রাজীব হাসান
‘খিদা নাগছে বাহে…।’
ক্ষীণ হয়ে আসা জীবনীশক্তির সবটুকু জড়ো করে আর্তনাদ করে উঠল কেউ।
কা-কা-কা-কা।
আকাশে ডানা ঝাপটায় কাকের দল।
‘ভাত দ্যাও বাহে…।’
তরকারিও নয়; শুধু এক থালা সাদা ভাতের জন্য নিরন্নের আর্তচিৎকার।
কা-কা-কা-কা।
আকাশে কোরাস তুলল কাকের দল।
দুই.
রংপুরে থাকার সময় বিকন নাট্যকেন্দ্র করতাম যখন, সে সময়ের খুব প্রিয় মঞ্চনাটক তামাশার শুরুর দৃশ্য ছিল এটি। ‘মঙ্গা’ শব্দটি তখনো রংপুরের গায়ে লেপটে আছে জোঁকের মতো। নিদারুণ অভাবের যন্ত্রণা আমি নিজে অনুভব করেছি। পেটে দুরন্ত খিদে নিয়ে জ্বলন্ত চুলোর পাশে বসে অপেক্ষা করেছি একটা রুটির জন্য।
সেই রংপুর ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সবুজবিপ্লব ঘটে গেছে। শেওলা জমা জোঁক খসে পড়ে গেছে রংপুরের গা থেকে। যে তিস্তার চরে গেলে নদীভাঙা মানুষের আর্তনাদ শোনা যেত, সেখানে ঝিরঝিরে বাতাসে দোল খায় শস্য-সবুজ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাবী জায়গাগুলোর মধ্যেই ছিল রংপুর। সেটাও খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো, নব্বইয়ের দশকেও। বাংলাদেশ বদলেছে, বদলেছে রংপুর। শহর থেকে মাত্র ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরত্বে আমার দাদাবাড়ি যেতে মুড়ির টিনের লক্কড়ঝক্কড়ে দুই-আড়াই ঘণ্টা লেগে যেত। মাটির তৈরি ঘর, সকাল হলে বদনা হাতে ঝোপ-জঙ্গলে ছুট, রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে আজ পাকা রাস্তা, পাকা বাড়ি, বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানি।
বাংলাদেশ আজ ঋণ দিতে চায় শ্রীলঙ্কাকে। আর কিছুদিন গেলে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে হাত পাততে হবে—এমনটা বলছেন পাকিস্তানেরই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। গর্বে কার না বুক ভরে যায়! আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
কিন্তু…!
হ্যাঁ, একটা ‘কিন্তু’ আছে। বড় ‘কিন্তু’। উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়নের ব্রজবুলিতে আমাদের দৃষ্টিসীমা সীমিত হয়ে যাচ্ছে কি? বাংলাদেশ কি ‘উন্নত’ দেশ হতে চায়, নাকি ‘বড়লোক’ দেশ? সৌদি আরব নিঃসন্দেহে বড়লোক একটা দেশ। কিন্তু সেই দেশকে কেউ উন্নত দেশ বলবে কি? নৈতিকতা, মানবিকতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে উন্নয়নের বটিকা কে গিলতে চায়? আদর্শহীন একটা সমাজ; সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় ভোগা একদল লোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ; ভেতরে-ভেতরে ঘুণপোকায় খেয়ে যাওয়া মূল্যবোধ…এমন দেশই কি আমরা চাই?
তিন.
ছোটবেলায় আমাদের রংপুরের শাপলা চত্বরের বাজারে একটাই মাংসের দোকান দেখতাম। তা-ও সপ্তাহে কয়েকটা দিনে মাংস বিক্রি হতো। নব্বইয়ের দশকেও মাংস কেনা ছিল বিলাসিতা। বিশেষ বিশেষ দিনেই কেনা হতো।
এখন আমাদের খাবারের পাতে মাছ-মাংস নিত্যকার পদ। আগে অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাছে নতুন জামা মানে ছিল দুই ঈদ বা বড় কোনো উৎসব-উপলক্ষ। আমরা নিজেরা এক শার্ট দুই ভাই মিলে পরেছি। আমাদের পুরো পরিবারে ভদ্রগোছের স্যান্ডেল ছিল এক জোড়া। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছবিটা ছিল এ রকম।
পাড়া বা গ্রামে হাতে গোনা কয়েকজনের বাড়িতে টিভি থাকত। সেই ১৪ ইঞ্চি সাদা–কালো টিভির সামনেই ম্যাকগাইভার–আলিফ লায়লা দেখার দিন ভিড় জমে যেত। বাঁশের আগায় লাগানো থাকত অ্যানটেনা। কারও কারও বাড়িতে অ্যানটেনার মাথায় ভাঙা ঝাড়ু, কুনজর এড়াতেই হয়তো। সেই টিভিটাই যে ছিল একটা পরিবারের সবচেয়ে দামি সম্পদ।
এখন অনেক পরিবারে একাধিক টিভি। আগে পুরো পাড়া বা গ্রামের মানুষ একসঙ্গে একটা টিভিতে মিলেমিশে দেখত। এখন এক পরিবারের সবারই একসঙ্গে বসার সৌভাগ্য হয় না, সেটা টিভির সামনেই হোক বা খাবার টেবিলে। আমরা আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছ থেকেই দূরে সরে যাচ্ছি। এক ঘরে মা অসুখে কাতর, অন্য ঘরে ছেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যস্ত: ‘গাইজ, মম ইজ সিক। প্লিজ প্রে ফর হার।’
ক্লাস ফাইভপড়ুয়ারাও এখন ভয়াবহ মাদকের নেশার কবলে। এলএসডি নামের ভয়ংকর মাদক থাবা গেড়েছে। তার চেয়ে ভয়ংকর, এই অপরাধী তরুণদের ওপরে ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছে স্টকহোম সিনড্রোমে আক্রান্ত একদল তরুণী!
আগে একটা ফাঁসি বা খুনের ঘটনা ঘটলে পত্রিকায় প্রথম পাতায় বড় শিরোনাম হতো, মনে আছে গান দিয়ে গল্প বলার ঢঙে ক্যাসেটও বেরোত। এখন এসব এত নিত্যকার ঘটনা, কেউ গা করে না। রোজ কত কত খুন, ধর্ষণ, হত্যা, রক্তপাত হয়।
ভেতরে-ভেতরে সবকিছুতে ঘুণ ধরেছে। একে একে আমাদের সব সামাজিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জ্ঞানের আলো কিংবা মূল্যবোধের চর্চার বদলে ল্যাং মেরে সাফল্যের মই বেয়ে পইপই করে ওপরে ওঠার মানসিকতার চর্চা। আর আমরা ২০-৩০ হাজার জিপিএ-৫ নিয়ে খুশিতে ডগমগ। মাথাপিছু ২ হাজার ডলারেরও বেশি আয়, ৭ শতাংশ জিডিপি, মধ্যম আয়ের দেশ, ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের বগল বাজাচ্ছি।
কোয়ান্টিটির সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে কোয়ালিটি। অথচ কেউ বলছে না, সুখে থাকার মাপকাঠি ৫৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিংবা পকেটের দামি স্মার্টফোন কখনোই হতে পারে না। কেউ বলছে না, আমরা পদ্মা সেতু চাই, আমার কংক্রিটের মতো দৃঢ় সততাপূর্ণ একটা সমাজও চাই। আমাদের নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রয়োজন, আমাদের আলোর মানুষদেরও প্রয়োজন। উন্নয়ন মানে শুধু মেট্রোরেল না; উন্নয়ন মানে চির উন্নত মম শির। করোনাভাইরাসের আগেই আমাদের প্রায় সবার শরীরে ঢুকে গেছে ভোগবাদিতার ভাইরাস। আরও চাই, আরও আরও আরও।
চার.
আমাদের ১৪ ইঞ্চি সাদা-কালো টিভির দিনগুলোই কি তবে ভালো ছিল? তখন রংপুর থেকে একটা চিঠি পাঠালে দিনাজপুরে আমার নানার বাড়িতে পৌঁছাতে ১৪ দিন লেগে যেত।
এখন একমুহূর্তে আমার মেসেজ চলে যায় আমেরিকায়, ইউরোপে। প্রতিদিন ৪৫ বিলিয়ন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠানোর এই সময়েই আমরা সবচেয়ে বেশি একা, নিঃসঙ্গ।
স্মাইলি, ইমোটিকোনের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সত্যিকারের কান্না আর আবেগ। ফেসবুকে আমাদের ৫ হাজার ফ্রেন্ড, কিন্তু সত্যিকারের জীবনে ৫ জন বন্ধুও খুঁজে পাওয়া কী কঠিন!
এখন আমাদের সব আছে, কেবল ভালো থাকার অনুভূতিটাই নেই! আমাদের সাদা-কালো টিভির সঙ্গে আমাদের সুখ আর শান্তি, অল্পতেই খুশি থাকার সাদা-কালো দিনগুলোও হারিয়ে গেছে।
হিরে-জহরতে ঠাসা অসুখী রাজার চেয়ে জামা-না-থাকা সুখী মানুষটাই যে ভালো!
রাজীব হাসান
ঔপন্যাসিক
‘খিদা নাগছে বাহে…।’
ক্ষীণ হয়ে আসা জীবনীশক্তির সবটুকু জড়ো করে আর্তনাদ করে উঠল কেউ।
কা-কা-কা-কা।
আকাশে ডানা ঝাপটায় কাকের দল।
‘ভাত দ্যাও বাহে…।’
তরকারিও নয়; শুধু এক থালা সাদা ভাতের জন্য নিরন্নের আর্তচিৎকার।
কা-কা-কা-কা।
আকাশে কোরাস তুলল কাকের দল।
দুই.
রংপুরে থাকার সময় বিকন নাট্যকেন্দ্র করতাম যখন, সে সময়ের খুব প্রিয় মঞ্চনাটক তামাশার শুরুর দৃশ্য ছিল এটি। ‘মঙ্গা’ শব্দটি তখনো রংপুরের গায়ে লেপটে আছে জোঁকের মতো। নিদারুণ অভাবের যন্ত্রণা আমি নিজে অনুভব করেছি। পেটে দুরন্ত খিদে নিয়ে জ্বলন্ত চুলোর পাশে বসে অপেক্ষা করেছি একটা রুটির জন্য।
সেই রংপুর ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সবুজবিপ্লব ঘটে গেছে। শেওলা জমা জোঁক খসে পড়ে গেছে রংপুরের গা থেকে। যে তিস্তার চরে গেলে নদীভাঙা মানুষের আর্তনাদ শোনা যেত, সেখানে ঝিরঝিরে বাতাসে দোল খায় শস্য-সবুজ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাবী জায়গাগুলোর মধ্যেই ছিল রংপুর। সেটাও খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো, নব্বইয়ের দশকেও। বাংলাদেশ বদলেছে, বদলেছে রংপুর। শহর থেকে মাত্র ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরত্বে আমার দাদাবাড়ি যেতে মুড়ির টিনের লক্কড়ঝক্কড়ে দুই-আড়াই ঘণ্টা লেগে যেত। মাটির তৈরি ঘর, সকাল হলে বদনা হাতে ঝোপ-জঙ্গলে ছুট, রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে আজ পাকা রাস্তা, পাকা বাড়ি, বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানি।
বাংলাদেশ আজ ঋণ দিতে চায় শ্রীলঙ্কাকে। আর কিছুদিন গেলে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে হাত পাততে হবে—এমনটা বলছেন পাকিস্তানেরই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। গর্বে কার না বুক ভরে যায়! আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
কিন্তু…!
হ্যাঁ, একটা ‘কিন্তু’ আছে। বড় ‘কিন্তু’। উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়নের ব্রজবুলিতে আমাদের দৃষ্টিসীমা সীমিত হয়ে যাচ্ছে কি? বাংলাদেশ কি ‘উন্নত’ দেশ হতে চায়, নাকি ‘বড়লোক’ দেশ? সৌদি আরব নিঃসন্দেহে বড়লোক একটা দেশ। কিন্তু সেই দেশকে কেউ উন্নত দেশ বলবে কি? নৈতিকতা, মানবিকতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে উন্নয়নের বটিকা কে গিলতে চায়? আদর্শহীন একটা সমাজ; সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় ভোগা একদল লোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ; ভেতরে-ভেতরে ঘুণপোকায় খেয়ে যাওয়া মূল্যবোধ…এমন দেশই কি আমরা চাই?
তিন.
ছোটবেলায় আমাদের রংপুরের শাপলা চত্বরের বাজারে একটাই মাংসের দোকান দেখতাম। তা-ও সপ্তাহে কয়েকটা দিনে মাংস বিক্রি হতো। নব্বইয়ের দশকেও মাংস কেনা ছিল বিলাসিতা। বিশেষ বিশেষ দিনেই কেনা হতো।
এখন আমাদের খাবারের পাতে মাছ-মাংস নিত্যকার পদ। আগে অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাছে নতুন জামা মানে ছিল দুই ঈদ বা বড় কোনো উৎসব-উপলক্ষ। আমরা নিজেরা এক শার্ট দুই ভাই মিলে পরেছি। আমাদের পুরো পরিবারে ভদ্রগোছের স্যান্ডেল ছিল এক জোড়া। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছবিটা ছিল এ রকম।
পাড়া বা গ্রামে হাতে গোনা কয়েকজনের বাড়িতে টিভি থাকত। সেই ১৪ ইঞ্চি সাদা–কালো টিভির সামনেই ম্যাকগাইভার–আলিফ লায়লা দেখার দিন ভিড় জমে যেত। বাঁশের আগায় লাগানো থাকত অ্যানটেনা। কারও কারও বাড়িতে অ্যানটেনার মাথায় ভাঙা ঝাড়ু, কুনজর এড়াতেই হয়তো। সেই টিভিটাই যে ছিল একটা পরিবারের সবচেয়ে দামি সম্পদ।
এখন অনেক পরিবারে একাধিক টিভি। আগে পুরো পাড়া বা গ্রামের মানুষ একসঙ্গে একটা টিভিতে মিলেমিশে দেখত। এখন এক পরিবারের সবারই একসঙ্গে বসার সৌভাগ্য হয় না, সেটা টিভির সামনেই হোক বা খাবার টেবিলে। আমরা আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছ থেকেই দূরে সরে যাচ্ছি। এক ঘরে মা অসুখে কাতর, অন্য ঘরে ছেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যস্ত: ‘গাইজ, মম ইজ সিক। প্লিজ প্রে ফর হার।’
ক্লাস ফাইভপড়ুয়ারাও এখন ভয়াবহ মাদকের নেশার কবলে। এলএসডি নামের ভয়ংকর মাদক থাবা গেড়েছে। তার চেয়ে ভয়ংকর, এই অপরাধী তরুণদের ওপরে ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছে স্টকহোম সিনড্রোমে আক্রান্ত একদল তরুণী!
আগে একটা ফাঁসি বা খুনের ঘটনা ঘটলে পত্রিকায় প্রথম পাতায় বড় শিরোনাম হতো, মনে আছে গান দিয়ে গল্প বলার ঢঙে ক্যাসেটও বেরোত। এখন এসব এত নিত্যকার ঘটনা, কেউ গা করে না। রোজ কত কত খুন, ধর্ষণ, হত্যা, রক্তপাত হয়।
ভেতরে-ভেতরে সবকিছুতে ঘুণ ধরেছে। একে একে আমাদের সব সামাজিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জ্ঞানের আলো কিংবা মূল্যবোধের চর্চার বদলে ল্যাং মেরে সাফল্যের মই বেয়ে পইপই করে ওপরে ওঠার মানসিকতার চর্চা। আর আমরা ২০-৩০ হাজার জিপিএ-৫ নিয়ে খুশিতে ডগমগ। মাথাপিছু ২ হাজার ডলারেরও বেশি আয়, ৭ শতাংশ জিডিপি, মধ্যম আয়ের দেশ, ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের বগল বাজাচ্ছি।
কোয়ান্টিটির সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে কোয়ালিটি। অথচ কেউ বলছে না, সুখে থাকার মাপকাঠি ৫৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিংবা পকেটের দামি স্মার্টফোন কখনোই হতে পারে না। কেউ বলছে না, আমরা পদ্মা সেতু চাই, আমার কংক্রিটের মতো দৃঢ় সততাপূর্ণ একটা সমাজও চাই। আমাদের নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রয়োজন, আমাদের আলোর মানুষদেরও প্রয়োজন। উন্নয়ন মানে শুধু মেট্রোরেল না; উন্নয়ন মানে চির উন্নত মম শির। করোনাভাইরাসের আগেই আমাদের প্রায় সবার শরীরে ঢুকে গেছে ভোগবাদিতার ভাইরাস। আরও চাই, আরও আরও আরও।
চার.
আমাদের ১৪ ইঞ্চি সাদা-কালো টিভির দিনগুলোই কি তবে ভালো ছিল? তখন রংপুর থেকে একটা চিঠি পাঠালে দিনাজপুরে আমার নানার বাড়িতে পৌঁছাতে ১৪ দিন লেগে যেত।
এখন একমুহূর্তে আমার মেসেজ চলে যায় আমেরিকায়, ইউরোপে। প্রতিদিন ৪৫ বিলিয়ন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠানোর এই সময়েই আমরা সবচেয়ে বেশি একা, নিঃসঙ্গ।
স্মাইলি, ইমোটিকোনের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সত্যিকারের কান্না আর আবেগ। ফেসবুকে আমাদের ৫ হাজার ফ্রেন্ড, কিন্তু সত্যিকারের জীবনে ৫ জন বন্ধুও খুঁজে পাওয়া কী কঠিন!
এখন আমাদের সব আছে, কেবল ভালো থাকার অনুভূতিটাই নেই! আমাদের সাদা-কালো টিভির সঙ্গে আমাদের সুখ আর শান্তি, অল্পতেই খুশি থাকার সাদা-কালো দিনগুলোও হারিয়ে গেছে।
হিরে-জহরতে ঠাসা অসুখী রাজার চেয়ে জামা-না-থাকা সুখী মানুষটাই যে ভালো!
রাজীব হাসান
ঔপন্যাসিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪