মোস্তাফা জব্বার
যদি বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকেই একটি ডিজিটাল সরকার গড়ে তুলতে কোনো পর্যায়েই প্রচেষ্টার কমতি রাখা হয়নি, তবে ভুল বলা হবে না। একসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এটুআই নিরলসভাবে সরকারের সর্বাঙ্গ ডিজিটাল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির জন্মের পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত দেওয়া থেকে অংশ নেওয়া–কোনোটাতেই আমি পিছিয়ে ছিলাম না। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এক মাস বিরতি ছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে পারি, অন্তত ২০০৯ সাল থেকে সরকার তার সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল করার জন্য তার পক্ষে সম্ভব সব কাজই করেছে। এই করোনাকালে সরকারি অফিসগুলো সবচেয়ে বড় যে সমর্থনটা পেয়েছে, সেটি হচ্ছে ই-নথি। ২০২০ সালে সরকারের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ই–নথির সহায়তায় কাগজের জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে যখন আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিই, তখন আমার কাছে ৯৫ ভাগ হাতে লেখা ফাইল আসত। এখন কাগজের কোনো ফাইল আসে না। এর ফলে করোনাকালে ঘরে বসে আমার বিভাগের সব কাজ করতে পেরেছি। আমার হাতে একটি ফাইলও পেন্ডিং নেই। সংগত কারণেই কাগজের ব্যাকআপ থাকলেও সরকারের সব ডেটা ডিজিটাল হতে বাধ্য হয়েছে। চিঠিপত্র থেকে ফাইলের নোট, সবই ডিজিটাল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টসহ সব কাজেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা পৌঁছানোর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। প্রণোদনা ভাতা, উপবৃত্তি, বৃত্তিসহ অসংখ্য অর্থ বিতরণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়েছে এবং প্রতিদিনই তার পরিমাণ বাড়ছে।
অন্যদিকে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমরা আমাদের ক্লাসরুম সেভাবে ডিজিটাল করতে পারিনি। প্রাথমিক স্তর ছাড়া অন্য পর্যায়ে ডিজিটাল কনটেন্ট দিতে পারিনি আমরা। আমাদের পাঠক্রম বদলায়নি, পাঠদানপদ্ধতিও বদলায়নি। দেশের সব শিক্ষককে ডিজিটাল শিক্ষার উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক-মাধ্যমিক তো দূরের কথা, উচ্চশিক্ষার শিক্ষকেরা ডিজিটালপদ্ধতির শিক্ষাদানে অক্ষম। বহু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিভিভিত্তিক সাধারণ চক-ডাস্টারের শিক্ষা চালু করতে পারেনি। শিক্ষকদের বিরোধিতা, প্রশাসনের বা মালিকদের অনীহা ছাড়াও এমনকি ছাত্রছাত্রীদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। একটি দূরদর্শী পরিকল্পনায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ঘটানো যায়নি। কিছু কম্পিউটার ল্যাব বা ডিজিটাল ক্লাসরুম করে আমরা যা করেছি, তা যে প্রয়োজনের সময় অপ্রতুল, সেটি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে এবার ডিজিটাল রূপান্তরের মহাসড়ক ডিজিটাল সংযোগ তার দক্ষতা দেখাতে পেরেছে।
এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে ভূমিব্যবস্থা ডিজিটাল করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে আছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছরের পর বছর চেষ্টা করেও ভূমিব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করার উদ্যোগই নিতে পারেননি। যতবারই তিনি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন, ততবারই ভূমি মন্ত্রণালয়ে সেটি আটকে গেছে। বলা যায়, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের কাছে হেরে গেছি।
এভাবে প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কথাই বলা যাবে যে সরকারের ডিজিটাইজেশন পরিকল্পনা কেমন করে ঘাটে ঘাটে আটকে রাখতে হয়েছে। সর্বশেষ যে উদ্যোগটি আমি চালু করে এসেছিলাম, সেটি ছিল এটুআইয়ের ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাকসিলেরাটর নামক একটি কর্মসূচির আওতায় সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন এবং সেসব মন্ত্রণালয়ের সেবাগুলো তার পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। আমি থাকার সময় পর্যন্ত ১ হাজার ৯৬০টি সেবাকে ডিজিটাল করার জন্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। আমাদের তখনই ধারণা ছিল, প্রায় ৩ হাজার সেবা ডিজিটাল করা যাবে। এটি একদিকে সরকারকে ডিজিটাল করবে, অন্যদিকে দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে সহায়ক হবে। এবার করোনা-পরবর্তীকালে সরকারের এই সেবাগুলো আমাদের ডিজিটাল শিল্প খাতকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। অন্যদিকে সরকারকে সত্যিকারের একটি ডিজিটাল সরকারে পরিণত করবে।
এবার করোনাকালে আমরা অনুভব করলাম যে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ডিজিটাইজেশনের অবস্থা মোটেই উল্লেখ করার মতো নয়। আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পেশেন্ট ডেটাবেইস, ডক্টরস ডেটাবেইস ও হাসপাতালগুলোর তথ্যের সমন্বয়ের অভাব প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা যে পিছিয়ে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের জন্য একটি বড় কামনা ছিল বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজ করা। এ জন্য পুলিশ, আইন বিভাগ, উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতকে ডিজিটাল করতে হবে। এবার যখন আমরা দীর্ঘ সময় আদালত চালাতে পারলাম না, তখন সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত পরিচালনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করল। সেই অনুপাতে জরুরি মামলার ডিজিটাল শুনানি চলছে। কিন্তু দুঃখজনক দুটি ঘটনা আমাদের আশার প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাগেরহাটে। একটি পত্রিকা থেকে খবরটি উদ্ধৃত করছি।
লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। বুধবার (১৩ মে, ২০২০) দুপুরে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত সোমবার থেকে ভার্চ্যুয়াল শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত এই কার্যক্রম শুরু হয়নি বাগেরহাট জেলা জজ আদালতে। বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের সহায়তায় চালু করা নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে আইনজীবীরা দক্ষ নন।
তিনি আরও বলেন, আদালতের ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ নিতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা এবং ব্যবহার জানা জরুরি। আমাদের সমিতির অধিকাংশ সদস্যের তা নেই। এই পদ্ধতির শুনানিতে অংশ নিতে হলে সদস্যকে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারের চালু করা আধুনিক এই পদ্ধতিতে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে অংশ নেওয়া আমাদের জন্য দুরূহ। তাই সমিতির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব আদালত চালু করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘আমরা সরকারি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমাদের আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আধুনিক এই পদ্ধতি চালুর জন্য সবার আগে আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।’ তাহলে সরকারের এই প্রক্রিয়া সফল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমরা ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলন করতে গিয়ে কোনোকালে ভাবতেই পারি না যে উকিলদের মতো কোনো জনগোষ্ঠী ডিজিটাইজেশনের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। ১১ বছর পার করার পর যদি আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে অসহায়ত্ব অনুভব করেন, তখন আশার প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখতে পারি না। আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্তের পর আরও একটি খবর মিডিয়ার আসে। সেটি আরও ভয়ংকর। এই খবরে কেবল যে বিচারব্যবস্থা ডিজিটাল করার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে সেটিই নয়, বরং যাঁরা এই ডিজিটাল বিচারব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করায় ১৭ জন আইনজীবীকে বহিষ্কার করেছে গাইবান্ধা বার। ২০২০ সালের ২ জুন বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ১৭ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করার আদেশ প্রদান করা হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত থাকবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। ওই ১৭ জনের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদের দুজন সহসভাপতি এবং একজন সাহিত্য সম্পাদক ও সহসম্পাদক রয়েছেন। বারের বর্তমান কমিটির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি পাল বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।’
জেলা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০২০ সালের ১২ মে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেন এবং আমাদের মৌখিকভাবে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করতে নিষেধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত অধ্যাদেশ এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্র্যাকটিস ডিরেকশন অনুযায়ী ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সিস্টেমকে সমর্থন দিয়ে আমরা মামলা পরিচালনা করি।
এতে বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২০ সালের ১৭ মে সাধারণ সভা ডাকেন এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন, যাঁরা ভার্চ্যুয়াল কোর্টে শুনানিতে অংশ নেবেন, তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২ জুন এই বহিষ্কার নোটিশ জারি করেছেন।
বহিষ্কার আদেশ পাওয়া আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বার। তারা প্রধান বিচারপতির আদেশ অমান্য করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে বারের এই আদেশের বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নেতা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তবে ২০২১ সালের সুখবর হলো, এখন উচ্চ আদালতসহ জেলা আদালতগুলো পুরোপুরি ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতেই চলছে। এক বছরে এই অগ্রগতি প্রশংসা করার মতো। এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য।
আমার নিজের কাছে দুটি খবরই এত হতাশার যে বাংলাদেশের ডিজিটাল–যাত্রার যে অসাধারণ স্বপ্নটা আমরা দেখছি, সেটিতে কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। আমি আশা করব আইনজীবীরা যা করেছেন, অন্য পেশার মানুষ কোনোভাবেই তা সমর্থন করবে না বা তাঁদের পথে পা বাড়াবে না। দুনিয়াতে যখন যন্ত্র চালু হয়, তখন হরতাল–ভাঙচুর হয়েছে, কম্পিউটার চালু হওয়ার পর হরতাল–আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, যারা নেতিবাচক পথে হেঁটেছে, তারাই হেরেছে। আমরা তো তিনটি শিল্পবিপ্লব পায়ে মাড়িয়ে এলাম। এখন যদি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে শরিক হতে না পারি, তবে এই জাতির সামনে চলা থেমে যাবে। এটি একেবারেই বাস্তবতা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মানুষকে ডিজিটাল হতে হবে। করোনা চলাকালে বা তারপর আমাদের জনগণ এই বিষয়ে সতর্ক থাকবে, সেটিই আমাদের কামনা। আসুন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
যদি বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকেই একটি ডিজিটাল সরকার গড়ে তুলতে কোনো পর্যায়েই প্রচেষ্টার কমতি রাখা হয়নি, তবে ভুল বলা হবে না। একসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এটুআই নিরলসভাবে সরকারের সর্বাঙ্গ ডিজিটাল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির জন্মের পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত দেওয়া থেকে অংশ নেওয়া–কোনোটাতেই আমি পিছিয়ে ছিলাম না। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এক মাস বিরতি ছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে পারি, অন্তত ২০০৯ সাল থেকে সরকার তার সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল করার জন্য তার পক্ষে সম্ভব সব কাজই করেছে। এই করোনাকালে সরকারি অফিসগুলো সবচেয়ে বড় যে সমর্থনটা পেয়েছে, সেটি হচ্ছে ই-নথি। ২০২০ সালে সরকারের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ই–নথির সহায়তায় কাগজের জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে যখন আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিই, তখন আমার কাছে ৯৫ ভাগ হাতে লেখা ফাইল আসত। এখন কাগজের কোনো ফাইল আসে না। এর ফলে করোনাকালে ঘরে বসে আমার বিভাগের সব কাজ করতে পেরেছি। আমার হাতে একটি ফাইলও পেন্ডিং নেই। সংগত কারণেই কাগজের ব্যাকআপ থাকলেও সরকারের সব ডেটা ডিজিটাল হতে বাধ্য হয়েছে। চিঠিপত্র থেকে ফাইলের নোট, সবই ডিজিটাল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টসহ সব কাজেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা পৌঁছানোর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। প্রণোদনা ভাতা, উপবৃত্তি, বৃত্তিসহ অসংখ্য অর্থ বিতরণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়েছে এবং প্রতিদিনই তার পরিমাণ বাড়ছে।
অন্যদিকে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমরা আমাদের ক্লাসরুম সেভাবে ডিজিটাল করতে পারিনি। প্রাথমিক স্তর ছাড়া অন্য পর্যায়ে ডিজিটাল কনটেন্ট দিতে পারিনি আমরা। আমাদের পাঠক্রম বদলায়নি, পাঠদানপদ্ধতিও বদলায়নি। দেশের সব শিক্ষককে ডিজিটাল শিক্ষার উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক-মাধ্যমিক তো দূরের কথা, উচ্চশিক্ষার শিক্ষকেরা ডিজিটালপদ্ধতির শিক্ষাদানে অক্ষম। বহু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিভিভিত্তিক সাধারণ চক-ডাস্টারের শিক্ষা চালু করতে পারেনি। শিক্ষকদের বিরোধিতা, প্রশাসনের বা মালিকদের অনীহা ছাড়াও এমনকি ছাত্রছাত্রীদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। একটি দূরদর্শী পরিকল্পনায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ঘটানো যায়নি। কিছু কম্পিউটার ল্যাব বা ডিজিটাল ক্লাসরুম করে আমরা যা করেছি, তা যে প্রয়োজনের সময় অপ্রতুল, সেটি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে এবার ডিজিটাল রূপান্তরের মহাসড়ক ডিজিটাল সংযোগ তার দক্ষতা দেখাতে পেরেছে।
এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে ভূমিব্যবস্থা ডিজিটাল করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে আছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছরের পর বছর চেষ্টা করেও ভূমিব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করার উদ্যোগই নিতে পারেননি। যতবারই তিনি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন, ততবারই ভূমি মন্ত্রণালয়ে সেটি আটকে গেছে। বলা যায়, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের কাছে হেরে গেছি।
এভাবে প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কথাই বলা যাবে যে সরকারের ডিজিটাইজেশন পরিকল্পনা কেমন করে ঘাটে ঘাটে আটকে রাখতে হয়েছে। সর্বশেষ যে উদ্যোগটি আমি চালু করে এসেছিলাম, সেটি ছিল এটুআইয়ের ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাকসিলেরাটর নামক একটি কর্মসূচির আওতায় সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন এবং সেসব মন্ত্রণালয়ের সেবাগুলো তার পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। আমি থাকার সময় পর্যন্ত ১ হাজার ৯৬০টি সেবাকে ডিজিটাল করার জন্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। আমাদের তখনই ধারণা ছিল, প্রায় ৩ হাজার সেবা ডিজিটাল করা যাবে। এটি একদিকে সরকারকে ডিজিটাল করবে, অন্যদিকে দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে সহায়ক হবে। এবার করোনা-পরবর্তীকালে সরকারের এই সেবাগুলো আমাদের ডিজিটাল শিল্প খাতকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। অন্যদিকে সরকারকে সত্যিকারের একটি ডিজিটাল সরকারে পরিণত করবে।
এবার করোনাকালে আমরা অনুভব করলাম যে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ডিজিটাইজেশনের অবস্থা মোটেই উল্লেখ করার মতো নয়। আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পেশেন্ট ডেটাবেইস, ডক্টরস ডেটাবেইস ও হাসপাতালগুলোর তথ্যের সমন্বয়ের অভাব প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা যে পিছিয়ে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের জন্য একটি বড় কামনা ছিল বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজ করা। এ জন্য পুলিশ, আইন বিভাগ, উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতকে ডিজিটাল করতে হবে। এবার যখন আমরা দীর্ঘ সময় আদালত চালাতে পারলাম না, তখন সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত পরিচালনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করল। সেই অনুপাতে জরুরি মামলার ডিজিটাল শুনানি চলছে। কিন্তু দুঃখজনক দুটি ঘটনা আমাদের আশার প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাগেরহাটে। একটি পত্রিকা থেকে খবরটি উদ্ধৃত করছি।
লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। বুধবার (১৩ মে, ২০২০) দুপুরে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত সোমবার থেকে ভার্চ্যুয়াল শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত এই কার্যক্রম শুরু হয়নি বাগেরহাট জেলা জজ আদালতে। বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের সহায়তায় চালু করা নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে আইনজীবীরা দক্ষ নন।
তিনি আরও বলেন, আদালতের ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ নিতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা এবং ব্যবহার জানা জরুরি। আমাদের সমিতির অধিকাংশ সদস্যের তা নেই। এই পদ্ধতির শুনানিতে অংশ নিতে হলে সদস্যকে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারের চালু করা আধুনিক এই পদ্ধতিতে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে অংশ নেওয়া আমাদের জন্য দুরূহ। তাই সমিতির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব আদালত চালু করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘আমরা সরকারি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমাদের আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আধুনিক এই পদ্ধতি চালুর জন্য সবার আগে আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।’ তাহলে সরকারের এই প্রক্রিয়া সফল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমরা ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলন করতে গিয়ে কোনোকালে ভাবতেই পারি না যে উকিলদের মতো কোনো জনগোষ্ঠী ডিজিটাইজেশনের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। ১১ বছর পার করার পর যদি আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে অসহায়ত্ব অনুভব করেন, তখন আশার প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখতে পারি না। আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্তের পর আরও একটি খবর মিডিয়ার আসে। সেটি আরও ভয়ংকর। এই খবরে কেবল যে বিচারব্যবস্থা ডিজিটাল করার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে সেটিই নয়, বরং যাঁরা এই ডিজিটাল বিচারব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করায় ১৭ জন আইনজীবীকে বহিষ্কার করেছে গাইবান্ধা বার। ২০২০ সালের ২ জুন বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ১৭ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করার আদেশ প্রদান করা হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত থাকবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। ওই ১৭ জনের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদের দুজন সহসভাপতি এবং একজন সাহিত্য সম্পাদক ও সহসম্পাদক রয়েছেন। বারের বর্তমান কমিটির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি পাল বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।’
জেলা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০২০ সালের ১২ মে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেন এবং আমাদের মৌখিকভাবে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করতে নিষেধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত অধ্যাদেশ এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্র্যাকটিস ডিরেকশন অনুযায়ী ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সিস্টেমকে সমর্থন দিয়ে আমরা মামলা পরিচালনা করি।
এতে বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২০ সালের ১৭ মে সাধারণ সভা ডাকেন এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন, যাঁরা ভার্চ্যুয়াল কোর্টে শুনানিতে অংশ নেবেন, তাঁদের বার থেকে বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২ জুন এই বহিষ্কার নোটিশ জারি করেছেন।
বহিষ্কার আদেশ পাওয়া আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বার। তারা প্রধান বিচারপতির আদেশ অমান্য করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে বারের এই আদেশের বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নেতা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তবে ২০২১ সালের সুখবর হলো, এখন উচ্চ আদালতসহ জেলা আদালতগুলো পুরোপুরি ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতেই চলছে। এক বছরে এই অগ্রগতি প্রশংসা করার মতো। এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য।
আমার নিজের কাছে দুটি খবরই এত হতাশার যে বাংলাদেশের ডিজিটাল–যাত্রার যে অসাধারণ স্বপ্নটা আমরা দেখছি, সেটিতে কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। আমি আশা করব আইনজীবীরা যা করেছেন, অন্য পেশার মানুষ কোনোভাবেই তা সমর্থন করবে না বা তাঁদের পথে পা বাড়াবে না। দুনিয়াতে যখন যন্ত্র চালু হয়, তখন হরতাল–ভাঙচুর হয়েছে, কম্পিউটার চালু হওয়ার পর হরতাল–আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, যারা নেতিবাচক পথে হেঁটেছে, তারাই হেরেছে। আমরা তো তিনটি শিল্পবিপ্লব পায়ে মাড়িয়ে এলাম। এখন যদি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে শরিক হতে না পারি, তবে এই জাতির সামনে চলা থেমে যাবে। এটি একেবারেই বাস্তবতা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মানুষকে ডিজিটাল হতে হবে। করোনা চলাকালে বা তারপর আমাদের জনগণ এই বিষয়ে সতর্ক থাকবে, সেটিই আমাদের কামনা। আসুন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪