ড. রউফুল আলম
বিশ্বায়নের এই যুগে, জাতীয় মানের তরুণ সম্পদ নিয়ে ভাবার কাল শেষ হয়ে এসেছে। এখন ভাবতে হচ্ছে বিশ্বমানের তারুণ্য নিয়ে। জ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের পৃথিবীতে বিশ্বমানের কারিগর চাই। বিশ্বমানের দক্ষ মানুষ চাই। পৃথিবীর যেসব দেশ এখন আবিষ্কার-উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা অনেক আগে থেকেই বিশ্বমানের তারুণ্য গড়ে তোলার প্রয়াসে কাজ করছে।
বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে আছে অফুরান সম্ভাবনা। আমাদের তরুণেরা বিদেশে ভালো করছে। আবিষ্কার-উদ্ভাবনে অবদান রাখছে। দুনিয়ার এমন কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নেই। অনেক বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, গবেষণা করছেন। অনেকে বিভিন্ন শিল্পে ও গবেষণাগারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। এই যে বাংলাদেশিদের জয়যাত্রা, এটা আশাজাগানিয়া। এটা অনুপ্রেরণার। অনুগামীদের জন্য সাহসের। এটা প্রমাণ করে, আমাদের তরুণদের সুযোগ দিলে, কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিলে নিজ সমাজে বসেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য রাখবে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান কাজ করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পার্টিকেল ফিজিকসের একজন জগৎখ্যাত গবেষক তিনি। তাঁর গবেষণাক্ষেত্রে তিনি বড় অবদান রাখছেন। সাইফ ইসলাম কাজ করছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিসে। সেখানের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্বমানের গবেষণা করছেন। সাইফ সালাউদ্দিন পড়াচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলে ক্যাম্পাসে। এমন বহু বাংলাদেশির নাম এখন বলা যায়। শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি চীন-জাপানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষক, গবেষক কাজ করছেন।
বাংলাদেশের তরুণেরা পৃথিবীতে বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে গত দশক থেকে। ২০০৯-১০ সময়টা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। গত দশকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমার ধারণা, চলতি দশকে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে চার–পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তারা অ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পড়বে। অ্যাস্ট্রোনমি, পার্টিকেল ফিজিকস, জেনেটিকস পড়বে। ইকোনমিকস, ল্যাঙ্গুয়েজ, জার্নালিজম পড়বে। এমন বহু ক্ষেত্রে বিশ্বমানের একটা দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, যারা সবাই আমাদের। এই শিক্ষার্থীদের একটা অংশ দেশে ফিরবেই। দেশে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তারা ফিরবে। আর যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আগামী দশকে এটার একটা দৃশ্যমান প্রভাব সমাজে পড়বে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য গত ১০ বছরে শুধু চীন থেকেই প্রায় ৩০ লাখ ছেলে-মেয়ে পাড়ি জমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অবিশ্বাস্য! ভারত থেকে গেছে প্রায় ১৫ লাখ। লক্ষ করা গেছে, গত তিন-চার বছর ধরে এ দুটো দেশ থেকে সমহারে শিক্ষার্থী আসছে। আগের মতো আর বাড়ছে না। অন্যদিকে, কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীরা এখন কম আসছে। যেমন—দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান উল্লেখযোগ্য। এর কারণ হলো, গত ২০–৩০ বছরে চীন, ভারত কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রচুর ছেলে-মেয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে। সেসব দেশ তাদের মেধাবীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। ওই দেশগুলোতে এখন বিশ্বমানের গবেষণা সম্ভব। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আর গবেষণার জন্য নিজের দেশ ছাড়ছে না।
দেং শিয়াও পিংকে অনেকেই আধুনিক চীনের স্থপতি মনে করেন। তিনি গত আশির দশকে চীনকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক খোলামেলা করে দিয়েছিলেন। অনেকেই তখন তাঁকে বলেছিলেন, চীন থেকে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আরও ছেলে-মেয়ের বিদেশে যাওয়া উচিত। এক হাজার থেকে যদি একজনও ফিরে আসে, তাহলেই যথেষ্ট! আজকের চীন-ভারত কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার যে বিকাশ, সেটার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে গত চার-পাঁচ দশকে সেসব দেশ ছেড়ে ছড়িয়ে পড়া ছেলে-মেয়েরা। সেসব দেশে একধরনের ‘সেচুরেশন’ তৈরি হয়েছে। চীন তার মেধাবীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চালু করেছে ‘সহস্র মেধাবী প্রকল্প’। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়োগের জন্য সেরা শিক্ষার্থীদের বেছে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সেসব দেশে বিশ্বমানের তরুণ গড়ে তোলার সংস্কৃতি ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে প্রায় ২৩ লাখ কলেজ গ্র্যাজুয়েট ইমিগ্রান্ট আমেরিকায় এসেছে। তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ভারত থেকে আসা। চীন থেকে এসেছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে এসেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু ২০১৯ সালে যতগুলো H-1B ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, তার ৭২ শতাংশ ভারতীয়রা পেয়েছে। ভারতীয়দের শক্তিটা হলো শিক্ষা। চীনাদের শক্তিও হলো শিক্ষা। এই শিক্ষা দিয়ে তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা দুনিয়ায় রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। গোটা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়ছে। ওরা ওদের শিক্ষাকে শক্তভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। ক্রমাগত করে যাচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই। ভারতের ইউনিভার্সিটি বা রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি করে বহু ছেলে-মেয়ে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করার জন্য যেতে পারে। এটা মূলত সেদেশের গবেষণার মান কতটা ওপরে তার ইঙ্গিত করে।
আমাদের তরুণদের মধ্যে আছে স্পৃহা। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস। তাদের ইচ্ছাশক্তিতে আছে জয়ের নেশা। আর এ জন্যই ওরা পৃথিবীর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে। সেই প্রতিযোগিতায় অনেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অদম্য ছেলে-মেয়েদের যদি আমরা আরেকটু ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি, পড়াশোনার জন্য আর একটু ভালো পরিবেশ দিতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ থেকে আরও অনেক শিক্ষার্থী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। ওদের সংগ্রামটা আর একটু সহজ হবে। ওরাই হয়ে যাবে একেকটা দূত! ওরাই বাংলাদেশে আবিষ্কার-উদ্ভাবনের নতুন সংস্কৃতি চালু করবে। ওদের হাত দিয়েই বাংলাদেশ পাবে এক নতুন পরিচয়!
আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের করার জন্য কাজ করতে হবে। গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশি মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যিকারের লাইট হাউসে রূপ দিতে হবে। দেশেই কী করে ধীরে ধীরে বিশ্বমানের গবেষণা করা যায়, গবেষক তৈরি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। একুশ শতকে এসে শুধু ব্রেন ড্রেন বা মেধা পাচারের কথা না বলে কী করে ব্রেন গেইন বা মেধা অর্জন করা যায়, সেভাবে কাজ করতে হবে। যে দেশে বিশ্বমানের তরুণ সম্পদ আছে, সেই দেশ কিন্তু পৃথিবীতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশ সেই বিশ্বমানের তরুণদের হাত ধরেই নতুন পথে নতুন পরিচয়ে এগিয়ে যাবে। এটাই বিশ্বাস করি।
ড. রউফুল আলম: সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, পিটিসি থেরাপিউটিকস, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বায়নের এই যুগে, জাতীয় মানের তরুণ সম্পদ নিয়ে ভাবার কাল শেষ হয়ে এসেছে। এখন ভাবতে হচ্ছে বিশ্বমানের তারুণ্য নিয়ে। জ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের পৃথিবীতে বিশ্বমানের কারিগর চাই। বিশ্বমানের দক্ষ মানুষ চাই। পৃথিবীর যেসব দেশ এখন আবিষ্কার-উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা অনেক আগে থেকেই বিশ্বমানের তারুণ্য গড়ে তোলার প্রয়াসে কাজ করছে।
বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে আছে অফুরান সম্ভাবনা। আমাদের তরুণেরা বিদেশে ভালো করছে। আবিষ্কার-উদ্ভাবনে অবদান রাখছে। দুনিয়ার এমন কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নেই। অনেক বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, গবেষণা করছেন। অনেকে বিভিন্ন শিল্পে ও গবেষণাগারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। এই যে বাংলাদেশিদের জয়যাত্রা, এটা আশাজাগানিয়া। এটা অনুপ্রেরণার। অনুগামীদের জন্য সাহসের। এটা প্রমাণ করে, আমাদের তরুণদের সুযোগ দিলে, কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিলে নিজ সমাজে বসেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য রাখবে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান কাজ করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পার্টিকেল ফিজিকসের একজন জগৎখ্যাত গবেষক তিনি। তাঁর গবেষণাক্ষেত্রে তিনি বড় অবদান রাখছেন। সাইফ ইসলাম কাজ করছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিসে। সেখানের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্বমানের গবেষণা করছেন। সাইফ সালাউদ্দিন পড়াচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলে ক্যাম্পাসে। এমন বহু বাংলাদেশির নাম এখন বলা যায়। শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি চীন-জাপানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষক, গবেষক কাজ করছেন।
বাংলাদেশের তরুণেরা পৃথিবীতে বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে গত দশক থেকে। ২০০৯-১০ সময়টা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। গত দশকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমার ধারণা, চলতি দশকে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে চার–পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তারা অ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পড়বে। অ্যাস্ট্রোনমি, পার্টিকেল ফিজিকস, জেনেটিকস পড়বে। ইকোনমিকস, ল্যাঙ্গুয়েজ, জার্নালিজম পড়বে। এমন বহু ক্ষেত্রে বিশ্বমানের একটা দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, যারা সবাই আমাদের। এই শিক্ষার্থীদের একটা অংশ দেশে ফিরবেই। দেশে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তারা ফিরবে। আর যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আগামী দশকে এটার একটা দৃশ্যমান প্রভাব সমাজে পড়বে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য গত ১০ বছরে শুধু চীন থেকেই প্রায় ৩০ লাখ ছেলে-মেয়ে পাড়ি জমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অবিশ্বাস্য! ভারত থেকে গেছে প্রায় ১৫ লাখ। লক্ষ করা গেছে, গত তিন-চার বছর ধরে এ দুটো দেশ থেকে সমহারে শিক্ষার্থী আসছে। আগের মতো আর বাড়ছে না। অন্যদিকে, কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীরা এখন কম আসছে। যেমন—দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান উল্লেখযোগ্য। এর কারণ হলো, গত ২০–৩০ বছরে চীন, ভারত কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রচুর ছেলে-মেয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে। সেসব দেশ তাদের মেধাবীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। ওই দেশগুলোতে এখন বিশ্বমানের গবেষণা সম্ভব। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আর গবেষণার জন্য নিজের দেশ ছাড়ছে না।
দেং শিয়াও পিংকে অনেকেই আধুনিক চীনের স্থপতি মনে করেন। তিনি গত আশির দশকে চীনকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক খোলামেলা করে দিয়েছিলেন। অনেকেই তখন তাঁকে বলেছিলেন, চীন থেকে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আরও ছেলে-মেয়ের বিদেশে যাওয়া উচিত। এক হাজার থেকে যদি একজনও ফিরে আসে, তাহলেই যথেষ্ট! আজকের চীন-ভারত কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার যে বিকাশ, সেটার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে গত চার-পাঁচ দশকে সেসব দেশ ছেড়ে ছড়িয়ে পড়া ছেলে-মেয়েরা। সেসব দেশে একধরনের ‘সেচুরেশন’ তৈরি হয়েছে। চীন তার মেধাবীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চালু করেছে ‘সহস্র মেধাবী প্রকল্প’। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়োগের জন্য সেরা শিক্ষার্থীদের বেছে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সেসব দেশে বিশ্বমানের তরুণ গড়ে তোলার সংস্কৃতি ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে প্রায় ২৩ লাখ কলেজ গ্র্যাজুয়েট ইমিগ্রান্ট আমেরিকায় এসেছে। তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ভারত থেকে আসা। চীন থেকে এসেছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে এসেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু ২০১৯ সালে যতগুলো H-1B ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, তার ৭২ শতাংশ ভারতীয়রা পেয়েছে। ভারতীয়দের শক্তিটা হলো শিক্ষা। চীনাদের শক্তিও হলো শিক্ষা। এই শিক্ষা দিয়ে তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা দুনিয়ায় রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। গোটা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়ছে। ওরা ওদের শিক্ষাকে শক্তভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। ক্রমাগত করে যাচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই। ভারতের ইউনিভার্সিটি বা রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি করে বহু ছেলে-মেয়ে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করার জন্য যেতে পারে। এটা মূলত সেদেশের গবেষণার মান কতটা ওপরে তার ইঙ্গিত করে।
আমাদের তরুণদের মধ্যে আছে স্পৃহা। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস। তাদের ইচ্ছাশক্তিতে আছে জয়ের নেশা। আর এ জন্যই ওরা পৃথিবীর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে। সেই প্রতিযোগিতায় অনেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অদম্য ছেলে-মেয়েদের যদি আমরা আরেকটু ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি, পড়াশোনার জন্য আর একটু ভালো পরিবেশ দিতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ থেকে আরও অনেক শিক্ষার্থী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। ওদের সংগ্রামটা আর একটু সহজ হবে। ওরাই হয়ে যাবে একেকটা দূত! ওরাই বাংলাদেশে আবিষ্কার-উদ্ভাবনের নতুন সংস্কৃতি চালু করবে। ওদের হাত দিয়েই বাংলাদেশ পাবে এক নতুন পরিচয়!
আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের করার জন্য কাজ করতে হবে। গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশি মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যিকারের লাইট হাউসে রূপ দিতে হবে। দেশেই কী করে ধীরে ধীরে বিশ্বমানের গবেষণা করা যায়, গবেষক তৈরি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। একুশ শতকে এসে শুধু ব্রেন ড্রেন বা মেধা পাচারের কথা না বলে কী করে ব্রেন গেইন বা মেধা অর্জন করা যায়, সেভাবে কাজ করতে হবে। যে দেশে বিশ্বমানের তরুণ সম্পদ আছে, সেই দেশ কিন্তু পৃথিবীতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশ সেই বিশ্বমানের তরুণদের হাত ধরেই নতুন পথে নতুন পরিচয়ে এগিয়ে যাবে। এটাই বিশ্বাস করি।
ড. রউফুল আলম: সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, পিটিসি থেরাপিউটিকস, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪