেটার পক্ষে থাক আজকের পত্রিকা।
মোটাদাগে এটা বলা যায়, এখন প্রকৃতপক্ষে লুটেরা ধনিকদের হাতে অনেক কিছু চলে গেছে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই। কাজেই লুটেরা ধনিকদের বিরুদ্ধে একটা স্পষ্ট অবস্থান আমরা দেখতে চাই আজকের পত্রিকার পাতায়। লুটেরা ধনিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ মতামত থাকবে, তারা কী কী উপায়ে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে নিজেদের আখের গোছায়, তার তথ্য-উপাত্ত এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে, যাতে সব মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হয়, নিজেদের করণীয় ঠিক করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আজকের পত্রিকার অবস্থান স্পষ্ট এবং দৃঢ় হতে হবে। মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং সেই মূল্যবোধ ধরে রাখতে সচেষ্ট হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে তথ্যবহুল, যুক্তিযুক্ত খবরাখবর এবং খবর-ভাষ্য এই নতুন পত্রিকায় প্রকাশিত হবে বলে আমি সর্বতোভাবে বিশ্বাস করি।
বর্তমানে দেশে যে অবস্থা চলছে, তাতে আমার মনে হয় পাকিস্তানই যেন নতুন করে ফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এটাকে আমি বলি পাকিস্তানই যেন নতুন করে ভূত হয়ে আমাদের ঘাড়ে এসে চেপে বসেছে। কাজেই আমাদের এ ভূত তাড়াতে হবে, ভূতের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। ভূতের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া মানে, আমি কথাটা এভাবে বলতে চাই: বাংলাদেশকে পাকিস্তানীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করা, রাষ্ট্রধর্মের রাহুগ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখা, ধর্মরাষ্ট্রের প্রবক্তাদের অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করা। আমি মনে করি, এগুলোর মধ্য দিয়েই এই ভূতের আছর থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। এর মধ্য দিয়ে শুধু বাঙালি হওয়ার পথই কণ্টকমুক্ত হবে না, বাংলাদেশের বাঙালি ছাড়া আরও যেসব জাতিসত্তার মানুষ আছে, তাদেরও আপন আপন জাতিগত বিকাশের সুযোগ অবারিত হবে এবং তারাও দেশ-জাতির গণ্ডি অতিক্রমকারী মানুষ হয়ে উঠবে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি।’ আমাদের সবাইকে মানুষ হয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশের অধিবাসী ক্ষুদ্রতম জাতিও যদি মানুষ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তবে বাঙালিসহ কোনো জাতির কেউই প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না। আত্মসমালোচনার কষ্টিপাথরে নিজেদের যাচাই করে নিতে পারলে মানতে বাধ্য হব যে বাঙালি হিসেবে এতকাল আমরা কেবল নিজের পাতেই ঝোল ঢেলেছি। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর বিকশিত হওয়ার, অধিকারের কথা আমরা ভাবিইনি। না ভেবে আমরা ঘোর পাপ করেছি, সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাদের করতেই হবে। সব জাতিসত্তাকে একসঙ্গে মিলেই মানুষ হওয়ার পথের বাধাগুলো অপসারণ করাই হবে সেই প্রায়শ্চিত্ত। তবে সেই প্রায়শ্চিত্ত করা কি খুব সহজ? কঠিন অবশ্যই। তবে কঠিনকে ভালোবাসা ছাড়া উপায়ও নেই।
মানুষ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ক্ষুধা। প্রথমে দেহের ক্ষুধা, পরে মনের। দেহের ক্ষুধা আছে সব প্রাণীর, মনের ক্ষুধা কেবল প্রাণিকুলশ্রেষ্ঠ আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এমন অনেক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানবসন্তানই ক্ষুধাজর্জর। তাদের দেহ ধারণের মতো অন্নেরই সংস্থান নেই। দেহের ক্ষুধাই যাদের মেটে না, তারা কী করে প্রাণিত্বের বেড়া ডিঙিয়ে মানুষ হওয়ার চৌকাঠে এসে দাঁড়াবে এবং আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে উঠবে? সে কারণেই চাই ক্ষুধামুক্ত দেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে রত থাকার সময়েই আমরা ক্ষুধামুক্তির কথাটিকে মাথায় রেখেছিলাম, তাই যুদ্ধকালেই সবার ক্ষুধামুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছিলাম। যুদ্ধ শেষে রচিত সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে করেছিলাম রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রাষ্ট্রের অন্য স্তম্ভগুলোর মতো সমাজতন্ত্রকেও রক্ষা করতে পারিনি। দেশটির পুনঃ পাকিস্তানীকরণকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি। তার ফলেই মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে সরে গেছি। সেই অবস্থান থেকে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। শুধু পাকিস্তানীকরণ প্রতিহত করা নেতিবাচকতা নয়। প্রয়োজন মানুষ হওয়ার ইতিবাচক আদর্শ ও কর্মসূচি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গমাতার
কাছে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন: পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে/মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে/ হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি, তব গৃহক্রোড়ে/চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
বঙ্গমাতা সেই প্রার্থনা কোনো দিনই কর্ণপাত করবেন না, যদি না তাঁর সন্তানেরা নিজ উদ্যোগে মানুষ হওয়ার পণ গ্রহণ করে। যেসব বঙ্গসন্তান নিকট অতীতে বা দূর অতীতে সেরকম পণ গ্রহণ করে মানুষ হয়েছিলেন, তাঁদের কারও উত্তরাধিকারকেই হেলাফেলা করলে চলবে না। তাঁদের জ্বালানো আলোর মশাল হাতেই মানুষ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে। তাঁদের সবার মানুষ রূপটাকেই চোখের সামনে রাখতে হবে। কাউকেই ফেরেস্তায়ন বা শয়তানায়ন ঘটালে চলবে না।
‘আজকের পত্রিকা’র কাছে আমি তার সংবাদে, সংবাদ ভাষ্যে এই সমস্ত জিনিস প্রত্যাশা করি। আমি আরও কামনা করি, বর্তমানে যে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছে, এদের দাঁত ভেঙে দিতে হবে এবং ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে এই পত্রিকা একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আমি সর্বান্তকরণে আশা করি। আমি এই পত্রিকার সাফল্য কামনা করি।
(শ্রুতিলেখক-কিংশুক পার্থ)
যতীন সরকার, শিক্ষাবিদ
দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ নামে একটি নতুন পত্রিকা বের হচ্ছে জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। খুশি হয়েছি এ কারণে, এত পত্রিকার ভিড়ে যখন আরেকটি পত্রিকা বের হচ্ছে, তার মানে এটা নিশ্চিত যে এই পত্রিকা অন্যরকম কিছু হবে। আমি আশা করি সেই অন্যরকমটা, মানে এটা জনগণের কথা বলবে। ইতিহাসে যেমন রাজ-রাজড়াদের কথা বেশি থাকে, তেমনি পত্রপত্রিকার মধ্যে নেতাদের কথা, রাজনীতিবিদদের কথা, ওপরতলার মানুষের কথাই বেশি থাকে। এটা ঠিক না। আমি মনে করি, নতুন পত্রিকা জনগণের কথা বলবে। জনগণের ভেতর থেকে যা উঠে আসে সেই কথা বলবে, কারণ এই জনগণই হচ্ছে আমাদের মূল সূত্র, মূল শক্তি। সাধারণ মানুষের অসাধারণ জীবনসংগ্রাম ও সাফল্যের কথা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনে মানুষ লোকজ জ্ঞানের প্রয়োগ করে কীভাবে বেঁচে থাকে, তার চিত্র যেন পাওয়া যায় আজকের পত্রিকায়।
রক্তের মূল্যে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীন দেশের সংবিধান রক্তের অক্ষরে লেখা। এই সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি, জনগণের এই মালিকানা নানাভাবে, নানা সময়ে ছিনতাই হয়ে গেছে কিংবা যাচ্ছে। প্রজাতন্ত্র তার চরিত্র ফিরে পাক, সেটার পক্ষে থাক আজকের পত্রিকা।
মোটাদাগে এটা বলা যায়, এখন প্রকৃতপক্ষে লুটেরা ধনিকদের হাতে অনেক কিছু চলে গেছে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই। কাজেই লুটেরা ধনিকদের বিরুদ্ধে একটা স্পষ্ট অবস্থান আমরা দেখতে চাই আজকের পত্রিকার পাতায়। লুটেরা ধনিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ মতামত থাকবে, তারা কী কী উপায়ে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে নিজেদের আখের গোছায়, তার তথ্য-উপাত্ত এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে, যাতে সব মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হয়, নিজেদের করণীয় ঠিক করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আজকের পত্রিকার অবস্থান স্পষ্ট এবং দৃঢ় হতে হবে। মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং সেই মূল্যবোধ ধরে রাখতে সচেষ্ট হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে তথ্যবহুল, যুক্তিযুক্ত খবরাখবর এবং খবর-ভাষ্য এই নতুন পত্রিকায় প্রকাশিত হবে বলে আমি সর্বতোভাবে বিশ্বাস করি।
বর্তমানে দেশে যে অবস্থা চলছে, তাতে আমার মনে হয় পাকিস্তানই যেন নতুন করে ফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এটাকে আমি বলি পাকিস্তানই যেন নতুন করে ভূত হয়ে আমাদের ঘাড়ে এসে চেপে বসেছে। কাজেই আমাদের এ ভূত তাড়াতে হবে, ভূতের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। ভূতের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া মানে, আমি কথাটা এভাবে বলতে চাই: বাংলাদেশকে পাকিস্তানীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করা, রাষ্ট্রধর্মের রাহুগ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখা, ধর্মরাষ্ট্রের প্রবক্তাদের অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করা। আমি মনে করি, এগুলোর মধ্য দিয়েই এই ভূতের আছর থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। এর মধ্য দিয়ে শুধু বাঙালি হওয়ার পথই কণ্টকমুক্ত হবে না, বাংলাদেশের বাঙালি ছাড়া আরও যেসব জাতিসত্তার মানুষ আছে, তাদেরও আপন আপন জাতিগত বিকাশের সুযোগ অবারিত হবে এবং তারাও দেশ-জাতির গণ্ডি অতিক্রমকারী মানুষ হয়ে উঠবে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি।’ আমাদের সবাইকে মানুষ হয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশের অধিবাসী ক্ষুদ্রতম জাতিও যদি মানুষ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তবে বাঙালিসহ কোনো জাতির কেউই প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না। আত্মসমালোচনার কষ্টিপাথরে নিজেদের যাচাই করে নিতে পারলে মানতে বাধ্য হব যে বাঙালি হিসেবে এতকাল আমরা কেবল নিজের পাতেই ঝোল ঢেলেছি। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর বিকশিত হওয়ার, অধিকারের কথা আমরা ভাবিইনি। না ভেবে আমরা ঘোর পাপ করেছি, সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাদের করতেই হবে। সব জাতিসত্তাকে একসঙ্গে মিলেই মানুষ হওয়ার পথের বাধাগুলো অপসারণ করাই হবে সেই প্রায়শ্চিত্ত। তবে সেই প্রায়শ্চিত্ত করা কি খুব সহজ? কঠিন অবশ্যই। তবে কঠিনকে ভালোবাসা ছাড়া উপায়ও নেই।
মানুষ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ক্ষুধা। প্রথমে দেহের ক্ষুধা, পরে মনের। দেহের ক্ষুধা আছে সব প্রাণীর, মনের ক্ষুধা কেবল প্রাণিকুলশ্রেষ্ঠ আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এমন অনেক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানবসন্তানই ক্ষুধাজর্জর। তাদের দেহ ধারণের মতো অন্নেরই সংস্থান নেই। দেহের ক্ষুধাই যাদের মেটে না, তারা কী করে প্রাণিত্বের বেড়া ডিঙিয়ে মানুষ হওয়ার চৌকাঠে এসে দাঁড়াবে এবং আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে উঠবে? সে কারণেই চাই ক্ষুধামুক্ত দেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে রত থাকার সময়েই আমরা ক্ষুধামুক্তির কথাটিকে মাথায় রেখেছিলাম, তাই যুদ্ধকালেই সবার ক্ষুধামুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছিলাম। যুদ্ধ শেষে রচিত সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে করেছিলাম রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রাষ্ট্রের অন্য স্তম্ভগুলোর মতো সমাজতন্ত্রকেও রক্ষা করতে পারিনি। দেশটির পুনঃ পাকিস্তানীকরণকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি। তার ফলেই মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে সরে গেছি। সেই অবস্থান থেকে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। শুধু পাকিস্তানীকরণ প্রতিহত করা নেতিবাচকতা নয়। প্রয়োজন মানুষ হওয়ার ইতিবাচক আদর্শ ও কর্মসূচি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গমাতার
কাছে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন: পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে/মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে/ হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি, তব গৃহক্রোড়ে/চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
বঙ্গমাতা সেই প্রার্থনা কোনো দিনই কর্ণপাত করবেন না, যদি না তাঁর সন্তানেরা নিজ উদ্যোগে মানুষ হওয়ার পণ গ্রহণ করে। যেসব বঙ্গসন্তান নিকট অতীতে বা দূর অতীতে সেরকম পণ গ্রহণ করে মানুষ হয়েছিলেন, তাঁদের কারও উত্তরাধিকারকেই হেলাফেলা করলে চলবে না। তাঁদের জ্বালানো আলোর মশাল হাতেই মানুষ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে। তাঁদের সবার মানুষ রূপটাকেই চোখের সামনে রাখতে হবে। কাউকেই ফেরেস্তায়ন বা শয়তানায়ন ঘটালে চলবে না।
‘আজকের পত্রিকা’র কাছে আমি তার সংবাদে, সংবাদ ভাষ্যে এই সমস্ত জিনিস প্রত্যাশা করি। আমি আরও কামনা করি, বর্তমানে যে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছে, এদের দাঁত ভেঙে দিতে হবে এবং ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে এই পত্রিকা একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আমি সর্বান্তকরণে আশা করি। আমি এই পত্রিকার সাফল্য কামনা করি।
(শ্রুতিলেখক-কিংশুক পার্থ)
যতীন সরকার, শিক্ষাবিদ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪